জল্লাদ বয়ফ্রেন্ড পর্ব-০৯

0
2032

#জল্লাদ বয়ফ্রেন্ড❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ (রোজ)
#পর্ব- ৯

সব কথা যেন গলায় এসে দলা পাকিয়ে যাচ্ছে। ভাইয়া আমাকে ধরে বসিয়ে দিলো। এরপর দু হাতে চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো।”

—-” ব্লাক রোজ তুই না স্ট্রং? দেখ বোন প্লিজ এভাবে কাঁদিস না। রোজ এভাবে কাঁদলে কি রোদের ভাল লাগে বল? শুভ্র তো তোকে ভুলে যায়নি তাই না? তোকে যখন ওর মনে আছে। তাহলে এটাও মনে পড়ে যাবে। যে ও তোর জল্লাদ বয়ফ্রেন্ড ছিলো। আর এখন আমাদের ব্লাক রোজের স্বামী,

আমি বুঝতে পারছি ভাইয়া এগুলো বলছে আমাকে হাসাতে। কিন্তুু আমি পারছি না এখন হাসতে। ভাইয়া আবারো আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো!”

—-” প্লিজ এভাবে কাঁদিস না। পরে তোর শরীর খারাপ করবে। এখন চল শুভ্রর কাছে যাই,

ভাইয়া আমাকে নিয়ে শুভ্রর কেবিনে এলো। শুভ্র বসে বসে আপেল খাচ্ছে। আমাকে দেখে ভ্রু কুঁচকে বললো।”

—-” এই তোর এরকম অবস্থা কেন? চোখ, মুখ ফুলে আছে, কেঁদেছিস নাকি?”

আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না। ভাইয়া বুঝতে পেরে চট করে বললো,

—-” আসলে ওর মাথা ব্যথা করছে!”

শুভ্র একটা বড় শ্বাস ছেড়ে বললো,

—-” মাথা ব্যথাতো করবেই। একেতো এরকম গরম। তার ভেতর মহারানী শাড়ি পড়েছে। হ্যা রে তোর হঠাৎ শাড়ী পড়ার শখ হলো কেন? এর আগে কখনো দেখিনি তো তোকে শাড়ী পড়তে।”

শুভ্রর কথা শুনে কলিজা ছিড়ে যাচ্ছে। নিজেকে সামলাতে পারলাম না আমি। হাউ মাউ করে কেঁদে দিলাম। সবাই আমি কেন কাঁদছি বুঝলেও শুভ্র বুঝলো না। কতক্ষণ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে। বেড ছেড়ে দৌড়ে আমার কাছে এসে বললো,

—-” রোজ তুই কাঁদছিস কেন?”

আমি কোনভাবেই কান্না থামাতে পারছি না। জানিনা শুভ্রর কি হলো হঠাৎ আমাকে জড়িয়ে ধরলো। তাহলে কি শুভ্রর সব মনে আছে? শুভ্র কি আমার সাথে মজা করছিলো? কিন্তুু না এবারেও আমি ভুল প্রমানিত হলাম। শুভ্র আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো!”

—-” আরে এই রেড রোজ। আমি তোর সাথে মজা করছিলাম। তুই শাড়ী পড় আমি কিছু বলবো না। আমি বুঝতে পারিনি তুই কেঁদে ফেলবি। এই দেখ তোর শুভ্র ভাই কান ধরে সরি বলছে। আর এভাবে কাঁদিস না প্লিজ,

এরমাঝে ডক্টর ডাক দিলো। তাই স্লান হেসে আমরা বেড়িয়ে এলাম। আমরা বাইরে আসতেই ডক্টর বললো।”

—-” আপনাদের কিছু কথা বলার আছে। ওনাকে হয়তো সুস্থ দেখাচ্ছে, সুস্থ লাগছে। কিন্তুু আপনারা সবাই ওনার প্রবলেমটা জানেন। আপনারা চেষ্টা করবেন ওনাকে চাপ না দিতে। জোড় করে কোনকিছু মনে করাতে গেলে বিপদ হতে পারে,

আমি আতকে উঠে বললাম!”

—-” বিপদ মানে?”

ডক্টর একটু চুপ থেকে বললো,

—-” ওনার ব্রেইনে চাপ লাগলে। উনি সেন্সলেস হয়ে কোমায় চলে যেতে পারে।”

আমি কি করবো এবার? আমি পারবো না শুভ্রর কিছু হতে দিতে তাই বললাম,

—-” না ডক্টর আমরা ওকে চাপ দেবো না। জোড় করে কিছু মনে করাতে চাইবো না!”

ডক্টর মলিন মুখে আমাকে বললো,

—-” দেখো রোজ তুমি আমার মেয়ের মতো। আমি জানি তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে। তোমাদের বিয়ে হয়েছে মাএ ৩মাস হলো। আর এখনি শুভ্র বিয়েটাই ভুলে গেলো। কিন্তুু শুভ্রর ভালর জন্য ওকে চাপ দেওয়া যাবে না।”

উনি আমাদের সবাইকে চেনে। আমি জোড়পূর্বক হাসি দিয়ে বললাম,

—-” জ্বি কোনরকম চাপ দেবো না!”

এরপর আমরা চলে এলাম। বুকের ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে। কাউকে বোঝাতে পারছি না আমার কষ্টটা। আমার জন্যই তো শুভ্রর এক্সিডেন্ট হয়েছিলো। শুভ্র যতই বলুক যে ওর ভুল ছিলো। ও অন্যমনস্ক হয়ে হাটছিলো তাই এক্সিডেন্ট হয়েছিলো। কিন্তুু আসল সত্যিতো এটাই। সেদিন আমি ওরকম বিহেভ করায় ও কষ্ট পেয়েছিলো। কিন্তুু আমার সন্তান ওর কি হবে? সকাল হয়ে গিয়েছে শুভ্রকে বাড়ি নিয়ে যাবে। এরমাঝে মনে পড়লো শুভ্রর রুমে আমাদের বিয়ের ছবি আছে। এছাড়া আরো অনেক ছবি আছে। তাছাড়া পুরো বাড়িটা এখনো সাজানো আছে। কাউকে না জানিয়ে আগে বাড়ি চলে এলাম। বাড়ি এসে সার্ভেন্টদের বললাম সব গোছাতে। আর আমি রুমে চলে এলাম। দেয়ালে আমার আর শুভ্রর অনেক ছবি আছে। এগুলো দেখে আপনাআপনি চোখে পানি চলে এলো। একটা ছবিতে হাত দিলাম সরাবো বলে। ছবিটা সরাতেই বুকের ভেতরটা মোচর দিলো। কান্নায় ভেঙে পড়ে ফ্লোরে বসে পড়লাম। চিৎকার করে কাঁদছি আর বলছি,

—-” হে আল্লাহ এরকম দিন কেন এলো? কেন এরকম দিনের মুখোমুখি হতে হলো আমার? আমিতো এটা চাইনি, তুমি কেন সহায় হলে না? কেন মুখ তুলে তাকালে না খোদা?”

এরমাঝে সার্ভেন্ট এসে বললো। শুভ্রদের গাড়ি প্রায় চলে এসেছে, ফোন করেছিলো। ওদের দিয়ে ছবিগুলো নিয়ে স্টোররুমে চলে এলাম। সবগুলো ছবি স্টোররুমে রেখে তালা মেরে দিলাম। কারন এই রুমে শুভ্র কখনোই আসে না। এরপর আবার রুমে এসে। আমার সব কাপড় বের করে নিলাম। আমি এই বাড়িতে যেই রুমে থাকি সেখানে চলে এলাম। রুমে আসতেই গাড়ির আওয়াজ পেলাম। হঠাৎ মনে পড়লো বেডের পাশেই। আমার আর শুভ্রর ছবি আছে। তাড়াতাড়ি আবার শুভ্রর রুমে চলে এলাম। ছবি নিয়ে বের হতে গেলেই শুভ্র চলে এলো। আমাকে দেখে চোখ ছোট, ছোট করে বললো।”

—-” তুই আমার রুমে কি করছিস?”

আমি ছবিটা লুকিয়ে ফেলে বললাম,

—-” এমনি অগোছালো ছিলো তাই গুছিয়ে দিলাম!”

বলে তাড়াতাড়ি পাশ কাটিয়ে চলে এলাম। রুমে এসে ভাবলাম শাওয়ার নেয়া দরকার। শাওয়ার নিয়ে একটা রেড থ্রি পিচ পড়ে নিলাম। এরপর নিচে আসতেই দেখলাম শুভ্র ও আছে। আমাকে দেখেই আবার বললো,

—-” এই তুই এরকম বিবাহিতা মেয়েদের মতো। হাতে, চুরি নাকে নাকফুল পড়েছিস কেন?”

আমি কিছু বলবো তারআগে মামনি বললো।”

—-” শুভ্র তুইতো জানিস রোজকে। আমাদের রোজ কি পরিমাণ দুষ্টু। কলেজে যেতে আসতে ছেলেরা ডিস্টার্ব করে। তাই এভাবে সেজে সবাইকে বলে ও বিবাহিতা,

বলে হেসে দিলো না চাইতে আমিও হাসলাম। শুভ্র কতক্ষণ থ মেরে থেকে হেসে বললো!”

—-” সিরিয়াসলি রোজ? ও মাই গড এত দুষ্টু তুই? অবশ্য আমেরিকা থেকে আসার পর। তোকে দেখেছি কি না মনে নেই। কেন যে আমার মনে পড়ছে না,

বলেই মাথায় হাত দিলো আমি বলে উঠলাম।”

—-” শুভ্র শোনো,

ওমনি শুভ্র আমার দিকে তাকালো। বুঝলাম কেন তাকিয়েছে তাই বললাম!”

—-” মানে শুভ্র ভভভাই। তোমার যখন মনে পড়ছে না। তখন জোড় করে মনে করার দরকার নেই,

শুভ্র তালে তাল মিলিয়ে বললো।”

—-” হ্যা এটা ঠিক বলেছিস। মনে করতে চাইলেই মাথা ব্যথা করছে,

এরমাঝে সেখানে বাবা এসে বললো!”

—-” শুভ্র তুমি অফিসে যেতে পারবে?”

শুভ্র মুখে বিরক্তি নিয়ে বললো,

—-” বাবাই তুমি তো জানো। আমার এসব বোরিং লাগে।”

বাবা হঠাৎ বলে ফেললো,

—-” কিন্তুু তুমি তো গত ৩মাস গিয়েছো অফিসে!”

শুভ্র অবাক হয়ে বললো,

—-” আমি কবে অফিসে গেলাম?”

পরিস্থিতি সামলাতে আমি বললাম।”

—-” আব বাবা বলতে চাইছে। যে তুমি গেলে ভাল হতো সেটাই তাই না বাবা?”

বাবা ও হ্যা বললো। শুভ্র ভ্রু কুঁচকে বললো,

—-” সেটা বুঝলাম কিন্তুু তোর কি হয়েছে? আমাকে শুভ্র বলছিস আবার আমার বাবাইকে বাবা বলছিস!”

আমি আমতা আমতা করে বললাম,

—-” মুখ ফসকে বেরিয়ে যায়। জানোই তো আমি কত ফাজিল।”

শুভ্র মুচকি হেসে বললো,

—-” হ্যা এটা ভুলে গিয়েছিলাম!”

আমি দৌড়ে রুমে চলে এলাম। এভাবেই ২দিন কেটে গিয়েছে। ঠিকমত খাই না আমি খেতে পারিনা। সকালবেলা সবাই ড্রয়িংরুমে বসে আছে। আম্মু আর ভাইয়াকে দেখে এগিয়ে এলাম। লাস্ট শিরিতে এসেই মাথা ঘুরে পড়ে গেলাম। কানে ভেসে এলো শুভ্রর রোজ বলে চিৎকার। এরপর আর কিছু মনে নেই। সেন্স আসার পর নিজেকে হসপিটালে পেলাম। সবার মুখে খুশি ভাবটা থাকলেও। শুভ্রর চোখগুলো অসম্ভব লাল হয়ে আছে। মনে মনে ভাবছি ডক্টর নিশ্চয় সব বলে দিয়েছে। ভাবনার মাঝেই শুভ্র আমার হাত ধরে টেনে দাড় করালো। দাড় করিয়ে আমার গাল ঠাস করে একটা থাপ্পর মারলো। থাপ্পর খেয়ে আমি বেডে পড়ে গেলাম। ঠোটে হাত দিয়ে দেখি ঠোট কেটে রক্ত বেরিয়ে গিয়েছে। শুভ্র আবার আমাকে দাড় করিয়ে বললো!”

—-” হাউ ক্যান ইউ ডু দিস রোজ?

আমি না জানার ভান করে বললাম,

—-” কি করেছি আমি?”

ওমনি শুভ্র আমার আরেকগালে থাপ্পর মেরে বললো।”

—-” বিয়ের আগে তুই কি করে প্রেগন্যান্ট হলি বল? এতো নোংরা একটা কাজ কি করে করলি তুই? বল এই বাচ্চার বাবা কে?” তোকে আমি ভাল ভেবেছিলাম কিন্তুু তুই এত খারাপ? কি হলো বল কে এই বাচ্চার বাবা?”

আমার বুক ফেটে কান্না আসছে। এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। জীবনে কোনদিনও ভাবিনি আমি। আমার বাচ্চাকে নিয়ে প্রশ্ন উঠবে কে ওর বাবা? আর এই প্রশ্নটা কে করছে? আমার স্বামী আর আমার বাচ্চার বাবা। চেঁচিয়ে বলতে ইচ্ছে করছে। এই বাচ্চার বাবা তুমি শুভ্র। কিন্তুু কি করে বলবো আমি? ডক্টর যে বলেছে শুভ্রকে চাপ না দিতে,

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে