প্রেমেপড়েছিঅদৃশ্য_কিছুর পার্ট: ১০/অন্তিম পর্ব

2
2607

প্রেমেপড়েছিঅদৃশ্য_কিছুর

পার্ট: ১০/অন্তিম পর্ব

লেখিকা: সুলতানা তমা

তখন রাত বারোটা বেজে গেছে, এতো রাতে তান্ত্রিক এর কাছে যাওয়া ও অনেক রিস্ক তাও আব্বু আমাদের সবাইকে নিয়ে গাড়িতে উঠলেন, সাথে সাইয়ান এর কঙ্কাল আর লাশ নিয়ে

তিন ঘন্টা পর আমরা তান্ত্রিক এর আস্থানায় পৌছালাম, তখন রাত তিনটা বাজে

আব্বু তান্ত্রিক এর কাছে লাশ আর কঙ্কাল দিলেন
তান্ত্রিক: অনেক দেরি করে ফেলেছিস বারোটার সময় মন্ত্র পড়া শুরু করা উচিত ছিল
আব্বু: তাহলে এখন
তান্ত্রিক: এখন কাজটা করা অনেক কষ্টের কারন এই সময়টায় সব আত্মারা দেহের জন্য ছুটাছুটি করে
আব্বু: তাহলে কি আজকে কাজটা হবে না
তান্ত্রিক: আজকে না করলে তো লাশ পচে যাবে তাই আজকেই করতে হবে কিন্তু
আব্বু: কিন্তু কি
তান্ত্রিক: এই সময় মন্ত্র পড়া খুব কষ্টের তাও আমি পড়ব কিন্তু ছেলেটির আত্মা যদি যথাসময় দেহে প্রবেশ না করতে পারে তাহলে আমার কিছু করার থাকবে না
আব্বু: সাইয়ান পারবে
তান্ত্রিক: অনেক আত্মা এই দেহে প্রবেশ করতে চাইবে তার মধ্যে ভালো আত্মা থাকলে আমার একটি মন্ত্র শুনে চলে যাবে কিন্তু দুষ্টু আত্মা থাকলে যাবে না তাই দুষ্টু আত্মাদের সাথে লড়াই করে যদি ছেলেটির আত্মা দেহে প্রবেশ করতে পারে তবেই কাজ হবে
আব্বু: দুষ্টু আত্মাদের আপনি তাড়াতে পারবেন না
তান্ত্রিক: না এই কাজ ছেলেটি কেই করতে হবে আর যদি না পারে তাহলে দুষ্টু আত্মা দেহে প্রবেশ করবে আর ছেলেটি কখনো ফিরে আসতে পারবে না

এই কথা শুনে ভয় পেয়ে গেলাম এখন কি হবে যদি সাইয়ান দুষ্টু আত্মাদের সাথে না পারে তাহলে তো সব শেষ হয়ে যাবে, ভাবতেই চোখ থেকে গাল বেয়ে পানি ঝরতে শুরু করলো, কাঠের মূর্তির মতো বসে আছি ঠিক তখনি কানের কাছে ঠান্ডা বাতাস লাগলো একটু পর সাইয়ান আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বললো “ভয় পেয়ো না পরী আমার উপর বিশ্বাস রাখো”

ছোট্ট একটি কথা তবুও কেমন যেন সাহস পেলাম, চোখের পানি মুছে তান্ত্রিক কে বললাম
আমি: আপনি কাজ শুরু করেন যা হবার হবে
আব্বু: কি বলছিস অর্পিতা সাইয়ান যদি দুষ্টু আত্মাদের সাথে না পারে
আমি: এছাড়া তো কোনো উপায় নেই আব্বু
তান্ত্রিক: হ্যা ঠিক বলেছিস এছাড়া কোনো উপায় নেই
আমি: হুম আপনি কাজ শুরু করেন
তান্ত্রিক: ঠিক আছে আর একটি কথা যদি খুব জোরে বাতাস বইতে শুরু করে তখন কেউ জায়গা থেকে নড়বে না
আমি: বাতাস
তান্ত্রিক: হ্যা দুই আত্মার মধ্যে যুদ্ধ শুরু হলে জোরে বাতাস বইবে এই সময় তোরা নড়াচড়া করলে দুষ্টু আত্মার কবলে পরে মারা যেতে পারিস

কথটা শুনে সবাই ভয় পেয়ে গেলাম, আম্মু জিসান কে কোলে তুলে নিলেন

তান্ত্রিক লাশ আর কঙ্কাল নিয়ে গিয়ে তার কাজ শুরু করে দিল, এক পাশে লাশ অন্য পাশে কঙ্কাল আর মধ্যে আগুন, মন্ত্র পড়তে পড়তে আগুনের মধ্যে কি যেন ছিটিয়ে দিল একটু পরেই সাইয়ান এর আত্মা সেখানে এসে উপস্থিত হলো, আমার দিকে থাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিল যে হাসিতে কোনো ভয়ের চিহ্ন নেই আছে অনেক খানি নির্বরতা

আরো কিছু সময় মন্ত্র পড়ার পর হঠাৎ সাইয়ান এর আত্মা অদৃশ্য হয়ে গেলো, আগুন দফ করে নিভে গেলো, চারদিকে ঝড়ের গতিতে বাতাস বইতে শুরু করলো মনে হচ্ছে সবকিছু ধ্বংস করে ফেলবে

তান্ত্রিক জোরে জোরে মন্ত্র পড়তে শুরু করলো কন্ঠ শুনেই বুঝা যাচ্ছে তান্ত্রিক এর খুব কষ্ট হচ্ছে, প্রায় দশ মিনিটের মতো বাতাস বইলো তারপর হঠাৎ সবকিছু নীরব হয়ে গেলো

এক অজানা ভয়ে চোখ দুইটা বন্ধ করে ফেললাম, মাথায় হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে
সাইয়ান কি হেরে গেলো সব এমন নীরব হয়ে গেলো কেন….?
তাহলে কি আমি সাইয়ান কে হারিয়ে ফেলেছি….?
এতো কষ্ট করে শেষ পর্যন্ত কি সাইয়ান ফিরে আসতে পারবে না….?
এমন আরো অনেক প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে ঠিক তখনি সাইয়ান আবার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললো “এই পরী চোখ খুলো কাঁদছ কেন চোখের পানি মুছ”
তাড়াতাড়ি চোখ মেলে থাকালাম সাইয়ান তান্ত্রিক এর পাশে বসে আছে দেখে যেন প্রাণ ফিরে ফেলাম

আরো অনেক সময় মন্ত্র পড়ার পর সাইয়ান এর আত্মা লাশের ভিতরে ঢুকিয়ে দিল, তারপর আব্বুকে নিয়ে জানাজা পড়ে সাইয়ান এর কঙ্কাল দাফন করলো

তান্ত্রিক আমার কাছে এসে বললো— এইসব কাজ করা ঠিক না আমি করি না কিন্তু তোর বাবা বললো তুই ছেলেটা কে ভালোবাসিস ছেলেটাও তোকে ভালবাসে তাই তোদের ভালবাসার কথা চিন্তা করে কাজটা করলাম চিন্তা করিস না সব ঠিকঠাক হয়েছে তোর ভালবাসায় জোর আছে বলতে হয় নাহলে এমন পরিস্থিতিতে কোনো আত্মা কে ফিরিয়ে আনা অনেক কষ্টের অনেক সময় তো সম্ভবও হয় না, চিন্তা করিস না কিছুক্ষণের মধ্যেই জ্ঞান ফিরে আসবে

সাইয়ান এর পাশে বসে আছি আর অপেক্ষার প্রহর গুনছি কবে সাইয়ান চোখ খুলবে

প্রায় এক ঘন্টা পর সাইয়ান আস্তে আস্তে চোখ খুলতে শুরু করলো হাত পা নাড়াতে শুরু করলো তারপর উঠে বসলো,
আমার দিকে থাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিল, হাসিটা একদম সাইয়ান এর আগের হাসির মতই, শরীর টা হয়তো অন্য কারো কিন্তু মনটা তো সাইয়ান এর

সাইয়ান উঠে আব্বু আম্মু আর তান্ত্রিক কে সালাম করলো তারপর আমার কাছে এসে দুই হাত দিয়ে আলতো করে আমার দুগালে ধরে আমার চোখের দিকে গভীর ভাবে থাকিয়ে বললো
–ভালোবাসি পরি?
–ভালোবাসি লোমান্তিক ভূত?

সমাপ্ত?

(পুরো গল্পটি কাল্পনিক ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন?
ধৈর্য নিয়ে গল্পটি পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ??)

2 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে