তোকে চাই❤(সিজন -২)পর্ব:১৫+১৬+১৭+১৮

0
4465

তোকে চাই❤(সিজন -২)পর্ব:১৫+১৬+১৭+১৮
#writer : নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
#part: 15
.
.
?
.
অবজারভেশনের লাস্ট অাধাঘন্টায় জ্ঞান ফিরেছে সাকিবের।।এখন সে সুস্থ!!কথাটা শুনেই আনন্দে মনটা ভরে উঠেছিলো আমার।।হসপিটাল জিনিসটা আমার কোনো কালেই ভালো লাগে না।।তবুও থাকতে হচ্ছে আমায়।বেডের উপর পা ছড়িয়ে বসে গেইমস খেলছি।।আশেপাশে কেউ নেই….সবাই বাসায় গেছে।।হঠাৎ করে কোথা থেকে শুভ্র ভাইয়া এসে ধুপ করে বেডে শুয়ে পড়লেন।।আমি “হা” করে তাকিয়ে আছি।উনি হুট করে আমার হাতের ফোনটা নিয়েই বলে উঠলেন…”কি গেইম খেলো??” আমি “এঞ্জেলা” খেলছিলাম।।মাত্রই গোসল করাইছি খাওয়াতেও দিলো না খাটাসটা।।উনি স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে চোখ বড়বড় করে বলে উঠলেন….
.
ওহ মাই গড…লাইক সিরিয়াসলি??তুমি এসব বাচ্চাদের গেইমস খেলো??আরে..আজকে তোমার বিয়ে হলে কালকেই তো বাচ্চার মা হয়ে যাবা…তখনও এসব খেলবা??
.
আমি কিছু বলছি না।।চুপ করে টুকুরটুকুর চোখে তাকিয়ে আছি।।কথা বলতে পারলে কিছু কড়া কথা শুনানো যেতো উনাকে।।কিন্তু আপাতত ইচ্ছেটা চাপা দিতে হচ্ছে।।উনি ফোনটা পাশে রেখে হতাশ গলায় বলে উঠলেন….”তোমার বেবি হওয়ার পর তুমি আর প্রিন্সেস মোবাইল নিয়ে কোমড় বেঁধে ঝগড়া করছো।। তাও জাস্ট বিকজ এই ফালতু গেইম খেলবে বলে।।ভাবা যায়??আমি তো কল্পনা করেই শিহরিত। ” আমি এবারও চুপ।। উনি হুট করে উঠে একদম দাঁড়িয়ে গেলেন।।পকেটে হাত দিয়ে পা হালকা ফাঁক করে টানটান হয়ে দাঁড়িয়েই বলে উঠলেন…
.
ওই?সাকিবকে দেখতে যাবা??
.
আমি উনার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।।কথা বলার এভিলিটি থাকলে প্রথম যে কথাটা উনাকে বলতাম তা হলো….আচ্ছা আপনি তো মাত্র গেলেন বিশ মিনিট হলো।।এখান থেকে বাসায় যেতে লাগে ১০ মিনিট….যদি গাড়ি খুব জোড়ে চালানো হয় তবে।।এই বিশ মিনিটে আপনি ফ্রেশ হয়ে খেয়ে আসলেন কেমনে??উনার চুল ভেজা… তারমানে গোসল করেছেন।।পড়নে লাল রঙের টি-শার্ট আর এ্যাশ থ্রি-কোয়াটার প্যান্ট,,পায়ে একজোড়া চটি জুতা।।কি অদ্ভুত ড্রেস পড়ে এসেছেন উনি।।তবু মনে হচ্ছে…উনি এই ড্রেসটা না পড়লে মারাত্মক একটা ভুল করতেন।।এই পরিবেশে যেনো শুধুমাত্র এই পোশাকই মানায়।।লেপ্টে থাকা ভেজা ভেজা পায়ের লোমগুলো গিয়ে আকর্ষনীয়।।উনি আমার দিকে ঝুকে এসেই বলে উঠলেন…”কি যাবা??” আমি উনার চোখের দিকে তাকালাম।।উনি ভ্রু নাচিয়ে প্রশ্ন করলেন যাবো কি না। আমিও ফটাফট নেমে পড়লাম বেড থেকে।।যেই না দরজার দিকে পা বাড়ালাম উনি গম্ভীর গলায় বলে উঠলেন…”দাঁড়াও” আমি পেছনে ফিরে ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই বেডের উপর রাখা আমার কাপড়ের ব্যাগ থেকে একটা ওড়না বের করে জড়িয়ে দিলেন আমার গায়ে।।সঙ্গে গা জ্বালানো একটা কথাও বললেন…”ওড়না ছাড়াই দৌড়াচ্ছো।।পারলে বুঝি জামাটাও রেখে যেতে??” এই কথা শোনার পর মনে প্রথম যে কথাটা উদয় হয়েছিলো তা হলো…” ব্যাটা তোর বউ মেথরের সাথে ভাইগা যাবো,, দেইখা নিস।।” আমি রাগী চোখে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।।উনি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে বলে উঠলেন…
.
এতো ফুস ফুস করে লাভ নেই…কথা নাই তবু তেজ ষোল আনা।।চলো..(ধমক দিয়ে)
.
আজ কথা বলতে পারি না বলে এভাবে অপমান??এই সাদা বিলাইকে যদি আমি না কাঁদাইছি তো আমার নামও রোদ না।।হুহ!!
.
.
সাকিব বেডে শুয়ে আছে।।বাম হাত আর ডান পা প্লাস্টার করা।মাথায় ব্যান্ডেজ।।শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখমের চিন্হ।আমাদের দেখেই হাসিমুখে বলে উঠলো সাকিব…
.
ভাবি ভালো আছেন??
.
আমি মুচকি হাসলাম মাত্র।।সাথে সাথেই পাশ থেকে বলে উঠলো শুভ্র….” সাকিব? তোর ভাবির ব্যাটারি ডাউন হয়ে গেছে।।আপাতত কথার স্টক শেষ।” আমি রাগী চোখে উনার দিকে তাকিয়ে আছি আর সাকিব অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।।শুভ্র এবার একটু গম্ভীর হয়ে সাকিবের ডান হাতে হাত রাখলেন…অন্যহাত রাখলেন মাথায়।।সাকিব উনার দিকে তাকিতেই বলে উঠলেন…
.
থেংক্স রে….জান বাঁচাই দিছিস তুই। এই পিচ্চিটা আমাদের ফ্যামিলির জান।।সেই হিসেবে আমাদের জানটা বাঁচিয়ে দিয়েছিস রে ভাই।।ওর কিছু হলে জাস্ট পাগল হয়ে যেতাম..(আমি তাকাতেই) আই মিন বাবা,,ফুপ্পি একদম পাগল হয়ে যেতো।।থেংক্স আ লট।।
.
সাকিব মুচকি হেসে বলে উঠলো…” ভাই?ধন্যবাদের জন্য আমি এসব করি নি।করেছি মানবতার খাতিরে।।কাল চমি সেখান থেকে পালিয়ে আসলে… মেয়েদের মনে ছেলেদের জন্য একটা ঘৃণা একটা অবিশ্বাসই তৈরি হতো।।যদিও ছেলেদের প্রতি মেয়েদের বিশ্বাস এখন নাই বললেই চলে।।কিন্তু সব ছেলে তো এক নয়।।এখনও অনেক ছেলেরা কাপুরুষের সমাজে মা-বোনকে বাঁচাতে বীরত্ব দেখায়।।আমার তো কিছুই হয় নাই ভাই।।দুদিনেই ফিট হয়ে যাবো।ওখান থেকে পালিয়ে আসলে মনটা একদম আনফিট হয়ে যেতে ভাই।।নিজের চোখেই নিচে নেমে যেতাম।।কিছুদিন আগে আপনিই বলছিলেন ভাই-” জীবন নয় আত্মসম্মান টা আগে।।আত্মসম্মান হারিয়ে মরে মরে বাঁচার চেয়ে।।আত্মসম্মান নিয়ে মরে গিয়ে বেঁচে যাওয়া অনেক ভালো” আমিও সেটাই মানছি।।ঠিক করছি না ভাই???
.
একদম ঠিক করেছিস।। আম প্রাউড অফ ইউ ছোটে।
.
আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে শুনে যাচ্ছি।।ছেলেটার প্রতি এক অদ্ভুত শ্রদ্ধাবোধ কাজ করছে আমার মাঝে।।সাকিব আমার দিকে তাকিয়ে হেসে উঠে শুভ্র ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আবারও বলে উঠলো…”ভাই?ভাবি কি আর কথা বলতে পারবে না??”
.
আরে না…তোর ভাবি সাময়িক ভাবে চুপ করে আছে।।পৃথিবীর মানুষকে একটু শান্তি দিচ্ছে আরকি।।ক্ষনিকের শান্তি!! দুদিন পর আবারও বকবক পকপক শুরু হয়ে যাবে নো টেনশন।।(শয়তানী হাসি দিয়ে)
.
ব্যাটা বজ্জাতটা সুযোগের সৎ ব্যবহার বেশ ভালোই করছে।।কিন্তু আমিও কম কিসে দিলাম উনার পায়ে জোরে এক পাড়া…এখন বুঝো ঠেলা।।উনি লাফিয়ে উঠে বলে উঠলেন…”উফফ..পাড়া দিলে কেন??” আমি নাক মুখ খিঁচে উনার পকেট থেকে ফোনটা ছিনিয়ে নিয়ে একটা ম্যাসেজ টাইপ করে উনার সামনে ধরলাম…” আমাকে তোর ভাবি তোর ভাবি বলছেন কেন??” ম্যাসেজটা দেখে ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলেন উনি-
.
আরে..সাকিবের যেনো বুঝতে সুবিধা হয় তাই বললাম আরকি।।বাচ্চা মানুষ না ও??তারউপর মাথায় আঘাত পাইছে বুঝোই তো….ডেঞ্জারাস ব্যাপার স্যাপার।
.
এবার আমি আরেকটা ম্যাসেজ টাইপ করে সাকিবের সামনে দড়লাম…”আমাকে ভাবি ডাকেন কেন??হুয়াই?”
সাকিব ম্যাসেজটা পড়ে মুচকি হেসে বলে উঠলো…
.
আসলে কি ভাবি।।আপনাকে দেখলে আমার মন আর মুখ দুটোই খালি ধাক্কায় বলে- ভাবি বল,,ভাবি বল।।তাই ভাবি বলে ফেলি।।মা বলে মনের কথা শুনতে হয়।।মনের আওশ অপূর্ণ রাখতে নাই।।বুঝেনই তো…মায়ের আদেশ।
.
আমি আবারও কিছু লিখবো তখনই একটা নার্স দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো।।এই নার্সই সেই নার্স,, যে শুভ্র ভাইয়াকে দেখে হ্যাং মারে বারবার।।এবারও তার ব্যতিক্রম হলো না।।কি বলতে এসে সেটা ভুলে অপলক তাকিয়ে রইলো শুভ্রর মুখের দিকে।।আমি একবার শুভ্র তো একবার নার্সের মুখের দিকে তাকাচ্ছি।আহা!! বেচারী ক্রাশ খাইছে।কিন্তু শুভ্র ভাইয়ের সেদিকে পাত্তা নাই।।সে এদিক ওদিক তাকিয়ে এটা সেটা দেখছে।।কখনো বা আমার দিকে তাকাচ্ছে।।আমার খুব ইচ্ছে করছে শুভ্র ভাইয়াকে বলি।।””ভাইয়া?? নার্স বেচারী কেরাশ খাইছে।।একটু তারদিকে মুখ তুলে তাকান”” কিন্তু বলা হলো না।।অতঃপর অন্য একটি নার্স এসে বললো রুম ফাঁকা করতে এবং আমার ঔষধের টাইম হয়ে গেছে যুবতী নার্সটা আমায় ঔষধ খাওয়াবে আমি যেনো কেবিনে যাই।।কথাটা বলা শেষ হতেই শুভ্র ভাইয়া বলে উঠলেন…..
.
নো নো…এই ভদ্রমহিলাকে নিয়ে যান।।উনাকে খাওয়াতে হবে না ঔষধ।।উনাকে দেখে মনে হচ্ছে না।। উনি এই দুনিয়ায় আছেন।।পরে উল্টাপাল্টা কিসব ঔষধ খাইয়ে দিবে।।আমি ওকে নিয়ে কোনো রিস্ক নিতে চাই না।।আমার টার যত্ন আমি নিতে পারবো…ইউ মে গো নাও।।
.
বাট স্যার?এটা ওর ডিউটি…
.
ডিউটি মাই ফুট। কি ডিউটি করছেন দেখতেই পারছি।।উনার ফলিস ডিউটি করতে গিয়ে আমার পেসেন্ট মরে যাক,,তাই না??দেখুন আপনারা আপনাদের কাজে যান।।ওর জন্য আমি একাই যথেষ্ট।।গো নাও…
.
নার্সদুটো বেরিয়ে যেতেই আমরাও বেরিয়ে এলাম।।গাল ফুলিয়ে হাঁটছি….আমার কতোগুলো কথা মিস হয়ে যাচ্ছে উফফ…ভাল্লাগে না।।হুহ….হাঁটতে হাঁটতেই উনি বলে উঠলেন…
.
এভাবে গাল ফুলিয়ে রেখো না প্লিজ।(বুকে হাত দিয়ে) এখানে ব্যাথা লাগে।।
.
উনার কথা শুনে কি রিয়েকশন দিবো বুঝতেছি না।।উনি কি মিন করলেন??আমার গাল ফুলানোর সাথে উনার বুকের ব্যাথার সম্পর্ক কি??
.
#চলবে..?

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share


#তোকে চাই❤
………(সিজন -২)
#writer : নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
#part: 16
.
.
?
.
বেডে পা ঝুলিয়ে বসে আছি।শুভ্র ভাইয়া ঔষধের ডেট চেইক করছে সব ঠিক আছে কি না।।হঠাৎ দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে এলো সেই নার্স।।নার্সটাকে দেখেই চোখদুটো চিকচিক করে উঠলো আমার।উহহো… এখন হবে বাংলা সিনেমা।।শুভ্র দরজায় শব্দ শুনে পেছন ফিরে তাকিয়েই ভ্রু কুঁচকালো।নার্সটি কাঁপা কাঁপা গলায় বললো….
.
স স্যার আমি উনাকে ঔষধ খাইয়ে দিচ্ছি।। আপনার কষ্ট করতে হবে না।
.
আপনাকে আমি আসতে বলেছিলাম??আর আপনার কি মনে হয়?ওকে ঔষধ খাওয়ানো আমার জন্য কষ্টের ব্যাপার?? নট এট অল।।আর আমার রোদের জন্য….আই মিন আমাদের রোদের জন্য এতো নার্স বা এসিসটেন্ট লাগবে না।।আম এনাফ ফর হার…সো ইউ জাস্ট গেট লস্ট…
.
ইচ্ছে করছে মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে হাসি বাট চেপে গেলাম… ঠোঁট চেপে মুচকি হাসছি।।শুভ্র আমার দিকে তাকিয়েই ধমকে উঠলো..” হাসছো কেন??হাসবে না একদম। আর আপনি এখনও দাঁড়িয়ে আছেন কেন??বিরক্ত না করে যান তো।।”
.
নার্সটা এখনও দাঁড়িয়ে চুপচাপ তাকিয়ে আছে শুভ্রর দিকে।।শুভ্র ভাই যে সেইরকম অস্বস্তিতে আছে তা উনাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে।উনি এবার আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন…
.
রোদ একে যেতে বলবা প্লিজ??হা করে তাকিয়ে থাকার কি আছে?আমি কি এলিয়েন??যার তাকানোর কথা তার তাকানোর খবর নাই,,,আসছে আরেক পাগল….হেই ইউ? জাস্ট গো না…(ধমক দিয়ে)
.
এবার নার্সটা ছুটে বেরিয়ে গেলো।। ধেৎ এতো এতো বিনোদন মিস করে যাচ্ছি জাস্ট বিকজ আমি কথা বলতে পারি না বলে।।উনি তো রেগে মেগে শেষ।।আমি হাত নেড়ে উনাকে আমার দিকে তাকাতে বললাম।।তারপর হাত আর মুখের ইশারায় কথা বলতে লাগলাম।।আশ্চর্যের ব্যাপার উনি আমার কথা বুঝতে পারছেন।।আচ্ছা উনি কি লিপ রিডিং জানে নাকি??আমি কথা বলার মতো করেই ধীরে ধীরো সাউন্ডহীন ভাবে বললাম…
.
শী ইজ ক্রাশড অন ইউ।।
.
আই নো,, বাট আম ক্রাশড অন আনাদার ওয়ান।
.
কথাটা শুনেই চোখ বড় বড় করে কৌতূহলী চোখে তাকিয়ে বলে উঠলাম…
.
রিয়েলি??
.
ইয়াহ্
.
আমি উনার হাত ধরে ঝাঁকাচ্ছি।।মেয়েটা কে শুনবো বলে।।উনি মুচকি হেসে বলে উঠলেন..”শুনতে চাও?” আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যা জানালাম।।উনি আমার মুখের দিকে এগিয়ে এসে বললেন..”সিউর??” আমি আবারও মাথা নাড়লাম যে আমি শুনতে চাই।উনি এবার আরো কাছে এসে আমার কানে কানে ফিসফিস করে বলে উঠলেন…”আমার বলতে ইচ্ছে করছে না।” এই কথা শুনার পর ইচ্ছে করছিলো চুল সব টেনে ছিঁড়ে ফেলি।।পাশে কাপড়ের ব্যাগ থাকায় ওটা হাতে নিয়েই মারতে লাগলাম উনাকে।।বলবি না তো জিগ্যেস করলি কেন শুনবো কি না।।উনি রুম কাঁপিয়ে হাসতে লাগলেন।।আমার হাতদুটো শক্ত করে ধরে বলে উঠলেন…
.
এভাবে মারে?মরে যাবো তো।।আচ্ছা বাবা বলছি তবু মারামারি স্টপ রাখো।।
.
এবার আমি চুপচাপ শান্ত হয়ে বসলাম।।আজ উনি আমাকে আবার টাচ করেছেন কিন্তু কোনো ফিল আসে নি।।ওই আননোন পারসোনের স্পর্শ আমার শরীরের স্নায়ু আর ধরে রাখতে পারে নি।।স্পর্শ টা ভুলে গেছি নয়তো চেক করা যেতো।।উনি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চেয়ার টেনে বসলেন।।তারপর উনার ঘন চুলোগুলোতে হাত চালাতে চালাতে বলে উঠলেন…
.
মেয়েটা আমাদের ভার্সিটিতেই পড়ে।কি মারাত্মক মায়া তার চোখে মুখে।।হাঁটতে হাঁটতে যখন ও পাশ ফিরে তাকিয়ে হঠাৎই হেসে উঠে উফফ…বিশ্বাস করো বুকটা কেঁপে উঠে আমার।ধমকা হাওয়ায় ওর লম্বা চুলগুলো যখন ঝাপটে পড়ে মুখে ইচ্ছে করে সামনে দাঁড় করিয়ে আলতো হাতে চুলগুলো গুঁজে দিই কানে।তারপর কপালে এঁকে দিই গভীর এক চুমু,পরম আদরে।।ওর ভেজা ভেজা ঠোঁট আর সেই কালো গভীর তিলটা আমাকে বেসামাল করে দেই মুহূর্তেই।ওর কৌতূহল মাখা দুটো চোখ,,নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে দুষ্টুমি মাখা সেই হাসি উফফফ…ক্ষতবিক্ষত করে দেয় (বুকে হাত দিয়ে) এখানটায় বড্ড নিষ্ঠুরভাবে।।আর ওর চোখ-মুখ লাল করে সেই রাগী রাগী চাহনী!!সে জানেই না…যখন সে রেগে মেগে একের পর এক তর্কে লিপ্ত হয়, সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটা তার প্রেমে হাবুডুবু খায় ক্রমাগত।।ইচ্ছে করে জাস্ট জাস্ট খেয়ে ফেলি ওকে।।মাঝে মাঝে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে পুরো পৃথিবীর সামনে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে…”তোকে চাই,, তোকে চাই,, আমার তো শুধু তোকেই চাই রে পাগলী।।কি হয় আমায় একটু বুঝলে??
.
আমি চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।।এই খাটাসটার মনেও এতো আবেগ??বাট মেয়েটা কে??একে পেলে খুন করে ফেলতাম…অসভ্য মেয়ে।।উনি আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বললেন…” কেমন বুঝলে??” আমি জোড়পূর্বক একটা হাসি দিলাম।।যায় হোক,, এই মেয়েটাকে তো খুঁজে বের করতেই হবে।।হুহ!!
.
?
.
ভার্সিটির মাঠে বসে আছি।।চিত্রা পাশে বসে বকবক করে চলেছে।।ওকে থামিয়ে দিয়ে হঠাৎই বলে উঠলাম…
.
এই চিতা বাঘ?আমাদের ভার্সিটির বেষ্ট সুন্দরী কে রে??তুই?
.
নাহ…শ্রেয়া নামের মেয়েটাকে দেখেছিস?ম্যাথ ডিপার্টমেন্টের?অসম্ভব সুন্দরী।আমার থেকেও সুন্দর।।সিনিয়র ভাইরা তো লাইন লাগিয়ে দিয়েছে।।
.
তাই নাকি??(ভ্রু কুচঁকে)
.
হুমম,,…ওইতো দেখ আসছে।নেভিব্লু কালার ড্রেস পড়েছে যে ওই মেয়েটা।।
.
ওহ্ দেখতে তো সুন্দরই।।ডাক তো ওকে।।কথা আছে!”
.
ওর সাথে তোর কি কথা??(অবাক হয়ে)
.
আরে ডাক তো দে।।পরে বলছি কি কথা।।
.
কিন্তু কি কথা সেটা তো বল।
.
তুই কি খেয়াল করেছিস?শুভ্র ভাইয়া ওর দিকে প্রেম প্রেম নজরে তাকিয়ে থাকে।।
.
কিহহ??কি বলছিস তুই?শ্রেয়াকে?? ইম্পসিবল!!শুভ্রভাই কোনো মেয়ের দিকেই ওভাবে তাকায় না। আমি যতোবার দেখেছি,, উনি রাগী চোখে হোক,,খুশি খুশি চোখে হোক…যতরকম চোখেই তাকাক..ঘুরেফিরে তোর দিকেই তাকাতে দেখেছি।।
.
চুপপ… কিছু বুঝিস তুই??তোর চোখ তো শুধু ছেলেদের পেট পর্যন্তই পৌছায় চোখের ভাষা কেমনে বুঝবি??আরে..শুভ্র ভাই আমার দিকে ভাই ভাই নজরে তাকায়।।আমরা তো কাজিন তাই।।আর শ্রেয়ার দিকে তাকায় প্রেম প্রেম নজরে।।শুভ্র ভাই নিজে আমায় বলেছে…. তাছাড়া আমার মধ্যে প্রেম নজরে তাকানোর মতো কিছু নাই বুঝছিস??
.
এটা তোর ভুল ধারনা।।তোর মধ্যে কিছু নাই সেজন্যই তো ছেলেরা প্রোপোজের ঢালি সাজায় তাই না???
.
তুই থামবি??ফাউল পেঁচাল বাদ দিয়ে ওকে ডাক।।শুভ্র -শ্রেয়া দেখছিস নামটাও মিলে যায়…
.
.
শ্রেয়া মেয়েটা আমাদের সামনে বসে আছে।।সত্যিই মেয়েটা অসম্ভব রূপবতী।।ছেলেদের প্রেমে পড়ার জন্য উপযুক্তও বটে।।শুভ্র ভাইয়ের জন্যও পারফেক্ট।।আমি মুচকি হেসে বলে উঠলাম..
.
কেমন আছো শ্রেয়া?
.
ভালো তুমি?
.
আমিও ভালো।আচ্ছা শুভ্র ভাইকে চেনো??
.
আবরার শুভ্র??কে না চিনে উনাকে?উনি তো ভার্সিটি ক্রাশ।।
.
তোমারও ক্রাশ??
.
অবিয়েসলি।।
.
ওহ্..বলছিলাম কি?তুমি কি জানো শুভ্র ভাইয়া ইজ ইন লাভ উইথ ইউ।
.
হোয়াট??(অবাক হয়ে)
.
আমার তো তাই ই মনে হয়।।উনি তোমার দিকে কেমন করে তাকায় তুমি খেয়াল করো নি??সেদিন তুমি শাড়ি পড়প এসেছিলে ভাইয়া তো তোমার থেকে চোখই সরাতে পারছিলো না।।আমি নিজের চোখে দেখেছি।।চিত্রাও তো দেখেছে৷ জিগ্যেস করো ওকে…এই চিত্রা বল দেখেছিস না??(ধাক্কা দিয়ে)
.
হ্যা হ্যা দ..দেখেছি তো।।দেখেছি।।
.
তারপর আমরা যখন উনাদের পাশ কাটিয়ে যাচ্ছিলাম,, উনি সাহেল ভাইয়াকে বলছিলেন…” মাশাআল্লাহ!! মেয়েটাকে কি কিউট লাগছে।।”” চিত্রা?ভাইয়া বলেছিলো না??
.
হ,,হুমম ব বলেছিলো তো..
.
ওহ মাই গড।।আমি পাগল হয়ে যাবো।।কিন্তু উনি আমায় বলেন নি কেন??
.
আরে বুঝো না?ক্রাশ আইকন।। নিজে থেকে বলবে নাকি??তোমায় বলতে হবে… একটু কাছাকাছি যাও…হাতেহাত ধরো।। তবেই না হবে….
.
কিভাবে কি করবো?কিছুই তো বুঝতে পারছি না।।
.
রিলেক্স,, আমি আছি কেনো??শুনো… কাল তুমি শাড়ি পড়ে আসো।।উনি বলেছেন শাড়িতে তোমায় নাকি হট লাগে।।তারপর সামনের রিইউনিয়নের জন্য যে বলেন্ডিয়ার নেওয়া হচ্ছে। সেটা নিয়ে ভাইয়ার সাথে কথা বলতে যাবে।।তাহলেই কাহিনী ঘটবে।।শাড়িতেই “আর” ফর রোমান্স শুরু হবে এবার।।(শয়তানী হাসি দিয়ে)
.
?
.
ঘুম থেকে উঠতে উঠতে নয়টা।।একদম সময় নেই হাতে।।কোনোরকম মুখে চোখে পানি দিয়ে ড্রেসটা চেঞ্জ করে নিলাম।চুল আচড়ানোর সময় নেই হাতে… তাই লাল উড়নাটা দিয়ে মাথা ঢেকেই ব্যাগ নিয়ে রৌণা দিলাম ভার্সিটি।।লেইট হলে সব প্ল্যানিং ভেস্তে যাবে।।চিত্রাও আছপ আমার সাথে,,কিন্তু তার মুখ অফ।।তারকাছে ব্যাপারটা মোটেও ভালো লাগছে না।।তার ধারনা খুব শীঘ্রই আমরা শুভ্র ভাইয়া প্রদত্ত বাঁশ খাবো।।অবশেষে শ্রেয়া এলো মেজেন্টা শাড়িতে মারাত্মক সুন্দরী লাগছে ওকে।।ছেলে হলে নগদে প্রোপোজ করে দিতাম ওকে।।এখন বুঝতে পারছি শুভ্র ভাইয়া যেন তেন মেয়ের প্রেমে পড়ে নি।।আমরা অনেক খুঁজে শুভ্র ভাইকে খুঁজে বের করে অডিটোরিয়ামে এসে দাঁড়ালাম।।শ্রেয়াকে দেখে সব ছেলেরা “হা” করে তাকিয়ে আছে।।শুভ্র ভাইয়া আমাদের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে উঠলেন…” কিছু বলবে??”
এবার উনার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম…শ্রেয়া উনার সাথে কথা বলছে।।আমি এদিক ওদিক দেখছি কে কি করছে।।হঠাৎ চিত্রার হাতের খোঁচায় ওর দিকে তাকলাম।।ও ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো….” দেখ… শুভ্র ভাইয়া তোর দিকেই তাকিয়ে আছে।।” আমিও আড়চোখে তাকালাম,,, হ্যা উনি আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন।আমাকে তাকাতে দেখেই শ্রেয়াকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠলেন…” তুমি ব্রেকফাস্ট করেছো সকালে??” এটা কি খাবার কথা জিগ্যেস করার সময়??শ্রেয়া উনাকে কতো ইম্পোর্টেন্ট কথা বলছে আর উনি?উনি আবারও বলে উঠলেন…”কিছু জিগ্যেস করছি আমি।।খেয়েছো সকালে??আর ঔষধ??” আমি ঢোক গিলে নিয়ে বলে উঠলাম-“ভাইয়া?শ্রেয়ার কথাটা বেশি ইম্পোর্টেন্ট।।”” কিন্তু কে শোনে কার কথা।।উনি সাব্বির ভাইকে ডেকে শ্রেয়ার সাথে এই বিষয়ে ডিসকাশন করতে বলে আমার কাছে এসে বললেন…”চলো খাবে..” লও ঠেলা!!প্ল্যানের ১২ টা বাজিয়ে ভাই আমাকে খাবার অফার করছে।।ভাবা যায়??অসহ্য!!
.
#চলবে?
.#তোকে চাই❤
………(সিজন -২)
#writer : নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
#part: 17
.
.
?
.
ব্রেকফাস্ট করার হলে ক্যান্টিনে যাবো আপনি আমায় গাড়িতে আনলেন কেন??আর এভাবে আনার মানে কি?সবাই কেমন করে তাকিয়ে ছিলো দেখেছেন?
.
আই ডোন্ট কেয়ার।এখন ওড়না টা খুলো…
.
হোয়াটটটটটট???কি বলছেন এসব।(অবাক হয়ে)
.
আমি ওড়নাটা মাথা থেকে সড়াতে বলছি জাস্ট,,অন্য কিছু না।।আর কারো সামনে এভাবে মাথায় ওড়না দিয়ে আসবে না।।
.
কেনো??
.
সবগুলো ছেলে কেমন আহাম্মকের মতো তাকিয়ে ছিলো।।স্কার্ফ পড়তে পারতে।।এভাবে অগোছালো চুলে,,,ঘুমো ঘুমো চোখে মাথায় লাল ঘোমটা এঁটে ছেলেদের হার্ট অ্যাটাক করাতে চাও??
.
লিসেন?ছেলেরা আমাকে নয় শ্রেয়াকে দেখছিলো ওকে?
.
হুহ…এজন্যই তো সাহেলের মুখে মাছি ঢুকে যাচ্ছিলো।।ও তোমায় চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছিলো।।
.
ওয়াও…সাহেল ভাইয়া আমায় দেখছিলো??রিয়েলি?
.
এতো খুশি হচ্ছো কেন??(ভ্রু কুঁচকে)
.
তো খুশি হবো না??আম রিয়েলি ক্রাশড অন হিম।ইউ নো হোয়াট??উনি কি কিউট এন্ড সুইট।।অন্নেক ড্যাশিং…
.
আমার কথাটা হয়তো উনার হজম হলো না।।হঠাৎই আমার দিকে এগিয়ে এলেন।।আমি গাড়ির দরজার সাথে মিশে বসে আছি।।শুকনো গলায় বারবার ঢোক গিলে উনার দিকে তাকাচ্ছি কে জানে আবার কি ভুল বলে ফেললাম।উনি একহাত সিটে এবং অন্যহাত গাড়ির দরজায় রেখে আমার উপর ঝুঁকে পড়লেন।।নীরবে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছেন।।কি অস্বস্তিকর ব্যাপার।।আমি নড়েচড়ে উঠতেই উনি আরো এগিয়ে এসে বলে উঠলেন…
.
সাহেল ড্যাশিন?কিউট?সুইট? তো আমি কি?
.
আপনি তো পুরাই স্টোবেরি আইসক্রিম (মনে মনে) আপ আপনি ভাইয়া…!!
.
আমার কথাটা শুনেই হতাশ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন।।আমি উনাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে জোড়ে শ্বাস নিতে লাগলাম।।উফফ আরেকটু হলেই তো মরে যেতাম।।শ্বাস নিতে নিতে সামনের দিকে তাকাতেই সাহেল ভাইয়াকে দেখতে পেলাম কারো সাথে হেসে গল্প করছেন।।আমার অবচেতন মন বলছে শুভ্র ভাইয়া সাহেল ভাইয়ার প্রতি জেলাস।।কারণ না জানলেও এই জেলাসনেসটা বাড়িয়ে দিলে কেমন হয়?যেমন ভাবা তেমন কাজ।।শুভ্র ভাই চোখ মুখ লাল করে বসে আছেন।উনাকে শুনিয়ে বলে উঠলাম-
.
লুক ভাইয়া? সাহেল ভাইয়াকে নেভিব্লু শার্টে কি কিউট লাগছে।।উফফ…আমি তো আহত।আচ্ছা ভাইয়া?(উনার দিকে তাকিয়ে) সাহেল ভাইয়া তো আপনার বেস্ট ফ্রেন্ড,,তাহলে একটা কাজ করি আমি উনাকে পটিয়ে বিয়ে করে ফেলি।।তাহলে আপনাদের রিলেশন আরো ক্লোজ হবে।।আপনার বোনের হাজবেন্ড বলে কথা।।তাইনা??আচ্ছা আমি সাহেল ভাইয়ার কাছে যাই ওকে??
.
কথাটা বলে গাড়ির দরজায় হাত দিতেই উনি আমার হাতটা জোড়ে টেনে ধরে চোখ মুখ লাল করে বলে উঠলেন-
.
খবরদার..গাড়ি থেকে নামবে তো।।লুক এট মি ডেমেট।।কি পেয়েছো ওর মধ্যে?? বলো কি পেয়েছো??
.
কথাটা বলেই গাড়ির সামনের দিকটায় খুব জোড়ে আঘাত করলেন উনি।।এমন কিছু হবে ভাবি নি।।আমি চমকে উঠে উনার হাতের দিকে তাকাতেই অবাক হলাম।।ব্যান্ডেজ ভিজে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।।এটুকু রক্ত তেমন কোনো ব্যাপার না কিন্তু আমার চোখে ভাসছে সেই রাতের ঘটনা।।অনেক রক্ত,,,চারপাশে অনেক রক্ত।।আমি কোনোরকম বলে উঠলাম…”রররক্ত!!!” উনি আমার কথায় হাতের দিকে ফিরে তাকালেন।।হাতের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আমার দিকে তাকিয়েই ডান হাতে দিয়ে আমাকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে মাথাটা চেপে ধরলেন বুকে।।স্লো ভয়েজে কানে কানে বলতে লাগলেন….
.
রিলেক্স রোদ।। টেক আ ডিপ ব্রেথ।।কিচ্ছু হয় নি,,কিচ্ছু না।।চোখ বন্ধ করো।।আমার সাথে কথা বলো।।
.
আমি কিছুই বলছি না চুপ করে উনার বুকে মাথা গুঁজে খামচে ধরে আছি উনার শার্ট।উনি আমাকে ধরে রেখেই রক্তমাখা হাতে সাহেল ভাইয়াকে কল করলেন…
.
হ্যালো সাহেল?তোর সামনেই আমার গাড়ি।।প্লিজ গাড়ির কাছে আয় ইমার্জেন্সি!!!
.
কিছুক্ষণ পরই সাহেল ভাইয়ার কথা শুনা গেলো।।
.
কি রে শুভ্র ডাক…(হঠাৎ থেমে গিয়ে) সানশাইনকে এভাবে জড়িয়ে ধরে আছিস কেন??
.
লুক এট মাই হ্যান্ড।ব্লিডিং হচ্ছে। আর ওর ব্লাড ফোবিয়া আছে।।প্লিজ ব্যান্ডেজ টা চেঞ্জ করে দে।।আমি একহাতে পারবো না।।
.
ওহ..ওকে।বাট এমনটা হলে কিভাবে?শুভ্র তোর রাগটা বেশি বেড়ে গেছে।।সেদিন ফারুককে মেরে নিজের ইচ্ছেতে হাতটা কেঁটে বেহাল দশা করলি।।আজ আবার?(ব্যান্ডিজ খুলতে খুলতে)
.
আজ ইচ্ছে করে করি নি।।হয়ে গেছে।
.
উনি আমার চুলে হাত ভুলিয়ে বলে উঠলেন-
.
রোদপাখি??ভয় পাচ্ছো?
.
আমি মাথা নেড়ে সায় জানালাম হ্যা পাচ্ছি।।উনি মুচকি হেসে আমাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলেন-
.
আমার বুকের বা পাশে মাথা রাখো একটা ইন্টারেস্টিং বিষয় আছে ওখানে।।রাখো..
.
আমি বাধ্যমেয়ের মতো উনার বা পাশে মাথা রাখলাম।।ধুপধুপ ধুপধুপ শব্দ হচ্ছে ক্রমাগত।।অনেক ফাস্ট বিট করছে উনার হার্ট।।আমার কাছে সাউন্ডটা মিউজিকের মতো লাগছে।।আচ্ছা এই সাউন্ডে কি কোনো গানের মিউজিক হতে পারে?? হঠাৎ উনি কানের কাছে ফিসফিস করে বলে উঠলেন…” এখনো ভয় করছে??” আমি খেয়াল করলাম আমার আর ভয় লাগছে না।।একটুকুও ভয় লাগছে না।।আমি মাথা নেড়ে না বলতেই উনি বলে উঠলেন-
.
মাথা নাড়ো কেন??মুখে বলো…. আর বোবা হয়ে যেও না প্লিজ।।স্পিক আপ।।
.
ভয় পাচ্ছি না।
.
আমার কথায় শুভ্র হাসলো।।সাহেল ভাইয়ার মুখের প্রতিক্রিয়া বুঝতে পারছিলাম না৷ কারব্ণ উনি কারের বাইরে আমার অপজিটে দাড়িয়ে আছেন।সাহেল ভাইয়া কাজ শেষ করে যেতে নিলেই শুভ্র তাকে খাবার পাঠানোর কথা বলে দিলেন।।সাহেল ভাইয়াও মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে চলে গেলেন।।আমিও সোজা হয়ে বসলাম,,খুব লজ্জা লাগছে আমার।।এতোক্ষণ আমি উনার এতো কাছে ছিলাম ভাবা যায়??কিছুক্ষণের মধ্যেই একটা ছেলে এলো খাবার নিয়ে।।খাবারটা এগিয়ে দিয়েই হাসিমুখে বলে উঠলো…
.
সরি ভাই লেইট হয়ে গেছে।।(আমার দিকে তাকিয়ে) আসসালামু আলাইকুম ভাবি!!ভালো আছেন??
.
আমি জবাব দেওয়ার আগেই শুভ্র বলে উঠলো…”ও ভালো আছে।।তুই এখন যা রাতুল।।” কিন্তু বাদ সাধলাম আমি।।ছেলেটাকে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠলাম…
.
এক মিনিট এক মিনিট!!!এই শুভ্র ভাই আপনার কি হয়??
.
জি ভাই লাগে।।
.
তাহলে শুভ্র ভাইয়ার বোন আপনার কি লাগবে??(ভ্রু নাচিয়ে)
.
বোন লাগবে।।
.
বোন লাগলে আমায় ভাবি ডাকেন কোন এংগেল থেকে??আমি উনার বোন হই৷ সো নেক্সট টাইম ভাবি ডাকলে খবর আছে যান।।
.
জি ভাবি।(মাথা নিচু করে)
.
আবার ভাবি??(রাগী চোখে)
.
সরি ভাবি!!
.
আবার??
.
এই রাতুল তুই যা তো…গো
.
ছেলেটা দুই সেকেন্ড না দাঁড়িয়ে দিলো দৌড়।আমি উনার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বলে উঠলাম-
.
ওকে যেতে দিলেন কেন??
.
তো বেঁধে রাখতাম??তোমাকে তো জাস্ট ভাবিই ডাকছে।এমন ভাব করছো যেন,, ওর ভাবি ডাকাতে তুমি ওর ভাইয়ের বাচ্চার মা হয়ে যাচ্ছো।।স্টুপিড।।
.
ইচ্ছে তো করছে একে খুন করে ফেলি।।তবু চুপ করে গেলাম।।আপাতত ক্ষুধা লাগছে,, একে পড়ে দেখা যাবে।।
.
.
আমি খাচ্ছি।। আর উনি গাড়ির সিটে হেলান দিয়ে গেমস খেলছেন।।নিচের ঠোঁটটা কামড়ে ধরে কপাল কুঁচকে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছেন।।আমি উনার দিকে তাকিয়ে থেকেই বলে উঠলাম-
.
শ্রেয়াকে আজ কেমন লাগছিলো??
.
আমার কথায় ভ্রু কুচঁকে আমার দিকে তাকিয়েই বলে উঠলেন- “শ্রেয়া কে?” উনার কথায় আমি চরম অবাক।।একটু আগে নাম পরিচয় শুনে এখনি ভুলে গেছেন।।আজব।।আমি উনার দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলাম-
.
একটু আগে যে মেয়েটার সাথে কথা বলছিলেন।।তার নাম শ্রেয়া।।
.
ওহ।।
.
উনার “ওহ” শুনে মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো।।তবু নিজেকে শান্ত রেখে বলে উঠলাম- “শাড়িতে অস্থির লাগছিলো না??পুরাই কিউটের ডিব্বা”
.
শাড়ি পড়েছিলো নাকি??(গেইম খেলতে খেলতে)
.
আপনি এটাও খেয়াল করেন নি ও কি পড়েছিলো??এতোক্ষণ কথা বলেও আপনি ওর ড্রেস খেয়াল করলেন না??
.
ওর ড্রেস খেয়াল করে আমার কি লাভ বলো তো??কোনো দরকার আছে??ও জামা পড়ুক,,শাড়ি পড়ুক,,চাইলে কিছুই না পড়ুক।।আই ডোন্ট কেয়ার।।
.
উনার কথা শুনে আমি ফিট।।থেংক গড শ্রেয়া এখানে নেই।। নয়তো মেয়েটা সুইসাইড করতো।।যার জন্য এতো সাজুগুজু সে নাকি তাকে খেয়ালই করে নি কি পড়েছিলো।।ভাবা যায়??আমি খাওয়া থামিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম-
.
মিস করলেন…এতো সুন্দর মেয়েকে চোখের সামনে রেখেও দেখলেন না।।কি সুন্দর লাগছিলো….
.
হুমম অনেক সুন্দর লাগছিলো…এলোমেলো চুল,,ঘুমু ঘুমু চোখ।।মাথায় জড়ানো ওড়নার লাল আভা….পাগল যে হয়ে যাই নি।।সেটাই তো অনেক রোদপাখি…(আনমনে)
.
কি বললেন??(ভ্রু কুচকে)
.
ক..কই কিছু না তো??(থতমত খেয়ে)
.
আমি তো শুনলাম…আপনি বললেন এলোমেলো চুল।।ওর চুল গোছানো ছিলো।।এলেমেলো ছিলো নাহ….
.
চুপচাপ খাও তো।।আমার যাকে দরকার তাকে দেখতে পেলেই হলো।।শ্রেয়া প্রেয়া কে দিয়ে কি করবো??
.
আমি অবাক চোখে তাকিয়ে আছি।।তারমানে মেয়েটা শ্রেয়া নয়।।তাহলে কি চিত্রা???নো নো….অবশেষে চিত্রা??চিত্রা ঠিকই বলেছিলো…জামাই হতে কতোক্ষন??সত্যিই তাই জামাই হতে কতক্ষণ? দীর্ঘশ্বাস!!!
.
#চলবে?
#তোকে চাই❤
………(সিজন -২)
#writer : নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
#part: 18
.
.
?
.
কফি হাতে ছাদের দোলনায় বসে আছি।। মাথা ধরেছে।এই মুহূর্তে মাথা ধরা ভাবটা হালকা হলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই তা চূড়ান্ত আকার ধারণ করবে।তাই আগে থেকেই আয়োজন করে বসে আছি। মাথা ব্যথার কারণটা না জানলেও এর লক্ষণটা স্পষ্ট।। প্রথমে বিনা কারণে মন খারাপ হবে…. মন খারাপ ভাবটা চূড়ান্ত আকার ধারণ করলে শুরু হবে মাথা ব্যাথা।।যাকে বলে প্রচন্ডরকম মাথা ব্যাথা।।দোলনায় মাথা ঠেকিয়ে একদৃষ্টে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি।।রাতের আকাশটাকে উজ্জল করে ফুটিয়ে তুলেছে ওই চাঁদ।।সবার থেকে সুন্দর,,প্রাণবন্ত…ঠিক শুভ্র ভাইয়ার মতো।।আচ্ছা? উনি কি সত্যিই চিত্রাকে পছন্দ করেন?করারই কথা না করে যাবেন কোথায়??চিত্রা যে অসম্ভব রূপবতী একটা মেয়ে।।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সোজা হয়ে বসে কফির কাপে চুমুক দিলাম।।চিত্রাকে শুভ্র ভাইয়ার বউ হিসেবে খারাপ লাগবে না বরং অসাধারণ মানাবে।আমার ভাবি হিসেবে তো পার্ফেক্ট।।কি মনে করে কল দিয়ে বসলাম চিত্রাকে….
.
হ্যালো!!
.
শুভ্র ভাইয়া শ্রেয়াকে নয় তোকে পছন্দ করে চিত্রা!!
.
আমার মুখে হঠাৎ এমন কথা শুনে অবাক হলো চিত্রা।।কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে উঠলো…
.
আর ইউ মেড??আমাকে কেন পছন্দ করতে যাবে বল তো।।
.
তুই যে সুন্দরী পছন্দ না করে কই যাবো?(,হালকা হেসে)
.
শোন রোদ??এসব ফাউল কথা বাদ দে।।ভাইয়া যদি ভার্সিটিতে আমাদের চিনা পরিচিতদের মাঝে কাউকে ভালোবাসে তাহলে সেটা তুই,, নয়তো কেউ না।।ভাইয়া তোর কতো কেয়ার নেই দেখেছিস?
.
শাট আপ চিতা বাঘ।তুই কেয়ার কই দেখলি?অপমান ছাড়া কিছু করেছি উনি??যত্তসব!!
.
তুই কি জানিস? ফারুক নামের ছেলেটা ১০ দিন যাবৎ আইসিইউ তে।এখনো নাকি কোমায়….বুঝতে পারছিস ওর এই পরিনতির কারণ?
.
হুমম…নিশ্চয় শুভ্র ভাই মেরেছে।ঠিকই করেছে,, সাকিবকে মারার সাজা।
.
তোর কি মনে হয় না?শুধু সাকিব না অন্যকারো দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাজা দেওয়া হয়েছে তাকে।
.
উনি মেয়েদের রেস্পেক্ট করেন।আমার জায়গায় অন্যকেউ থাকলেও তাই করতেন….
.
রোদ?কেউ ইচ্ছে করে বুঝাতে না চাইলে তাকে বুঝানো সম্ভব নয়।।কোনো কালেই নয়।।তুই কেনো মানছিস না হি লাইকস ইউ।
.
আজগুবি কথা মানা উচিত না চিত্রা।।আমার মধ্যে এমন কিছুই নেই যাতে শুভ্র ভাইয়ের মতো ছেলে আমার প্রেমে পড়বে।।এনিওয়ে কথা বলতে ভালো লাগছে না বাই!!
.
আরে..কিন্তু!!
.
চিত্রাকে কিছু বলতে না দিয়েই ফোনটা কেটে দিলাম আমি।।ওর এসব অবিশ্বাস্যকর কথা শোনার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই আমার।।একটুকুও না।।কেন ভাবছি আমি এতো??গোল্লায় যাক সব…যাকে ইচ্ছে ভালোবাসুক শুভ্র ভাই…যাকে ইচ্ছে বিয়ে করুক।আমার তো কোনো যায় আসে না।।তবু কেনো বুকে চাপা কষ্ট হচ্ছে… মনে হচ্ছে সব ভেঙে গুড়িয়ে ফেলি।।চিৎকার করে কান্না করি…তাতে হয়তো কষ্টটা একটু হলেও লাঘব হবে!!হঠাৎ ছাদের দরজায় পায়ের শব্দে ফিরে তাকালাম….বাবা!! বাবা আমার দিকে হাসিমুখে এগিয়ে এসে দোলনার একধারে বসে বলে উঠলো…
.
মামনি?তুই কি বড় হয়ে গেছিস?
.
বাবার এমন উদ্ভট প্রশ্নে অবাক চোখে তাকালাম।।বাবা হাসিমুখে আবারও বলে উঠলেন-
.
মেয়ে বিয়ে দেওয়ার মতো কষ্টের আর কিছু এই দুনিয়াতে নেই বুঝলি।মনে হয় কলিজাটা কেটে অন্যকাউকে দান করে দিচ্ছি।তবুও দিতে হয়….মেয়ের বাবারা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ অসহায়!!
.
এভাবে ব?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে