নতুন জীবন পার্ট-০৭

0
1002

নতুন জীবন
_________________
লেখিকা:বাবুনি
__________________
(পার্ট:৭)

“রাইফ, তুমি কি ভাবছো তামিন জেল থেকে ছাড়া পেয়ে গেলে, তুমি ওর কাছে চলে যাবে_!”
“তানছিয়া, কিছুটা চুপসে গেল,কারণ সে এটাই বুঝতে পারছে না রাইফ কি করে এসব জানলো।”
“রাইফ, নিশ্চয়ই তুমি ভাবছো আমি কি করে এসব জানি_! অবাক হবার কিছু নেই। আমি সব জেনেশুনেই তোমাকে বিয়ে করেছি। সেইজন্য বিয়েতে ঐরকম কিছু ঘটতে পারে ভেবে ই, আগে থেকে পজিশন নিয়ে গেলাম।”
“তানছিয়া, কিছু টা ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল, তাহলে বিয়ে টা করলেন কেন_!”
“রাইফ, সেদিন হসপিটাল যখন ভাবিকে নিয়ে যাই, ডেলিভারির জন্য তখন তুমি ও ছিলে ঐ হসপিটালে। তোমাকে তোমার বাবা মা ভর্তি করেছিলেন। আম্মু ও আমি তোমার আম্মুকে একা বসে থাকতে দেখে।পাশে গিয়ে জিজ্ঞেস করি কি হয়েছে, কাকে নিয়ে হসপিটাল এসেছেন_! আর এতো চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন_! তখন তিনি আম্মুকে সব খুলে বললেন। তোমার আব্বু ও ঐসময় ঐখানে উপস্থিত হলেন কিছুক্ষণ পর। তারপর ওনাদের সাথে কথা বলে, তোমার সব ঘটনা শুনে। আম্মু ঠিক করেন তোমাকে আমার বউ করে ঘরে আনবেন।”
“তানছিয়া, আশ্চর্য আমার ব্যাপারে সব জেনে শুনে।আপনার মা আমাকে না দেখে ছেলের বউ করতে রাজি হয়ে গেলেন_! আর সাথে আপনি ও।”
“রাইফ, কে বলল আমার মা তোমাকে দেখেন নি_! আম্মু তো তোমার পাশে গিয়ে, সেদিন মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে এসেছেন। তাছাড়া তোমার ঐ মায়াবী চেহারা দেখে ওনি মুগ্ধ হয়ে ছিলেন।আর আমি এই বিয়েতে আমার আম্মুর জন্য রাজি হয়ে গেলাম। কারণ আমি আম্মুর কথার অবাধ্য কোনো দিন হইনি। আম্মুর মনে কখনো কষ্ট দিতে পারবো না আমি। কারণ ছোট থেকে আম্মু ই আমাদের সব।বাবা মারা যাওয়ার পর আম্মু ই আমাদের তিন ভাই বোনকে, কোলেপিঠে করে বড় করেছেন।”
“তানছিয়া, বাহ্ আপনি তো মস্ত বড় মনের মানুষ। নিজের মায়ের কথা ভেবে বিয়েতে রাজি হয়ে গেলেন। অথচ একবারও কি প্রয়োজন মনে করলেন না_! যে আমার এই বিয়েতে মত আছে কি না_!”
“রাইফ, সেটার প্রয়োজনীয়তা আমার থেকে তোমার আব্বু আম্মুর বেশি থাকা প্রয়োজন।
কেননা এই বিয়েটা তুমি ও তাদের জন্য করেছো।”
“তানছিয়া, হ্যাঁ তাই বলে কি এখন আমাকে আপনার ঘরসংসার করতে হবে_!”
“রাইফ, সেটা তোমার ইচ্ছে আমি জোর করবো না। তোমার ইচ্ছে হলে আমার সাথে ঘরসংসার করবে।না ইচ্ছে হলে তামিন জেল থেকে ছাড়া পেয়ে গেলে, চলে যেতে পারো ওর কাছে। আমার কোনো সমস্যা নেই। তবে__”
“তানছিয়া, কি তবে_!”
“রাইফ, যেই কয়দিন এই বাড়িতে থাকবে প্লিজ সবার সাথে হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করবে। আমি চাই না আমার ফ্যামেলিকে এসব বিষয়ে ইনফর্ম করে কষ্ট দিতে।সো প্লিজ আমার এই অনুরোধ টুকু রেখো প্লিজ।এই কয়দিন স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করবে,যাতে ওরা কিছু না বুঝে।”
“তানছিয়া, মনে মনে ভাবছে কি করবে এখন সে, আদৌও সে জানে না তামিন কে সে আর ভালোবাসে কি না_! তাছাড়া এই লোকের সাথে ঘর করার তো প্রশ্নই ওঠে না।
কিছুক্ষণ ভেবে বলল, ঠিক আছে আমি রাজি।তবে এটা মাথায় রাখবেন এইটা জাস্ট অভিনয় বাস্তব না।”
“রাইফ, ঠিক আছে শুকরিয়া।”
“তানছিয়া, আর কিছু বলবেন_!”
“রাইফ, না আর কিছু না তবে নামাজ টা পড়ে নাও।”

‘ রাইফ চলে গেলে,তানছিয়া ভাবতে লাগলো সে এখন কি করবে।রাইফকে স্বামী হিসেবে মেনে নেয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। এদিকে তামিনের প্রতি ভালোবাসা টা আছে কি না সে জানে না।তবে ওর জন্য এখনো মনখারাপ হয়,এটা কি ভালোবাসা না কি মায়া! না আর ভাবতে পারছে না সে। নামাজ পড়তে ইচ্ছা করছে না শুয়ে পড়লো সে।
হঠাৎ ওর এক বান্ধবীর কল আসলো কলেজের।
তানছিয়া ফোন অন করেছিল সকালে ভুলেই গেছিল অফ করে রাখতে। তাছাড়া এখন অন থাকলে ও সমস্যা নেই। কারণ যে ডিস্টার্ব করার ছিল সে জেলে।
কল ধরলো তানছিয়া।
“তানছিয়া, হ্যালো রিমা_!”
“রিমা, হ্যাঁ কি অবস্থা তর_! কয়েক দিন যাবত কলেজে দেখছি না।”
“তানছিয়া, ঐ আসলে__ সত্যি টা আর বললো না তাড়াহুড়ো করে বিয়ে হয়েছে। এখন এইটা বললে ও হয়তো রাগ করবে ওকে বলাও হয়নি বিয়েতে।”
“রিমা, ঐ আসলে কি, আচ্ছা ছাড় এসব যে কারণে কল করছি সেটা বলি।”
“তানছিয়া, হু বল_!”
“রিমা, আমার চাচ্চু বাইক রেসিং প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছেন। তুই তো ভালো বাইক চালানো পারিস নাম দিয়ে দিলাম তর। আগামী কাল সকাল ১০টায় চলে আসিস আমাদের বাসায়। একসাথে যাবো ঐখানে।”
“তানছিয়া, কি বলছিস আমাকে জিজ্ঞেস না করে নাম দিয়ে ফেললি_!”
“রিমা, হু দিয়েছি বেশ করেছি। তাছাড়া এটা মেয়েদের জন্যই আয়োজন করা হয়েছে।আর আমার পুরো বিশ্বাস আছে তর উপর। তুই ই ফাস্ট হবি এই প্রতিযোগিতায়। ঠিক আছে রে আমি এখন রাখি কাজ আছে।আর কাল সকালে ঠিক ১০টায় চলে আসিস কিন্তু।”
“তানছিয়া, কিন্তু শুন হ্যালো হ্যালো_!”

যাক বাবা ফোন টা কেটে দিল। আমি এখন কি করবো এখান থেকে তো যাওয়া কোনো ভাবেই সম্ভব নয়। কিছু তো একটা উপায় বের করতে হবে। যাই দেখি শাশুড়ি মাকে পটানোর চেষ্টা করি।

‘ বিকেলে রাইফ বাসায় ফিরলে শিরীনা বেগম থাকে নিজের রুমে ডাকলেন।
“রাইফ, আম্মু আমাকে ডাকছো_!”
“শিরীনা বেগম, হ্যাঁ বাবা।তানছিয়াকে নিয়ে ওদের বাড়িতে যেতে হবে।”
“রাইফ, কেন_!”
“শিরীনা বেগম, ওর আব্বু আম্মু কে দেখার জন্য ওর মনটা ছটফট করছে। তুই ওকে নিয়ে ওদের বাড়ি থেকে ঘুরে আয়।ওর মনটা ভালো হয়ে যাবে।দেখিস না এমনিতেই বাবা মা কে ছেড়ে আসায় ওর মনটা কেমন খারাপ হয়ে থাকে সবসময়।”
“রাইফ, ঠিক আছে আম্মু তুমি যখন বলছো তখন যাবো।”

‘ সন্ধ্যায় তানছিয়াদের বাসায় পৌঁছালো রাইফ ও তানছিয়া। ওদের দুজনকে থাকার জায়গা করে দেওয়া হলো তানছিয়ার রুমে।
সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত্রি নামলো। খাওয়া দাওয়া শেষে যে যার রুমে চলে গেল।তানছিয়া ও রাইফ রুমে আসলো। কিন্তু এখন কি হবে এখানে তো সোফা নেই। কে কোথায় ঘুমাবে!

“রাইফ, এখন ঘুমাবো কোথায় না মানে এখানে তো সোফা সেট নেই।”
“তানছিয়া, কিছু টা রেগে গিয়ে মনে মনে বলল আমার মাথায় ঘুমাও। কি আর করা আপনি বিছানায় ঘুমিয়ে পড়ুন।”
” রাইফ, আর তুমি_!”
“তানছিয়া, আমার কথা আপনাকে ভাবতে হবে না, নিজের কথা ভাবুন ঘুমিয়ে পড়ুন।”
“রাইফ, বলছিলাম কি দুজন বিছানায় ঘুমালে হয় না_!”
“তানছিয়া, চোখ গুলো লাল করে ওর দিকে তাকালো।”
“রাইফ,আরে পাশাপাশি না মাঝখানে বালিশ দিয়ে।”
“তানছিয়া, কিছু একটা ভেবে বলল, ঠিক আছে তবে ভুলেও মাথায় খারাপ কিছু আনবেন না।যদি ওরকম কিছুর চেষ্টা করেন তো খুব খারাপ হবে মাইন্ড ইট।”
“রাইফ, হুমমম ঠিক আছে।”

দুজন ঘুমিয়ে পড়লো মাঝখানে বালিশ দিয়ে।
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে তানছিয়াকে নিয়ে নামাজ পড়ে নিলো রাইফ। যদিও তানছিয়ার ইচ্ছে ছিল না নামাজ পড়ার। তবুও রাইফকে অসম্মান করা হবে নিজের বাড়িতে এনে,তাই সেও নামাজ পড়ে নিলো। তারপর নাস্তা সেরে রাইফ চলে গেল, নয়টার দিকে বাইরে ওর নাকি কি একটা কাজ আছে।
তানছিয়ার আম্মু আব্বু ও বেশ খুশি তানছিয়াকে এতো তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠতে দেখে।
রাইফ চলে যাওয়ার পর পর ই তানছিয়া রেডি হয়ে নিলো। জিন্স প্যান্ট একটা টপস আর হাইহিল কালো জুতা এবং কালো চশমা। তারপর তাড়াতাড়ি করে বাইকের চাবি নিয়ে নিচে নামতে লাগলো।
“তামিম,হঠাৎ তামিম সামনে এসে বললো কোথায় যাচ্ছো আপু_!”
“তানছিয়া, ওর কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল,বাইক রেসিং প্রতিযোগিতায় যাচ্ছি। দোয়া করিস,আর এখন কাউকে কিছু বলিস না ওকে।”
“তামিম, ঠিক আছে, কিন্তু আসার সময় আমার জন্য আইসক্রিম আনতে হবে।”
“তানছিয়া, ঠিক আছে আনবো, এখন যাই।”

‘ প্রায় ৩টার দিকে বাড়ি ফিরলো তানছিয়া।ভয়ে ভয়ে ড্রয়িং রুমের দিকে এগিয়ে আসলো হাতে ট্রফি নিয়ে।

সামনে তাকিয়ে যা দেখলো তা দেখে ওর চোখ কপালে উঠে গেল।

চলবে_!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে