জানি দেখা হবে পর্ব ৪

0
1670

জানি দেখা হবে পর্ব ৪
লেখা আশিকা জামান

সামনে আগানোর শক্তি পাচ্ছে না রুপম, তার পায়ের নিচের মাটি সরে যাচ্ছে……।
মনে হচ্ছে কিছুক্ষণের জন্য হলেও ও সেন্সলেস হয়ে যাবে।
কোন রকম নিজেকে সামলে নিয়ে রউল্টো দিকে হাটতে লাগল….

“অনিশা আমি ডাক্তারের সাথে কথা বলে তোমার ছুটির ব্যাবস্থা করছি।”

বলেই নিহান বসা থেকে উঠে পড়ল।
অনিশা চুপচাপ মাথা নাড়লো।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/



একটু আগাতেই কিছুটা সামনে রুপমের মত কাউকে দেখতে পায়।
আরে রুপমইতো!

“রুপম…এই..
রুপম
দাড়া….”
উচ্চস্বরে ডাকতে লাগলো।

পিছন ঘুরে তাকালো রুপম,

“কিরে ডাক্তার বাবু
তুই নাকি খুব বিজি।
আমার সাথে দেখা করার টাইম টুকুও নাই, এখন।। এখন কি বলবি??
হু….”
হাসতে হাসতে কথাটা বললো নিহান।

” না ছিল, মাত্র শেষ করে এলাম।
তোর অনিশার সাথে কথা শেষ হইছে?”
শুকনো মুখে কথাটা বললো রুপম।

“শেষ কি ব্যাটা, সবে তো শুরু…
আর বলিস না বউ টা আমার এতো ইমোশনাল আমার সাথে একটু ঝগড়া হইছে তাই সে মরতে গেছে। ওরে আল্লাহ এই বউ নিয়া আমার যে কি হইব….”
মজা করতে করতে নিহান কথাটা বললো।

“তোকে খুব ভালবাসেতো তাই…
তা এমন কথা কেন বলিস যাতে কেউ কষ্ট পায়, আর বলিস না।”
কথাটা বলেই রুপম চমকে উঠলো।

“তুই তো জানিস ছোট থেকে আমার মেজাজটা একটু তারাতারি গরম হয়ে যায়।
বাই দ্যা ওয়ে, তুই অনিশার নাম জানলি কি করে? আমি তো তোকে কখনওই বলি নাই,
মানে তুই ও তো জিজ্ঞাস করিস নাই।”

“কারন তোর বউ আমার আন্ডারেই আছে, তাছাড়া এখন পর্যন্ত একজন ই পেশেন্টই আছে যে সুইসাইড করার চষ্টা করছিলো, সো সিম্পল হিসাব…”

“ও তাহলে তো ভালই
ডিসচার্জ কবে করবি?”

” তুই আমার সাথে আয়। ডিসচার্জ পেপারে সাইন করে দিচ্ছি…
আর একটা কথা, তুই আমার ভাই সেটা বলিস না কেমন।”

“কেন?”
বোকার মত প্রশ্ন করে বসে নিহান।

“সারপ্রাইজ দিব তো তাই!”

“ওকেই ডাক্তার বাবু।”

বলেই নিহান রুপমের সাথে গেল…
অনিশা সারা বিকাল অপেক্ষা করল রুপমের জন্য, কিন্তু সে এল না…
কিন্তু রুপম তো কথার খেলাপ করে না।
পুরোনো স্মৃতিগুলো সব মাথাচারা দিয়া উঠতে লাগলো।
কত বোকা ছিলাম আমি?
কত ভয় পেতাম রুপমকে!
মনে মনে ভেবে যায় সেই দিনগুলি…

সেই সময় অনিশার বাবা টাংগাইল থেকে বদলি হয়ে জামালপুর আসলো।
তখন অনিশা ক্লাস নাইন পড়তো।
তারা যে বাসায় থাকত তার পিছনে একটা বড় খেলার মাঠ ছিলো।
পাড়ার ছেলেরা সেখানে বিকেলে ক্রিকেট খেলত।

একদিন অনিশা রিহার সাথে ফোনে ব্যালেন্স রিচার্জ করার জন্য সামনের দোকানটাতে যায়।
ওখানে কয়েকটা ছেলে বসে ছিলো….
অনিশা ভয়ে চলে আসতে চাইছিল বাট রিহা কি করল।।

” আপি, ফোনে টাকা দিবা না।”

বলেই নাম্বার লেখা শুরু করল।
কি আর করা তারা টাকা দিয়া চলে আসল।

” আপি দেখ সব ছেলেগুলো কেমন উশৃঙ্খল পনা করছিলো, বাট একটা ছেলে কেমন চুপচাপ ছিল ।”

“এই শোন অতি ভক্তি
চোরের লক্ষন।
বাসায় আসতে না আসতেই আননোন নাম্বার থেকে ফোন।”
-হ্যালো কে?
– সেটা একটু পরে বলি…
– না এখনি বলেন, নইলে ফোন কেটে দিব…
অচেনা কারো সাথে আমি কথা বলি না।
– তোমার ব্যাগে একটা চিরকুট আর লাল গোলাপ পেয়েছিলা? ঐটা আমিই দিয়েছিলাম,
আমার প্রশ্নের উত্তর দিলানা তো?
– এই আপনি আমার ব্যাগে ওইগুলা রাখছেন কেমনে?
– সিম্পল, তুমি যে স্কুলে পড় তার কলেজ সেকশনে আমি পড়ি, নাম টা বলব না তোমার কোন ফ্রেন্ড কে দিয়ে পাঠাইছিলাম।
– নাম্বার কোথায় পাইছেন?
– তুমিই দিলা।
অনিশার আর বুজতে বাকি রইল না কিভাবে নাম্বার পেল…
এভাবেই তাদের মাঝে মাঝে কথা হত….
এরপর থেকে অনিশার বাসার সামনে রুপমকে প্রায়শই দেখা যেত।
যেখানেই যেত আশে পাশে রুপমকেই দেখতে পেত।
অনিশার ভাইএর তখন ভার্সিটি বন্ধ থাকায় বাসায় আসে, বোনের ফোনে রুপমের করা অনেকগুলো মেসেজ দেখে ফেলে।
অনিশাকে জেরা শুরু করে। অনিশা একপর্যায়ে
বলে দেই যে, এই ছেলে তাকে ডিস্টার্ব করে। এরপর অনিশার ভাই রুপমকে ভাল করে বুঝাই বলে যেহেতু এখনো ওরা ছোট।
বাট রুপম বরাবরের মতো ঘাড়ত্যারা।
” সে অনিশাকেই ভালবাসে আর সারাজীবন বাসবে”
চিল্লাই চিল্লাই বলে উঠে রুপম।
এক পর্যায়ে তাদের কথা কাটাকাটি হয় আর সেটা মারামারি পর্যায়ে চলে যায়
রুপম কে সেদিন অনেক মার খেতে হয়েছিলো।
পরদিন বেপরোয়া রুপম অনিশাকে একা পেয়ে আবার জিজ্ঞাস করে তাকে ভালবাসে কিনা?
অনিশা সেদিন এই ভালবাসাকে অস্বীকার করে।
কিন্তু রুপম নাছোড়বান্দার মত পিছে লেগেই থাকতো।

বয়সটা তখন চূড়ান্ত আবেগের আর ভুলে গা ভাসিয়ে দেয়ার।

” অনিশা কি করলে তুমি বুঝবা যে আমি তোমাকে ভালবাসি।
তোমাকে ছাড়া আমি বাচতে চাই না। তুমি ছাড়া পুরো পৃথিবী অন্ধকার। শুধু একবার মিথ্যে করে হলেও বলোনা তুমি আমাকে ভালোবাসো”

রুপমের ঈষৎ রক্ত বর্ণের ন্যায় চক্ষু দেখে অনিশার হৃদয় সেদিন সত্যিই কেপে উঠেছিলো।
ব্লেড দিয়ে এক টানে রুপমের কাটা হাত দিয়ে গলগলিয়ে রক্ত বের হচ্ছিলো। আর এই পুরোটা সময় রুপম অনিশার চোখের দিকে তাকিয়েই ছিলো।
অনিশা ভয়ে সেদিনের মত সেখান থেকে চলে আসে।
তারপর কয়েকদিন বাইরে বের হয় নাই।নিজকে নিজের মধ্যেই গুটিয়ে নিয়েছিল।
শুনেছে রুপম ৩ দিন হাসপাতালে ছিল অনেক রক্তক্ষরন নাকি হইছিল।
এদিকে হস্পিটাল থেকে অনিশাকে দেখার জন্য রুপম পাগল হয়ে গেছিল।
তাই অসুস্থ শরিরে অনিশার বাসার পিছনে জানালার কাছে এসে ফোন করে বলেছিল জানালা খুলার জন্য। কিন্তু অনিশা স্পষ্ট না করে।
রুপম শেষে বলে, “তুমি যদি না দেখা কর আমি সারা রাত এখানেই থাকব।”
অনিশা ভয়ে আর জানালা খুলে নাই।
অনিশার সারা রাত আর ঘুম হয় নাই…
পরদিন সকালে কেমন যেন কৌতুহোলবশত জানলা খুলে অনিশা। যা দেখল তার জন্য ও মোটেও প্রস্তুত ছিলনা।
হাতে ব্যান্ডেজ করা, উশকুখুশকো চুলের ক্লান্ত বিদ্ধস্ত রুপমের অবয়ব দেখে এক মূহূর্তের জন্যে হলেও ওর কান্না পেয়ে যায়।
রুপম সেখানে সারা রাত ছিল..
আর ও কথার কথা ভেবেছিল।
এরপর থেকে অনিশা রুপমের প্রতি ওয়েকনেস ফিল করে।
কিন্ত ফ্যামিলির চাপে কিছু করা হয়ে উঠে নাই….
অনিশার মা বিষয় টা বুঝে ফেলে আর তার স্বামী আনিস সাহেব কে জানান।
সে রুপমের ফ্যামিলির কাছে বিচার দেয়।
কয়েক মাস পর ওরা এখান থেকে চলে যায়।
অনিশা চলে যাওয়ার সময় সারা রাস্তা অনেক কেদেছিল।
অনিশা বর্তমানে ফিরে আসলো নিহানের গলা শুনে,
– অনিশা তোমার ডিসচার্জ পেপার, তোমাকে বাসায় দিয়া পরে আমি বাসায় যাব….।
অনিশার হৃদয়টা যেন চুরমার হয়ে যাচ্ছে কিন্তু কিছুই করতে পারছে না, রুপম কেন এমন করল??
অনিশার সবার সাথে বাসায় ফিরে আসে,
আর সেই দিনের মত সারা রাস্তা কান্না করতে করতে আসে।
কিন্তু তার কান্নার রহস্য কেউ জানেনা….
চলবে।।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে