প্রেত সাধক ২য় পর্ব

0
1212

#প্রেত_সাধক
.
২য় পর্ব
.
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেল। ফারহানাকে তিনি কয়েক বার কল দিলেন। কিন্তু সে ধরল না। তিনি এবার কিছুটা স্বাভাবিক ভাবে ঘটনাটার ব্যাপারে চিন্তা করছেন। তিনি কী শুধু শুধু তার আপন ছেলে আর স্বামীকে সন্দেহ করছেন! ফাহাদ বা রাজ্জাক কেউ যদি এটা জানতে পারে তাহলে তাদের কাছে তিনি কতটা ছোট হয়ে যাবেন! এটাতো হতে পারে যে, নাইলারই কোনো বড় সমস্যা রয়েছে। তাদের না। নাইলা বেশ রুপবতী না হলেও তার চেহারা তেমন খারাপ না। হতে পারে কোনো খারাপ জ্বীন তার উপর আঁছর করেছে। সেই ঘুমন্ত অবস্থায় নাইলার সঙ্গে খারাপ কিছু করতে চায়। বা নাইলার কোনো মানসিক রোগ রয়েছে যাতে সে নিজে নিজেই রাতে তার জামা-কাপড় খুলে ফেলে অথচ তার মনে থাকে না! আসলেইতো এমন কিছু ওতো হতে পারে। এইটা এতক্ষণ তার মাথায় আসেনি কেন? তিনি শুধু শুধু ফাহাদ আর রাজ্জাককে সন্দেহ করছেন। আফরোজা বেগম এবার কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলেন। এমন সময় হঠাৎ তার মোবাইলে ফারহানার নাম্বার থেকে একটা কল এল। আফরোজা বেগম দ্রুত কল ধরলেন। ফারহানা যা বলল তা শুনে আফরোজা বেগম পুরোই স্তম্ভিত হয়ে গেলেন। তার সন্দেহই ঠিক। নাইলার জগের পানিতে ঘুমের ঔষধ মেশানো থাকে প্রতিরাতে। কারণ ওই পানি পরীক্ষা করে ঘুমের ঔষুধের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। যা খেলে কয়েক ঘন্টা মরার মতো পড়ে থাকবে যে কোনো মানুষ। কিন্তু এই জঘন্য কাজটা কে করে, এটাই বুঝতে পারছেন না তিনি। নিজের আপনজনদের যে এভাবে সন্দেহ করতে হবে এটা তিনি স্বপ্নেও কল্পনা করেননি। তবে আজ রাতে যে করেই হোক আসল অপরাধীকে তিনি ধরবেনই। কিন্তু কে সে?
.
.
ফারহানার কল আসার পর থেকে আরও বেশি উদাস হয়ে গেলেন আফরোজা বেগম। চুপচাপ বিছানায় বসে রইলেন কিছুক্ষণ। ভাবতে থাকলেন রাতে কী কী করা যায়। আজ রাতে যে করেই হোক তাকে জেগে থাকতে হবে। আর কাউজে হাতে-নাতে ধরলে পারলে তার কী করা উচিত সেটাও ভাবছেন।
.
আফরোজা বেগম জানেন না অতীন্দ্রিয় ক্ষমতা বলে কিছু আছে কিনা। কিন্তু তার মনে হয় মাঝেমধ্যে তিনি এই ক্ষমতার অধিকারী হয়ে যান। এই বাড়িতে তার আপন কেউ এলে তিনি আগে থেকেই কী করে যেন টের পেয়ে যান। যেমন এই মুহুর্তে তার মনে হচ্ছে তার ছোটভাই রাহাত আজ তাদের এখানে আসবে। রাহাতেরই হয়তো অতীন্দ্রিয় ক্ষমতা বেশি রয়েছে। যখনি তিনি কোনো বিপদে পড়েন কোত্থেকে রাহাতই তখন এই বাড়িতে চলে আসে প্রথমে। হয়তো এই কারণেই তার মনে হচ্ছে এই বিপদে রাহাত এসে পড়বে এখানে। এসব ভাবতে ভাবতেই কলিং বেলটা বেজে উঠল। আফরোজা বেগম দ্রুত ছুটে গেলেন দরজা খুলতে। ফাহাদ আর নাইলাও এসেছে দরজা খুলতে। এই রকম প্রায়ই ঘটে তাদের বাড়িতে। কখনও কলিং বেলের শব্দ শুনলে একসাথে ৩ জনেই ছুটে আসে। আবার কখনও আরেকজন খুলবে ভেবে কেউই আসেনা। ফাহাদ দরজা খুলে দিল। দরজা দিয়ে রাজ্জাক সাহেব প্রবেশ করতেই হতাশায় ছেয়ে গেল আফরোজা বেগমের মুখ। তিনি ভেবেছিলেন রাহাত আসবে।

ফেসবুক পেজ: নিঃস্বার্থ ভালোবাসা
কিন্তু রাজ্জাক সাহেবতো এত আগে আসেন না। আজ এলেন কেন? হঠাৎই আফরোজা বেগমের মনে পড়ল আজ বৃহস্পতিবার। এই দিনে প্রতি সপ্তাহেই আগে অফিস ছুটি হয়ে যায় তার।
.
আফরোজা বেগম অন্যদিনের মতো কারো সাথেই বেশি কথা বললেন না। চুপচাপ আবার নিজের ঘরে চলে এলেন। রাজ্জাক সাহেব গোসল করতে গেলেন। ঠিক ১৫মিনিট পর আবার কলিং বেল বেজে উঠল। তিনি মুর্তির মতো বিছানাতেই বসে রইলেন। বাইরের ঘর থেকে ফাহাদের আনন্দ উল্লাশ শুনে একটু নড়ে বসলেন। তারপর ঘরের বাইরে গিয়ে দেখলেন সত্যি সত্যিই রাহাত এসেছে। তার সঙ্গেই হাসি-ঠাট্টা করছে ফাহাদ। আনন্দে আফরোজা বেগমের মনটাও ভরে গেল।
.
রাহাত আফরোজা বেগমকে দেখেই “আপা!” বলেই চেচিয়ে উঠে এসে জড়িয়ে ধরল তাকে। তিনি রাহাতের একটু খোঁজ খবর নিলেন। তারপর ফাহাদ আর রাহাত আবার কথা বলতে বলতে ফাহাদের ঘরে চলে গেল।
.
রাহাত ঢাকার বাইরের একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থের ছাত্র। কী একটা ঝামেলা নাকি চলছে সেখানে। তাই তাদের ছুটি দিয়ে দিয়েছে। এই ফাঁকেই সে এসেছে তার আপার বাড়িতে।
.
রাত ৯টা বেজে গেল। তারা ৪জনেই খাবার টেবিলে খাওয়া শেষ করল। নাইলা আলাদা পরে খাবার খায়। খাওয়া শেষে রাজ্জাক সাহেব তার ঘরে চলে গেলেন।
রাহাতকে নিয়ে ফাহাদ তার ঘরে গেল। আফরোজা বেগম বুঝলেন রাহাত আর ফাহাদের আজ সারারাতেও গল্প করা শেষ হবে না। কিন্তু এই বাড়ির ঘটনা যত দ্রুত সম্ভব তাকে বলা উচিত। তাই নাইলাকে দিয়ে রাহাতকে ঢেকে পাঠালেন তিনি। নাইলা যখন রাহাতকে ডেকে আনল ততক্ষণে আফরোজা বেগম বাড়ির ছাদে চলে এসেছেন। রাহাতও তাকে খুঁজতে খুঁজতে ছাদে চলে এল। আফরোজা বেগমকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রসিকতার সুরেই সে বলল, “আপা, আসার পর থেকেই দেখছি তুমি আমাকে কিছু একটা বলার জন্য ছটফট করছ। অনেকটা জার্নি করে এসেছি। আজ তোমার সাংসারিক জীবনের সিরিয়াল মার্কা কাহিনী শুনতে পারব না। কাল সময় করে শুনবনি।” আফরোজা বেগম বেশ রাগান্বীত কণ্ঠেই বললেন, “চুপ কর! চুপচাপ চেয়ারটাতে বস। বেশি কথা বলবি না!” ছাদে সবসময়েই দুটো চেয়ার পাতা থাকে। রাহাত অনিচ্ছা সত্ত্বেও একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসল। আফরোজা বেগম একবার সিড়ির কাছে গিয়ে উঁকি দিয়ে দেখে আসলেন কেউ আছে কি না এখানে! তার এই উদ্বিগ্নতায় মোটেও বিস্মীত হচ্ছে না রাহাত। সে যখনি আসে এই বাড়িতে তখনি আফরোজা বেগম তাকে ছাদে এনে তার সংসারের নানান কথা বলেন। অতি তুচ্ছ ঘটনাও বর্ণণা করে বলেন। রাহাত চুপচাপ শুনে যায়। বিরক্ত হলেও তা প্রকাশ করে না।
.
আফরোজা বেগম ফিরে এসে চেয়ারে বসে রাহাতের মুখোমুখি হন। প্রথমে কিছুটা ইতস্ততা করে পরে এই পর্যন্ত ঘটা সব ঘটনা রাহাতকে বলেন। রাহাত কথাটা প্রথমে যত হালকা ভাবে নিচ্ছিল ধীরে ধীরে ঘটনা শুনতে শুনতে সে আরও বেশি উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছিল। আফরোজা বেগম নাইলার কাছ থেকে কথাটা শুনে যতটা হতভম্ব হয়েছিলেন রাহাতও তেমন হলো। পুরো কাহিনী শোনার পর বিস্ময় ভরা কণ্ঠে সে বলল, আপা, তুমি যা বলছ তার সবই কী নিশ্চিত হয়ে বলছ? আমার কিন্তু সব কিছু কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছে। ঘুমের ঔষধের ব্যাপারটা আমাকে আরও বেশি ভাবাচ্ছে। ফাহাদ বা দুলাভাইয়ের মধ্যে কেউ এমন কাজ করতে পারে এটা আমি ভাবতেও পারছি না।
.
কয়েক মুহুর্ত কেউ আর কোনো কথা বলল না। আফরোজা বেগম চেয়ার ছেড়ে উঠে সিঁড়ির দিকে গিয়ে আরেকবার উঁকি দিয়ে এলেন। তারপর বললেন, গতরাতে আমি ঘুমানোর অভিনয় করে অনেক্ষণ জেগে ছিলাম। কিন্তু হঠাৎই চোখ লেগে এল। চোখ মেলে দেখি। অনেক বেলা চলে গেছে। রান্নাঘরে গিয়ে দেখি নাইলার সেই একই অবস্থা। আজ রাতে আমি কিছুতেই ঘুমাব না। তুই ফাহাদের পাশে ঘুমাবার অভিনয় করে শুয়ে থাকবি। আজ রাতে ধরতেই হবে কাজটা কে করছে? রাহাত শান্ত স্বরে বলল, নাইলাকে বললেই তো হয় সে যাতে ঐ জগ থেকে পানি না খায়। আফরোজা বেগম গম্ভীর গলায় বললেন, না, আমি তাকে হাতে-নাতে ধরতে চাই। আমার যতদূর মনে হয় কাজটা তোর দুলা ভাইয়ের।
.
রাহাত আর কিছুই বলে না। সে ভাবতেও পারেনি কোনোদিন তার পছন্দের এই দুইজন মানুষকে এইভাবে সন্দেহ করতে হবে।
.
তারা দুজনেই নিচে নেমে এসে যে যার যার ঘরে চলে গেলেন। আফরোজা বেগম দেখলেন এর মধ্যেই রাজ্জাক সাহেব ঘুমিয়ে পড়েছেন। আফরোজা বেগমের এই প্রথম মনে হচ্ছে লোকটা ঘুমানোর অভিনয় করছে। তিনি ঘুমিয়ে পড়লেই তার আসল রুপ দেখাতে শুরু করবেন লোকটা। তার দিকে ঘুরেই ঘুমানোর অভিনয় করে শুয়ে পড়লেন আফরোজা বেগম।
.
বেশ খানিক্ষণ জেগে রইলেন তিনি। এরপরেই গতরাতের মতো চোখ বুজে এল তার। চোখ খুলে বুঝতে পারলেন অনেকটা সময় চলে গেছে। আজও যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। রাজ্জাক সাহেবকে বিছানাতে ঘুমন্ত অবস্থাতে রেখেই রান্নাঘরে গেলেন তিনি। সেই গতরাতের ঘটনারই পুনরাবৃত্তি ঘটেছে।নাইলার একই অবস্থা। হতাশা আর বিষন্নতায় ছেয়ে গেল আফরোজা বেগমের মুখ।
.
হঠাৎ তার মনে পড়ল, সে না হয় ঘুমিয়ে পড়েছিল, রাহাততো জেগে আছে। তাকে ডাকা যাক। সে যদি বলে ফাহাদ রাত্রে বিছানা থেকে উঠেনি তাহলে নিশ্চিত হওয়া যাবে কাজটা রাজ্জাক সাহেবই করেছে। তখন রাজ্জাক সাহেবকে একটু চেপে ধরতেই সব সত্য বলতে বাধ্য হবেন তিনি।
.
আফরোজা বেগম ধীরে ধীরে ফাহাদের ঘরের ভেতরে ঢুকে আস্তে আস্তে রাহাতকে ডাকতে লাগলেন। কিন্তু সেও ঘুমিয়ে পড়েছে। তার ডাকে সাড়া দিচ্ছে না। এবার আফরোজা বেগমের মেজাজ গেল বিগঢ়ে। তিনি হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফাহাদকে পরোয়া না করেই জোরে জোরে রাহাতকে ডাকতে লাগলেন। কিন্তু রাহাত উঠল না! মরার মতো পড়ে আছে। অথচ শ্বাসতো চলছে। এত জোরে শব্দে ডাকায় ফাহাদেরও ঘুম ভেঙে যাওয়ার কথা। সেও ঘুমাচ্ছে। তিনি ফাহাদেরও কাধ ধরে জোরে জোরে ঝাঁকিয়ে ডাকতে লাগলেন। একি! সেও উঠছে না। আফরোজা বেগমের বিস্ময়ের সীমা রইল না। তিনি দ্রুত তার ঘরে গিয়ে রাজ্জাক সাহেবকে জোরে জোরে ডাকতে লাগলেন। কিন্তু তিনিও উঠলেন না। এরা সবাই যেন বেঁচেও এখন মরা। আফরোজা বেগম ধপাশ করে মেঝেতে বসে পড়লেন। তার মাথায় কিছুই ঢুকছে না। বাসায় হচ্ছেটা কী এসব! তিনি এখন পাগল হয়ে যাবেন। এই বাড়িতে এত রাতে তিনি এখন পুরোই নিসঙ্গতা অনুভব করছেন। একটা অজানা ভয় তাকে চেপে ধরছে।
ফেসবুক পেজ: নিঃস্বার্থ ভালোবাসা
তিনি চারদিকে তাকাতেই এক অচেনা ভয়ে হিম হতে শুরু করল তার শরীর। তিনি ভয়ে ভয়ে চোখ বন্ধ করে বিছানায় উঠে রাজ্জাক সাহেবকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লেন।
.
.
সকাল সকালই তার ঘুম ভাঙল। রাজ্জাক সাহেব তখনও ঘুমাচ্ছেন। রাতের পুরো ঘটনা তার মনে পড়ল। তিনি বিছানা থেকে নেমে দেখলেন কারও ঘুম ভেঙেছে কিনা। সবাই এখনও ঘুমাচ্ছে। ঘরে অনেকগুলো শিশি বোতল ছিল। আফরোজা বেগম ফাহাদের ঘরের পানির জগ থেকে কিছুটা পানি একটা শিশিতে ঢেলে নিলেন, নিজের ঘরের জগের পানি থেকেও একটা শিশিতে পানি নিলেন। সকাল হলেই জগ ধুয়ে পানি পরিবর্তন করে নাইলা। রাতেও অবশ্য পানি দিয়ে যায় সে। পানির শিশিগুলো এক জায়গায় লুকিয়ে রাখলেন তিনি।
.
.
শুক্রবার হওয়ায় ফাহাদ এবং রাজ্জাক সাহেব একটু বেলা করে উঠেন এইদিনে। আফরোজা বেগম সকাল থেকেই উদাস হয়ে ছাদে বসে রইলেন। সকালের ঠাণ্ডা বাতাসও তার মনকে ঠাণ্ডা করতে পারছে না। হঠাৎই দেখলেন ছাদে রাহাত উঠে এসেছে। রাহাত ছাদে উঠেই আফরোজা বেগমের সামনে এসে অনুতাপের সুরে বলল, সরি আপা! রাতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। জার্নি করে আসায় শরীরটা মনে হয় একটু বেশিই ক্লান্ত ছিল। অনেক কষ্ট করেও চোখটা খোলা রাখতে পারলাম না।
.
আফরোজা বেগম কী বলবেন ঠিক বুঝতে পারছেন না। চুপচাপ দুজনেই কিছুক্ষণ বসে রইলেন।
.
তারপর মাথাটা রাহাতের দিকে একটু ঝুঁকিয়ে বললেন, ফারহানা নামের আমার এক কলেজের বান্ধবী আছে। তুই চিনতিস মনে হয়। ও এখন একজন ফরেনসিক ডাক্তার। আজ সবাই বাসায় থাকবে তাই আমার বাসা থেকে যাওয়া উচিত হবে না। আমি কল দিয়ে সব কিছু বলে দিব ওকে। তোকে আমি ওর ঠিকানা দিচ্ছি। তুই ১১টার দিকে দুইটা শিশি নিয়ে তার কাছে যাবি। দেরি হলেও ঐখানে বসেই জেনে আসবি শিশির পানিতে ঘুমের ঔষধ মেশানো আছে কিনা!
.
রাহাত পুরো বিস্মীত হয়ে বড় বড় চোখ করে আফরোজা বেগমের মুখের দিকে চেয়ে রইল। সে কিছুই বুঝতে পারছে না। আফরোজা বেগম গত রাতের পুরো ঘটনাটা রাহাতকে খুলে বললেন। রাহাত উৎকণ্ঠিত হয়ে বলল, তুমি সন্দেহ করছ ঘুমের ঔষধ শুধু নাইলার জগের পানিতে মেশানো থাকে না, সব জগেই মেশানো থাকে? কিন্তু সবাই ঘুমিয়ে থাকলে কাজটা করে কে?
.
.
জীবনের এমন জটিলতা রাহাত বা আফরোজা বেগম কারও জীবনেই কখনও আসেনি। রাহাত এবং আফরোজা বেগম বাড়ির সবার সাথে এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক ব্যবহার করছেন যাতে কেউ বুঝতে না পারে তাদের তারা সন্দেহ করছে।
.
সকাল ১১টা বাজতেই একটা কাজের কথা বলে রাহাত ফারহানার ল্যাবের উদ্দেশ্যে রওনা হলো। ফাহাদও তার সাথে যেতে চাইল। রাহাত অনেক কষ্টে বুঝিয়ে তাকে থামাল। ফাহাদ বেশ অবাক হলো। মামা কখনও তার সাথে এমন ব্যবহার করেন না।
.
রাজ্জাক সাহেবও আফরোজা বেগমের ব্যবহারে কিছুটা অবাক হলেন। প্রতি শুক্রবারে তিনি ফ্রি থাকেন। এই দিনে আফরোজা বেগমের সাথে নানান বিষয়ে কথা বলেন তিনি। কখনও আবার বাড়ির বাইরে একটু বেরিয়েও আসেন। কিন্তু আজ যেন আফরোজা বেগম তাকে এড়িয়ে চলছে।
.
.
দুপুর ২টা পর্যন্ত রাহাতের জন্য অপেক্ষা করলেন আফরোজা বেগম। রাজ্জাক এবং ফাহাদের সঙ্গে খাবারও খেলেন না তিনি। সারাক্ষণ ছটফট করতে লাগলেন।
.
দুপুর ৩টে নাগাত রাহাত ফ্যাকাশে মুখ করেই বাড়ির ভেতরে ঢুকল। তার হাতে একটা শপিং ব্যাগ। ফাহাদের জন্য একটা পাঞ্জাবী তাতে। ফাহাদকে দেখেই মুখে এক হ্রাস হাসি ফুটিয়ে তার দিকে ব্যাগটা এগিয়ে দিল। ফাহাদ অনেক খুশি হলো। তাহলে মামা এর জন্য বাহিরে গিয়েছিলেন! ফাহাদ পাঞ্জাবী নিয়ে তার ঘরে চলে গেল।
.
আফরোজা বেগম রাহাতকে নিয়ে আবার ছাদে গেলেন। রাহাতের কথা শুনে তিনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। তার ধারণাই ঠিক হয়েছে। ফাহাদের ঘরের পানি এবং তার ঘরের পানিতেও ঘুমের ঔষধ মেশানো ছিল।
ফেসবুক পেজ: নিঃস্বার্থ ভালোবাসা

.
আফরোজা বেগম ধপাস করে চেয়ারে বসে পড়লেন। চোখ বন্ধ করে তলিয়ে গেলেন চিন্তার সাগরে। এই বাড়ির কেউতো একজন তার সাথে খেলা খেলছে। যাকে তিনি ধরতে পারছেন না। এই বাড়ির সবারই অভ্যাস ঘুমানোর আগে পানি খাওয়া।
রাতে ঘুম থেকে জেগেও এরা পানি খায়। কেবল আফরোজা বেগমই বাড়েবাড়ে বাথরুমে যাওয়ার ভয়ে রাতে পানি খান না। তাই বাড়ির সবাই ঘুমের ওষুধ মিশ্রিত পানি খেয়ে ঘুমিয়ে থাকলেও তিনি জেগে ছিলেন। কিন্তু বাড়ির সবাইই যদি ঘুমিয়ে থাকে তাহলে নাইলার এই অবস্থা করেটা কে? আর পানিতে ঘুমের ঔষধ ইবা মেশায় কে? না কিছুতেই তার হিসাব মিলছে না। বাড়ির যে কোনো একজন তাহলে তার সাথে ছলনা করছে এবং ঘুমের অভিনয় করছে।
.
.
আফরোজা বেগম ভালো করেই বুঝতে পারছেন যে এই কাজটা করছে তাকে তিনি ধরতে পারবেন না। আবার না নিশ্চিত হয়ে কাউকে এবিষয়ে জিজ্ঞেসও করতে পারবেন না তিনি। তিনি যে নাইলার সাথে ঘটা ঘটনাটা আন্দাজ করতে পারছেন এটা তাদের বোঝাতে হবে। যার মনে পাপ আছে সে এতেই সতর্ক হয়ে যাবে। তার নাম না হয় নাই জানলেন তিনি। হয়তো এতে নিজেকে শুধরেও নিতে পারে অপরাধী।
.
আফরোজা বেগম অনেকটা উদাস কণ্ঠেই রাহাতকে বললেন, আর কিছুই করার নেই আমাদের। নাইলাকে তার গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিব। কিন্তু এখন ক’দিন ও আমার সাথে এক ঘরে ঘুমাবে। আর তোর দুলাভাই, ফাহাদ আর তুই আরেক ঘরে। রাহাত কিছুই বলল না।
.
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত এল। তারা সকলে একসাথে রাতের খাবার শেষ করলেন। খাবার শেষে আফরোজা বেগম গম্ভীর কণ্ঠে ঘোষণা দিলেন, এখন থেকে আমি আর নাইলা এক ঘরে ঘুমাব। কথাটা শুনে রাজ্জাক সাহেব এবং ফাহাদ বেশ অবাক হলো। নাইলাও হলো। আফরোজা বেগমের এইরকম ব্যবহারের আর গম্ভীর কণ্ঠের মুখোমুখি তারা কোনোদিন হয়নি। হতভম্বতায় তারা আর কোনো কথাই বলতে পারল না।
.
.
রাত ১১টা বাজতেই নাইলা তার বিছানা-পত্র এনে আফরোজা বেগমের ঘরের মেঝেতে শুয়ে পড়ল। আফরোজা বেগমও ঘরের দরজা ভেতর থেকে আটকে বিছানায় শুয়ে পড়লেন। শুয়ে মনে পড়ল ঘরের আলো নেভাতে ভূলে গেছেন। বিছানা থেকে আর উঠতে মন চাইল না। ফাহাদ আর রাজ্জাক সাহেবকে নিয়ে সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলেন তিনি। প্রকৃতির ডাকে রাত ৩টা নাগাত ঘুম ভাঙল তার। তিনি বিছানায় উঠে বসে মেঝেতে তাকাতেই পুরো স্তম্ভিত হয়ে গেলেন। মেঝেতে সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে শুয়ে আছে নাইলা। মাথার কাছে তার সমস্ত কাপড় গুলটি করে রাখা। যেমনটা রান্নাঘরে থাকতো। বিদ্যুৎ গতিতে তিনি দরজার দিকে তাকালেন। না, দরজা ভেতর থেকেই আটকানো। তাহলে ঘরে কী তারা ছাড়া আর কেউ রয়েছে? নাকি এটা অলৌকিক কিছুর কাজ! কিন্তু ঘটনাটা যদি অলৌকিক হত তাহলে অলৌকিকের তো পানিতে ঘুমের ঔষুধ মেশানোর কোনো প্রয়োজন নেই। নাইলা নিজে থেকে উঠে দরজা না খুললে কেউতো ঘরে প্রবেশও করতে পারবে না। আফরোজা বেগমের মাথা ঘুরাচ্ছে। তিনি হতভম্ব, স্তম্ভিত হয়ে মুর্তির মতো বিছানায় বসে রইলেন।
.
.
. . . . . চলবে . . . . .
.
.
লেখা: #Masud_Rana

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে