তোমাকেই_ভালোবাসি পর্বঃ_০৯

0
1845

#তোমাকেই_ভালোবাসি❤
#পর্বঃ_০৯❤
#Writer_Safan_Aara❤

অননের বুক থেকে উঠার অনেক চেষ্টা করেছে অদিতি। কিন্তু কোনোভাবেই নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে পেরে উঠতে পারে নি সে। মন যে তার আলাদাই একটা সুখ খুজে পেয়েছে এখানে।কিছুক্ষণ পর দুটো ছোট ছোট বাচ্চার সামনে এমন একটা অবস্থায় নিজেকে আবিস্কার করে লজ্জায় লাল হয়ে গেছে অদিতি। অনন কি রেখে কি করবে বুঝতে পারছে না।

নিজেকে সামলে লজ্জামাখা মুখ নিয়ে উঠে দাড়ালো অদিতি। অননও উঠে দাড়ালো।

-“নীড়! রায়হান! চলো তোমরা। খাবার খাবে।”

বললো অদিতি। যদিও লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছিলো ওর তবুও নিজেকে কন্ট্রোলে নিয়ে এসেছে সে। সবাইকে খেতে দিয়ে অদিতিও বসলো খেতে। কিন্তু বার বার চোখ যাচ্ছে তার অননের দিকে। কিন্তু প্রত্যেক বারই ধরা খেয়ে যাচ্ছে সে। কেননা অননও তো একই কাজ করছে। যতোবার তারা একে অপরের দিকে তাকাচ্ছে ততোবারই চোখাচোখি হচ্ছে। আর লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে দুজনেই।।ছেলেরা যতই স্ট্রং হোক না কেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারাও খুবই লাজুক হয়। তবে সবার জন্য লজ্জা পাওয়ার বিষয়টা এক না। একেকজন একেক সিচুয়েশনে পড়ে লজ্জা পায়।

খাওয়াটা কোনো মতে শেষ করে অনন ছুটলো নিজের ফ্ল্যাটের দিকে। নীড়ের কথাও মনে নেই তার।অদিতিও নিজের রুমে চলে গেলো। কি ঘটে গেলো আজ এক মূহুর্তে। কি একটা অবস্থা! এমন কিছু হবে জীবনেও ভাবেনি তারা।

সন্ধ্যায় মিসেস সালেহা আর মিসেস রোকেয়া একসাথেই ফিরে আসে বাড়িতে। হাতে এত্তো এত্তো ব্যাগ। মনে হচ্ছে যেন বিয়ের শপিং করে এসেছে তারা। অদিতি অবাক হলেও কিছুই বলে নি। দিনটা চুপচাপ পাড় করেছে সে। ভেবেছিলো নীড় অথবা রায়হান হয়তো আজকের ঘটনা বাড়িতে সবাইকে বলেই দেবে। কতটা লজ্জায় আবারও পড়তে হবে তাকে।কিন্তু অদিতিকে অবাক করে দিলো তারা। কেউ কিচ্ছু বলে নি। হয়তো অনন বুঝিয়ে দিয়েছে। হয়তো না। এসব সাতপাঁচ ভেবে ঘুমিয়ে পড়েছে অদিতি।

কিন্তু ওদিকে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে অনন। এক অন্যরকম অনুভূতি কাজ করছে তার মনে। অদিতির ঠোটের সেই ছোয়া ‌বার বার মনে পড়ছে তার। অদিতির এ ছোয়া তার বার বার চাই তা তার হৃদয়ের প্রতিটি স্পন্দন তাকে জানান দিচ্ছে। কিন্তু কেন হচ্ছে এমন? তারা দুজনতো সবসময় শুধু ঝগড়াই করে এলো। কখনো মিষ্টি করে দুটো কথাও বলে নি একে অপরকে।যখনই দেখা হয় দুজনই দু দিকে মুখ ঘুড়িয়ে নেয়।তাহলে! এমনটা হওয়ার কারণ কি! কেন এই অজানা অনুভুতির আক্রমণ! সে নিজেও জানে না।

?

সবে ঘুম থেকে উঠেছে অদিতি। বাহিরের পরিবেশের পাশাপাশি নিজেকেও বেশ ফুরফুরে লাগছে তার। ভুলেই গেছে কাল কি হয়েছিলো ওর সাথে। জানালা দিয়ে বাইরে দেখে ফ্রেশ হতে যাওয়ার সময় চোখ পড়লো আয়নায়। পিছনে ব্যাক করে আয়নায় নিজেকে কিছুক্ষণ খুটিয়ে দেখলো সে। কিন্তু ঠোট বরাবর চোখ যেতেই কালকের ঘটনা মনে পড়ে গেলো তার। আবারও সেই একই মাত্রায় লজ্জা পেলো সে। কেমন নির্লজ্জের মতো অনেনের বুকে পড়ে ছিলো সে। ছি! আজ কিভাবে মুখ দেখাবে তাকে! সামনে পড়ে গেলে কতই না লজ্জা লাগবে।

সারারাত নির্ঘুম কাটানোর পর সকালে বিছানা ছাড়লো অনন। মাথা থেকে তার সে কথা নামছেই না। যেভাবেই হোক ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে বেড়িয়ে পড়েছে সে।

-“কিরে! খেয়ে যাবি না?”

-“না, মা। খাবো না।”

-“কিন্তু কেন?”

উদ্বিগ্ন হয়ে প্রশ্ন করলেন মিসেস সালেহা।

-“ওমনি মা।”

নিচু স্বরে উত্তর দিয়ে চলে গেলো অনন।

ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়েছে অদিতি। কিছুই খাওয়ার ইচ্ছা তারও নেই। তাই রেডি হয়ে চলে যাওয়ার সময় অননের মতই মায়ের প্রশ্নে একই উত্তর দিয়েছে সেও।
.
.

লিফটে উঠতেই আবার দেখা হলো অনন অদিতির। কেউ কিছুই বললো না। তাদের বোঝা হয়ে গেছে আজ সারাদিনই দেখা হিবে তাদের। আর অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশি হবে।

.
.
লিফট থেকে নেমে অদিতি রিকশার খোজে মেইন গেইটের বাইরে দাড়িয়ে ছিল। অনন নিয়ে বাইক এনে বের হতে যাবে তখনই মিসেস সালেহা এসে পড়লেন।

-“অদি কই অনন?”

অদিতির নাম শুনেই আরেক দফা লজ্জা পেলো সে। লজ্জা কাটিয়ে বলল-

-“জানি না মা। বাইরে আছে হয়তো। আর না হয় রিকশা নিয়ে চলেও গেছে।”

-” আচ্ছা চল আমার সাথে।”

অনন কিছুই বললো না। মিসেস সালেহা বাহিরে গিয়েই অদিতিকে দেখতে পান। রিকশার জন্য দাড়িয়ে আছে সে।

-“অদি! এদিকে আয় তো।”

শুধু রিকশা নয় তার ভাবনায় যে এতক্ষণ অননও ছিলো। নিজের নামে ডাক শুনতেই ভাবনা থেকে বাড়িয়ে পেছিনে তাকালো সে। অননকে দেখতে পেয়ে আরেকদফা লজ্জা পেলো সে ও। কিন্তু আন্টির ডাক ফেলতে না পেরর চলে গেলো সেখানে।

-“হ্যা আন্টি বলো।”

-“অননের সাথে যাবি তুই। একা না।”

মিসেস সালেহার কথা শুনে বিস্ময়ে একসাথে “কিহ!” বললো তারা। তবে অনন-অদিতির মন যেন বলে উঠলো অন্য কিছু। কি বলেছে তা আপনারা বুঝে গেছেন অবশ্যই!

-“কি নয় জ্বি।অদিতি ওঠ বাইকে।”

কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে অদিতি বাইকে উঠে বসলো। অনন শুধু অপেক্ষায় আছে কখন অদিতি ওর কাধে হাত রাখবে। আগে ওর স্পর্শ জঘন্য লাগলেও এখন কেনো যেন বারবার পেতে চায় মন। অদিতিরও আগে অননের স্পর্শ সহ্য হতো না। কিন্তু এখন………………! এক রাতেই কতকিছু বদলে গেলো!

রাতে মায়ের পাশে বসেছে অদিতি। মিসেস রোকেয়া টিভি দেখছিলেন।

-“মা!”

-“হুম।”

-“কাল এতো শপিং কেন করেছিলে?”

-“এমা! তুই জানিস না?”

-“কি জানবো?”

-” আগামী সপ্তাহে তো অননের এনগেজমেন্ট!”

-“ক…………!”

কিছু বলতে যেয়েও বলে উঠতে পারলো না অদিতি। ভিতরটা যেন দুমড়েমুচড়ে গেলো তার। এ কেমন অনুভুতি তার অননের জন্য? এটা কি জেলাসি! না কি এই অনুভুতির অন্য কোনো নাম আছে।কিছুই বুঝতে পারলো না সে।মনে হচ্ছে কেউ অননকে ওর কাছ থেকে কেড়ে নিচ্ছে। নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে দু ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো তার। দৌড়ে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো। কিচ্ছু ভালো লাগছে না তার। ঘুমানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে সে।কিন্তু তা কি আর সম্ভব।

-“অনন।”

-“হ্যা, মা!”

-“দেখতো পাঞ্জাবি টা। পছন্দ হয়েছে কি না।”

-“হুম। ভালো। কিন্তু এটা কেন এনেছো মা? কোনো অনুষ্ঠান আছে?”

-“তুই জানিস না?”

-“কি জানবো?”

-“আগামী সপ্তাহে তো অদিতির এনগেজমেন্ট!”

কথাটা শোনার পর অদিতির যেমন্টা লেগেছিলো অননেরও ঠিক তেমনটাই লাগছে। এখন সে বুঝতে পেরেছে তার অনুভূতিটা কি! সেই অনুভূতির একটা নামও দিতে সক্ষম হয়েছে সে। আর তা হচ্ছে ‘…….ভালোবাসা……….’

চলবে………..❤।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে