তোর ছোটছেলের পড়াশোনার খবর কিছু রাখিস্?

0
673

– তোর ছোটছেলের পড়াশোনার খবর কিছু রাখিস্?

– কেন, মা? হঠাৎ এই কথা জিগ্গেস করছ?

– তোর ছেলেটা প্লে-গ্রুপে ভর্তি হয়েছে আজকে তিনমাস হয়ে গেল কিন্ত এখনও তো এ-বি-সিই চেনে না।

– তাই নাকি!

– হ্যা। তোর বউ ছেলেটাকে কোন এক স্কুলে যে ভর্তি করাল! এক্সপেরিমেন্ট করতে গিয়ে না আবার ছেলেটার ভবিষ্যৎ নষ্ট করে ফেলে!

মা গজগজ করে কথাগুলো বলে চলে গেলেন। আমি আমার স্ত্রীকে ডেকে ব্যাপারটা নিয়ে কথা বললাম।

– দাইয়ানের স্কুলে নাকি এখনও এ-বি-সি শেখায় নি, তুমি জান?

– হ্যা। ব্যাপারটা নিয়ে আমিও কিছুটা চিন্তিত। ভুল করে ফেললাম নাতো!?

– চিন্তা করে লাভ নেই। কালকেই চল ওর স্কুলে গিয়ে কথা বলি। ওরা নিশ্চয়ই কিছু বলবে।

-ঠিক বলেছ, কালই যাব।

পরদিন স্কুলে হেডমাষ্টারের সাথে দেখা করতে চলে গেলাম দুজনেই। আমাদেরকে দেখে তিনি স্বভাবসুলভ আন্তরিক ভঙ্গিতে বসালেন।

– আরে আপনারা! ছেলের পড়াশোনার খবর নিতে এসেছেন নিশ্চয়ই?

– জ্বি, কিছুটা সেরকমই।

– খুবই খুশি হলাম। বলুন কিভাবে সাহায্য করতে পারি। তবে একটা কথা, ও কেমন করছে এটা জিগ্গেস করবেন না, এই প্রশ্নের উত্তর আমরা দেই না।

– কেন?

– কারন, আমাদের কাছে ইম্পোর্টেন্ট হচ্ছে ওকে আমরা কি শেখাতে পারছি আর ও কি শিখছে সেটাই। রিপোর্ট কার্ড আমরা দেই না।

– খুব ভাল লাগল। আমরাও ওর শেখা নিয়েই একটু চিন্তিত। তিনমাসে ওতো এখনও এ-বি-সিই শিখলো না।

– দেখুন, লেখাপড়ার শুরুতেই এলফাবেট শিখতে হবে এ নিয়ম আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করে দিয়েছে। কিন্ত যেকোন ভাষা শেখার প্রথম ধাপ হলো ভোকাবলারি সমৃদ্ধ করা, দ্বিতীয় ধাপ হলো সেই শব্দগুলোর অর্থ বোঝা। অক্ষর চেনা মানে পড়তে পাড়া আর লিখতে পারা হচ্ছে ভাষা শেখার সর্বশেষ দুই ধাপ। অক্ষরজ্ঞান অনেকসময় মানুষের দুর্বলতা হয়ে যায়।

– অক্ষরজ্ঞান মানুষের দুর্বলতা হয়ে যায়! ব্যাপারটা বুঝলাম না।

– দাড়ান প্র্যাকটিকালি দেখাই।

হেডমাষ্টার সাহেব একটা ছবি বের করলেন। ছবিটার বিশেষত্ব হলো সেখানে অনেকগুলো ফল আছে কিন্ত এক একটা ফলের নিচে অন্য ফলের নাম লেখা, যেমন, পেয়ারার ছবির নিচে লেখা আনারস, আনারসের নিচে লেখা কমলা এরকম।

– ফলগুলোর সঠিক নাম বলুন।

হেডমাষ্টার সাহেব আমাদের দুজনকেই বললেন। দুজনেই খুব কষ্ট করে খুব পরিচিত পনেরটা ফলের নাম বললাম। আমার স্ত্রীর লাগল পাক্কা এক মিনিট আমার লাগলো আরো দশ সেকেন্ড বেশি। হেডমাষ্টার সাহেব এবার দাইয়ানকে ডেকে পাঠিয়ে ফলগুলোর নাম বলতে বললেন। আশ্চর্যজনকভাবে ওর লাগলো দশ সেকেন্ড!হেডমাষ্টার মুচকি হেসে আমাদের দিকে তাকালেন।

– কি বুঝলেন? আপনাদের এত সময় লাগলো কেন? ফলগুলো তো আপনাদেরও খুব পরিচিত।

– ফলগুলোর নিচের নামগুলো খুব ডিস্টার্ব করেছে, সঠিক নামটা মনে করতে এইজন্যই সময় বেশি লেগেছে।

– ঠিক ধরেছেন। কিন্ত দাইয়ানের সময় এত কম লাগলো কেন?

– ও তো পড়তেই পাড়েনা, ছবি দেখে দেখে ও ফলগুলো চিনে নিয়েছে সহজেই।

– বাহ্, আপনিই উত্তরটা দিয়ে দিলেন। তাহলে প্রমাণ হলো না অক্ষরজ্ঞান অনেকসময় মানুষের দুর্বলতা হয়ে যায়?

-তাইতো! অবাক হয়েই স্বীকার করলাম।

– আপনার ছেলে এখন বিভিন্ন জিনিসকে চিনছে তারপরে সে জানবে এদের কাজ কি বা মানুষের জীবনে এর প্রয়োজনীয়তা কি। ছবি দেখে শেখাটা ওর কল্পনাশক্তি বাড়াতে সাহায্য করবে, ওকে আরও ক্রিয়েটিভ হতে সাহায্য করবে। শুরুতেই অক্ষরজ্ঞান দিয়ে ওর সৃজনশীলতা নষ্ট করতে চাইনা আমরা।

হেডমাষ্টার সাহেব আজ নতুন এক শিক্ষা দিলেন আমাদের। জ্ঞান আহোরণ করার জন্য আগে দরকার জানা এবং বোঝা, পড়া এবং লেখা নয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে