নীলাকাশ_কালো_মেঘ part_9

0
1149

নীলাকাশ_কালো_মেঘ part_9
#adrin_anisha
.
নীলা বুঝতে পারে আকাশ সত্যিই তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। নিজের বোকামির জন্য নিজেই নিজের মাথায় একটা থাপ্পড় দিল।
ওদিকে আকাশ নীলার কান্ড দেখে হাসিতে লুটোপুটি খাচ্ছে। আকাশ যখন এসেছিল তখন নীলা একমনে চোখ বন্ধ করে গান শুনছিল। আকাশের ইচ্ছে হয়নি নীলাকে ডাক দিতে, এতো কিউট লাগছিল নীলাকে, আকাশ চাইছিল এভাবেই কিছুক্ষন দেখবে তার পরী কে। কিন্তু হঠাৎ লক্ষ্য করল, নীলা একবার চোখ খুলল আবার মাথা ঝাকিয়ে চোখ বন্ধ করল। আকাশ এগিয়ে গেল নীলার কাছে। নীলা চোখ খুলে আকাশ কে দেখেই চোখ বন্ধ করে মাথা ঝাকিয়ে আবার তাকায়। তখন নীলার পাগলামো দেখে আকাশ আর হাসি আটকাতে পারে না। এরপর যখন নীলা ধীরে ধীরে ওর একটা আঙুল দিয়ে আকাশ কে খোঁচা দিল। আর অবাক হয়ে আকাশের দিকে তাকালো। আকাশ তখন হো হো করে হাসতে লাগল। নীলার নিজের পাগলামি দেখে লজ্জায় অন্যদিকে ঘুরে গেল। কোনোমতে নিজেকে সামলে বলল,
– কি রে আজ তো শুক্রবার, আজও পড়াতে চলে এলি.?
আকাশ কোনোমতে হাসি থামিয়ে সিরিয়াস হওয়ার চেষ্টা করে বলল,
– কেন? শুক্রবার কি পড়ালেখা করা বারণ? নাকি আমাকে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে না?
– হুম, তোকে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে না। কিন্তু পড়াতে এসেছিস ভালই হলো। এমনিতেও এই কয়দিন পড়াটা কমই হচ্ছে। তুই থাকলে আমি মনোযোগ দিয়ে পড়তে পারি কিছুক্ষন।
আকাশ বুঝতে পারল না নীলার প্রথম কথাটা শুনে কষ্ট পাবে নাকি পরের কথাটা শুনে খুশি হবে। না চাইতেও খুশিই হলো আকাশ। নীলার অবহেলাও ভালো লাগে আকাশের৷ নীলা কথা বলতে বলতে পড়ার টেবিলে গিয়ে বসল। আকাশ ও গিয়ে নীলা পাশে বসে পড়ল।
– খেয়েছিস তুই?
– হুম, অনেক আগেই ?
– খাওয়ার পরে কই একটু বই পড়বি তা না, তুই গান শুনছিলি?তা কি এমন গান শুনছিলি, যেটা শুনে পাগল হয়ে গেলি?
– পাগল তোর জন্যে রে
আকাশের বুক টা ধুক করে উঠলো? ও বুঝতেই পারেনি যে নীলা গানের নাম বলেছে, ও ভেবেছে নীলা হয়তো ওকে বলছে যে ওর জন্য পাগল। নীলার দিকে মুখ নিয়ে চোখ বড় বড় করে জিজ্ঞেস করল,
– কি..কি বললি তুই?
– পাগল তোর জন্যে রে
– কিহ? কার জন্য?
– উফফফ, গাধা। আমি এই গানটা শুনছিলাম। পাগল তোর জন্যে রে পাগল এ মন। বুঝলি?
আকাশ মুচকি হেসে নিজের বুকে হাত চেয়ারে হেলান দিয়ে মাথা উপরের দিকে দিয়ে ভাবছে,
– ভাগ্য ভালো এটা গান ছিল। যেভাবে হার্টবিট বেড়েছিল আর কিছুক্ষন হলে হার্টঅ্যাটাক করতাম।
– কিছু বললি?
– নাহ, ম্যাডাম, আপনি পড়ুন।
নীলা পড়তে শুরু করল, আর আকাশ মুচকি হেসে ভাবতে লাগল,
– ইসস , এটা যদি গান না হয়ে তোর মনের কথা হতো, আমি নিজেও জানি না আমি কি করতাম। খুশিতে পাগল হয়ে যেতাম।
.
রাতে নীলার বাবা অনেক দেরী করে আসে। বাবাকে ক্লান্ত দেখে নীলার আর কিছু বলতে ইচ্ছে হয়নি। ভাবলো কাল একবারে বলবে।
সকালে নীলা উঠে ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং রুমে গিয়ে বাবা কে না দেখে মা কে জিজ্ঞেস করে,
– মা বাবা কোথায়?
– দেখলিই তো, কালকে কত ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এখন একটু ঘুমাচ্ছেন শান্তিতে।
– আচ্ছা।
নীলা ভাবলো স্কুল থেকে এসেই নাহয় সব বলবে বাবাকে।
নাস্তা শেষ করে স্কুলের জন্য রেডি হচ্ছিল, এমন সময় নীলার ফোনে কল এলো। অচেনা নাম্বার তাই নীলা প্রথমে রিসিভ করেনি। বারবার কল করতে থাকায় নীলা ভাবলো ওর কোনো বন্ধু ও হতে পারে। তাই রিসিভ করে নিল,
– আসসালামু আলাইকুম, কে?
– ভুলে গেলে?
কন্ঠ টা চিনতে মোটেও অসুবিধা হয়নি নীলার
– মেঘ?
– বাহ, ভুলে যাওনি তাহলে। অবশ্য আমি তোমাকে ভুলতে দেবোও না।
– তোমার কি লজ্জা বলতে কিছু নেই? এতো গুলো নাম্বার ব্লক করে দিলাম তাও এতো নাম্বার পাও কোথায়?
– আমার বাবার সিমের কোম্পানি আছে তো তুমি জানো না?
– উফফ, শাট আপ। তুমি কি বুঝতে পারছ না আমি বিরক্ত হচ্ছি, যদি সত্যিই ভালোবাসো তাহলে প্লিজ আর বিরক্ত করো না।
– আমি বিরক্ত না করলে কি তুমি হ্যাঁ বলবে?
– আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি না ভাইয়া। প্লিজ বোঝার চেষ্টা করো৷ আরো তো কত সুন্দরী মেয়েরা আছে আমাদের স্কুলে, ওদের মধ্যে থেকে কাউকে বেছে নাও না। আমি তো এতো সুন্দর ও না।
– সুন্দর ধুয়ে কি আমি পানি খাব? তাছাড়া তোমার ওই মায়াবি চোখের সামনে পৃথিবীর সব সুন্দর ই বৃথা।
– তোমার সাথে কথায় পারব না। নিজের ভালো নিজে না বুঝলে আর কি করার। এখনই যদি ভুলতে পারো তাহলে তোমার জন্যেই ভালো। নাহলে পরে তোমারই।কষ্ট হবে।
কথাগুলো বলেই ফোন কেটে দিল নীলা। হঠাৎ ভাবলো আকাশ কে ফোন দিয়ে এটা বললে ও নিশ্চয়ই ব্যপার টা সামলে নিতে পারবে। যেই ভাবা সেই কাজ। নীলা তাড়াতাড়ি আকাশ কে কল দিল,
– আকাশ ভাইয়া?
– কি রে সূর্য কোন দিকে উঠলো, আজ তুই আমায় কল দিচ্ছিস?
-হুম, দরকারেই দিয়েছি।
– সেটাই তো, দরকার ছাড়া তো আর দিবি না, সার্থপর। বল কি চাই?
– শোন না, আমাকে একটা ছেলে ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব করছে।
– কিহ? কে?
– আমাদের স্কুলের একটা ছেলে। আর ২ দিন ধরে অনেক জালাচ্ছে,
– তোকে কাল থেকে ছেলেটা জালাচ্ছে আর তুই আমাকে আজকে বলছিস?
– আমি জানতাম তুই রাগ করবি তাই তো বলি নি। আগে কথা দে তুই কোনো ঝামেলা করবি না, জাস্ট ওকে বোঝাবি।
– ঠিক আছে। নাম্বার দে তুই।
নীলার থেকে নাম্বার নিয়ে ফোন কেটে দিল আকাশ।নীলা মনে মনে ভাবতে লাগল কি করবে আকাশ৷ যাই করুক, ঝামেলা শেষ হবে মনে করে একটা নিশ্বাস ছাড়লো নীলা।
.

স্কুলে যাওয়ার পথে সাদিয়াকে আনার জন্য ওর বাসার দিকে যাবে তার আগেই দূর থেকে দেখলো রাব্বি দাঁড়িয়ে আছে। নীলার কাছে কেন যেন মনে হলো রাব্বি ওর জন্যই দাঁড়িয়ে আছে। তাই সাদিয়াকে না নিয়েই রাস্তার অন্যপাশে চলে গেল নীলা। আর তাড়াতাড়ি হাটতে লাগল। আড়চোখে দেখলো রাব্বিও রাস্তা পেরিয়ে ওর পিছু পিছু আসছে।
নীলা নিজের হাটার স্পীড আরো একটু বাড়ালো। কিন্তু তবুও রাব্বির বড় বড় পায়ের কাছে নীলার ছোট ছোট পা গুলো হেরে গেল। রাব্বি নীলার কাছাকাছি এসে নীলার কানের কাছ দিয়ে আই লাভ ইউ বলেই অন্য পাশে চলে গেল।
.
.
.
.
.
চলবে…….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে