তুমি রবে নীরবে ১ম পর্ব

0
3607

#তুমি_রবে_নীরবে
#১ম_পর্ব
#সাদিয়া_ইসলাম_ইকরা

গোসল শেষে যখন কাপড় গুলো ছাদে শুকাতে গেলাম কেউ একজন পিছন থেকে এসে আমার হাতটা শক্ত করে ধরে পিছনের দিকে বাঁকিয়ে নিয়ে পিঠের সাথে লাগিয়ে দিল।এত বেশি ব্যথা হচ্ছিল যে বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।মাথা ঘুরিয়ে পিছনে তাকাতে দেখি আমার খালাতো ভাই আদিব।

–ভাইয়া হাতটা ছাড়ো প্লিজ!আমার খুব লাগছে।
–লাগুক
–কি শুরু করেছ এইসব!
–আমার যে লাগছে সেটা দেখছিস না তুই?
–তোমার কোথায় লাগছে?
–তুই বুঝবি না।
–প্লিজ ভাইয়া হাতটা ছাড়ো।

আমি গামছা দিয়ে চুল গুলো বেধে রেখেছিলাম।ভাইয়া এত শক্ত করে হাতটা ধরেছে যে কোনো ভাবে ছাড়াতে পারছি না।ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে আমার বেধে রাখা চুল গুলোও খুলে গেল।
আদিব ভাইয়া এক হাতে আমার হাত ধরেছে অন্য হাতে আমার কানের পাশের চুলগুলো সরিয়ে দিল।তারপর কানের কাছে মুখটা এনে বলছে

–একটু বুঝতে পারিস না আমাকে?
–সেই কখন থেকে বুঝাবুঝির কথা বলছ।কি বুঝব আমি?
–তুই তো একেবারেই ছোট না যে কিছুই বুঝিস না!
–আমি ওতো বড়ও না যে সব কিছু বুঝব।আমার হাতটা ছাড়ো।না হলে আমি চিৎকার করব।
–যা..ছাড়লাম তুর হাত।একটা কথা জেনে রাখিস যা করছিস ভুল করছিস।

এই কথা বলে আদিব ভাইয়া হন হন করে চলে গেল।বুঝতে পারলাম সে খুব রেগে আছে আমার উপর।

আদিব ভাইয়া দেখতে খুব সুন্দর।সবসময় চেক শার্ট তার গায়ে থাকবে।চুল গুলো ও বেশ সুন্দর ঝরঝরে।এক পাশ করে আঁচরায়।তাকে বেশি সুদশর্ন দেখায় তার চাপ দাড়ি গুলোর জন্য।গায়ের রঙও বর্ননা করা যায় না এমন।ফর্সা আর কালোর মাঝামাঝি।শ্যামলাও বলা যায়!

আমি সদ্য কলেজে পা রেখেছি।আর ভাইয়া ভার্সিটিতে থার্ড সেমিস্টারে বাংলা নিয়ে পড়ছে।ছেলেটার ভিতর এত গুণ বলে শেষ করা যাবে না।ভালো গান গায়তে পারে,ভীষণ সুন্দর করে কথা বলে,গানের গলা এতটাই ভালো যে গিটারে যখন সুর তুলে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না।

আমার কাজিনদের মধ্যে বেশ কয়েকজন তো তার জন্য পাগল প্রায়।যদিও কয়েকজন নিজে থেকেই তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে।ভাইয়া রাজি হয়নি।কিন্তু আমার কেন জানি না ভাইয়াকে ভালো লাগে না।আমি ভাইয়ার থেকে একটু দূরে দূরে থাকি।আমিই মনে হয় কাজিনদের মধ্যে একমাত্র মেয়ে যে কি না ভাইয়াকে পছন্দ করি না।

ভাইয়া তখন হাতটা এত শক্ত করে ধরেছিল যে পাঁচটা আঙ্গুলের ছাপ এখনো বসে আছে।হাতের যে জায়গায় ধরেছে সেটা এখনো লাল হয়ে আছে।বালতি ভরে কাপড় নিয়েছিলাম একটা একটা করে কাপড় শুকাতে দিচ্ছি।আর ভাবছি ভাইয়া কেন আমাকে কথা গুলো বলে গেল?আমি কি করেছি?এমন কোনো অন্যায় তো করিনি যার জন্য আমাকে এত কথা বলে গেল।

কাপড় গুলো শুকাতে দিয়ে ছাদ থেকে নেমে গেলাম।আমাদের বাসায় অনেক মেহমান।ছোট চাচ্চুর বিয়ে বলে সবাই এসেছে।আমরা সবাই দুপুরের খাবারটা খেতে বসেছি।আদিব ভাইয়া আর বাকি কাজিনরাও আছে।আমার দাদু আমার হাতটা লাল দেখে জিজ্ঞেস করল কিরে তুর হাত এত লাল কেন?কি হয়েছে?ভয়ে মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছেলো না আমার।আমি বললাম ও কিছু না দাদু এমনি ব্যথা পেয়েছি।দাদু বলল আচ্ছা তুর প্লেটটা দে ভাত বেরে দিই।আমি প্লেট দিতে দিতে ভাইয়ার দিকে তাকাচ্ছি।দেখলাম ভাইয়া নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।আজকে তার জন্যই এতটা লজ্জার মধ্যে পড়তে হলো আমাকে।

এর মধ্যে কলেজে ভর্তি হওয়ার পর কয়েকদিন ক্লাস করেছি।একটা ছেলে সেদিন আমাকে প্রপোজ করেছে।চাচ্চুর বিয়ের জন্য আর কলেজেও যাওয়া হয়নি কিছুদিন।

আমি এখনো তাকে আমার উত্তরটা দিইনি।যদিও মনে মনে আমিও ছেলেটাকে পছন্দ করি।প্রথম দিন থেকেই ছেলেটাকে ভালো লাগে তার নাম আবির।

চলবে..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে