প্রণয় স্রোতে পর্ব-০৬

0
1015

#প্রণয় স্রোতে
#পর্বঃ৬
#লেখিকা আরোহি জান্নাত (ছদ্মনাম)

চোখ মেলে নিজেকেও হসপিটালের বিছানাতে আবিষ্কার করে বহ্নি। ধীরে ধীরে ম’স্তি’ষ্ক সজাগ হতে থাকে যেন।এখানে কি করছে সে? প্র’শ্ন’টা মাথাতে আসতেই তড়াক করে মনে পড়ে গেল ইয়ারাব এর খবরটি।বাকিরা কোথায় এটা ভেবেই তড়িঘড়ি করে বেড থেকে নেমে পড়ল বহ্নি।যত দ্রু’ত স’ম্ভ’ব পা চালিয়ে বেরিয়ে এলো কেবিন থেকে। তবে কেবিন থেকে বের হয়ে ইয়ারাব এর জন্য ব’রা’দ্দ কেবিনে পা ফেলার আগেই কারো হেঁ’চ’কা টানে ভেতরে ঢুকতে বাধা পড়ল বহ্নি এর।পেছনে ফিরে আরাবকে দেখে বেশ অবাক হয় সে।আরাব য’থে’ষ্ট স্বা’ভা’বি’ক। কে বলবে আজ এই ছেলেটার প্রি’য় মানুষ টি নেই। বহ্নি এক নয়নে আরাবকে অবলোকন করতে ব্য’স্ত তখন আরাব বহ্নি কে টেনে নিয়ে আসে বহ্নি এর জন্য ব’রা’দ্দ কেবিনটিতে।

বহ্নি বুঝতে পারেনা কিছুই। বহ্নি এর প্র’শ্ন’বোধক চাহনি দেখে আরাব বলে ওঠে,

“ওই কেবিনে ভাই আর ভাবি আছে। ওখানে এখন তোমাকে যেতে হবে না।তুমি এখানে রে’স্ট করো!”

আরাবের কথাটা ম’স্তি’ষ্কে প্রবেশ করতে সময় লাগলো একটু।যখনই কথাটা ম’স্তি’ষ্ক ধারণ করতে পারলো তড়াৎ করে উঠল ম’স্তি’ষ্কে’র নিউরন গুলো।তানভি আর ইয়ারাব ওই কেবিনে।কিন্তু সেটা কি করে স’ম্ভ’ব?”

বহ্নি এর ভাবনার মাঝেই আরাব কিছু ওষুধপত্র গোছাতে গোছাতে বলে উঠল,

“তোমাদের দুই বোনের কি অ’জ্ঞা’ন হয়ে যাওয়া রোগ আছে নাকি? ভাবি দু দু বার জ্ঞা’ন হারালো! শেষ বার তো মাথাটাই ফাটিয়ে ফেলল।আর তুমি ভাবি কে না দেখে নিজে ও অ’জ্ঞা’ন হয়ে গেলে! আরে ও’য়া’র্ড’ব’য় এর কথার সত্য’তা টা অ’ন্ত’ত যাচাই করবে তো!”

আরাবের কথাগুলো মাথার ওপর দিয়ে যা’চ্ছে বহ্নি এর। তবে এটুকু বুঝলো ইয়ারাব এর কিছু হয়নি।

আবার কাজ করতে করতে নিজের মতো বলে উঠল,

“ভাই এর পাশের কেবিনের পে’সে’ন্ট আর নেই।তিনি মারা গেছেন।ওয়ার্ডবয় তাদের বাড়ির লোককে খবর না দিয়ে ভুল করে তোমাদের খবরটা জানিয়েছে। আর সেটা শুনে তোমরা দুই বোন জ্ঞা’ন হারিয়ে মাটিতে গড়াগড়ি খা’চ্ছি’লে।ভা’গ্যি’স আমি তাড়াতাড়ি চলে এসেছিলাম। ভাবির মাথায় ব্যা’ন্ডে’জ করিয়ে, তোমাকে কেবিনে রে’স্ট করতে রেখে যখনই ভাই এর কেবিনের দিকে যাচ্ছিলাম তখন রেসপন্স করতে শুরু করে ভাই!আল্লাহর রহমতে এখন আউট অফ ডে’ন্জার!”

এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে থামলো আরাব। সাথে একটা স্নতির নিশ্বাস ও নিলো সে।আর বহ্নি এক মনে কথাগুলো শুনছে!

তবে ইয়ারাব সু’স্থ হয়ে যাবে এটা শুনে প্র’শা’ন্তি পেল বহ্নি। যে মানুষটার ওপর প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিল সেই মানুষটা যখন মৃত্যুর সাথে লড়াই করে ফিরে আসে, তার ওপর কি আর কোনো প্রতিশোধ নেওয়া যায়!

রিভেঞ্জ অফ নেচার বলে ও একটা কথা আছে। ইয়ারাব এর শাস্তি টা না হয় প্রকৃতিই ওকে দেবে!

হঠাৎই বহ্নি এর মাথায় উদয় হয় এক নতুন প্র’শ্ন।তার আর আরাব এর স’ম্প’র্কে’র সমীকরণ কি হবে তাহলে? বহ্নি তো আরাবকে ভালোবেসে এই বিয়ে করেনি! না আরাব তার কোনো আচরণে এটা বুঝিয়েছে সে বহ্নি কে ভালোবাসে। বহ্নি এতদিন ইয়ারাব প্রতি ক্রো’ধে’র আগুনে জ্বলেছে আর আরাব সেই আ’গু’ন নেভানোর চে’ষ্টা’য় ম’শ’গু’ল ছিল।

কিন্তু এরপর? এরপর তাদের স’ম্প’র্ক টা কোথায় গিয়ে দাড়াবে! স্বা’ভা’বি’ক একটা স’ম্প’র্ক গড়বে নাকি! শেষ পরিণতি বি’চ্ছে’দ হবে ওদের সম্পর্কের।

নাহ!আর ভাবতে পারছে না বহ্নি।মস্তিস্কের নিউরনগুলো ছিড়ে আসবে এবার হয়তো! সকাল থেকে কম ধকল যায়নি শরীরের ওপর।এতটা মানসিক প্রে’শা’র আগে কখনো পায়নি বহ্নি। সেই সাথে অনাহার তো আছেই। মন সায় না দিলে ও শরীর তো মানতে নারাজ।প্রকৃতি সন্ধ্যা ছুঁ’ই’ছুঁ’ই। একটু ফ্রে’শ হওয়া এবার আবশ্যক হয়ে পড়েছে।

তানভি আর বহ্নি কে নিয়ে বাড়ি ফিরল আরাব।ওরা দুজনেই আসতে নারাজ।কিন্তু মনিমা নিজে ওখানে থেকে এদেরকে ফ্রেশ হতে পাঠিয়েছে।কারণ এখন ইয়ারাব আগের থেকে কিছুটা সু’স্থ।
___________________
এক মনে রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে বহ্নি। কত বিচিত্র আকাশের খেলা।কখনো নিকাশ কালো আঁ’ধা’রে ঢেকে থাকে।আবার কখনো পূ’র্ণি’মা’য় চারিদিক আলোকিত করে রাখে।মানুষের মন ও তেমনি।যখন মন খারাপেরা হানা দেয় তখন মনটা ও নিকাশ কালো আঁ’ধা’রে ঢেকে থাকে আর যখন স’ম’স্ত তি’ক্ত’তা দূর হয়ে যায় তখন পূ’র্ণি’মা’র মতো জ্ব’ল’জ্ব’লে।

আচ্ছা বহ্নি এর আকাশ তো এখন নিকাশ কালো আঁ’ধা’রে ঢেকে আছে এখানে কি কখনো পূ’র্ণি’মা হবে!

নিজেই নিজেকে প্র’শ্ন করে উঠল বহ্নি। তানভি হসপিটালে।রাতে ইয়ারাব এর কাছে একজনের বেশি এলাও না। আর তানভি কিছুতেই ইয়ারাব কে ছেড়ে আসবে না।তাই বাকিরা সবাই বাড়িতে চলে এসেছে। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নানা রকম ভাবনায় মশগুল বহ্নি। তখনি ওয়াশরুম এর দরজা খোলার শব্দে ধ্যা’ণ ভা’ঙে তার।আরাব কেবলই শাওয়ার নিয়ে বেরিয়েছে।বহ্নি আরাবকে বের হয়ে আসতে দেখে নিজে ও বেলকনি থেকে রুমে চলে এসেছে। আজ একটা কঠিন সিদ্ধা’ন্ত নিয়েছে সে।যদি ও বহ্নি এর ধারণা আরাব এর এটাতে পূ’র্ণ সম’র্থ’ন থাকবে।তাও কেমন যেন জড়তা কাজ করছে মনের মধ্যে।

আজ সকাল থেকে অনেক ধকল গেছে আরাব এর ওপর দিয়ে।এত বড় কিছু ঘটবে সেটা কারোরই ধারণা ছিল না আর না ছিল এই পরিস্থিতি তে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া।তবু ও আরাবকে সবটা মানিয়ে নিতে হয়েছে।এই মুহূর্তে সবটা ঠিকঠাক আছে এটাই যেন আরাবের শান্তি।

“আমার কিছু কথা ছিল!”

অনেক জড়তা নিয়ে শেষমেশ বলে উঠল বহ্নি।

“হুম বলো!”

নির্লিপ্ত কন্ঠে বলে উঠল আরাব।

“আমি কিছু বলতে চাচ্ছি!”

মানে.. ”

আমতা আমতা করে ও বলে উঠতে পারছে না বহ্নি। কথাটা কিভাবে শুরু করবে।বহ্নি এর আমতা আমতা দেখে ভ্রু কুচকে গেল আরাবের।

আরাব আর বহ্নি যে দূ’র’ত্বে দাঁড়িয়ে ছিল সেটা ঘুচিয়ে দিল আরাব।ধীর পায়ে এগিয়ে গেল বহ্নি এর কাছে। মেয়েটা এখনো হাসফাস করছে।

“রি’লা’ক্স বহ্নি! এতো হেজিটেড করার কিছু নেই। তোমার যেটা বলার নি’শ্চি’ন্তে আমাকে বলতে পারো!”

আরাবের ভ’র’সা’পূ’র্ণ কথাতে একটু সাহস পেল যেন বহ্নি। একটু শ্বা’স নিয়ে বলে উঠল ,

“আই থিংক আমাদের ডিভোর্স নেওয়া উচিত! ”

এটুকু বলেই থেকে গেল বহ্নি। আরাবের রিয়াক্ট দেখার জন্য ওপরে তাকালো।আর তাকাতেই

চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে