তৈমাত্রিক পর্ব-০৬

0
978

#তৈমাত্রিক
#লেখিকা; Tamanna Islam
#পর্বঃ ০৬

🧡🍂
.
.
.

মহিলা টিকে আমি মোটেও চিনি না। তবে কেন এভাবে দেখছে আমাকে তাও জানি না। তখনই হঠাৎ তনু বলে ওঠে..

তনু;; ওহহ মেহরু তোকে তো বলাই হয়নি। ইনি হচ্ছেন আমার চাচি শাশুড়ি।

মেহরাম;; ওহহ আচ্ছা।

তনু;; আর পুরো বাড়িতে এই একমাত্র ব্যাক্তি যে বদের হাড্ডি। মেজাজ খুব খিটখিটে আর ফালতু একটা মহিলা (কানের কাছে ফিসফিস করে)

আমি তনুর করা এতো প্রশংসা শুনে হেসে দেই। তখনই সেই মহিলা টি আমাকে বলে ওঠেন।

তাহেরা বেগম;; আমি হলাম তাহেরা বেগম। মানে এই যে তনুর চাচি শাশুড়ি আর কি আর আয়ুশের চাচি।

মেহরাম;; জ্বি।

তাহেরা বেগম;; তো কি নাম তোমার?

মেহরাম;; জ্বি মেহরাম আফরিন। তনুর বোন আমি।

তাহেরা বেগম;; ওহহ তো দুই বোনের মাঝে কে বড়ো??

তনু;; চাচি আমরা সমবয়সী। তবে মেহরু আমার থেকে দুমাসের বড়ো মাত্র।

তাহেরা বেগম;; দুই দিনের হইলেও বড়ো তো। তা বড়ো বইনের বিয়ার আগে ছোট বইনের বিয়া দিয়া দিলো। কোন সমস্যা হইছিল নাকি? (খোচা মেরে)

চাচির কথায় তনু বড়ো ক্ষেপা ক্ষেপে যায়। সে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আমি তনুর হাত ধরে তাকে থামিয়ে দেই। আমি বলে ওঠি…

মেহরাম;; না চাচি কোন সমস্যা হয়নি। আসলে আমি আমার যোগ্যের কোন ছেলেকে পাইনি তাই এখনো বিয়ে করিনি। তনু পেয়ে গেছে তাই করেছে।

তাহেরা বেগম;; হাহ, তো তোমার জন্য কি আসমান থেকে উড়াল দিয়া কোন রাজপুত্র আসবো নাকি।

মেহরাম;; রাজপুত্র না, তবে আমি আমার বাবার রাজকন্যা ঠিকই। তো যখন আমি আমার মন মতো কাউকে পাবো তখনই বিয়ে করবো।

তাহেরা বেগম;; বাহ চটাং চটাং কথা জানো দেখি।

মেহরাম;; চাচি এই যুগে এমন চটাং চটাং কথা না জানলে বড়ো মুসিব্বত। তাই জাইনা নিলাম।

আমার কথা শুনে চাচি আর এক মিনিটও দাড়ালো না সাথে সাথে চলে গেলেন।

তনু;; বাহহ রে মেরি জানেমান, এতো কথা কোথায় শিখলি। যা বলেছিস না। আর যাই বলেছিস ঠিক করেছিস। আমি তো রাগ হলেও কিছুই বলতে পারি না। আর এই ২-১ দিনেও বুঝে গেছি আমি যে এই মহিলা বেশি সুবিধের না।

মেহরাম;; মানলাম ভদ্র কিন্তু এতো টাও না যে মানুষ এসে এগুলো বলবে আর আমি একদম চুপ করে থাকবো। এতো ভালো আমি না যতো টা দেখে মনে হয়।

তনু;; হিহিহি হয়েছে, এবার চল।

তনু আর আমি চলে গেলাম। কণা এসেই আমাকে আবার জড়িয়ে ধরে। আমি চমকে যাই কিছু।

কণা;; আপুনি তুমি কোথায় যাচ্ছো বারবার। আমাকে কেন সাথে নেও না।

মেহরাম;; আরে বইনা। আমি কোথাও যাইনি তো।

আমি কণার সাথে হেসে হেসে কথা বলছি। তখন আয়ুশ এলো। আমি সরে যাই সেখান থেকে। আর গেতেই তনু এসে আমাকে ধরে।

তনু;; চল

মেহরাম;; কোথায়?

তনু;; আরে চল।

তনু আমাকে নিয়ে স্টেজের ওপর চলে গেলো। আমি বারবার তাকে থামানোর চেষ্টা করছি কিন্তু কে শুনে কার কথা। সাথে তনুর কিছু ফ্রেন্ড, আরো তার শশুড় বাড়ির কিছু মেয়ে এসে চারিপাশ দিয়ে ঝাপটে ধরে। না চাইলেও অনেক গুলো ছবি তুলতে হয়। এবার তনুর শশুড় আয়ুশকে কে ডেকে স্টেজে আসতে বললো এবং ছবি ক্লিক করতে বললো। আমি সেখান থেকে নেমে এসে পরতে চাইলে তনু আমার দিকে সরু দৃষ্টি তে তাকায় আমার হাত ধরে বলে ওঠে…

তনু;; এমন পালাই পালাই করিস কেন, থেকে যা না। একসাথে থাকি।

তনুর কথায় আমি মুচকি হেসে তার হাতের ওপর হাত রেখে বলি..

মেহরাম;; হয়তো আমার জায়গা টা এখন আর আমার নেই, আর আমার থাকার অধিকারও নেই। এখন যদি আমি থাকি তাহলে সেটা একদমই খাপছাড়া বা বেমানান দেখায় রে বোন।

তনু;; কি বলছিস এগুলো?

মেহরাম;; আরে বুদ্ধু বলছি এই যে তোর বিয়ে হয়েছে বর আছে। তার সাথে ছবি তোল এখন আমার পিছু ছাড়। ছাইরা দে মা কাইন্দা বাচি।

তনুর আর আমি দুজনেই হেসে দেয়। তখন ক্যামেরাম্যান এগিয়ে আসে আর বউ-বরকে একসাথে দাড়াতে বলে। আমি তনু কে তাড়া দেখিয়ে জলদি সেখান থেকে এসে পরি। চাচির পাশে গিয়ে দাড়াই আমি এবার। তারা সবাই বসে আছে। আমিও বসি। আমি গেতেই চাচি আমার মাথার ওপর হাত রেখে দেয়। আমি চাচির কাধে নিজের মাথা রাখি। স্থির চোখে তনু আর আয়ুশের দিকে তাকিয়ে আছে। আয়ুশকে একটু দেখছি। তাকে দেখে মনে হচ্ছে কোন বলির বাকরা। নিজেকে খুব ছোট লাগে। ছেলেটার সাথে আমি অনেক অন্যায় কয়েছি। যদি তাকে সেদিন আমি আমার কসম না দিতাম তাহলে হয়তো আমার গালে আরো তিন চারটে চড় পরতো। জোর করে হাসছে আয়ুশ। মুখে তেমন কোন চমক নেই যা আমি আগে দেখেছিলাম। হয়তো আমার জন্য। আর তনুকেই বা আমি কি বলবো। বেচারি তো এমনিতেই বাচ্চামো করে। তার ওপর এগুলো। সে যদি জানতো যে এমন কিছু একটা আছে তাহলে হয়তো সে জীবন দিয়ে দিতো কিন্তু বিয়ের পিড়িতে কখনোই বসতো না। কিন্তু আমি জনাবো না। সেইদিনের তনুর হাতে কাচের টুকরো ধরার দৃশ্য টা যেন এখনো আমার চোখে ভাসে। বাড়ির লোকজন এখনো এটা জানে না। হয়তো প্রথম ভালোবাসা আমার আয়ুশ ছিলো। কিন্তু ভালোবাসলেই যে পেতে হবে এমন তো কোন কথা না তাই না। এটাকে কেউ ত্যাগ বলুক বা বেইমানি কিন্তু আমি আমার চোখের সামনে আমার বোন কে ঢুকরে ঢুকরে বাচতে দিবো না। সম্ভব না। আয়ুশ যদি আমারও হতো তাহলে একদিন না একদিন তনু জানতোই যে আয়ুশের সাথে আমার সম্পর্ক ছিলো। তখন কোথাও না কোথাও তনুর এটা ভেবে মাথা নিচু হতো যে “” ছিহ কি করেছি আমি অন্যের ভালোবাসার পাবার জন্য নিজেই মরতে গিয়েছিলাম “”। হয়তো তখন আয়ুশের সাথে তনু নিজেই চোখে চোখ মেলাতে পারতো না। আর এখন বর্তমানে আমার ওপর দিয়ে যা যাচ্ছে তা তনুর ওপর দিয়ে যেত। আমি পারবো না আমার চোখের সামনে নিজের বোনের এমন দশা দেখতে তাই নিজেই সরে গেলাম। কখনো ভয় হয় যে তনু ভুল করেও যদি জেনে যায় তাহলে কি হবে। আল্লাহ’র কাছে এটাই দোয়া যে যেদিন বা যখন তনু সত্য টা জানবে সেদিন যেন আমি মেহরাম বেচে না থাকি। নয়তো আমি আর মাথা তুলেই তাকাতে পারবো না। জানি না তনুর কি হবে। বসে বসে চাচির কাধে মাথা রেখে এগুলো ভাবছিলাম। আর তাদের দেখছিলাম। কিছুক্ষণ পর নিজেই মুচকি হেসে চোখজোড়া তাদের থেকে নিচে নামিয়ে নিলাম। বলা তো যায় না যদি আমার নিজেরই নজর লেগে যায় তাদের ওপর 😅। তখনই চাচির ডাকে হুস আসে আমার…

আতিয়া;; মেহরু

মেহরাম;; জ্বি চাচি।

আতিয়া;; কখন এসেছিস চল কিছু খাবি চল।

মেহরাম;; না মানে চাচি তনু তো এখনো কিছু খায় নি।

আতিয়া;; আর কতো বোন বোন করবি।

মেহরাম;; কি করবো বলো চাচি, আমার অভ্যাস তো। আর অভ্যাস জিনিস টা না ই সহজে তৈরি হয় আর না ই সহজে যায়। (তনুর দিকে তাকিয়ে)

আতিয়া;; আয়।

চাচি আমাকে জোর করেই টেনে নিয়ে গেলো। নিজের সামনে বসিয়ে নিজ হাতে খাইয়ে দিতে লাগলো। আমিও খাচ্ছি আর চাচির কথা শুনে হাসছি।

আতিয়া;; নিজের বোন তো চলেই গেলো। এবার জলদি জলদি তোর জন্যও আরেক টা পাত্র দেখে বিয়ে দিয়ে দিবো।

মেহরাম;; তোমার বিয়ের খুব শখ না। নিজেই করে নাও না একটা।

আতিয়া;; কিহহহ মাথা গেছে তোর। আমি চলে গেলে তোর চাচ্চুর কি হবে।

মেহরাম;; আরে ফিকার নট, চাচ্চু কেও আরেকটা ধরিয়ে দিবো।

আতিয়া;; বড়ো বকবক করিস ফাজিল মেয়ে। জলদি খা।

মেহরাম;; হেহেহেহেহেহে,, আচ্ছা তনু তো গেলো তাই না। আমি যাবো না আর আমাকে বাড়ি থেকে তাড়ানোর এতো তাড়া কেন তোমাদের। কি করেছি আমি।

আতিয়া;; কিছু না কিন্তু তনুর বিয়ে হলো তোর দিতে হবে না।

মেহরাম;; আজাইরা কথা বইলো না তো। খাচ্ছি খেতে দাও।

আতিয়া;; হাহা,, নে হা কর।

আমাকে খাইয়ে দেওয়া শেষ হলেই তনু স্টেজ থেকে নেমে আমার দিকে আসে। এক লম্বাচওড়া শ্বাস ছাড়ে যেন অনেক ক্লান্ত।

তনু;; মেহরু জলদি আমাকে খাইয়ে দে তো খিদেয় পেটে চু চু করছে।

আমি তনু কে খাইয়ে দেই। এভাবেই সেই সারা টা দিন চলে যায়। বেশ রাত করেই আমরা বাড়ি ফিরি। তনুর শশুড় বাড়ির লোকজন আমাদের আসতেই দিচ্ছিলো না। কিন্তু তবুও তাড়া দেখিয়ে আমরা এসে পরি। আসার সময় তনু আবার কান্না করে। এখন আমি আমার বাড়িতে। সবাই অনেক ক্লান্ত হয়ে যে যার রুমে ঘুমোচ্ছে। ভালো লাগছে না আমার একদম। সত্যি আজ আর ভালো লাগছে না। রুমে ছেড়ে চলে গেলাম বারান্দায়। পুরো ঘর কে আমি কালো করে রেখেছি। বাইরে ল্যাম্প পোস্টের আলো কিছুটা বারান্দায় এসে পরেছে। বাতাস চলেছে মৃদু। আমি তনু কে অনেক মিস করছি। সে থাকলে এই টাইমে হয়তো খুব গল্প করতাম বা নিচে গিয়ে ফ্রিজ থেকে সব খাবার এনে কেড়ে কুড়ে খেয়ে নিতাম। ফিক করে হেসে উঠলাম এগুলো ভেবেই। রুমে গিয়ে ড্রয়ার থেকে একটা গাঢ় কালো কালারের ডায়েরি বের করলাম। এই ডায়েরি টা বলতে গেলে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। যখন যা হয়, যা করি, বা মনে মনে আমি যাই ভাবি সব, সব আমি এতে নিখুঁতভাবে আমি লিখে রাখি। গতো তিন বছর যাবত আমি এই ডায়েরি লিখছি। তবে এখানে আমার একটা পারসোনাল পাসওয়াডও আছে। যেটা আমি ছাড়া আর কেউই জানে না। ইভেন তনুও না। সে এই ডায়েরি টা দেখার জন্য রাতদিন আমার পিছে পরে থাকতো কিন্তু আমি দিতাম না। তাকে আমি একটা কথাই বলতাম যে “সময় হলে দিবো, মনে রাখিস আমার পরে এই ডায়েরিটা তোরই”। সে হাসতো। আমিও এখন বারান্দায় ফ্লোরে বসে বসে ডায়েরি টা লিখছি। সব লিখছি যা আমি মুখে কখনোই বলতে পারি না পারবো না। প্রায় তিন পাতার মতো ডায়েরি টা আমি লিখলাম। তারপর আবার জায়গা মতোই রেখে দিলাম। আমার ছোট থেকেই গিটার বাজানোর অনেক শখ। আম্মু কে অনেক বলে কয়ে পাম টাম দিয়ে এটা কিনেছি। আমার গিটার ডার্ক চোকলেট কালারের। আমার অনেক পছন্দের একটা জিনিস। এটাকে আরো বেশি পছন্দের করে তুলেছিলো আয়ুশ, হ্যাঁ আয়ুশ। যে আমাকে প্রায় ভার্সিটি শেষে নিজ হাতে গিটার বাজানো শেখাতো। আর যখন তনু ছিলো তখন সে রোজ আমার এই গিটার টা পরিষ্কার করে দিতো। মুছে দিতো। নিজ হাতে খুব যত্ন করে রাখতো। এখন তনু নেই। আমার গিটার টার ওপর এতো যত্ন আর নেওয়া হবে না। ঘরের প্রত্যেক টা কোণায় কোণায় আমার বোনের হাতের ছোয়া আছে। আগে বলতাম যে বিয়ে হয়ে গেলে তোর আমি বেচে যাবো। আগে বুঝি নি যে বোনের বিয়ে হলে বা চলে গেলে এতো কষ্ট হয়। আমি আর পারি না। এতোক্ষণ বারান্দায় গ্রিল দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিলাম। এই সব কথা মনে হতেই নিচে ধপ করে বসে পরি আর কেদে দিই। ফ্যান ফুল স্পিড়ে ছেড়ে দিয়েছি, দরজা শক্ত করে লাগানো যেন আমার কান্নার আওয়াজ রুমের বাইরে না যেতে পারে।



অন্যদিকে তনুর শশুড় বাড়িতে~~

তনু অনেক ক্লান্ত তাই সে রুমে এসে আইনার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিজের গয়না গুলো খুলছে। তখনই আয়ুশ ঘরে প্রবেশ করে। এক নজর তনুর দিকে তাকিয়েই আবার নিজ কাজে ব্যাস্ত হয়ে পরে। তনু আয়ুশকে দেখে মুচকি হেসে তার কাছে গিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। আয়ুশ চোখ বন্ধ করে নেয়। মূলত নিজেকে আটকানোর চেষ্টা। সে কখনোই চায়নি এমন। আয়ুশ তনু কে ছাড়িয়ে নেয়। তনু মুখ টা ছোট করে ফেলে…

তনু;; কি হয়েছে তোমার?

আয়ুশ;; কিছুনা। হয়তো তুমি অনেক ক্লান্ত, ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পর।

তনু;; কিছু বলার ছিলো তোমাকে।

আয়ুশ;;হুম বলো।

তনু;; কাল থেকে দেখছি এমন মনমরা হয়ে আছো তুমি। কিছু কি হয়েছে?

আয়ুশ;; না কিছুই হয় নি। সব ঠিক আছে।

আয়ুশ চেয়েও তনু কে কোন আঘাত বা হার্ট করতে পারছে না। করতে গেলেই মেহরামের বলা একটা কথাই তার কানে বারবার বাজে “মনে রাখবেন আমার বোন যেন কখনো কষ্ট না পায়, তার চোখ দিয়ে যেন কখনো অশ্রুবিন্দু না পরে, বিশেষ করে আপনার জন্য”। যে কারণে সে চেয়েও কিছুই করতে পারছে না। তনু যে খারাপ একটা মেয়ে তা কিন্তু না, তনু যথেষ্ট ভালো একটা মেয়ে অনেক মিশুক। বাচ্চামো অনেক আছে তার ভেতর। আয়ুশ চেয়েও কিছুই করতে পারছে না। আয়ুশ এবার তনুর দিকে তাকায়। তনুর মুখটা নিজের দুহাতের ভাজে নিয়ে এসে বলে…

আয়ুশ;; তনু।

তনু;; হুম।

আয়ুশ;; নিজেকে শক্ত করো তৈরি করো।

তনু;; মানে?

আয়ুশ;; একদিন মানে বুঝবে, তখন আর আমার কিছুই বলতে হবে না।

আয়ুশ এই কথা বলেই তনুর কাছ থেকে সরে আসতে নেয় তখন তনু আয়ুশের হাত ধরে ফেলে…

তনু;; আয়ুশ,

আয়ুশ;; ______________

তনু;; আমাকে ভালোবাস তো?!

তনুর প্রশ্নে আয়ুশের বুকের ভেতর একশ এক চাকু চালানোর মতো ব্যাথা অনুভব হলো। আয়ুশ কি বলবে এখন সে জানে না। আয়ুশ ঘুড়ে তনুর দিকে দাঁড়ায়। আর তনু আয়ুশকে জড়িয়ে ধরে। কিন্তু আয়ুশ তার হাতগুলো মুঠি বদ্ধ করে ফেলে। ঠাই দাঁড়িয়ে থাকে সে।


সকালে~~

মেহরাম;; মা, মা (নিচে নেমে)

কনিকা;; হ্যাঁ বল।

মেহরাম;; মা আমার ভার্সিটি চলে যেতে হবে।

আতিয়া;; ঢাকা যাবি এতো জলদি? আর কটা দিন থেকে যা না।

মেহরাম;; না চাচি এখানে এসেছি ৬ দিন হলো আর না। সামনে আমার পরিক্ষা আছে। আর পারলে আমি আজই চলে যাবো।

আতিয়া;; কিন্তু!

মেহরাম;; মা তুমি তো জানো আমার বারাবারি ভালো লাগে না। বিয়ে শেষ এবার আমাকে যেতেই হবে।

আমি এই কথা বলেই সোজা চলে আসতে ধরি তবে আবার পিছন ঘুড়ে সবাইকে বলি…

মেহরাম;; আর হ্যাঁ, তনুর কোন দরকার নেই আমার সাথে থেকে পড়াশোনা করার। মানে এখন তো সে তার শশুড় বাড়ি থেকে পড়াশোনা করতে পারবে। আর এখন যদি সে আমার সাথে থাকে তাহলেও বেপার টা বেশি ভালো দেখায় না। তাই আমি একাই সব ম্যানেজ করে নিতে পারবো।

আমি আমার মতো করে বলে এসে পরি। বাড়িতে অনেক কোলাহল হয় আমার জন্য যে আজ কি দরকার ঢাকা যাবার। কিন্তু এক সময় আমি রাগ করে বসি। তখন সবাই রাজি হয় আর বাবা আমার বেপার টা বুঝতে পারে যে হয়তো আমার পড়ার চিন্তা আছে আর এখানে ভালো লাগছে না। তাই সবাইকে বলে সেইদিন বিকেল বেলাই আমি ঢাকার উদ্দেশ্যে বের হয়ে পরি।

.
.

তনু;; এটা কোন কথা মেহরু?!

মেহরাম;; আরে কিন্তু!

তনু;; তুই এখন আছিস টা কোথায়?

মেহরাম;; ঢাকা।

তনু;; বাহহ পৌছেও গেছিস।

মেহরাম;; তনু জানু তুই তো বুঝিস বেপার টা। প্লিজ তুই আবার শুরু হোস না। বাড়িতে এমনিতেই অনেক ঝামেলা পাকিয়ে এসেছি। আমাকে আসতেই দিবে না এমন।

তনু;; হাহাহা,, আচ্ছা আমিও এসে পরবো কিছু দিনেই।

মেহরাম;; এই দাড়া দাড়া, এখানে এলে তোর পা গুলো ভেংগে আমি হাতে ধরিয়ে দিবো। তনু গ্রো আপ বেব। এখন বিয়ে হয়েছে তোর পড়াশোন করবি ভালো কথা কিন্তু বাইরে এসে পড়ার দরকার নেই। শশুড় বাড়িই থাকেন আপনি বুঝলেন তনু।

তনু;; তনু আয়ুশ আহমেদ।

মেহরাম;; আব.. হ্যাঁ হ্যাঁ ওইতো।

তনু;; সে যাই হোক তুই আমার কাছে সব থেকে বেশি স্পেশাল।

মেহরাম;; তুই ও। আচ্ছা শোন আমাকে একটু বাইরে বাবলির কাছে যেতে হবে। এতো দিনের নোটস্ কালেক্ট করতে হবে।

তনু;; আচ্ছা। আর আমাকেও দিস।

মেহরাম;; হুমমম।

এই বলে আমি ফোন কেটে দেই। তনু অনেক জেদ করে এখানে আমার কাছে আসার জন্য কিন্তু আমি তাকে সাফ বারণ করি। আমি আবার আমার আগের জীবনে ফিরে যাই। এখন আমি আগের থেকে আরো বেশি ব্যাস্ত হয়ে গেছি। সারাদিন পড়াশোনা আর বান্ধবী দের নিয়েই থাকি। তনু ভার্সিটিতে আসে। রোজ দেখা হয়। কিন্তু এখন আর তনুর আর আমার একই সাথে যাওয়া হয় না। একই বাসায় আমরা যাই না। ভার্সিটি থেকে বের হয়ে তনু রোজ আয়ুশের সাথে চলে যায়। তনু আর আমি একই সাথে ভার্সিটি থেকে বের হই। আমি রোজ দেখি আয়ুশকে তনুর জন্য গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে। আয়ুশ এখন তার বাবার বিজনেসটা সামলাচ্ছে। ভালোই চলছে তাদের। তবে তনু কে মাঝে মাঝে মন খারাপ করে থাকতে দেখি। কিন্তু আমি কি আর তা হতে দিতে পারি। মিনিটেই মন ভালো করে দেই। ধীরে ধীরে আমাদের পরিক্ষার সময় এগিয়ে আসে। পরিক্ষা দেই আমরা। রেজাল্টও আসে। অনেক ভালো পয়েন্ট আসে আমাদের দুই বোনেরই। আয়ুশকে এখন আমি আমার অতীত ভাবি। আর সে আমার অতীতই। আয়ুশ আমার সাথে কথা বলার অনেক ট্রাই করেছে, অনেক বার। কিন্তু আমিই তাকে দূর দূর করে সরিয়ে দিয়েছি। এভাবেই দেখতে দেখতে চলে যায় ৭ মাস।


🌸🌸চলবে~

#তৈমাত্রিক
#লেখিকা; Tamanna Islam
# {বোনাস পার্ট 🌿}

🖤🥀
.
.
.
.

পরিক্ষার পর আমি ঢাকাতেই থেকে যাই। বাড়িতে বাবা চাচ্চু মা চাচি সবাই অনেক বলে কিশোরগঞ্জ চলে যেতে কিন্তু আমি যাই না। কেন যেন সেখানে গেলে আমার মোটেও ভালো লাগে না। আগে তনু আর আমি একসাথে থাকতাম বাড়ি টা ভরা ভরা লাগতো। কিন্তু এখন সেখানে গেলে আমি অনেক একা ভালো লাগা তো দূর উলটো তনু কে অনেক বেশি মিস করি। তাই যাই নি। ভেবেছিলাম যে একসাথে ঢাকা দুজন পড়াশোনা করবো। কিন্তু তনু বিয়ে করে চলে গেলো। সেই একার একাই থেকে গেলাম আমি। ভালো লাগছে না আমার তাই ড্রয়ার থেকে ডায়েরি টা আবার বের করি মন যা চায় তাই আবার লিখে ফেলি। জানালার কাছে বসে বসে ডায়েরি লিখছিলাম তখনই তনুর ফোন আসে। এটা আয়ুশের নাম্বার, আমি ভাবলাম হয়তো তার ফোনে ব্যালেন্স নেই তাই আয়ুশের নাম্বার দিয়ে ফোন দিয়েছে। আমি হাসিমুখে ফোন রিসিভ করি…

মেহরাম;; হ্যালো তনুউউউ। কেমন আছিস তুই। জানিস আমি বসে বসে তোর কথাই ভাবছিলাম তোকে অনেক মিস করি রে। আর কি খবর কেমন আছিস তুই? তোর বাড়ির সবাই কেমন আছে?

আয়ুশ;; মেহরু।

আমি বলে বুঝাতে পারবো না যে আয়ুশের জাস্ট এই “মেহরু” ডাক টা আমার মনের ভেতরে কি পরিমাণ তোলপাড় শুরু করে দিয়েছে। কোন এক ক্ষত স্থান প্রায় শুকিয়ে যাবার পর যদি সেখানে আবার আঘাত করে করে ঘা টাকে কাচা করে দেওয়া হয় তাহলে কেমন লাগবে। এখন আমার অবস্থাও তার ব্যাতিক্রম না। আমি সাথে সাথে কান থেকে ফোন টা নামিয়ে ফেলি। ইতোমধ্যে চোখ ভিজে গেছে। জোরে জোরে দম ছাড়ছি। চোখ গুলো ঘুড়িয়ে অন্য দিকে তাকাই। মূলত হাত পা কাপছে আমার। ফোনে এখনো হয়তো সে হ্যালো হ্যালো করেই যাচ্ছে। আমি স্বাভাবিক হয়ে কন্ঠ খাকারি দিয়ে আবার ফোন কানে ধরি।

মেহরাম;; তনু কোথায়?

আয়ুশ;; আছে।

মেহরাম;; কেমন আছে?

আয়ুশ;; আলহামদুলিল্লাহ ভালোই।

মেহরাম;; আচ্ছা আমি রাখি।

এবার আয়ুশ চিল্লিয়ে ওঠে।

আয়ুশ;; আমি ভালো নেই মেহরাম, শুনতে পাও কি তুমি আমি ভালো নেই। তনু অনেক ভালো আমি জানি। ওর কোন দোষ নেই। আর আমি ওকে শাস্তি দিবোও না। ও শাস্তির যোগ্য না। কারণ ও কিছু জানেই না। মেহরাম দম বন্ধ হয় আমার। যখন, যখন তনু আমাকে জড়িয়ে ধরে, আমার কাছে আসে আমার দম বন্ধ হয়ে যায়। আমি তনু কে মেনে নিয়েছি কিন্তু কোথাও না কোথাও কমতি থেকেই গেলো। তোমার জায়গা কেউ নিতে পারবে না মেহরাম কেউ না। আমি তো তনুকে….

মেহরাম;; আয়ুশ প্লিজ ফর গড সেক এখন এগুলো বন্ধ করো এক বছর পেরিয়ে গেলো। একটা বছর এই সবের। আমি আমার রাস্তা মেপে নিয়েছি। কোন কিছু না তোমার সাথে আমার ছিলো আর না ই এখন আছে।

আয়ুশ;; আমি রাখি, আল্লাহ হাফেয।

আয়ুশ এটা বলেই ফোন কেটে দেয়। তবে এখন না আমার আর কান্না আসে না। শুধু করুণা হয়। নিজের ওপর নিজেরই। এতো টাই কেদেছি যে এখন আমার চোখজোড়াও নারাজ পানি ফেলতে। হ্যাঁ আমি ছোট হয়ে গেছি নিজের চোখে নিজেই। আয়ুশের ভালোবাসার দর-দাম আমি করেছি। আল্লাহ’র কাছে আমার এটাই দোয়া যে তনু যেন কিছুই না জানে। তাহলে তনু পাগলই হয়ে যাবে। আমি হাটতে হাটতে চলে গেলাম ছাদে। ছাদের বড়ো দরজা খুলতেই দমকা বাতাস এসে গায়ে পরে। খুব ভালো লাগছে এবার। আকাশে তাকাতেই দেখি এল ঝাক পাখি ডানা মেলে উড়ে গেলো। গোধূলির লগ্ন এটা। কি সুন্দর লাগছে দেখতে। কাশ আমার জীবন টাও এমন সুন্দর হতো। কিন্তু আমরা যা চাই তা তো আর সবসময় পাই না। আয়ুশের বলা কথা গুলো কানে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। তবে এই খোলা বাতাসে ভালো লাগছে। হঠাৎ কোথা থেকে যেন গানের আওয়াজ আসতে লাগলো।

“পূর্ণিমা সন্ধ্যায় তোমার রজনী গন্ধায়, রুপ সাগরের পারের পানে উদাসী মন দায়”।

আমি আমার চারিদিকে একবার তাকালাম, গানের মূল উৎস খোঁজার চেষ্টা করলাম কিন্তু পেলাম না। এই গান টাই আয়ুশ আমাকে প্রথম মেসেজে পাঠিয়েছিলো। না চাইতেই হেসে দেয়। গান টা কিছুটা হলেও প্রিয়। ওপরে তাকিয়ে থাকলাম। হিসেব করলাম আজ অব্দি জীবনে কি আমার নিজের হয়ে থেকেছে আর কি থাকে নি। কিন্তু ফলাফল পেলাম শূন্য। মিলাতে গিয়ে দেখলাম আজ পর্যন্ত খুব কম জিনিসই আমার হয়েছিলো বা আমার একান্ত নামে লিখা ছিলো। যেগুলো খুব করে চেয়েছি সেগুলো একটাও নেই আমার। আমার হয়ে থাকে নি বা আমি তাদের আমার কাছে রাখার যোগ্য ছিলাম না। এটাও হতে পারে যে আমি সেই ভাগ্য নিয়েই জন্মায় নি। মাঝে মাঝে আফসোস হয় কেন ভালোবাসতে গেলাম, কেন প্রেমে পরলাম। কিন্তু এই আফসোসের পরিসীমা অতিক্রম করে আমি কখনো বাইরে বের হতে পারি না। মনে হয় এটা এক ভুলভুলাইয়া। আর আমি এই ভুলভুলাইয়া তে আটকে পরেছি, খুব বাজে ভাবে আটকে পরেছি। আর তাই তো এতো গুলো দিন পেরিয়ে গেলো তবুও বেরই হতে পারলাম না।

সেই বিকেল আর সন্ধ্যা আমি ছাদেই কাটিয়ে দেই। আযান পরলে রুমে এসে পরি। রাতে একাই শুয়ে আছি তখন তনু ফোন দেয়। তার সাথে আমার অনেক কথা হয়। তনুর শশুড় শাশুড়ীর সাথেও কথা হয়। তনুর কন্ঠেই বোঝা যায় সে কি পরিমাণ খুশি। আমি আমার প্রাণ খুলে দোয়া করি আল্লাহ”র কাছে যেন আমার বোন টা এভাবেই খুশি থাকুক। কখনো কখনো হয় কি যে আমরা বেচে থাকি নিজেরাই কিন্তু নিজেদের প্রাণ বাস করে অন্যের মাঝে। ঠিক তাই হয়েছে। আমার প্রাণ বাস করে আমার বোনের মাঝে আর আমার মা-এর মাঝে। তনুর শাশুড়ী আমাকে অনেক যেতে বলেছে আমি কোন রকম করে কথা এড়িয়ে যাই।

পরেরদিন আমি উঠেই ভার্সিটি চলে যাই, মাঠে দাঁড়িয়ে উর্মির সাথে কথা বলছিলাম গাড়ির হর্নে পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখি আয়ুশের গাড়ি, আমি না দেখার ভান ধরে থাকি। তনু এসে আমাকে পেছন থেকে চোখ ধরে ফেলে। আমি বুঝে যাই। এভাবেই হাসি ঠাট্টার মাঝে সময় যে কখন পেরিয়ে গেছে বুঝতেই পারিনি। এভাবেই দেখতে দেখতে কেটে গেলো আরো ১২ দিন।


একদিন সকালে বসে আছি টিভি দেখছি। আজ ভার্সিটি নেই। তখনই হঠাৎ চাচির ফোন আসে। আমি ইয়া বড়ো একটা হাসি দিয়ে ফোন তুলি…

মেহরাম;; হ্যালো চাচি কেমন আছো?

আতিয়া;; হ্যালো মেহরু, মেহরু মা তুই জলদি আয়। (কাদো কাদো ভাব)

চাচির এমন কথা শুনে তো আমার বুকের ভেতর ধক করে উঠেছে। প্রচুর ঘাবড়ে যাই আমি।

মেহরাম;; চাচি হয়েছে কি এমন কেন করছো? সব, সব কিছু ঠিক আছে তো চাচি?!

আতিয়া;; কিছুই ঠিক নেই ভাবী, ভাবী হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পরে গেছেন। কথা বলছে না কিছুতেই কাজ হচ্ছে না।

মেহরাম;; কিহহহহ, চাচি কি বলো। আম্মুর কি হয়েছে। কিভাবে হলো। তোমরা তো সাথেই ছিলে আম্মুর তাই না। ডাক্তার কে ডেকেছো?

আতিয়া;; হ্যাঁ ডেকেছি কিন্তু তুই আয় মা তুই আয়। তুই এলেই সব ঠিক তুই জলদি আয়। আর তোর চাচ্চু তোর জন্য স্টেশনে অপেক্ষা করবে তুই জলদি আয়।

মেহরাম;; আব..আম আমি আআআসছি।

চাচির কথা শুনে আমার মাথায় পুরো আকাশ ভেংে পরেছে। আমি ঠিক শুনেছি তো। আমি কিছুই করি নি শুধু ব্যাগ টা নিয়েছি। আর হাতে একটা পার্স। দরজাতে তালা দিয়ে বাড়ির মালিক কে কোন রকমে বলেই দৌড়। বাড়ির বাইরে এসেই ভাগ্যক্রমে রিকশা পেয়ে যাই। তাতে উঠে পরি। খানিক পর পরই শুধু রিকশাওয়ালা মামা কে বলছি তাড়াতাড়ি যেতে। ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছি আমি। টেনশনে কিছুই ভালো লাগছে না। সারা টা রাস্তা গিয়েছি আল্লাহ আল্লাহ করতে করতে। আল্লাহ আমার হায়াত নিয়ে আমার মা কে দাও তবুও মায়ের কোন ক্ষতি করো না। আম্মুর কিছু হলে আমি মরেই যাবো, জেন্দা লাশ হয়ে যাবো আমি। কাউকে লাগবে না পুরো দুনিয়া নিয়ে নাও আমার মা কে আমার কাছে ভিক্ষা দাও। শুধু এগুলোই বলেছি আর গিয়েছি। ট্রেনে উঠে পরি, এবার একটু বসে শ্বাস ছাড়ি। ব্যাগ থেকে পানি বের করে খেয়ে নিই। জানালার পাশে সিট পরেছে আমার। সেদিকে তাকিয়ে আছি গালে হাত রেখে। খানিক পরেই ট্রেনে একটা ছোট্ট মেয়ে ওঠে সাথে একজন মহিলা। বুঝলাম যে তারা মা & মেয়ে। মেয়ে টা এসে সিটে বসলো আর তার মা তাকে খাইয়ে দিচ্ছে। এটা ওটা বলে কতো হাসাচ্ছে। কিন্তু আমার এবার কান্না পাচ্ছে খুব। আমার মা যে কতো এভাবে খাইয়ে দিয়েছে। ছোট বেলার কথা মনে পরে গেলো। আমি তাকিয়ে আছি তাদের দিকে। মায়ের কথা খুব মনে পরছে। আর তর সইছে না আমার কখন যাবো। মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে হেসে দেয়। আমিও বিনিময়ে মুচকি হাসি। এভাবে দেখতে দেখতেই অনেক সময় পেরিয়ে গেলো। আমার স্টেশনও এসে পরেছে। আমি দ্রুত পা চালিয়ে নেমে পরি। নেমেই দেখি চাচ্চু। সোজা গিয়ে চাচ্চু কে জড়িয়ে ধরি।

মেহরাম;; আমার মা কই, কি হইছে আম্মুর?

বিল্লাল;; কিছু না রে মা তুই এতো চিন্তা করিস না চল।

সারাটা রাস্তা আমি কি অবস্থায় যে এসেছি তা কেবল আমিই জানি। প্রায় ২০ মনিট পর চাচ্চুর সাথে আমি বাড়ি আসি। হুড়মুড় করে বাড়ির ভেতরে ঢুকে দেখি আম্মু বসে আছে আর চাচি ধরে ধরে পানি খাওয়াচ্ছেন। আমি দৌড়ে গিয়ে আম্মুকে জড়িয়ে ধরি।

মেহরাম;; হয়েছি কি আম্মু, কি হয়েছে তোমার অজ্ঞান হলে কি করে?

কনিকা;; জানি না রে মা হুট করেই মাথা টা কেমন চক্কর দিয়ে উঠলো।

মেহরাম;; ডাক্তার কি বলেছে?

আতিয়া;; প্রেসার বেড়ে গিয়েছে এই যা।

মেহরাম;; চাচি প্লিজ দেখে রাখো আম্মুকে, আমি তো কাছেই থাকি না। সারাক্ষণ চিন্তা লেগে থাকবে এখন।

কনিকা;; তো থেকে যা না।

মেহরাম;; আম্মু।

আতিয়া;; শোন এলি আর এখনই যাই যাই করবি না। কিছুদিন থেকে যাবি।

মেহরাম;; থাকবো তো কিছুদিন এমনি এখন।

সারাটাক্ষণ মায়ের পাশ ধরেই ছিলাম। যেন মায়ের আচল নিজের হাতের সাথে বেধে নিয়েছি এমন। তনুদের কিছু বলা হয়নি। কারণ তনু যদি জানে যে তার বড়োমার এই অবস্থা তাহলে কেদে কেটে একাকার হয়ে যাবে। তাই বেপার টা এখানেই সামলে নিয়েছি। তারপরেরদিন আমরা সবাই হলরুমে বসে ছিলাম। তখন আম্মু বলে ওঠে..

কনিকা;; মেহরাম।

মেহরাম;; বলো মা জাননী।

কনিকা;; কিছু কথা ছিলো আমার। আর দেখ এটা তোকে মানতেই হবে।

চাচির একটা স্বভাব আছে উনি বসে থেকে থেকে সেলাই করেন, বেপার টা আমার কাছে অনেক ভালো লাগে। আর নকশা গুলো দেখলে মনে হয় চোখ জুড়িয়ে গেলো। আমিও চাচির সাথে বসে বসে সেলাই করছিলাম। তখন আম্মুর এই কথা শুনে ফট করে মাথা তুলে আম্মুর দিকে তাকাই।

মেহরাম;; আম্মু কি হয়েছে বেশি সিরিয়ায়া কিছু নাকি?

আতিয়া;; হ্যাঁ সিরিয়াসই।

মেহরাম;; মা বলো তো কি হয়েছে?

কনিকা;; বললে শুনবি?

মেহরাম;; মা কি যে বলো না। আজ পর্যন্ত তোমার কোন কথা ফেলেছি আমি? যা বলবে তাই করবো, বলো তো।

কনিকা;; বিয়ে করতে হবে।

মেহরাম;; কিহ?

কনিকা;; হ্যাঁ বিয়ে করতে হবে তোকে।

মেহরাম;; মানে কি মা, তুমি তো জানো যে আমি এখনোই এগুলোর জন্য প্রস্তুত না।

আতিয়া;; কিন্তু কথা বলে লাভ নেই করতেই হবে।

মেহরাম;; কিহ চাচি তুমিও।

আতিয়া;; হুম আমিও।

মেহরাম;; চাচি।

কনিকা;; তুই কিন্তু বলেছিস যে যাই বলবো তাই করবি।

মেহরাম;; তাই বলে বিয়ে। আমাকে অন্তত আমার পড়াশোনা টা শেষ করতে দাও।

কনিকা;; বিয়ের পরেও তো পড়াশোনা করা যায় নাকি?

মেহরাম;; করা যায় মা কিন্তু বিয়ের আগে পড়াশোনার প্রতি চাহিদাটা একরকম থাকে আর বিয়ের পরেই আরেক রকম। আর সব পরিবার নিজের ছেলের বউকে পড়াশোনা করতে দেয় না।

আতিয়া;; কিন্তু আমরা যে ছেলে কে দেখেছি তার পরিবারও অনেক ভালো আর ছেলেও,, সবদিক দিয়েই অনেক ভালো কি তাই না ভাবী।

কনিকা;; হ্যাঁ একদম।

মেহরাম;; কিন্তু মা…

কনিকা;; এই তুই কিন্তু বলেছিস যে যা বলবো তাই করবি 😒😒।

মেহরাম;; আহহ পাইছি একখান সেন্টিখুর আম্মাজান (আম্মুকে জড়িয়ে ধরে) আচ্ছা যাও আমি রাজি।

শুধু এটা বলতে দেরি আমার আর তার সাথে সাথে আম্মু আর চাচি হাল্কাভাবে চিল্লিয়ে উঠে। তখন চাচি বলে ওঠে….

আতিয়া;; মেহরু মা এই দেখ ছেলে।

মেহরাম;; না চাচি আমি ছেলেকে দেখবো না।

কনিকা;; কিন্তু।

মেহরাম;; না মা তোমরা আমার জন্য যাকেই দেখেছো সে নিশ্চয় ভালো হবে। আমার দেখার কিছুই নেই।

এই বলেই আমি হলরুম থেকে বের হয়ে এসে পরি। আম্মু আর চাচি তো অনেক খুশি। কিন্তু আমিই জানি যে বুকের ওপর কতো বড়ো একটা পাথর রেখে আমি হ্যাঁ বললাম। আমি রুমে এসে পরি। কেন জানি না দম বন্ধ লাগছে। ফোন টা অন করে তনুর ছবি দেখতে থাকলাম। দেখতে দেখতে এক সময় আয়ুশ আর তনুর বর-বউ বেশে ছবি টা সামনে আসে। আমি হাসি, এটা ছাড়া আর কোন উপায় নেই আমার। আমাকে হাসতেই হবে। সবকিছু হেসে উড়িয়ে দিতে শিখেছি আমি। এটাই আমার সবথেকে বড়ো কৌশল,”হেসে উড়িয়ে দেওয়া”।





💕চলবে~~

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে