তুমি রবে ১৭
.
.
কিছু কথা, কিছু অনুভূতি যা ভাষার মাধ্যমে ব্যক্ত করার প্রয়োজন পড়ে না। সময় বিশেষে শুধু নিস্তব্ধ চাউনিতেই সেই অনুভূতি প্রকাশ পেয়ে যায়। আশফির চাউনিতে মাহি আজ যা অনুভব করছে, তার মনে হচ্ছে আর বেশি সময় সে ওই চাউনির মুখোমুখি বসে থাকতে পারবে না। কিন্তু যাওয়ার ইচ্ছাও তার মাঝে একেবারেই শূন্য। এ কী অবস্থা হলো আজ তার? তার মাঝের এক সত্তা বলছে,
– “আটকাও তাকে মাহি। নয়তো চলে যাও। চলে যাও তুমি।”
আর দ্বিতীয় সত্তা,
– “ফিরিয়ে দিও না তাকে আজ। আবদ্ধ করে নাও তাকে নিজের মায়াডোরে।”
কিন্তু এ যে অন্যায়, পাপ। সে কী করে এই পাপ করবে?
তার নিঃশ্বাসের ছোঁয়া মাহির ঠোঁটের কাছটাতে ছড়িয়ে পড়তেই মাহি মুহূর্তে চোখদুটো বন্ধ করে ফেলল। আশফি কিছুটা হেসে ফেলল। ফুঁ দিয়ে যখন মাহির ঠোঁটের কোণ থেকে চুল সরাল সে, তখন মাহি চোখ মেলে তাকিয়ে দেখল আশফির চোখে মুখে দুষ্টুমির হাসি। মাহি নীরবে চেয়ে রইল শুধু সেদিকে। সেই চাউনির ভাব ছিল গভীর। হয়তো কিছুটা স্বস্তি আর কিছুটা নিরাশ সেই চাউনিতে। আশফি আলতো স্বরে বলল,
– “এমন প্রার্থনা করলেন কেন?”
মাহিও তার আলতো স্বরে জবাব দিলো,
– “তা তো জানি না। আপনি কিছু মনে করলেন কি?”
আশফি এবারও শুধু হাসলো। মাহি আশফির ঠোঁটের কোণে চেয়ে থাকল। সে যখন মুচকি হাসে, তখন ঠোঁটের সীমানা খুব বেশি দূরে না গিয়েও দেখলে মনে হয় কত প্রফুল্ল সেই হাসি। মাহি বিনা সংকোচে তার কাছে এক আবদার করে বসলো।
– “আপনার কণ্ঠে একটি বাংলা গান শুনতে চাই। শোনাবেন?”
– “পছন্দ হওয়ার কথা নয় আমার কণ্ঠ। আমি কখনো গুনগুন আওয়াজেও গান করি না।”
– “করলে যে কী হতো!”
আশফি কাউচ থেকে উঠে যেতে মাহি নিরাশ কণ্ঠে বলল,
– “গাইবেন না?”
আশফি রেলিংয়ে হেলান করে দাঁড়িয়ে বলল,
– “কোনো ইনস্ট্রুমেন্ট থাকছে না।”
– “ইনস্ট্রুমেন্ট ছাড়াও যে মুগ্ধকর হবে তা আমি জানি।”
আশফি হেসে বলল,
– “আমি মিথ্যা প্রশংসাতে প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হই কিন্তু।”
মাহি মুখটা ভার করে বলল,
– “অকারণে প্রশংসা করার মতো মেয়েও আমি নই।”
কিছু সময় চুপ থাকল আশফি। তারপর হঠাৎ দারুণ করে শিস বাজিয়ে উঠল সে। মাহি তখন আশফির দিকে চেয়ে এক পাশ হয়ে মাথার নিচে দু’হাতের উল্টো পিঠে মাথা ভর করে কাউচে শুয়ে পড়ল। আশফির কণ্ঠস্বর গেয়ে উঠল,
“তুমি চাইলে আমি তোমার…
না চাইলেও তুমি আমার। – [ ২ বার ]
তুমি বসে থাকলে আমি
আবেগে উড়ে যাই ,
তুমি চলে গেলে আমি
আমি যেন আমি নাই।
তুমি চাইলে আমি তোমার…
না চাইলেও তুমি আমার।
অনন্ত রাতের ছায়া পথে ,
হারিয়েছো কিনা জানি না।
শুধু জানি তুমি আছো খুব কাছে ,
ছোঁয়াতো যাবে না… ।
তোমায় আমি লিখে দিলাম ,
আমার প্রিয় আকাশ।
তোমার মাঝে গড়ি আমি
আমার বসবাস।
তুমি চাইলে আমি তোমার… ,
না চাইলেও তুমি আমার ।
ঘুম ভাঙা অস্থির প্রহরে
সাদাকালো রোদের আল্পনা ,
নিশ্বাস ফিরে আসে বারেবার ,
ফিরে আসে তোমার কল্পনা ।
তোমায় আমি লিখে দিলাম ,
আমার প্রিয় শহর ।
তোমার মাঝে ছুঁয়ে দিলাম
আমার পূর্ণিমা রাত ।
তুমি চাইলে আমি তোমার… ,
না চাইলেও তুমি আমার। – [ ২ বার ]
তুমি বসে থাকলে আমি
আবেগে উড়ে যাই ,
তুমি চলে গেলে আমি
আমি যেন আমি নাই ।
তুমি চাইলে আমি তোমার… ,
না চাইলেও তুমি আমার ।
যত সময় গানটা আশফির কণ্ঠে স্থায়ী ছিল তত সময় আশফির দৃষ্টি অন্যদিকে ছিল। গানের প্রতিটা লাইনের উপলক্ষ্য ছিল মাহি। তাই সে মাহির দিকে তাকিয়ে গাইতে পারেনি। যদি মাহি তা বুঝে যায়! যখন মাহির পানে তাকাল সে, মাহি তখন তন্দ্রাগত। আশফি খুব কাছে এসে বসলো ওর। মাহির মুখটার পানে চেয়ে মৃদু হাসলো। ফজরের আজান কানে ভেসে এলো সে মুহূর্তে। আশফি ঘর থেকে চাদর এনে মাহির শরীরে জড়িয়ে দিলো। এরপর ভাবল নামাজটা আদায় করে আসবে। যেহেতু আজানও শুনতে পেয়েছে আর মসজিদও খুব বেশি দূরে নয়।
আশফি যাওয়ার কিছু সময়ের মধ্যেই মাহির ঘুমের ভাবটা হঠাৎ কেটে গেল। চোখ মেলে আশফিকে না দেখে উঠে খুড়িয়ে খুড়িয়ে রুমে এলো। তার রুমের দরজা ওপাশ থেকে বন্ধ। তার মানে আশফি রুমের দরজা ওপাশ থেকে বন্ধ করে গেছে। বিছানাতে বসতেই মনে পড়ল আশফির শেষ গানটার কথাগুলো। মৃদু হাসি দোল খেল তার ওষ্ঠকোণে। কেন যেন তার মনে হচ্ছিল তখন, ওই গানের কথাগুলো আশফি তাকে বুঝিয়েই গাইছে। মিষ্টি ভাবনা হঠাৎ ছিন্ন হলো ফোনের ভাইব্রেটের কারণে। তখন সে বালিশের নিচে ফোনটা সাইলেন্ট করে রেখে গিয়েছিল। যার জন্য কোনো রিং এর আওয়াজ পায়নি সে। ফোনটা হাতে নিতেই রিং কেটে গেল। তখন স্ক্রিনে ভেসে উঠল পাঁচশো চুয়াত্তরটা মিসড কল। যার বেশিরভাগ সোমের নাম্বার থেকে আর ছাব্বিশটা মিমির নাম্বার থেকে। বুকের মাঝটাতে হঠাৎ বারি দিয়ে উঠল তার। মিমির নাম্বার ডায়াল করার পূর্বেই সোমের কল এলো আবার। মাহি ফোনটা কানে তুলে সোমের কথা শুনে থরথর করে কাঁপতে থাকল। রীতিমতো ঘেমে উঠল সে। এত বেশি ভয় কেন লাগছে তার সে বুঝতে পারল না। হেঁটে ট্যারেসে এসে কাউচে বসলো। আশফির ফোনে কল করল কিন্তু সংযোগ পেল না। কিন্তু এই সময়ে তাকে ছাড়া সে বাড়ি পৌঁছাতেও পারবে না। মাত্র আকাশটা পরিষ্কার হতে শুরু করেছে।
মাথার টুপিটা পকেটে পুরে আশফি ট্যারেসে চলে এলো। আসার আগে হামিদকে সকালের নাস্তার ব্যবস্থা দ্রুত করতে বলে এসেছে। ট্যারেসে আসা মাত্রই আশফির দৃষ্টি আটকে গেল মাহির দিকে। ভোরের উচ্ছল, নির্মল বাতাসে মাহির দীর্ঘ খোলা চুলগুলো দুলছে। কিন্তু তার চেয়েও মনোরম দৃশ্য মাহির পা তুলে গুটিসুটি হয়ে বসে ঘুমিয়ে থাকার মুহূর্ত। এ দৃশ্য খুব সাধারণ, তবুও হঠাৎ অসাধারণ লাগছে আশফির কাছে। একপাশ হয়ে ঘুমিয়ে আছে মাহি। ওড়নার শেষ অংশ নিচে ঝুলে পড়ে আছে। আশফি এসে ওড়না উঠিয়ে মাহির মুখোমুখি হয়ে বসলো। দেখেই বোঝা যাচ্ছে, সে ফ্রেশ হয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়েছে। চুলটা বাঁধেনি, যার জন্য ছোট চুলগুলো এলোমেলো হয়ে মাহির চেহারাতে পড়ছে বারবার। খুব সাবধানে আশফি চুলগুলো সরিয়ে মাহির কানের পিছে গুঁজে দিলো। মাহির ঘুমটা আচমকা ভেঙে গেল তখন। আধো আধো চোখ মেলে আশফিকে সামনে দেখতে পেল সে। ভোরের স্নিগ্ধতা আর হালকা শীতল মৃদু বাতাস কার না ভালো লাগে! আর সেই সাথে যদি সব থেকে ভালোলাগার মানুষটির সঙ্গ মেলে তবে তো কথাই নেই। আশফির নিষ্পলক চাউনির পানে তাকিয়ে মাহি বেশ কিছুসময় নীরব থাকল। আশফির মুখটা মাহির এত বেশি কাছে যে মাহি আজ তার ডান ভ্রুর মাঝের একটা ক্ষুদ্র কাটা দাগ লক্ষ্য করল। তারপর আশফির চোখের বামপাশে একটা ছোট কালো তিলও তার নজরে এলো। যার মধ্যে মাহির কাছে সব থেকে দারুণ লাগল আশফির ভ্রু এর মাঝের কাটা দাগটা। যেন এই দাগটা না থাকলে আশফিকে অপূর্ণ লাগত। ভোরের শীতল বাতাসে হঠাৎ মাহির শরীরে কাটা তুলল। কুঁকড়ে বসে থাকা মাহির ফর্সা গালেও কাটা পড়ল। কিন্তু তবুও মাহির ঘুমু ঘুমু চোখদুটো আশফির দিকেই চেয়ে রইল। আশফি উঠে দাঁড়িয়ে চাদরটা মাহির পায়ের কাছ থেকে তুলে এনে ওর গায়ে জড়িয়ে দিতে থাকল। মাহির মুখের দিকে যখন ঝুঁকল আশফি তখন সে মাহিকে বলল,
– “ঘরে যাবেন?”
মাহি চোখের পলক ঝুঁকিয়ে না জানাল। আবার সেই ছোট চুলগুলো মাহির চেহারাতে পড়তে মাহি চেহারায় বিরক্ত ভাব এনে তা সরাতে গেলে তার পূর্বেই আশফি তা সরিয়ে দিলো। কিন্তু মাহির কাছ থেকে নড়ল না। খুব স্বল্প মুহূর্তের মধ্যে আশফির আবেগপূর্ণ মন দূর্বল বনে গেল যেন। মাহিও তখন খুব করে চাইল তাদের মাঝে সেই অনাকাঙ্ক্ষিত মুহূর্তটি। মাহির অধরযুগল আশফির ওষ্ঠদ্বয়ের মাঝে বন্দি হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে মাহি সম্বিৎ ফিরে পেল যেন। সে ছিঁটকে দূরে সরে গেল তখন। আহত পায়ে সে দাঁড়িয়ে পড়ে দৃষ্টি নত রেখে কেমন কম্পিত স্বরে বলল,
– “আমি আবার ভুল করে ফেলেছি। মাফ করবেন আমাকে। আমি চাইনি এমন কিছু করতে। কী করছিলাম আমি…আমি সত্যিই চাইনি।”
এ কথা বলেই মাহি রুমে ছুটে গেল। কাঁদতে কাঁদতে পাগলের মতো করে সারা বিছানাতে তার ফোনটা খুঁজতে থাকল। আশফি মাহির কাঁধ ধরে দাঁড় করিয়ে বলল,
– “কী হয়েছে মাহি আপনার? কাঁদছেন কেন আপনি? আপনার কোনো দোষ নেই। আমি…”
মাহি আশফির চোখের দিকে তাকাতে পারল না। সে আশফির থেকে দূরে সরে দাঁড়িয়ে সেই কান্নাকণ্ঠেই বলল,
– “আমি জানি না কীভাবে আমি….! আমাকে প্লিজ মাফ করবেন।”
কিছুটা থেমে সে বলল,
– “আমি এখনই বাসায় যাব।”
আশফি মাহির কাছে এসে ওকে বলল,
– “আমি তো বলছি আপনার কোনো দোষ নেই এখানে। ভুলটা আমি করতে গিয়েছিলাম। আমি নিজেও জানি না তখন আমার কী হয়েছিল। আপনি প্লিজ এভাবে কাঁদবেন না। আমার সত্যিই কোনো ব্যাড ইনটেনশন ছিল না।”
– “আমি বাসায় যাব প্লিজ। আমাকে যেতে দিন। আমি আর কখনোই আপনার সামনে….”
মাহি কথা শেষ করতে পারল না। ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল সে। আশফি মাহির দুই বাহু ধরে বলল,
– “আপনি কেন নিজেকে এমন ভাবছেন। ওই মুহূর্তটা আমাদের দুজনের কাছেই আনএক্সপেক্টেড ছিল মাহি। আমরা কেউই নিজেদের ইচ্ছায় এগোয়নি। আপনি বসুন আগে। আগে শান্ত হোন। তারপর আমি আমি আপনাকে পৌঁছে দিয়ে আসব।”
মাহির ভাবমূর্তি আচমকা পরিবর্তন হয়ে গেল তখন। সে আশফির দুই হাত নামিয়ে দিয়ে ক্ষিপ্রস্বরে তাকে বলল,
– “প্লিজ আমাকে যেতে দিন আপনি। সবসময় কেন এত অকারণ অধিকার দেখান? আমি আর আপনার মুখোমুখি এক মুহূর্ত থাকতে পারছি না। সোম ভাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমাকে প্লিজ যেতে দিন।”
আশফি স্তম্ভিত হয়ে তাকিয়ে থাকল শুধু।
গাড়িটা মাহির বাড়ির সামনে দাঁড়াতেই মাহি তড়িৎ গতিতে গাড়ি থেকে নেমে গেল। আশফি শুধু বলল,
– “সাবধানে! মাহি?”
কিন্তু সে কথা মাহি ভ্রুক্ষেপ করল না। আশফি মাহির ওড়নাটা হাতে করে নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকল মাহির যাওয়ার পানে। গাড়ি থেকে নেমে যাওয়ার মুহূর্তে মাহির ওড়না গাড়ির দরজার ফাঁকে আটকে যায়, যা সে বুঝতেও পারেনি। আশফির শেষ ডাকও তার কানে গেল না। তবে আজ আশফি অনেক বড় শিক্ষা পেল। নিজের দূর্বলতা সে কখনোই কারো সামনে প্রকাশ করে না। নিজের ভাই, দাদা, দাদীবুর কাছেও না। কিন্ত এই স্বল্প দিনের পরিচয়ে পরিচিত।মেয়েটির কাছে তার বিশেষ কিছু ব্যক্তিত্ব ক্ষয়ে ফেলেছে সে। যার ফল সে আজ পেয়েছে।
গাড়ি ঘুরিয়ে আশফি নিজের বাড়ির উদ্দেশে উত্তরাতে রওনা হলো। কানে বাজতে থাকল শুধু মাহির শেষ কথাগুলো। মাহিকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য যখন সে বের হলো তাকে নিয়ে, মাহির অকারণ ভাবনার কারণ জানতে চেয়ে আশফি ফাঁকা রাস্তার এক পাশে গাড়ি থামাল।
– “আপনি নিজেকে কেন অপরাধী ভাবছেন মাহি?”
মাহি নীরব বনে মাথা নিচু করে রইল। আশফি জিজ্ঞেস করল,
– “আপনাকে কিছু বলেছে সোম?”
মাহি ফের নিশ্চুপ।
– “কথা বলছেন না কেন মাহি? আপনি কেন এত ভয়ে আছেন বলুন?”
– “আপনি প্লিজ আর কিছু জিজ্ঞেস করবেন না আমাকে। এটা একান্তই আমাদের ব্যাপার। আপনি কেন বারবার আমাকে নিয়ে ভাবেন? প্লিজ আর ভাববেন না।”
এরপর আর আশফিকে নিজের অধিকারের গন্ডি চেনাতে হয়নি মাহির। সারা পথ মাহি প্রচন্ড ঘেমেছে। কিন্তু তাও আশফি মাহির দিকে ফিরে তাকায়নি। হঠাৎ মাহিকে অনবরত কাশতে দেখে ওর দিকে পানির বোতল এগিয়ে দিয়েছে। তবুও ফিরে তাকায়নি সে ওর দিকে। যখন ব্যথা পায়ে মাহি নেমে ছুটে গেল তার বাসার ভেতর শুধু তখনই আশফি মাহিকে সাবধান হতে বলে ডেকেছিল।
আজ থেকে আবার সে নিজের পূর্বের জায়গায় ফিরে আসবে। একজন কর্মব্যস্ত, গম্ভীর, অন্তর্মূখী মানুষ ছিল সে। তার জীবনে দূর্বল স্থান বলে কোনো স্থান ছিল না। আর আজও থাকবে না। কিছু সময় পূর্বেও যা অনুভূতি তার ভেতরে জন্ম নিয়েছিল তা ছিল শুধু ক্ষনিকের দূর্বলতা। যা শুধু ভুলে ভরা ছিল।
বিচ্ছিন্ন চেহারা, চোখ মুখ লাল, গায়ে ওড়নাও নেই। এভাবে মাহিকে দেখবে সোম তা সে কল্পনাও করেনি। মাহির নিঃশ্বাস দ্রুত ওঠানামা করছে। ক্রুর চাহনিতে সোম তার পা থেকে মাথা অবধি দেখছিল। তার গায়ে ওড়না নেই তা লক্ষ্য করতেই মাহি দ্রুত নিজের রুমে চলে গেল। তখনি সোম উঠে মাহির রুমে যেতে গেলে মিমি তার সামনে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
– “আপুকে একটু ফ্রেশ হতে দিন ভাইয়া।”
সোম ক্রুদ্ধ চোখে তাকিয়ে গর্জন করে বলল,
– “কাজটা ভালো করোনি তুমি মিমি। এর জবাব মাহির সঙ্গে তোমাকেও দিতে হবে। শুধু সবাইকে আসতে দাও।”
মিমি কিছু বলল না। সোম সোফাতে এসে বসল আবার। গতকাল বিকালে সোম সিলেট থেকে ফিরে সন্ধ্যার পর মাহিকে কল করে। মাহি তখন রিসিভ না করলে তার ঘন্টাখানেক পর আবার সে মাহিকে কল করে। কিন্ত তখনও রিসিভ না হলে কিছুটা বিরক্ত হয়ে সে মাহির বাসায় ল্যান্ড লাইনে ফোন করে। মিমি ফোন তুলতে যখন সোম মাহিকে চায় তখন মিমি মিথ্যা বলে মাহি ঘুমিয়েছে। উঠতে উঠতে তার রাত হবে অনেক। সোম তখন ফোন রেখে দিলেও রাত এগারোটার পর আবার মাহিকে কল করে। তখনো মাহি রিসিভ করেনি। সোমের রাগ উঠে যায় সে সময়। সে ওই সময় থেকে অনবরত মাহিকে কল করতে থাকে। তারপর ল্যান্ড লাইনেও কল করে যখন না পায় কাউকে তখন সোম নিশ্চিত হয় কোনো সমস্যা আছে এর মাঝে। রাত প্রায় একটা তাই সোম অপেক্ষা করতে থাকে সকাল হওয়ার জন্য। কিন্তু সকাল হওয়ার আগেই সে মাহির বাসায় এসে যায়। এত ভোরে সোমকে দেখে মিমি ভয়ে বুদ্ধিশূন্য হয়ে পড়ে। এ কথা ও কথা বলে সোমকে সে আধ ঘন্টা বসিয়ে রাখতে পারলেও তারপরই সে নিজের কথার মাঝে নিজেই ধরা খেয়ে যায়। সোমের রাগ সম্পর্কে মিমিরও ধারণা আছে। তার ক্রোধপরায়ণ চেহারা দেখে মিমি সবটা বলতে বাধ্য হয়। সে মুহূর্তে সোম রাগের চোটে সামনে রাখা গ্লাস মাটিতে আছাড় মেরে ভেঙে ফেলে। মাহিকে ফোন করতে থাকে সে আবার। মাহি যখন ফোন তোলে তখন সোম চিবিয়ে চিবিয়ে বলেছিল,
– “আধ ঘন্টা, এর মাঝে যদি তুই ফিরে আসতে না পারিস তবে শুধু অপেক্ষা করবি আমার সময় দেখার। আর জবাবও প্রস্তুত করে রাখিস দাদুকে ম্যানেজ করার জন্য।”
মাহির সঙ্গে কথা শেষ করেই সোম আলহাজকে ফোন করে তার নাতনিন ব্যাপারে সবটাই বলে দেয়। আলহাজ রীতিমতো ক্রোধে ফেঁটে পড়ে জানায় সে আজই ফিরছে।
ছাইদানিতে প্রায় বারোটা আধ খাওয়া সিগারেটের শেষ অংশ। এখন আশফির হাতে তের নাম্বার চলছে। দিশান ধোঁয়ার মাঝে বসে তখন কাশতে ব্যস্ত। কোনোভাবেই সে ভাইকে থামাতে পারছে না। আশফি সিগারেটটা হাতে রেখে দিশানকে বলল,
– “অফিসের জন্য তৈরি হ। আর আসার পথে আমার বাসা থেকে ওগুলো নিয়ে আসিস। দাদীবু যেন বুঝতে না পেরে।”
– “কী হয়েছে ভাই তোমার? তুমি বিশেষ মুহূর্ত ছাড়া ড্রিংক করো না। আর তুমি অফিস যাবে না?”
– “না।”
– “কী হয়েছে আমাকে বলবে? আর এত সকালে এখানে এলে। মাহিকে পৌঁছে দিয়ে এসেছো?
আশফির দমিয়ে রাখা রাগটা এবার ফুঁসে উঠল। সে চেঁচিয়ে বলল,
– ” না, তার ফিয়ন্সের আশায় ছেড়ে এসেছি।”
দিশান এবার নিশ্চিত হলো মূল ব্যাপারটা কী নিয়ে। বহু কষ্টে সে ভাইয়ের রাগ সংযত করল। কিন্তু তার সিগারেট টানা যেন আরও বেশি বেড়ে গেল। ঘন্টাখানিক পর আশফি নিজে থেকেই দিশানকে অনেক কথা বলল। কথাগুলো শোনার পর দিশানের একই সঙ্গে আনন্দও হলো আবার মনটাও খারাপ হয়ে গেল।
………………………………..
(চলবে)
– Israt Jahan Sobrin
We use cookies on our website to give you the most relevant experience by remembering your preferences and repeat visits. By clicking “Accept All”, you consent to the use of ALL the cookies. However, you may visit "Cookie Settings" to provide a controlled consent.
This website uses cookies to improve your experience while you navigate through the website. Out of these, the cookies that are categorized as necessary are stored on your browser as they are essential for the working of basic functionalities of the website. We also use third-party cookies that help us analyze and understand how you use this website. These cookies will be stored in your browser only with your consent. You also have the option to opt-out of these cookies. But opting out of some of these cookies may affect your browsing experience.
Necessary cookies are absolutely essential for the website to function properly. These cookies ensure basic functionalities and security features of the website, anonymously.
Cookie
Duration
Description
cookielawinfo-checkbox-analytics
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Analytics".
cookielawinfo-checkbox-functional
11 months
The cookie is set by GDPR cookie consent to record the user consent for the cookies in the category "Functional".
cookielawinfo-checkbox-necessary
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookies is used to store the user consent for the cookies in the category "Necessary".
cookielawinfo-checkbox-others
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Other.
cookielawinfo-checkbox-performance
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Performance".
viewed_cookie_policy
11 months
The cookie is set by the GDPR Cookie Consent plugin and is used to store whether or not user has consented to the use of cookies. It does not store any personal data.
Functional cookies help to perform certain functionalities like sharing the content of the website on social media platforms, collect feedbacks, and other third-party features.
Performance cookies are used to understand and analyze the key performance indexes of the website which helps in delivering a better user experience for the visitors.
Analytical cookies are used to understand how visitors interact with the website. These cookies help provide information on metrics the number of visitors, bounce rate, traffic source, etc.
Advertisement cookies are used to provide visitors with relevant ads and marketing campaigns. These cookies track visitors across websites and collect information to provide customized ads.