নীলাকাশ_কালো_মেঘ part_8

0
1116

নীলাকাশ_কালো_মেঘ part_8
#adrin_anisha
.
মাঝরাতে একটা অচেনা নাম্বার থেকে কল আসলো নীলার ফোনে। ঘুমের ঘোরে অচেনা নাম্বার দেখে ফোনটা সাইলেন্ট করে রেখেদিল নীলা।
সকালে উঠে ফোন চেক করে প্রায় ৫ টা মিসকল দেখলো নীলা। অচেনা নাম্বার তাই কল ব্যাক করার কোনো প্রশ্নই আসে না। কিন্তু তবুও কিছু ভেবে কল ব্যাক করল নীলা। আশ্চর্যজনক ভাবে কল দেয়ার সাথে সাথেই রিসিভ হয়ে গেল,
-আসসালামু আলাইকুম। কে?
– কেমন আছো?
– কে আপনি?
– কাল রাতে কল রিসিভ করোনি কেন? আমি তো ভেবেছিলাম এটা তোমার নাম্বার ই না।
– আরে কে আপনি?
– তুমিই ভেবে দেখো, দেখি চিনতে পারো কি না।
– দেখুন হেয়ালি ছেড়ে বলুন আপনি কে? আর আমার নাম্বার পেলেন কোথায়?
– নাম্বার পাওয়া কোনো ব্যাপার ই না। আগে বল তুমি কি সত্যিই আমাকে চিনতে পারছ না।?
– উফফ, আজব তো। কে আপনি? আর তাছাড়া আপনি কি আমায় চেনেন?
– তুমি আমাকে না চিমলেও তোমাকে হাজার ভীড়ের মাঝেও আমি চিনতে পারবো। তুমি আমার নীলা।

নীলা মনে মনে চিন্তা করতে লাগলো কে হতে পারে এই ছেলেটি? হঠাৎ নীলার মনে হলো ছেলেটার কন্ঠের সাথে মেঘের কন্ঠের অনেক মিল আছে। নীলা ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– তুমি কি মেঘ?
– বাহ, তার মানে শুধু যে আমিই তোমাকে ভালোবাসি তা না৷ তোমার মনেও কোথাও না কোথাও আমি আছি।
– শাট আপ, আমার মনে তুমি আছো কথা ঠিক। শুধু তুমি কেন? যাদের আমি তারা সবাই ই তো আমার মনে আছে। কিন্তু তার মানে এই না যে আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমাকে ভুলে যাও ভাইয়া। আমি কখনোই তোমাকে ভালোবাসতে পারবো না।
– ভালোবাসো না সেটা মানছি, কিন্তু কখনোই ভালোবাসবে না সেটা কিভাবে বলছো? তাহলে কি তুমি অন্য কাউকে ভালোবাসো? আমি যতদূর জানতাম তোমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই।
– হুম, ঠিক ই শুনেছো৷ আর আমি কাউকে ভালোওবাসি না। আর এসবের কোনো ইচ্ছাও নেই আমার। তাই বলছি আমাকে আর বিরক্ত করবে না প্লিজ।
– আচ্ছা কিন্তু শো……

মেঘের কথা না শুনেই ফোন কেটে দেয় নীলা। আর মনে মনে ভাবতে থাকে মেঘ ওর নাম্বার পেল কোথায়? এরমাঝেই মেঘ আবার কল দেয়। কিন্তু নীলা কেটে দেয়৷ মেঘ বারবার কল দিতে থাকলে নীলা নাম্বার ব্লকলিস্টে রেখে দেয়। তারপর চলে যায় ফ্রেশ হতে।

কিছুক্ষন পর ফ্রেশ হয়ে আসতেই দেখলো ফোনের স্ক্রিনে আলো জ্বলছে। ফোন হাতে নিয়ে দেখলো অচেনা নাম্বার থেকে অনেকগুলো মিসডকল। দেখতে দেখতেই আবার কল এলো সেই নাম্বার থেকে। নীলা রিসিভ করলো,
– আসসালামু আলাইকুম, কে?
– এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে?
নীলা বুঝতে পারল এটা মেঘের কন্ঠ। বিরক্তি নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– ওফফ, তুমি আবার কেন কল দিয়েছো? প্লিজ আমাকে ডিস্টার্ব করবে না আর।
কথাগুলো বলেই ফোন কেটে দেয় নীলা। সাথে সাথে নাম্বার টা ব্লকলিস্ট এ রেখে দেয়।
ফোন রেখে ব্রেকফাস্ট করতে যায় নীলা। কিছুক্ষন পর এসে দেখে আবারো অনেকগুলো মিসডকল অন্য একটা অচেনা নাম্বার থেকে। নীলার বুঝতে বাকি রইলো না যে এটাও নিশ্চই মেঘেরই নাম্বার। পরের বার কল আসতেই রিসিভ করল নীলা,
– আসসালামু আলাইকুম
– তুমি আমার ঠিক কতোগুলো নাম্বার ব্লক করতে পারবে আমিও দেখবো।
– সমস্যা টা কি তোমার?
– আমার সমস্যা তো তুমি, খেতে পারি না, ঘুমাতে পারি না, চোখ ও বন্ধ করতে পারি না। সবসময় তোমাকেই দেখি। মনে হয় এই বুঝি তুমি আমার দেখছো, এই বুঝি তুমি বললে তুমিও আমাকে ভালোবাসো?
– এগুলো সপ্নেও সত্যি হবে না।
– কে বলেছে? আমার সপ্নে তো প্রতিদিনই সত্যি হয়। আর আমার বিশ্বাস, এটা বাস্তবেও হবে।
– কোনোদিনো না। আমাকে বিরক্ত করা বন্ধ করো প্লিজ।
নীলা আবার ফোন কেটে দিল। আর নাম্বার টাও ব্লক করে দিল। কিছুক্ষন ফোন হাতে ওয়েট করলো, আর কল আসে কি না দেখার জন্য। কিন্তু আর কল আসে নি। নীলা ফোনটা পাশে রেখে শুয়ে পড়লো। আয়ান এর থ্রেট আর মেঘ কিভাবে ওর নাম্বার পেল এগুলো নিয়ে ভাবতে লাগলো।
.
একটা বিলের ধারে বসে আছে মেঘ। হাতে ফোন, আর ফোনে নীলার ছবি। আর নীলার ছবির সাথে কথা বলছে মেঘ,
– নীলা, তুমি কি সত্যিই আমার ভালোবাসা বোঝো না? আমি যে সত্যিই তোমায় অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছি। তোমাকে না দেখে একটা মুহুর্ত ও থাকতে ইচ্ছা করে না। আজ শুক্রবার, সারাদিন তোমার সাথে দেখা হবে না। এটা আমি কিছুতেই মানতে পারছিলাম না, তাই তো কল দিয়ে তোমায় বিরক্ত করতে হলো, তোমার কন্ঠটা যে বারবার শুনতে ইচ্ছে হচ্ছিল। নীলা আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো না, আর এটাও জানি তুমি কাউকেই ভালোবাসো না। যতদিন তুমি কাউকেই ভালোবাসবে না, ততোদিন আমিও তোমাকে জোর করব না আমাকে ভালোবাসার জন্য, কিন্তু ভালো তো তোমার আমাকেই বাসতে হবে, আমি অন্য কারো সাথে তোমায় দেখতে পারব না। তুমি যতদিন বলবে আমি অপেক্ষা করতে পারব, কিন্তু কিছুতেই তুমি অন্য কারো হবে সেটা মেনে নিতে পারব না।
.
.
বারান্দায় এসে বসে আছে নীলা। কানে হেডফোন দিয়ে গান শুনছে। মেঘলা আকাশ, চারদিকে নীরবতা। ঠিক ঝড় আসার আগে যেমনটা থাকে। এই সময়টা অনেক ভালোলাগে নীলার। আর এরকম সময়ে চোখ বন্ধ করে গান শুনতে আরো বেশি ভালো লাগে।

“পাগল তোর জন্যে রে,
পাগল এ মন, পাগল
পাগল তোর জন্যে রে
পাগল এ মন, পাগল।
মুখে বলি দূরে যা,
মন বলে থেকে যা
মুখে বলি দূরে যা,
মন বলে থেকে যা,
দূরে গেলেই মন বুঝে,
তুই কত আপন”

গানটা চোখ বন্ধ করে শুনতে শুনতেই হঠাৎ আকাশের চেহারা টা ভেসে আসলো নীলার সামনে। মনে হলো যেন এই কথা গুলোর সাথে নীলা আর আকাশের সম্পর্কের কত মিল। যেন নীলাই আকাশ কে কথা গুলো বলছে।৷ নীলা তাড়াতাড়ি চোখ খুলে ফেলে, নিজের মনের ভুল ভেবে আবার চোখ বন্ধ করে। এবারো বারবার আকাশের কথাই মনে হয়, তাই চোখ খোলে গানটা চেঞ্জ করার জন্য, কিন্তু চোখ খুলেও দেখে সামনে আকাশ দাঁড়িয়ে আছে।
চোখের ভুল ভেবে মাথা ঝাকিয়ে আবার সামনে তাকালে দেখে আকাশ হাসছে। নীলা ধীরে ধীরে আকাশের কাছে গিয়ে একটা আঙুল দিয়ে আকাশ কে খোঁচা দিল। দেখলো এটা মনের ভুল নয় সত্যিই আকাশ দাঁড়িয়ে আছে।
.
.
.
.
.
চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে