তুমি রবে নীরবে পর্ব-০৭

0
1729

#তুমি_রবে_নীরবে
#পর্ব_৭
#সাদিয়া_ইসলাম_ইকরা

আদিব ভাইয়া কে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়লো তাকে খুঁজতে তখন রাত প্রায় তিনটা বাজতে চলেছে ভাইয়া তখনও ঘরে ফিরেনি ভাইয়া যে রুমে ঘুমায় সে রুমটা ভিতর থেকে আটকানো দরজায় অনেক বারি দেওয়ার পরেও রুমের দরজা খুললো না।

রুমের জানালা টা খুলতে দেখি ভাইয়া সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলছে।আমি যেন স্তব্ধ হয়ে গেলাম মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না কান দিয়ে কারো কোনো আওয়াজ ঢুকছে না মনে হচ্ছে যেন আমি এখনই অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাব।সবাই স্তব্ধ আদিব ভাই এমন একটা কাজ করতে পারে কারো কল্পনায় ছিল না।

হঠাৎ ঘুমটা ভেঙে গেল কপালে হাত দিয়ে দেখলাম কয়েক ফোঁটা ঘাম জমেছে।এটা কি তাহলে সপ্ন ছিল?হ্যাঁ স্বপ্নই তো!দেওয়ালের সাথে ঝুলিয়ে রাখা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম প্রায় একটা বাজতে চলেছে।আমার মনে কেমন যেন একটা ভয় কাজ করছে! আমি তনুর দিকে তাকিয়ে দেখলাম সে ঘুমের রাজ্যে পায়চারি করছে যাতে।তার ঘুমটা ভেঙে না যায় তাই আস্তে করে উঠলাম।উঠে দরজা টা খুললাম,খুলে আদিব ভাইয়ার রুমের দিকে গেলাম।রুমে দরজা খুলতেই দেখলাম ভাইয়া ঘুমাচ্ছে।আবার আস্তে করে দরজাটা বন্ধ করে নিজের রুমে চলে আসলাম।এসেই ঘুমিয়ে পড়লাম সকালে নাস্তা শেষ করে মাকে বললাম

–আমি খালার সাথে যাবো না আমার ক্লাস আছে। অনেকদিন কলেজ যাওয়া হয় না।

পড়ার কথা বলতেই মা রাজি হয়ে গেল।খালার সাথে যাওয়ার জন্য আর জোর দিল না।আমিও মনে মনে অনেক খুশি খালার সাথে যেতে হবে না!

খালারা চলে যাচ্ছে আদিব ভাইয়া যেতে যেতে আমাকে একটা চিরকুট ধরিয়ে দিয়ে গেল

চিরকুটে লেখা ছিল

–আমার নতুন নম্বর(একটা নম্বর লেখা ছিল) একটা কল দিস প্লিজ

খালারা যাওয়ার পর আমি তৈরি হয়ে নিলাম কলেজ যাওয়ার জন্য।অনেকদিন কলেজ যাওয়া হয় না।আজকে অবনী আর আবিরের সাথে দেখা হবে।বাসা থেকে বের হয়ে কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।কলেজে পৌঁছে ক্লাসে ঢুকতেই আবিরকে দেখতে পেলাম।হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া আমাদের সম্পর্কের কথা আর কেউ জানে না তাই আবিরকে ইশারা করে বললাম লাইব্রেরীতে যেতে।আবির লাইব্রেরীতে গেল আমি আর অবনী আবিরের পিছন পিছন গেলাম।

আবির আর আমি মুখোমুখি বসে আছি অবনী বলল তোরা কথা বল আমি নোট তৈরি করি।আবনী পাশের একটা টেবিলে বসে নোট তৈরি করছে আবির আমাকে বলছে

–অনেকদিন পর দেখা!
–হুম!
–কেমন আছো তুমি?
–ভালো।তুমি?
–তুমি যেমন রেখেছো!
— আমি রাখার কে?
–তুমিই তো সব!

কিছুক্ষণ কথা হওয়ার পর আমরা তিনজন মিলে ক্লাসে চলে গেলাম।ক্লাস শেষ হতেই আদিব আর আমি পায়ে পা মিলিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির কাছাকাছি চলে আসি।আবির আমাকে বিদায় জানিয়ে চলে গেল।আমিও বাসায় ফিরে আসলাম।

রোজ রোজ আবিরের সাথে আমার কথা হচ্ছে।রাত প্রায় দুইটা তিনটা অবধি কথা না বললে যেন মনই ভরে না।জীবনে কখনো কারো সাথে এমন ভাবে মেলামেশা হয়নি এটুকু সময়ের মধ্যে আবির অনেকটা কাছের মানুষ হয়ে গেল।

এভাবে কিছুদিন যাওয়ার পর হঠাৎ একদিন সন্ধ্যাবেলায় বই নিয়ে বসে বসে গল্প পড়ছি। মা এসে আমার পাশে বসেছে।মাকে বসতে দেখে আমি আস্তে করে গিয়ে মাথা টা মায়ের কোলে রাখলাম।মা আলতো হাতে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলছে

–এইবার তোর বিয়ে নিয়ে ভাবছি আমরা।
–মা এখন বিয়ের কথা বলো না তো।আমি আগে পড়ালেখা শেষ করতে চাই।
— যাদের ঘরে বউ হয়ে যাবি তারা তো তোকে পড়াবে।
–এত শিওর হয়ে কিভাবে বলছো তুমি?
–তোর খালা হবে তোর শাশুড়ী!মানে আদিবের সাথে তোর বিয়ে।
–ভাইয়াকে আমি সব সময় আমার ভাইয়ের মতোই ভেবেছি কিন্তু এখন এসব কেন বলছ? আমি পারবো না ভাইয়া কে বিয়ে করতে!আর আমি পড়ালেখা করতে চাই।
–পড়ালেখা অবশ্যই করবি তবে বড়রা যেটা বলে সেটাই।আর সামনে তো তোর অয়ন ভাইয়ার(আদিব ভাইয়ার বড় ভাই)বিয়ে। আর বড়রা সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিয়ের কিছুদিন পর তোদের জোড়াটা দিয়ে দিবে।

এ বিষয়ে মায়ের সাথে কিছুক্ষণ তর্ক করার পর মা আমার রুম থেকে চলে গেলে।মা রুম থেকে যাওয়ার সাথে সাথে আমি আবিরকে কল দিলাম

–হ্যালো
–হ্যাঁ বলো মহারানী!
–বাসা থেকে আমার বিয়ে ঠিক করছে তুমি কিছু করার থাকলে করো প্লিজ!তা না হলে অনেক দেরি হয়ে যাবে
–এখনো তো পড়ালেখা করছি বাসায় বললে মেনে নিবে না।তুমি বললে পালাতে পারি চলো পালাই।
–আমাকে রাখবে কোথায়?খাওয়াবে কি?
–শুরুর দিকে হয়তো একটু কষ্ট হবে পরে দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।

এটুকু বলেই তনুকে আমার রুমের দিকে আসতে দেখে আমি লাইনটা কেটে দিলাম।
তনু আমার পাশে বসে খুশি খুশি মুখে বলল

–আপু জানিস তোর সাথে নাকি আদিব ভাইয়ার বিয়ে?আমার কি যে খুশি লাগছে বলে বুঝাতে পারব না!
–তুই এখন যা তো এইখান থেকে।তোর সাথে কথা বলতে ভালো লাগছে না।
–কেন আপু!তোর বিয়েতে তুই খুশি না?
–তোকে এখান থেকে যেতে বলেছি যা।তোর সাথে আমি পরে কথা বলব।তা না হলে এখন তুই আমার বকা শুনবি!
–আচ্ছা বাবা যাচ্ছি

তনু রুম থেকে চলে গেল কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না।আচ্ছা পালিয়ে যাওয়াটা কি ঠিক হবে?না পালালে আমি যে আবিরকে সারাজীবনের জন্য হারিয়ে ফেলব!

এখন পালিয়ে যাওয়াটাই একমাত্র সমাধান আমি জানি এইটা ছেলেমানুষি তবুও
আমাকে পালাতে হবে আবিরকে বলব তৈরি থাকতে। তবে এখন না।আগে দেখি ঘটনা কোনদিকে গড়ায়।

অল্প করে খাবার খেয়ে বিছানায় শুতে এসেছি।এপাশ ওপাশ করছি কিন্তু কোনো এভাবে ঘুম আসছে না।আবির কে ও কল দিতে ইচ্ছে করছে না খুব চিন্তা হচ্ছে।

এর মধ্যে তনু এসে হাজির হয়েছে এটা ওটা বলে আমাকে পাগল করে দিচ্ছে।এদিকে আমি চিন্তায় মরে যাচ্ছি।আমি তনুর কোনো কথার পাত্তা না দিয়ে চুপ করে আছি।তনু নিজে নিজে কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়েছে।তখন রাত প্রায় বারোটা।আমার চোখে ঘুম নেই।আবিরের চেহারাটা আমার চোখের সামনে ভাসছে!

এইটুকু সময়ে আবির আমাকে অনেকটা মায়ায় জড়িয়ে নিয়েছে।আমার মাথা কাজ করছে না যদি পালিয়ে যাইও পরিবারকে ছাড়া কিভাবে থাকব।মা বাবাকে ছাড়া কিভাবে থাকবো!তারাও তো আমাকে ভালোবাসে!

এইসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি নিজেও জানি না চোখ খুলতেই দেখলাম সকাল হয়ে গেছে।আজকে কলেজে যেতে ইচ্ছে করছে না আমার ইচ্ছে করছে আবিরের কথা মাকে বলে দিতে কিন্তু আমি জানি মা কোনো ভাবেই মানবে না।আর এই মুহূর্তে পরিবারের কাছে আবিরের কথা বলাটা সবচেয়ে বড় বোকামি।কারণ আবির এখনো পড়ালেখা করছে।যদিও আদিব ভাই ও পড়ালেখা করছে।পড়ালেখা করলে ও তাদের নিজেদের তো ব্যবসা আছেই।আর তাই আমি হাজার বললেও পরিবার মানবে না আমি জানি।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে