তোকে চাই❤পর্ব:৮+৯

0
3770

তোকে চাই❤পর্ব:৮+৯
#writer:রোদেলা❤
#part:8


হঠাৎ কিছুর তীব্র আলো চোখে পড়ায় আমার ভাবনার ঘোর কাটলো,,,চোখ ধাঁধানো এই আলোর উৎস খুঁজে না পেয়ে চমকে উঠলাম,,আচ্ছা,,,নতুন কোনো বিপদের পূর্বাভাস নয় তো এই আলো???ভয়ে ভেতরে ভেতরে জমে যাচ্ছিলাম।।।তখনই দুজোড়া পায়ের শব্দ শুনতে পেলাম,,,তারা যেনো দৌড়ে আসছে আমার দিকে,,,কিন্তু আলোর অপজিটে থাকায় চেহারাগুলো অন্ধকারে ঢাকা।।চোখের উপর চাপ প্রয়োগ করেও তাদের চেহারা দেখতে ব্যর্থ হয়ে চুপচাপ শেষ পরিনতির অপেক্ষায় চোখ খিঁচে বসে আছি।।হঠাৎ কোনো পরিচিত কন্ঠে চোখ মেলে তাকালাম,,,

রিদু,,,বোন,,,কাদঁছিস কেন বোকা মেয়ে???(দুই গালে হাত রেখে)

সামনে ভাইয়াকে হাঁটু গেড়ে বসতে দেখে নিজেকে সামলাতে পারলাম না,,,এতোক্ষণের আটকে থাকা ভয়,,,জ্বালা ধরানো অতীত সবকিছু থেকে মুক্তি পেতেই যেনো ভাইয়ার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লাম।।।আমি জানি এখানে আমার ভয় নেই,,,ভাই নামের এই মানুষটি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে পুরো পৃথিবীর সাথে লড়ে যেতে পারে অবলীলায়।।। আমার বিয়েটা আটকাতে,,বাবা-মার বাধ্য ছেলেটাও অবাধ্য হয়ে উঠেছিলো।।।আমাকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো কেঁদেছিলো,,,,শেষ রক্ষা না হওয়াই বেরিয়ে গিয়েছিলো বাড়ি থেকে।।

রিদু,,,এই রিদু,,,কাঁদিস না বোন,,,দেখ আমি এসে গেছি,,সব ঠিক হয়ে যাবে।।কোথাও ব্যাথা পেয়েছিস বোন??

ভাইয়া??(ঠোঁট ফুলিয়ে)

কি হলো??ব্যাথা পেয়েছিস কোথাও?? সরি রে,,আমি আসতে দেরি করে ফেলেছি,,সরি,,,,

তুমি কাঁদো কেন??কিছুই হয়নি আমার,,,কিন্তু উনার হয়েছে,,, সেন্সলেস হয়ে গেছেন,,,আমাকে ছেড়ে উনাকে ধরো,,,

উপপপস্,,,, সরি,,,অভ্র ভাইয়া??আমি একা পারবোনা আপনিও ধরেন,,আপনার ভাইয়ের স্বাস্থ্য ভয়ানক,,,

রাহাত?তুমি এই পরিস্থিতিতে ও মজা করছো??

মজা কই করলাম?আম সিরিয়াস ভাই,,উনাকে একা তোলা আমার কর্ম নয়,,,

ভাইয়ার কথা শুনে এমন একটা পরিস্থিতিতেও আমার হাসি পাচ্ছে।।ভাইয়াটা যে কি?যখন দেখছে বোন ঠিক আছে,,,তার মানে জগৎ-সংসারের সব ঠিক আছে।।

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share


শুভ্র বিছানায় শুয়ে আছে,,,কি নিষ্পাপ লাগছে মুখটা,,,ডাক্তার আংকেল বলে গেছেন টেনশনের কিছু নেই,,অতিরিক্ত মানসিক চাপে এমনটা হয়েছে।।নিজেকে বড্ড দোষী মনে হচ্ছে,, সেই দিন ওভাবে কথাগুলো বলাটা ঠিক হয়নি।।উনি অসুস্থ তবু কেমন একটা ভালোলাগা কাজ করছে সারা শরীর জোড়ে।।সেই বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত,, ইভেন গাড়িতেও উনি আমার কোলে মাথা রেখে শোয়ে ছিলেন।।।এই প্রথম তাকে কাছে পাওয়া,,,উনার এই ক্লান্ত -নিষ্পাপ মুখ আমায় বড্ড টানছে,,,ইচ্ছা করছে খুব করে আদর করে দেই।।।কিন্তু একটা সংকুচ ভিতরে কড়া নেড়ে চলেছে অনবরত,,,উনি তো আমার নন,,উনি নীলিমা আপুর ভালোবাসা।।উনাকে ছোঁয়া বা ভালোবাসার অধিকার কি আমার আছে??কেনো থাকবে না??উনি যে আমার স্বামী,,,অধিকার আমার,,,কিন্তু………নিজের সাথে নিজেরই করা হাজারো তর্ককে থামিয়ে দেয় একটি মাত্র কিন্তু।।।এই কিন্তুর ভেতর কতো হাজার প্রশ্ন,,যে প্রশ্নগুলো বেঁধে রেখেছে,,,হাজারো চাওয়া-পাওয়ার স্বপ্নগুলো থেকে।।রাত ১২ঃ২০ বাজে উনার ঘুম এখনো ভাঙে নি,,,হয়তো ভাঙবেও না।।।এবার আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না,,উনার কপালে আলতো একটা ভালোবাসার পরশ দিয়ে দিলাম,,,


ঘুমের মধ্যেই মনে হচ্ছিলো কেউ হয়তো আমার দিকে তাকিয়ে আছে।।।আমার বয়সটা এমন একটা বয়স যখন মস্তিষ্ক ঘুমালেও শরীরটা জেগে থাকে সবসময়,,,হালকা স্পর্শেও কেঁপে ওঠে এই শরীর।।হাজারো কৌতূহল নিয়ে ঘুম মাখা চোখ মেলে তাকালাম,,শুভ্র আমার দিকে তাকিয়ে আছে,,,কিছু একটা ভাবছে সে,,,আমি নড়েচড়ে উঠতেই উনি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন,,,

থেংক্স,,,আমায় সামলে নেওয়ার জন্য

আমি কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না,,উনার মুখে প্রথম থেংক্স শুনে কি রিয়েকশন দেওয়া উচিত,, তাই যেনো ভুলে গেছি।।”আমার দায়িত্ব ছিলো” বলে কোনো রকম কাটিয়ে দিলাম কথাটাকে,,,,

রোদ??

হুমম কিছু বলবেন?

হ্যা,,তোমার সাথে ইম্পর্টেন্ট কথা ছিলো,,

জি বলুন,,,(অবাক হয়ে)

তুমি এখনো বাচ্চা একটা মেয়ে,,১৮ এর গন্ডিতে পা রাখতে পারো নি এখনো,,,আর আমার জন্য তোমার জীবনটাই নষ্ট হয়ে গেলো।।। বাবা খুব স্বার্থপরের মতো কাজ করেছে রোদ,,নিজের ছেলের খুশির ঝুলা ভরতে গিয়ে তোমার ঝুলিটা ফাঁকা করে দিয়েছেন একদম।।।কিন্তু আফসোস,,,না পারলাম আমি হ্যাপি হতে,,, না পারলে তুমি,,,, কিন্তু আপাতত একজনের তো ভালো থাকা উচিত তাই না??

কথাগুলো উনি খুব শান্ত কন্ঠে বলছিলেন,,,খুব গুছিয়ে।।মনে হচ্ছিলো হয়তো আগে থেকে ভেবে রাখা কথাগুলো আওড়ে চলেছেন,,,আর আমি নিস্তব্ধ হয়ে শুনছি,,,কি বলতে চান তিনি,???উনি একটু থেমে আবার বলতে লাগলেন,,,

তোমার ভালো থাকা উচিত রোদ,,,ইউ ডিজার্ভ ইট।।আমি জানি,,,যা হয়েছে,,তাতে তোমার লাইফে দাগ পড়েছে,,সাথে সাথে তোমার মনেও,,,আমি সেই দাগ মেটাতে পারবো না,,,কিন্তু আর কোনো দাগ যেনো না লাগে সেই চেষ্টা করতেই পারি।।আমি তোমাকে তোমার সবটুকুই ফিরিয়ে দিতি চাই রোদ।।তোমাকে আমি সম্পূর্ন মুক্তি দিতে পারবো না কারন বাবা সেটা মেনে নিবে না,,, কিন্তু আমি তোমাকে বলছি,,,,আমি কখনো স্বামীর অধিকার নিয়ে তোমার সামনে দাঁড়াবো না,,,,তোমার স্বাধীনতায় কখনো বাঁধা হয়ে দাড়াবো না।।।তুমি তোমার স্বপ্নের দিকে এগিয়ে যাও,,,আমাদের সম্পর্ক তাতে বাঁধা হবে না,,,,কখনো না,,,

বলেই উনি ওয়াশরুমে চলে গেলেন।।।আমি স্তব্ধ হয়ে বসে আছি,,,কতো ইজিলি কথাগুলো বলে গেলেন।।।সবটুকু আমাকে ভেবেই বলেছেন উনি কিন্তু সেই আমিই তো মেনে নিতে পারছি না।।যে পরিনাম জানাই ছিলো,,,সেই পরিণামটাকেই যে মেনে নিতে এতো কষ্ট কেনো হচ্ছে বুঝতে পারছি না।।।কাঁদতে ইচ্ছা করছে,,,চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করছে।।


দুদিন হলো আমাদের বাড়ি থেকে শুভ্রদের বাড়ি এসেছি,,এই দুইদিনে উনার সাথে খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া কথা হয় নি।।আগে তবু ঝগড়ার ছলে কথা হতো কিন্তু এখন সেই ঝগড়াটাও নেই,,,খুব ইচ্ছা করে উনার সাথে গল্প করতে,, হাসতে কিন্তু,,,,,আবার সেই কিন্তু।।।এই কিন্তুটাই আমার জীবনের বড্ড বড় বাঁধা,, যাকে আমি অতিক্রম করতে পারছি না।।আজ মামু আমাকে আর শুভ্রকে রুমে ডেকে পাঠিয়েছে,,জানি না কেন,,,জানার কোনো ইচ্ছাও নেই,,আজকাল কৌতূহল জিনিসটা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে মনে হয়,,,তবু যেতে হবে,, মামুর জরুরি তলব বলে কথা,,,শুভ্রর জন্য অপেক্ষা করছি,,সে এখন পড়াশুনার পাশাপাশি মামুর অফিসও সামলাচ্ছে,,,অভ্র ভাইয়ার দায়িত্বটা নিজের ঘাড়ে তুলে নিয়েছে হয়তো কষ্ট ভুলার জন্যই নিজেকে এই ব্যস্ততায় আটকে রাখা।।বড্ড একা লাগে এখন,,আপুও অভ্র ভাইয়ার সাথে চট্টগ্রাম চলে গেছে,,,আপু চট্টগ্রাম ভার্সিটিতে পড়ে,,,পড়াশোনা শেষ হতে আরো দু’বছর তাই মামু ডিসিশন নিয়েছে আপুর পড়াশুনা চলাকালীন সময়ে অভ্র ভাইয়া, চট্টগ্রামের কোম্পানি সামলাবে আর আপুর সাথে ওখানেই থাকবে,,বাড়ির বউকে তো আর এতোদূর একা রাখা যায় না,,,,এটাই মামুর বক্তব্য।।।রুমে পায়ের শব্দ শুনতে পাচ্ছি,,হয়তো উনি এসেছেন,,তাই চটপট ব্যালকনি থেকে রুমে ঢুকলাম,,,,আমার দিকে একনজর তাকিয়েই ওয়াশরুমে ঢুকে গেলেন তিনি,,আমিও কফি আনতে চলে গেলাম নিচে।।নিচে নামতেই আরিফ চাচা জানালেন মামু রুমে যেতে বলেছে,,আমিও মাথা ঝাকিয়ে সম্মতি জানিয়ে কফি হাতে উপরে চলে এলাম,,,,সাধারনত বাড়ির কাজের লোকদের নাম হয়,,,রহিম, করিম,জদু,কদু কিন্তু বিস্ময়কর ব্যাপার হলো এই বাড়ির প্রায় সব কাজের লোকদের নামগুলোই সুন্দর,,,যেমন,,,,আরিফ,,,মাধবী,,রাহেলা।।মামু হয়তো নাম যাচাই করে সবাইকে কাজে নিয়েছে,,নিতেও পারে,, হো নোস??একদিন জিগ্যেস করে দেখতে হবে।।এসব ভাবতে ভাবতেই রুমে পা রাখলাম,,উনি এতোক্ষণে ফ্রেশ হয়ে লেপটপ নিয়ে বসে গেছেন।।আমি উনার সামনে কফির কাপটা এগিয়ে দিয়ে বললাম,,,
মামু ডেকেছে,,,

উনি ভ্রু কুচঁকে আমার দিকে তাকিয়ে কফি হাতে নিলেন।।আমি আবার বললাম,,,

মামু,,আমাকে আর আপনাকে উনার রুমে যেতে বলেছেন,,

কেনো??(অবাক হয়ে)

আমি কি করে বলবো??গেলেই না বুঝতে পারবো…

ওহ,,,আচ্ছা চলো,,এখনি যেতে হবে??

হুম।।আচ্ছা শুনুন?

হুম??কিছু বলবা??

হ্যা,, আচ্ছা আপনারা কি বাড়ির কাজের লোকদের নাম দেখে এপোয়েন্ট করেন??(কৌতূহলী দৃষ্টিতে)

কেনো??আর এমন অদ্ভূত কথা মনে হওয়ার কারন?(ভ্রু কু্চ্ঁকে আমার দিকে তাকিয়ে)

অদ্ভুত কেমনে হলো??কাজের লোকদের নাম সাধারনত হয় রহিম,,করিম,,কমলা,,,জমেলা,,জদু,,মদু,,কদু।।।কিন্তু আপনাদের বাড়ির কাজের লোকদের নাম যথেস্ট স্মার্ট,,লাইক,,আরিফ,,মাধবী,,,,(হাত উল্টে ঞ্জানী ঞ্জানী ভাব নিয়ে)

উনি আমার কথা নাকি বলার ভঙ্গী দেখে জানি না তবে দু’সেকেন্ড আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থেকে রুম কাঁপিয়ে হুহু করে হেসে উঠলেন,,৷ আর আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলাম,,,,কতোদিন পর তিনি মন খোলে হাসছেন,,ড্রেসিং টেবিলের গ্লাসে দেখলাম দরজার পাশে মামানি এসে দাঁড়িয়েছে,,পাশে কাজের লোকগুলো আর মামু।।।মামু আর মামানির চোখে জল যেনো বহু প্রত্যাশিত কিছু পেয়ে গেছেন,,,,আর কাজের লোকদের চোখে বিস্ময়……


#চলবে……

#তোকে চাই❤
#writer:রোদেলা❤
#part:9


আমার দিকে কৃতজ্ঞতা মাখা চাহনী দিয়ে দরজার পাশ থেকে সরে গেলেন মামনি,,,,ধীরে ধীরে সড়ে গেলো সবাই।।।শুভ্র এখনো হাসছে,,,হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যাচ্ছে এমন অবস্থা।।।মানুষটা এতো হাসতে পারে,,তবু হাসিগুলোকে যে কি ভাবে চেপে রাখে সেটাই বুঝতে পারছি না??৪/৫ মাস পর আজ প্রথম, আমি উনাকে মন খুলে হাসতে দেখছি।।হঠাৎই উনি হাসি থামিয়ে দিলেন,,,হয়তো নিজের পরিবর্তনটা বুঝতে পেরে নিজেই অবাক হচ্ছেন।।আমার দিকে একনজর তাকিয়ে আবার গম্ভীর মুখে বলে উঠলেন,,,”চলো”।।।আমিও বাধ্য মেয়ের মতো উনার পেছন পেছন মামুর রুমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।।।আজ খুব করে মনে হচ্ছে,,,খুব কি ক্ষতি হয়?যদি উনি নীলিমা আপুকে ভুলে আবার হাসতে শিখেন,,,,বন্ধুদের আড্ডায় আবারও মধ্যমনি হয়ে উঠেন,,,আবার একটু ভালোবেসে আগলে রাখতে শিখেন।।কিন্তু প্রকৃতি সবকিছুকে এতো সহজ করে দেয় নি,,,একটা জীবনের সাথে খুব গোপনভাবে জড়িয়ে দিয়েছে আরো কয়েকটা জীবন।।।নীলিমা আপুর সাথেও জড়িয়ে ছিলাম আমরা।। তাইতো তার চলে যাওয়াতে,,, কেউ রেহাই পাইনি,,,না আমি,,না শুভ্র,,না আপুর বাবা-মা,,,সবাই তার অগোছালো জীবনটাতে ক্লান্ত শুধু একটা নীলিমার অপেক্ষায়।।মামু বিছানায় আধশোয়া হয়ে বই পড়ছিলেন,,,আমরা রুমে ঢুকতেই উঠে বসে আমাদেরও বসতে বললেন।।।

বাবা,,ডেকেছিলে??কোনো সমস্যা?? (উদ্ধিগ্ন হয়ে)

তোদের কোনো সমস্যা ছাড়া ডাকতে পারি না বুঝি?(হালকা হেসে)

না,,তেমন টা না আসলে,,,

থাক ওসব কথা,,,,তোদের ডাকার প্রধান কারণ হলো রোদ মা।।

আমি অবাক হয়ে মামুর দিকে তাকালাম,,,শুভ্রও হয়তো অবাক হয়েছে,,সে আমার দিকে একনজর তাকিয়েই মামুর চোখে চোখ রেখে বললেন,,,

রোদ মানে??

রোদ মা??তোর সাথে অনেক অন্যায় আমি করেছি,,তোর স্বপ্নগুলো আমার জন্য ঝাপসা হয়ে গেছে কিন্তু না,,,তুই তোর স্বপ্ন পূরন করবি,,,কালই একটা এডমিশন কোচিং এ ওকে এডমিট করিয়ে দিবে শুভ্র,,,ভালো করে পড়াশোনা করো,,,আমার বউমাকে আমি উচ্চশিক্ষিত হিসেবে দেখতে চাই।।(আমার মাথায় হাত রেখে)

না ম,,মামু,,,তার কোনো প্রয়োজন নেই,, আমি বাসায় পড়েই এডমিশনের প্রস্তুতি নিয়ে নিবো।।কোচিং এ ভর্তি হওয়ার দরকার নেই।।

একদম কথা না।।।আমি যা বলছি,,,যেভাবে বলছি তাই হবে,,,তুমি ভর্তি হবে মানে হবে।।।শুভ্র তোমার কোনো সমস্যা আছে?

না বাবা,,,,আমি এক্ষুনি খোঁজ নিয়ে দেখছি কোন কোচিংটা ব্যাটার,,,,

বলেই বেরিয়ে গেলেন,,,,উনার চোখে মুখে খুশির একটা ঝিলিক ছিলো,,হয়তো উনি এমন কিছুই চাইছিলেন।।। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেরিয়ে আসতে নিলেই মামু আমার হাত চেপে ধরলেন,,,,আমি তাকাতেই,, ছলছল চোখে পাশে বসতে ইশারা করলেন,,,,আমি অবাক হলাম।।মামুর এই ছলছল চোখের রহস্য খোঁজে পাচ্ছিলাম না।।মামু আগের থেকেও শক্ত করে আমার হাত চেপে ধরে বলে উঠলেন,,,

মা রে,,,বড্ড অন্যায় করে ফেলেছি তোর সাথে,,,পারলে ক্ষমা করিস।।কিন্তু জানিস?এই অন্যায়ের জন্য আমার আপসোস হচ্ছে না।।সন্তানের জন্য স্বার্থপর হওয়া তো অন্যায় নয়,, তাই না??আমি জানি শুভ্র নীলিমাকে ভালোবাসে,,,ভালোবাসা অন্যায় না কিন্তু ভালোবাসার জন্য তিলে তিলে শেষ হয়ে যাওয়াটাও তো কোনো সমাধান নয়,,,নিজের ছেলেকে চোখের সামনে শেষ হয়ে যেতেও দেখতে পাচ্ছিলাম না।।এভাবে থাকলে ও মরে যেতো মা,,,মরে যেতো।।।আমি শুধু আমার ছেলেটাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছি ব্যাস।।

আমি মামুর দিকে তাকিয়ে আছি তীক্ষ্ণ চোখে,,,তার চোখে ছেলেকে হারানোর ভয়,,,অশ্রুজল মাখানো আর্তনাত,,,,হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ মুছে,,,একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার বলতে শুরু করলেন উনি,,,

তুই নিশ্চয় ভাবছিস,,,ছেলেকে বাঁচাতে যদি বিয়েটা খুব ইম্পর্টেন্ট ছিলো তাহলে তুই ই কেনো???তোর মতো বাচ্চাকেই কেনো বেছে নিলাম??কোনো এডাল্ট মেয়েকে কেনো নয়??

আমি মাথা ঝাঁকালাম,,,উনি মুচকি হেসে বলে উঠলেন,,

এর পেছনে দুটি কারণ আছে,,প্রথমত,,আমি তোর চোখে শুভ্রর জন্য একটা গভীর মায়া দেখেছিলাম।।যা শুধু শুভ্রর মায়ের চোখেই ফুটে ওঠে বারবার।।আমার মনে হয়েছিলো এই মায়া শুভ্রকে বাচাঁর একটা স্কোপ তৈরি করে দিবে,,,তাই তোকে বিয়েটা করতে বাধ্য করেছি,,,

আর দ্বিতীয় কারন??(কৌতূহলী চোখে)

দ্বিতীয় কারণটি হলো তুই দেখতে তোর মায়ের মতো আর তোর আচার-ব্যবহারও তার মতোই,,,

এর সাথে বিয়ের কি সম্পর্ক?? (ভ্রু কুঁচকে অবাক হয়ে)

মামু এবার হুহু করে হেসে উঠলেন,,,আমি এবার আরো অবাক হলাম,,,কি ব্যাপার??উনি হাসছেন কেনো??

দেখেছিস??,এই যে ভ্রু কুঁচকে তাকালি,,,তোর মাও ঠিক এভাবেই তাকায়।।তোর মা আমাকে বাঁচার আশা দিয়েছিলো,,,আর তুই দিবি আমার ছেলেকে,,,কি পারবি না??

মানে??মা বাঁচার আশা দিয়েছিলো মানে??আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না,,,,(কনফিউজড হয়ে)

এতো বুঝতে হবে না,,, তোকে অন্যদিন না হয় সব খুলে বলবো।।।

না,,না,,প্লিজ আজই বলো না,,নইতো আমার রাতে ঘুমই হবে না আমার।।(ঠোঁট উল্টিয়ে)

তুই বায়নাও করিস তোর মায়ের মতো,,,আমার ছেলেটাকেও তোর মায়ের মতো সামলে নিস মা,,,,,এবার যা এক কাপ চা নিয়ে আয় তো,,,

বুঝতে পারলাম মামু কথা ঘুরাতে চাইছে,,তাই আমিও আর জোড় করলাম না,,বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে দরজার দিকে ফিরতেই শুভ্রকে দেখতে পেলাম,,দরজায় দাড়িয়ে আছেন।।উনার চোখ -মুখ দেখে বুঝতে পারছিলাম না যে,,,উনি কি আমার আর মামুর কথা শুনেছেন নাকি শুনেননি???উনি আমার দিকে একনজর তাকিয়েই চোখ সরিয়ে নিলেন,,,,,আমাকে পাশ কাটিয়ে মামুর পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন,,, আমিও চা আনতে নিচে চলে গেলাম।।।মামুর কথা শুনে বুঝতে পারছি,, উনি আমাকে কোচিং এ ভর্তি করিয়েই ছাড়বেন,,,কিন্তু টাকা???আমি এতো টাকা কোথায় পাবো??ভর্তি ফি,,বই-খাতা বাবদ ১৫/২০ হাজার টাকা তো এটলিস্ট লাগবে।।।মামু বা শুভ্রর টাকায় আমি কোচিং এ ভর্তি হবো না,,,শুভ্রর মুখে শুনা লোভী পদবীটা এখনো আমার কানে বাজে,,,নাহ,,নিজের আত্মসম্মানের সাথে কোনো কম্প্রোমাইজ নয়।।।একটা মানুষের আর কিছু থাকুক বা না থাকুক সেল্ফরেসপেক্ট থাকা উচিত,,,যা আমার রক্তের কণায় কণায় মিশে আছে।।।টাকা আমায় জোগার করতেই হবে কিন্তু কিভাবে??বাবাকে বলা যাবে না তাহলে বাবা মামুকে ভুল বুঝবে,,এসএসসি পাশ করার সার্টিফিকেটও হাতে পাইনি তো চাকরি করাটা নেহাত কল্পনা,,,ওসব শুধু গল্প-নাটকেই হয়,,,রিয়েল লাইফে নয়।।।কিন্তু কিছুতো করতে হবে।।।এসব ভাবতে ভাবতে মামুর রুমে গিয়ে মামুর হাতে চায়ের কাপটা ধরিয়ে দিয়েই নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালাম,,শুভ্র হয়তো রুমেই আছে,,উনার থেকে টাকার এমাউন্ডটা জেনে নিতে হবে
।।।তাড়াহুড়ো করে রুমে ঢুকেই আমি” হা”,,,,উনি এর মধ্যে শাওয়ারও নিয়ে নিয়েছেন,,,হাউ ফাস্ট,,,হবেই না বা কেন??দেখতে হবে না কার বর,,,,ইচ্ছা করছে কাজলের টিপ দিয়ে দিই উনাকে,,এত্তো কিউট কে হতে বলছে??ভিজা চুল থেকে টুপটাপ পানি ঝরছে,,বুকে লেপ্টে থাকা লোমগুলোও কি আকর্ষনীয়,,,,ইচ্ছা করছে উনার বুকে জমে থাকা ফোঁটা ফোঁটা পানিগুলো ছুঁয়ে দিই আলতো হাতে,,,হঠাৎ ই দুষ্টুবুদ্ধি খেলে গেলো মাথায়,,চটপট বিছানার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম,,,,উনি আমাকে দেখে যেনো অস্বস্তিতে পড়ে গেলেন,,,তাড়াহুড়ো করে আলমারির দিকে এগিয়ে গেলেন,,,হয়তো ড্রেস বের করবেন।।ঢং দেখলে,,, মেজাজ বিগড়ে যায়,,,নেকামো,, আগে তো খালি গায়েই হুটহাট সামনে চলে আসতো আর আমি লজ্জায় লাল হয়ে যেতাম আর এখন??বিয়ে হয়ে গেছে,,, সাথে সাথে সাহেবও দেখি লজ্জার কারখানা দিয়ে বসে গেছেন,,,হুহ।।।উনি তাড়াহুড়ো করে বিছানার পাশ দিয়ে আলমারির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন ওমনি উনার পায়ের সাথে পা লাগিয়ে দিলাম।।তারপর যা হওয়ার তাই হলো,,আমায় নিয়ে বিছানায় গিয়ে পড়লেন,,কই ভেবেছিলাম স্টার জলসার হিরো-হিরোইনের মতো ৫/১০ মিনিট দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে হারাই যাবো,,,কিন্তু তা আর হলো কই??ওই যে আমার বর বলে কথা,,,,ব্যাটা এতো আনরোমান্টিক,,,,আমার মনে হলো পড়ার আগেই উনি উঠে গেলেন।।।আর আমি উঠে বসতে বসতে উনি টি-শার্ট নিয়ে ওয়াশরুমেও ঢুকে গেলেন,,যাওয়ার সময় ছোট্ট করে বললেন “সরি,,,এটা ইন্টেনশনালি ছিলো না”।।।। মেজাজটা আমার চরম খারাপ হচ্ছে,,ব্যাটা খচ্চর একটা,,,জীবনে রোমান্টিক মুভি দেখিস নি???ইচ্ছা তো করছে তোর সবগুলো চুল টেনে টেনে ছিঁড়ে ফেলি,,,ফাজিল পোলা,,কতো আশা করেছিলাম,, কতো সুন্দর রোমান্টিক সিন ক্রিয়েট হবে,,,আর এই ব্যাটায় সব নষ্ট করে দিলো।।শালা আবাল,,,তোর ঘাড়ে নীলামার ভূত এসে চাপপে দেখে নিস,,,,???


#চলবে….

(অসুস্থ থাকায় গল্প ঠিকমতো লিখতে পারছি না।।মনটা খুব ক্লান্ত তাই গল্পলেখার মনমানসিকতা থার্ড লেবেলে নেমে গেছে বলে মনে হচ্ছে,,,তার পার্টটা ছোটও হয়েছে,,,সেজন্য সরি।।।আর পাশে থাকার জন্য সবাইকে অবিরাম ভালোবাসা❤)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে