ছোটঘরের ভালোবাসা পর্বঃ ০১

0
2055

ছোটঘরের ভালোবাসা পর্বঃ ০১

– আবির খান

মাঃ বাবা আবির, সাবধানে যাস বাবা। রাস্তায় কারো দেওয়া কিছু খাবিনা, ব্যাগটা সাবধানে রাখবি আর পৌছে আমাকে ফোন দিবি। ঠিক আছে??

আবিরঃ মা, তোমাকে ছেড়ে একা যেতে ইচ্ছা করছে না। তুমিও সাথে চলোনা।

মাঃ না রে বাবা, এখানে তোর বাবার শেষ স্মৃতিটুকু আছে। ওই যান্ত্রিক শহরে আমার দম কেমন জানি বন্ধ হয়ে আসে। তার চেয়ে বাবা তুই ওই শহরে তোর পড়াশোনাটা ভালো করে শেষ কর। কারণ আমাদের এ গ্রামে তোর মতো মেধাবী ছেলের ভালো পড়াশোনা হবে না। তাই তোকে ঢাকা পাঠাচ্ছি।

আবিরঃ মা আমার একা যেতে ইচ্ছা করে না। (অসহায় কণ্ঠে)

মাঃ না বাবা এমনটা বলে না, তোকে যে অনেক বড় হতে হবে। মানুষের মতো মানুষ হতে হবে, তোর বাবা আর আমার মুখ উজ্জ্বল করতে হবে। আর তা তুই ঢাকায় গেলেই পারবি। শোন তোর চাচার সাথে কথা হয়েছে সে স্টেশনে থাকবে। তুই পৌছানোর আগে তারে একটা ফোন দিস।

আবিরঃ আচ্ছা মা। তাহলে আমি এখন যাই। তুমি দোয়া কইরো। আর নিজের ঠিক মতো যত্ন কইরো। আর ফোনটা সব সময় কাছে রাইখো।

মাঃ আচ্ছা আচ্ছা। তুই এতো চিন্তা করিস না। নিজের খেয়াল রাখিস, ঠিক মতো খাবার খাস। (কাদো কণ্ঠে)

আবিরঃ আচ্ছা মা। (কেদে দেয়)

মাকে জরিয়ে ধরলো….

মাঃ বোকা কাদিস নাহ। (মাও কাদছে)

আবিরঃ তুমিও কেদো না। তোমার কান্না সহ্য হয়না।

মাঃ আচ্ছা আর কাদবো না। এখন রওনা দে বাবা।

আবিরঃ মা যাই তাহলে।

মাঃ বল আসি।

আবির তার মাকে বিদায় দিয়ে রওনা দিলো ঢাকার উদ্দেশ্যে। কারণ আবির তার গ্রাম থেকে এবার সবচেয়ে ভালো ফলাফল করেছে ইন্টারে। পুরো গ্রামে সে একাই প্রথম হয়েছে। গ্রামে ভালো ভারসিটি না থাকায় আবিরকে মায়ের কথায় পাড়ি দিতে হচ্ছে ঢাকায়। সেখানে তার আপন চাচার কাছে থাকবে বলে ঠিক হয়। আবির ট্রেনে করে রওনা দিলো ঢাকার উদ্দেশ্যে। চলুন এইফাকে জেনে আসি কে এই আবির।

আবির এবার ইন্টার পরীক্ষা দিয়েছে। সবার চেয়ে খুব ভালো রেজাল্টও করেছে। আবির খুবই মেধাবী। তবে তার পরিবারটা খুবই গরিব। বাবার শেষ ভিটাটাই তাদের শেষ সম্বল। বাবা মারা গিয়েছেন ৬ মাস হয়েছে। অর্থের অভাবে ভালো চিকিৎসা পাইনি বলে আবিরের বাবা পরলোক গমন করেছেন। আবিরের এখন শুধু মাই আছে চার কুলে আর কেউ নেই। আবিরের মা চান তার তার ছেলে অনেক বড় হোক। তাই আবিরকে ঢাকায় পাঠিয়েছে পড়ালেখার জন্য। আবিরের মেধা ভালো থাকায় তার মায়ের বিশ্বাস সে পাবলিকে খুব সহজেই চাঞ্চ পেয়ে যাবে। তার মায়ের স্বপ্ন, আবির ভালোভাবে শিক্ষা গ্রহণ করে অনেক বড় হয়ে ওদের গ্রামের মানুষদের পাশে দাঁড়াবে তাদের সাহায্য করবে ফ্রীতে। আবিরও সেই স্বপ্ন বুকে বেধে পাড়ি দিচ্ছে ঢাকায়।

বিকেল ৫ টা,
আবির ঢাকা গিয়ে পৌছায়। আবির স্টেশনে দাড়িয়ে অপেক্ষায় আছে তার চাচার। ওর চাচার সাথে কথা হয়েছে উনি আসছেন। একটু পরেই আবিরের কাধে কে যেন হাত রাখে। আবির তাকিয়ে দেখে তার চাচা। চাচা আবিরকে দেখে খুশিতে জরিয়ে ধরে।

চাচাঃ কেমন আছিস রে?? আসতে কোন সমস্যা হয় নাইতো??

আবিরঃ না চাচা, কোন সমস্যা হয় নায়। আমি ভালোই আছি। আপনে ভালো আছেন??

চাচাঃ হ্যা আমিও ভালো আছি। এখন চল বাসায় যাবি।

আবিরঃ হুম চলেন।

আবিরকে নিয়ে চলে গেলেন ওর চাচা তাদের বাসায়। ২ ঘন্টা লাগলো পৌছাতে। কি জ্যাম রাস্তা ঘাটে। আর গাড়ির কি শব্দ। আবিরের খুব অসস্থি লাগছে এসব। আসলে নতুনতো তাই।

চাচার বাসায়,
চাচাঃ আবির বাবা এই হলো আমাদের বাসা। রুমি…এই রুমি দেখো কে এসেছে।
অন্যঘর থেকে রুমি চাচি আসলেন সাথে একটা ১৬/১৭ বছরের একটা মেয়েও আসলো।

আবিরঃ আসসালামু আলাইকুম চাচি।

রুমি চাচিঃ হুম আলাইকুম আসসালাম। যাও ফ্রেশ হয়ে আসো তোমরা। (কর্কশ কণ্ঠে)
চাচি রান্না ঘরে চলে গেলো।

আবিরের মনে হলো চাচি আবিরকে দেখে খুশি হয়নি।

চাচাঃ কিছু মনে করিস নাহ তোর চাচির ব্যবহারে ও এমনি। আচ্ছা ওকে চিনতে পারছিস? (মেয়েটিকে দেখিয়ে)

আবিরঃ নাতো চাচা, ও কে??

চাচাঃ বোকা ও আমার মেয়ে মায়া। এবার ১০ এ পড়ে।

আবিরঃ ওহ। অনেক বড় হয়েগিয়েছে।

মায়াঃ ভাইয়া আপনার নাম কি?

আবিরঃ আমার নাম আবির।

মায়াঃ ওকে।

চাচাঃ মা আবিরকে ওর রুমটা দেখিয়ে দেও। আর ওর কিছু লাগলে দিও।

মায়াঃ আচ্ছা বাবা। ভাইয়া আসেন।

আবির মায়ার পিছে পিছে যায়। চাচার বাসাটা ৩ বেডরুম আর ১ টা ডাইনিং রুমের…একটায় চাচা চাচি আরেকটায় মায়া আরেকটা আমাকে দিয়েছে। আমার রুমটা খুব সুন্দর করে গুছানো। তবে রুমটা কিছুটা ছোট। তবে আবিরের বেশ চলে যাবে।

মায়াঃ এটা আজ থেকে তোমার রুম ভাইয়া। আমি তোমার জন্য গুছিয়ে দিয়েছি। কিছু লাগলে আমাকে বলো। পাশের রুমটাই আমার।

আবিরঃ আচ্ছা। আর ধন্যবাদ তোমাকে, এতো সুন্দর করে গুছানোর জন্য।

মায়াঃ আরে ও কিছু না। তাহলে আমি এখন যাই। তুমি রেস্ট নেও।

আবিরঃ আচ্ছা।

মায়া চলে গেলে আবির বিছানার শরীরটা ছেড়ে দেয়। বড্ড ক্লান্তি লাগছে। কিন্তু তার আগে মাকে ফোন দিয়ে জানাতে হবে যে সে পৌছে গেছে। আবিরের মাটা একটু বেশিই চিন্তা করে ছেলেকে নিয়ে। তা আবির ভালো করেই জানে।
আবির ওর বাবার পুরোনো বাটন ফোনটা বের করে মাকে ফোন দেয়।

আবিরঃ হ্যালো মা।

মাঃ বাবা তুই পৌছেসিস??

আবিরঃ হ্যা মা আমি এইমাত্র চাচার বাসার আসলাম। তোমার কোন সমস্যা হচ্ছে নাতো??

মাঃ না বাবা আমি ভালো আছি। শুধু ততোর কথা মনে পরছে রে। (কাদো কণ্ঠে)

আবিরঃ থাক কেদো না মা। তোমাকে খুব তারাতাড়িই এখানে নিয়ে আসবে। মাকে ছাড়া কি সন্তান একমুহূর্তও থাকতে পারে বলো??

মাঃ সে দেখা যাবে নে। আগে তুই ভারসিটিতে চাঞ্চ পা। আর বাবা একটা কথা কখনোই ভুলে যাস না, তোর বাবার আর আমার স্বপ্ন যেন পূরন হয়। অন্য কোন দিকে মন দিবি না।

আবিরঃ মা তোমাদের স্বপ্ন পূরনই এখন আমার জীবনের প্রধান উদ্দেশ্য।

মাঃ হুম বাবা, তোর উপর আমার অনেক আস্থা আছে। তুই অবশ্যই পারবি।

আবিরঃ মা রাখি তাহলে। দোয়া করো আমার জন্য।

মাঃ আচ্ছা করবো নে। তুই নিজের যত্ন করিস আর তোর চাচা-চাচির খেয়াল রাখিস। তারা যেভাবে বলে সেই ভানেই চলিস।

আবিরঃ আচ্ছা মা রাখি।

আবির একরাশ বুক চাপা কষ্ট নিয়ে ফোনটা রেখে দিলো। এরপর ফ্রেশ হয়ে একটা ঘুম দিলো। ঘুম ভাংলো কারো ডাকে…

মায়াঃ ভাইয়া ও কিউট ভাইয়া উঠো। আর কত ঘুমাবে??রাতে খাবে না?? মা-বাবা যে ডাকছে।

আবির মায়ার ডাকে তারাতাড়ি ঘুম থেকে উঠে পরে।

আবিরঃ হ্যা হ্যা বোন উঠছি।

মায়াঃ জানো ভাইয়া তোমাকে ঘুমন্ত অবস্থায় কি যে কিউট্টাই না লাগে উফফ। আর আমাকে বোন বলো কেন!! মায়া বলবা মায়া।

আবির মায়ার কথা আগাগোড়া কিছু বুঝে না। তাই ওকে পাঠিয়ে দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়।

খাবার টেবিলে,
চাচাঃ বাবা আবির কালকে থেকে ভারসিটিতে ভর্তিকার্যক্রম শুরু হচ্ছে। তুই সকালে রেডি থাকিস আমরা ফর্ম জমা দিতে যাবো।

আবিরঃ আচ্ছা চাচা। আপনাকে আর সবাই অনেক ধন্যবাদ আপনারা আমার স্বপ্ন পূরনে এতো বড় সাহায্য করছেন আমাকে।

চাচিঃ খালি ধন্যবাদ দিলে হবে না। মায়াকেও পড়াতে হবে। ফ্রী ফ্রী আমরা কাউকে রাখি না বাপু।

চাচাঃ রুমি তুমি থামবে।

আবিরঃ আরে চাচা এতে কোন সমস্যা নেই। চাচি আমি মায়াকে পড়াবো আপনি যা বলবেন তাই হবে।

এরপর আবির লেগে যায় ভর্তি যুদ্ধে। অনেক পড়াশোনা করে পরীক্ষা দিয়েছে। এবং তার ফলস্বরূপ সে ভর্তি পরীক্ষায়ও প্রথম হয়ে চাঞ্চ পেয়েছে ভারসিটিতে। সাথে সাথে তাকে তার পড়াশোনার সব খরচও মওকুফ করে দিয়েছে ভারসিটি কতৃপক্ষ। আবির আর ওর মা অনেক খুশি সাথে চাচাও। কাল প্রথম ক্লাসে যাবে আবির।

চলবে… ?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে