ফাল্গুনের_ফুল  part_5

0
2324
ফাল্গুনের_ফুল
part_5
#Writer_Farzana

কোচিং এ ক্লাস নেয়া শেষ করে বাড়িতে চলে আসলাম। তারপর নেছারের সাথে বসে চুটিয়ে আড্ডা দিচ্ছিলাম। আড্ডার এক পর্যায়ে নেছার বলে উঠলো- 
Nesar: কালকের plan কি? কাল তো Friday… দুজন মিলে খুব ঘুরবো ?
Samir: কাল Friday? তাহলে তো কোচিং বন্ধ ?
Nesar: হ্যা, সে জন্যেই তো বলছি।
Samir: তাহলে তো কাল আর ফাল্গুনের ফুলের দেখা পাওয়া যাবে না (মনে মনে)।
Nesar: কি রে, কি ভাবছিস? চুপ করে আছিস যে?
Samir: না কিছুনা.. ভাবছি, কাল তাহলে ভালোই হবে। তোরও ছুটি, কোচিং ও বন্ধ। তুই আর আমি ঘুরতে পারবো? ( মুখে কৃত্তিম হাসি এনে)।
Nesar: হুম, তাহলে যদি তোর আসা সার্থক হয়।
Samir: ? ( আসা তো কবেই সার্থক হয়েছে। এখন শুধু পূর্ণতার অপেক্ষা)
Nesar: Uncle কেমন আছেন?
Samir: খুব ভালো আছে। তার বউমার জন্যে অপেক্ষা করছে। যেয়েই বিয়ে করবো কিনা ?
Nesar: ??… গ্রামে বিয়ে করবি নাকি?
Samir: মেয়ে ভালো হলে তো করাই যায়।
Nesar: কেমন যোগ্যতার মেয়ে চাই তোর?
Samir: যোগ্যতা কোন fact না মেয়ে যদি আমার পছন্দ হয়।
Nesar: তাহলে তো হয়েই গেল ?
Samir: কি হয়ে গেল ??
Nesar: আমার এক পরিচিত মেয়ে আছে, তোর পছন্দ হবে। চল কালই দেখে আসি। ( জায়গার নাম উল্লখ করে)
Samir: নাহ, কাল না। অন্য একদিন যাব ?
Nesar: অন্য এক দিন কবে, ঢাকা চলে যাওয়ার পর যাবি ??
বহুকষ্টে এই topic টা change করে কোচিং নিয়ে কথা বলা শুরু করলাম। আমি জানি, ফাল্গুনের ফুলকে দেখার পর আমার আর অন্য কাওকে ভালো লাগবে না। নেছারের পছন্দ করানোর চেষ্টা টা বৃথা যাবে। কথায় কথায় জিজ্ঞেস করলাম ফাল্গুনের ফুলের বাড়ি কোথায়.. যে জায়গার নাম উল্লেখ করলো শুনে খুশি না হয়ে পারলাম না। নেছার যে মেয়েকে দেখতে যাওয়ার কথা বললো সে মেয়ের বাড়ি আর ফাল্গুনের ফুলের বাড়ি একই গ্রামে ?। তাই মেয়ে দেখতে যাওয়ায় রাজি হয়ে গেলাম। এই ভেবে যে, ফাল্গুনের ফুলকে যদি দেখতে পাই এই আাশায়।
রাতের খাওয়া-দাওয়া শেষ করে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লাম। যতক্ষণ চুপ করে থাকি ততক্ষণ ফাল্গুনের ফুলকে নিয়ে ভাবতে থাকি। আর যতক্ষণ ভাবতে থাকি ততক্ষণ মনে হয় ফাল্গুনের ফুল সাথেই আছে ?। ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম…
সকাল ৮:০০ টা…
Samir: কি রে, মেয়ে নাকি দেখাতে নিয়ে যাবি? তা কখন যাবি?
Nesar: বিকালে।
Samir: বিকালে না এখনই চল যাই।
Nesar: মনে হচ্ছে দেখে পছন্দ হলে এখনই বিয়ে করে ফেলবি, তাই এতো তাড়া ?
Samir: না, তা না। ভাবলাম যে দেখতে যখন হবেই তাহলে আগেই দেখে আসি।
Nesar: OK.. ১১:০০ টার দিকে যাবো।-
নেছার যদিও দেরী করতে করতে বিকালের দিকেই বের হতো। কিন্তু আমার তাড়া দেখে ১০:৩০ ই বের হলো আর বললো- এমন করছিস যেন মেয়ে দেখার জন্য বিকাল পর্যন্তও বেঁচে থাকবি না। তাই এতো তাড়া।
যেতে যেতে কৌশলে ফাল্গুনের ফুলদের বাড়িটাও চিনে নিলাম। কিন্তু বাইরে ওকে কোথাও দেখলাম না। ধ্যাত..?, আসাই বৃথা আমার। এখন আর মেয়ে দেখতে যেতেই মনে চাচ্ছে না। তারপরও গেলাম, তা না হলে নেছার সন্দেহ করতে পারে তাই। মেয়েটা কেও দেখলাম। কিন্তু কি যে দেখলাম বলতে পারবো না। পছন্দ হয়েছে কিনা নেছার জিজ্ঞেস করতেই সোজা বলে দিলাম, হয়নি। কেন পছন্দ হয়নি এই নিয়ে নানা প্রশ্ন করা শুরু করলো। কোন ans ই দিতে মনে চাইছে না। আমার কাছ থেকে কোনও সাড়া না পেয়ে ক্ষান্ত হয়ে প্রশ্ন করা বাদ দিলো নেছার…

৩:০০ বাজে। নেছার বললো-
Nesar: চল, এবার বাইরে থেকে একটু ঘুরে আসি।
Samir: শরীর টা ভালো লাগছে না, যাবো না কোথাও।
Nesar: যাবি না তো সত্যি?
Samir: সত্যি…
Nesar: আচ্ছা তাহলে আমি ঘুমাই, খুব ঘুম পাচ্ছে আমার?
Samir: হুম..
নেছার ঘুমানোর সাথে সাথে ready হয়ে বের হয়ে গেলাম ফাল্গুনের ফুল দের বাড়ির উদদেশ্যে, ওকে এক নজর দেখার আশায়। মনে নানা সংশয় নিয়ে পৌছে গেলাম ফাল্গুনের ফুল দের বাড়ির সামনে। আর দেখাও পেয়ে গেলাম আমার কাঙ্খিত জিনিসের ?। দেখলাম বাড়ির বাইরের বাগানে কানামাছি খেলছে ছোট ছেলে মেয়েদের সাথে ?। ৫ মি: এর মতো দাড়িয়ে দেখলাম। গ্রাম তো তাই মানুষ দেখে আবার কি না কি বলে বসে সেই আশংকায় তাড়াতাড়ি চলে আসলাম, মনে এক অতৃপ্ত ভালোলাগা নিয়ে। ভাবলাম বিয়ে করে নেই আগে তারপর সারাদিন বসিয়ে রেখে দেখবো ??
———???——–
কোচিং ক্লাস fast period… ক্লাসে যেহেতু ফাল্গুনের ফুলের দিকে তেমন একটা তাকাইনা। তাই প্রতিদিন ক্লাস শুরু হওয়ার কিছুটা আগেই পৌছে যাই, অফিস রুম থেকে ফাল্গুনের ফুল কে দেখবো বলে। আর তাই আজও কিছুটা আগেই এসে পড়লাম। কখন থেকে স্কুল গেটের দিকে তাকিয়ে wait করছি। ৭ মি: পর ক্লাস শুরু হবে, আর এখনও ফাল্গুনের ফুল টা আসলো না। ফাল্গুনের ফুল হয়ে কেন যে ডুমুরের ফুল হয়ে থাকে বুঝিনি। ক্লাসে যাবো এমন সময় আসলো ফাল্গুনের ফুল । দেরী করে আসলো জন্যে ভীষণ রাগ হচ্ছে। কাছে যেয়ে বললাম-
Samir: এতো দেরী করে আসো কেন তুমি? তাড়াতাড়ি আসতে পারোনা ??
Falguni: Sir আমি তো ক্লাস শুরু হওয়ার আগেই এসেছি ?!
Samir: কাল থেকে আরও আগে আসবে।
Falguni: হুম (লক্ষী মেয়ের মতো বললাম)..
আজ ফাল্গুনের ফুল কালো বোরকার সাথে মেরুন কালারের স্কার্ফ পড়েছে। চোখে কাজল আর গোলাপি ঠোঁটে মিষ্টি হাসি। সব মিলিয়ে আজ আরও অসাধারণ লাগছে। আজ মনেহয় senseless না হয়ে heart attack ই করবো ??
——–???——–
আমি তো ক্লাস শুরু হওয়ার আগেই আসলাম। তাও Samir sir কেন যে এতো রাগ করলেন, কিছু বুঝতে পারছি না ??। তাও ভালো যে পড়া করে এসেছি, তা না হলে না জানি আরও কত্তো বকা শুনতে হতো। এসব ভাবতে ভাবতে ক্লাসে এসে বসলাম। আজ দেয়ালের side এ বসেছি। অন্য side এ বসলে ছেলেরা তাকিয়ে থাকে, তাও আাবার বড় বড় করে। খুব uneasy লাগে। যাই হোক বইটা বের করে স্যার এর দেয়া পড়াটা revise দিচ্ছিলাম। আমি আবার পড়া শোনার ব্যাপারে খুব যত্নশীল মেয়ে কিনা ?। হঠাৎ দেয়ালের দিকে চোখ যেতেই দেখি ইয়া বড় একটা টিকটিকি, ডাইনোসরের মতো। আমার দিকেই তাকিয়ে আছে, যেন কত কালের শত্রুতা ??। ওরে বাবা.. ভীষণ ভয় লাগছে, একটু সরে বসলাম। আমি এই প্রাণিটা কে এতো ভয় আর ঘৃনা করি যে নামটা বলতেও আমার যেন কেমন লাগে। আর কোনও গুন্ডাও যদি এটা ধরে আমার সামনে এনে বলে তাকে বিয়ে করতে হবে। তাহলেও আমি রাজি হয়ে যাব। বাড়িতে থাকলে এতক্ষণ continue চিৎকার করতাম। ক্লাসে জন্যে পারছি না । স্যার আবার কি না কি মনে করবেন। এইসব ভাবছি আর সেই মুহুর্তে-
Samir: ফাল্গুনী….
স্যার ডাকতেই মনে হলো এই বুঝি বিশ্রী প্রাণিটা আমার গায়ে এসে পড়লো। ব্যাস দিলাম গগন বিদারী এক চিৎকার। চিৎকার শুনে যে যাই মনে করুক না কেন, আমার কিন্তু লাভই হয়েছে। টিকটিকি টা চলে গিয়েছে ?
Samir: কি ব্যাপার, তুমি চিৎকার করলে কেন ??
Falguni: ইয়ে মানে- স্যার আসলে খুব মনোযোগ দিয়ে পড়া revise দিচ্ছিলাম। হঠাৎ আপনি ডাক দিলেন তো তাই। (যদি টিকটিকির কথা টা বলি, তাহলে- এখন তো স্যারের সাথে সাথে ছেলেরাও ফাল্গুনের ফুল বলে ডাকে। আর তখন ডাকবে টিকটিকি বলে। ছিঃ ছিঃ… সাধে কি আর হনুমান বলি ??)

সকাল ১০:০০ টা। কোচিং এর সময় টার জন্যে wait করছি। এমন সময় বাবার ফোন আসলো। বাবার নাকি শরীর টা খুব খারাপ ?। তাই আজই ঢাকা চলে যেতে হবে। নেছার কে ফোন করে সব বলে টিকিট confirm করতে বললাম। সুখের সময় গুলি কত্তো তাড়াতাড়ি চলে যায়, তাইনা? আমার ভালো লাগার সময় গুলোও তাড়াতাড়ি চলে গেল ?। আবার ব্যাস্ততার শুরু। আজ আর কোচিং এ ক্লাস নিতে পারবো না, কারণ আজ ২:৩০ মি: আমায় ফিরে যেতে হবে ঢাকা। ফাল্গুনের ফুল কে আজ আর দেখা হবে না। আর এও জানিনা ওকে আমি কোনদিন পাবো কিনা ?। আরও ২ দিন থাকার কথা ছিল। কিন্তু বাবার শরীর টা খারাপ হওয়ায় হঠাৎই চলে যেতে হচ্ছে। শেষ বারের মতো দেখতে খুব ইচ্ছা করছে ফাল্গুনের ফুল কে। কি করবো উপায় তো নেই তাই মন খারাপ করে laptop এ Facebook browse করছি। ১:৩০ বাজে, হঠাৎই মনে হলো ওদের বাড়িতে গেলেই তো ওকে দেখতে পারি ?। যেই ভাবা সেই কাজ – Radar এর suggestion pepper নিয়ে ওদের বাড়ীর উদ্দেশ্যে বের হলাম।- বাড়ির দরজায় যেয়ে নক করতেই–
ফাল্গুনীর আম্মু: কে?
Samir: আমি ???।
ফাল্গুনীর আম্মু: আমি কে ? নাম নেই নাকি ??
Samir: জ্বি, আমি Samir ?। ফাল্গুনীর কোচিং এর teacher…
ফাল্গুনীর আম্মু: কি দরকার (গেট টা খুলে বললো)?
আবার আমাকে ভাই না বলে ফেলে সেই ভয়ে তাড়াতাড়ি বললাম…
Samir: আন্টি, আমি তো আজ চলে যাব। তাই একটা suggestion দিতে এসেছিলাম ফাল্গুনী কে।
ফাল্গুনীর আম্মু: তো স্কুলে দিলেই তো পারতে। ও তো স্কুলে।
Samir: আন্টি, আমি তো স্কুলের teacher না। আর আমার সময়ও নেই। তাই এখানে আসলাম। (আসলে আমার মনেই ছিল না যে কোচিং ছাড়া ওর স্কুলও আছে। ধ্যাত, এখন যে স্কুলে যেয়ে একটু দেখে আসবো তারও তো কোন উপায় নেই। হাতে সময় একদম কম।)
আমার হবু শাশুড়ি কে suggestion টা দিয়ে চলে আসলাম। আর আমার দুষ্টু বউ টাকে তো দেখতেই পারলাম না। আমার দুষ্টু বউ টার আম্মু যে এতো রাগী যে এখানে বেশীক্ষণ না থাকাই ভালো। শুনেছি সুন্দর মেয়ে দের আম্মুরা নাকি একটু বেশীই রাগী হয়। কপাল খারাপ হলে কি এতোই খারাপ হতে হয় ?।
——-???——-
কি ব্যাপার, আজ Samir স্যার আসেনি নাকি? চলে টলে গেল না তো আবার। না তা কেন যাবে। আরও তো ২ দিন ক্লাস নেয়ার কথা। তাহলে ক্লাসে আসলো না কেন ?। মনে হয় শরীর খারাপ।
মন খারাপ করেই পুরো কোচিং টা শেষ করলাম। মন খারাপ করেই বাড়ি ফিরলাম। বাড়িতে আসার সাথে সাথেই আম্মু বললো-
আম্মু: তোমার কোচিং এর teacher এসেছিল।
আমি: কোন teacher?
আম্মু: নাম বললো ..Samir..
আমি: কেন ??
আম্মু: কাল নাকি তোমাদের এই teacher চলে যাবে তাই এই suggestion টা দিয়ে গেল (একটা suggestion হাতে দিয়ে বললো)।
স্যার বাড়িতে আসলো কেন , স্কুলে গেলেও তো পারতো। তাও তো একটু দেখতে পারতাম। ধ্যাত, কি সব যে ভাবছি। আমি না হয় স্যার কে পছন্দ করি, তাই বলে তো স্যার আর আমাকে পছন্দ করেন না ?। আমি ফাঁকিবাজ student বলেই তো suggestion টা দিয়ে গেছেন, After all teacher তো।
——-???——-
সময় কতো তাড়াতাড়ি যায়। দেখতে দেখতে ৪ টা মাস চলে গেল। এর মধ্যে SSC পরীক্ষা দিলাম, আপুর বিয়ে হলো। কাল আবার result ও দিয়ে দিল। A- পেয়েছি। A- পেয়ে তো আমি রীতিমতো খুশি ?। তাও যে ভালো ফেল করিনি। কিন্তু আব্বু আম্মু বুঝতে নারাজ। আব্বু তো খুব রাগ করেছে। রক্তের গ্রুপ B positive হলে কি হবে, চিন্তা ধারা negative.. আর আম্মু বলছে বিয়ে দিয়ে দিবে। বিয়ে টা Samir স্যারের সাথে হলে আমি রাজি আছি ?। এতো কিছু শুনেও আমার মন খারাপ না, যতোটা মন খারাপ Samir স্যারের জন্যে ?।
?Farzana?

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে