চাঁদের_আলোয়_জোছনা_ভাঙ্গে পর্ব ৫০

1
2249

চাঁদের_আলোয়_জোছনা_ভাঙ্গে পর্ব ৫০
লেখা আশিকা জামান

জানালার পর্দা েগলে আবছা আলো অনন্যার চোখে মুখে পড়ছে। আলো আধারিতে নিঃসঙ্গ বসে থাকতেই আজ ভালো লাগছে। অনেকদিন নিজেকে সময় দেয়া হয়না। আজ একলা হয়েও কোন সময় নিজের জন্য পাচ্ছেনা।

খুব করে অঙ্কন অঙ্কন পাচ্ছে। সবাই তানভীরের রুমে গল্পে মশগুল। নিন্তান্ত অনাগ্রহে সে সবার সঙ্গ পরিত্যাগ করল। তবুও স্বস্তিনামক বস্তুটা অধরাই রয়ে গেল।
এরমাঝেই ফোন বেজে উঠলো। অঙ্কনের ফোন।
উপাশের নিঃশ্বাসের উঠানামা শুনে বুকে কাপন ধরার অবস্থা।
” অনন্যা, কথা বলছনা কেন? ঘুমিয়ে গেছ।”
” না।”

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/



” তাহলে ভিডিও চ্যাটে আসো।”
” যদি নিনিত এসে পড়ে।”
” তুমি আলাদা রুম বুক করনি?”
” না। করে কী হবে?”
” হ্যাঁ, সেটাই-তো কী হবে? কিচ্ছু হবার নেই। আমি ভিডিও কল দিচ্ছি।”
এর কয়েক সেকেন্ড পরেই মেসেঞ্জারে কল আসে।
উপুড় হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে অঙ্কন। মুখটা বড় মলিন শুষ্ক দেখাচ্ছে।
” তুমি কী ক্লান্ত! অমন করে শুয়ে আছো কেন?”
” হ্যাঁ, খানিকটা।
এরকম মুখ গোমড়া কেন তোমার?”
” জানি না।”
” সবার সাথে আড্ডা দিতে পারতে। এভাবে একা একা দুঃখবিলাস করার কী মানে?”
” কারো জন্যে দুঃখবিলাস করতে আমার বয়ে গেছে।”
” মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে। এরকম করে মাথার উপর খোঁপা করে আছো কেন? চুল খুলো!”
অনন্যা দুই হাত উঁচু করে খোঁপা খুলতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে। এদিকে কোমড় সমান স্কার্টের উপরের অংশ উঠে গিয়ে ফর্সা পেট আর নাভীর কিয়দংশ দেখা যাচ্ছে।
” চুল দেখতে চেয়েছি। অন্যকিছু দেখতে চাইনি।”
অনন্যা ঝড়ের গতিতে নিচের দিকে তাকায়। দুই হাতে টপ্স টেনে নিচের দিকে নামায়। ফের অঙ্কনের দিকে লাজুক চোখে তাকায়। অঙ্কনের চোখে মুখে তখন দুষ্টুমির আভাস।
” অসভ্যের মত তাকিয়ে আছ কেন? চুল দেখো চুল!”
” সেধে সেধে দেখালে খামোকা চোখ বন্ধ করে থাকব কেন? ভালো লাগছিলো তো আবার একটু তোল!”
” নো চান্স। আমি সেধে সেধে দেখাই তাই না! যা হয় সব সেধে সেধে! এই যে তুমি আমাকে বিয়ে করেছো এটাও আমি সেধেছি তুমি নিরুপায়। আমাকে কষ্ট করে ভালোবেসেছো এটাও সেধে সেধে! এভ্রিথিং সব আমি চেয়েছি তাই।”
অনন্যা মুহুর্তেই ফোন বন্ধ করে শান্ত হয়ে বসে থাকল।

★★★

এই সামান্য কথার এভাবে অন্য মিনিং অনন্যা বের করবে এটা অঙ্কনের মাথাতেই ছিলনা। রাগে দুঃখে নিজের মাথার চুল নিজেরই ছিড়তে ইচ্ছে হচ্ছে। একবার ইচ্ছে হচ্ছে অনীহা বা তানভীরকে ফোন করে অনন্যাকে চাইবে। পরক্ষণেই মনে হলো ছোট ভাই বোনের জেরার মুখে পড়া এক অন্যরকম অস্বস্তি, বিড়ম্বনা। সঙ্কোচ আর দ্বিধায় সে বিছানায় হাত পা ছুড়ে শুয়ে পড়লো। মাঝে মাঝে কষ্টটা বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যায়। অনন্যা যখন তাকে বুঝতে পারেনা, ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে তখন ভেতরে জ্বলে পুড়ে খাঁক খাঁক করে। ইচ্ছে করে ছুটে যেতে।
দরজা নক হওয়ার শব্দে অঙ্কন ধাতস্থ হয়ে বিছানায় উঠে বসে। চোখের কোণে জলের আভাস স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। বাঁ-হাতে জল মুছে গলাটা মৃদু কেঁশে ঠিক করে নেয়।
দরজা খুলে মুখটা আরও দ্বিগুন বিরক্তিতে ভরে যায় অঙ্কনের। বিরক্তি না শামলাতে পেরে বলেই ফেলে,
” তুমি?”
” কেন, আসতে মানা।” চেলসিয়া অঙ্কনকে ধাক্কা দিয়ে সুরসুর করে রুমে ঢুকে।
” এতরাতে আমার রুমে কী?”
” আমি এর অাগেও তোমার রুমে বহুবার এসেছি। এত অবাক হচ্ছো যে!”
” অবাক হচ্ছি এই জন্যে যে, তুমি ঠিক আগের মত নেহাৎ ভালমানুষটি আর নেই। তখন আমি তোমাকে একজন জুনিয়র আর্টিস্ট হিসেবে যতটুকু সাপোর্ট দেবার দরকার দিয়েছি। এরমানে তুমি আমার গলায় ঝুলে পড়তে চাইবে এমনটা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি। আর কাজের ক্ষেত্রে আমরা যে রোল প্লে করে থাকিনা কেন তোমাকে আমি আমার ছোট বোনই ভাবতাম। তুমি যে এতোটা ডেস্পারেট হবে আই ক্যান’ট ইমাজিন! ”
” ওহ্ রিয়েলি। তা তোমার তো এক ঢিলে দুই পাখি মারা হচ্ছে। প্লিজ ক্যারি অন।”
চেলসিয়া বিছানার উপর বসে পা নাচাতে নাচাতে বলল।
” মানে?”
” হানিমুন, শ্যুটিং দুইটাই চলছে। নাহ্ এই খবরটা তো জানা ছিলনা। তাই তো বলি হুট হাট উধাও হয়ে যাও কোথায়? শ্যুটিং এর সময়টুকু ছাড়া তো তোমার টিকিটাও কেউ পাচ্ছেনা। আমি নেহাৎ ভালো মানুষ তাই এখনো পাঁচ কান করিনি। খালি তুমিই দাম দিলেনা।”
অঙ্কনকে কিছুটা চিন্তিত দেখাল। বিষন্ন মুখে বলল,
” তুমি এখন যাও প্লিজ। আমার ভালো লাগছেনা চেলসিয়া।”
” আমারও লাগছেনা। একদিন কী তুমি আমার হতে পারোনা।”
অঙ্কনের চোয়াল মুহুর্তেই শক্ত হয়ে গেল,
” আই সে গেট লস্ট! এই ছবিটিই হচ্ছে তোমার সাথে জুটি বাধার লাস্ট ছবি। কথাটা মাথায় রেখ।”
প্রত্যুত্তরে চেলসিয়া রেগে যাওয়ার বদলে হো হো করে হাসতে লাগল। অঙ্কন বুঝে উঠতে পারেনা এমন অভদ্রের মতন হাসার কী মানে!
” এভাবে হাসছো কেন? আমি কী হাসির কথা বলেছি।”
” হ্যাঁ বলেছো তো! এলিজেবল ব্যাচেলর সুপারস্টার অঙ্কন চৌধুরী আপনি কী সেই সুযোগটা পাবেন!”
চেলসিয়া আবার হাসতে লাগল। অঙ্কন চেলসিয়াকে হাত ধরে বের করে দিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয় শব্দ করে। মাথাটা ঘুরছে। অনন্যার ফোনে ফোন দিয়ে যখন অনন্যাকে পায়না। তখন রাগে দুঃখে নিজের ফোনটাই ছুড়ে মারে। চৌচির হয়ে ফেটে যাওয়া স্কিনের দিকে তাকিয়ে অঙ্কনের রাগ দুঃখ যেন কিছুমাত্র কমলো।

★★★
পরদিন সবাই পোখরা সিটি ট্যুরে বের হল। রাতেই হোটেল ম্যানেজারকে বলে ৬০০ রুপি করে ট্যুরিস্ট বাসের টিকেট কাটিয়ে নিয়েছিল। সকাল দশটায় গাড়ি হোটেলের সামনে চলে এলো। সব হোটেল থেকে এভাবে পর্যটকদের নিয়ে চললো পুরো পোখরা দেখার উদ্দেশ্যে।
ওঁদের সাথে সেই কালো কুচঁকুচেঁ সিল্কি চুলেত জাপানি ছেলেটাও ছিল। ওটাকে দেখে নেহার মাথায় আবার ভুত চেপে বসল। অনন্যাকে বারবার ঠ্যালতে লাগল ওর একটা ব্যাবস্থা করে দেয়ার জন্য। এমনিতেই মুড ঠিক ছিলনা তার উপর এই মেয়ের যন্ত্রণায় অনন্যার পাগলপ্রায় অবস্থা।
” তুই নিজে গিয়ে কথা বলনা।”
” সাদা বিলাইতো আমারে পাত্তাই দিচ্ছে না।”
” একটু ধৈর্য্য ধরে চেষ্টা কর। ” অনন্যা বিরক্ত হয়ে নিনিতের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।

প্রথমেই নিয়ে গেলো বিন্দাবাসীনী মন্দিরে। গিয়ে দেখে ওখানে বিয়ে হচ্ছে। বর কনের সাথে ছবি তোলায় সবাই ব্যাস্ত হয়ে পড়ল। ঠিক তখনই জাপানি ছেলেটাকে ফোন হাতে নিয়ে কিছু একটা করতে দেখা গেল।
নেহা একছুটে চলে গেল ছেলেটার কাছাকাছি।
” এক্সিউজ মি! কেন উই গুড ফ্রেন্ডস! ”
ছেলেটা ঘুরে তাকায়। ভিডিও চ্যাটে ছিল ফোনের স্ক্রিনে একটা জাপানিজ মহিলা সাথে বেশ বড় দু’টো ছেলে মেয়ে দেখা যাচ্ছে। নেহাকে দেখেই ওপাশ থেকে চাইনিজ ভাষায় কিছু বলা হলো। যার আগা মাথা নেহার বুঝার কথা নয়। ওর কেবল মাথায় ঘুরছে ওই মহিলা আর বাচ্চা দু’টো কার? প্রেম করার আগেই কী সে ছ্যাকা খাবে নাকি! কিছু ভাবতে পারছেনা।
” হু’জ দ্যা লেডি!” ততক্ষণে জাপানিজ ছেলেটা তার ভিডিও চ্যাট অফ করেছে। নেহার দিকে তাকিয়ে চোখ বড়বড় করে বলল,
“মাই ওয়াইফ এন্ড চাইল্ড।”

নেহার মনে হলো মাথায় হাত দিয়ে তখনই বসে পড়বে। দেখেতো মনেই হয়না বিয়ে হয়েছে এর আবার দুই বাচ্চা। সে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে।
পিছন থেকে লোকটা ডেকেই চলেছে,
” হেই! বিউটিফুল লেডি!…. ”
নেহা মনে হয়না আর কোন উত্তর দেবে।

এরপর ওরা গেল মাহেন্দ্র ক্যাভ । ওটা একটা বিশাল গুহা। ভেতরে লাইট ফিট করা। পুরো একটা এডভেঞ্চার হয়ে যাবে ওটার ভেতরে। গা শিউরে ওঠার মতো অবস্থা। ভিতরে ঢুকতে একটি গাইড ও জনপ্রতি একটি টর্চ লাইটের প্রয়োজন পড়ল। গুহার ভেতরে মহাদেবের মূর্তি স্থাপন করা। এটি তাদের উপসানলয়ও বটে। পায়ের নিচে বড় বড় পাথর, স্বল্প আলো, হাতে টর্চ আলো আঁধারিতে গা ছমছমে অবস্থা।

তারপর যাওয়া হলো ব্যট ক্যাভ। ওখানে ঢুকতে প্রতিজন ৩০ রুপি। আর একটা চার্জলাইট ভাড়া নিতে হয়। তার জন্য ৫০ রুপি। ভিতরে আরও ভয়াবহ অবস্থা। অনেক অন্ধকার। ওঁদের মনে হলো কবরে ঢুকেছে। ভেতরে বাদুর বসে আছে এক ঝাক।ভেতরে অসংখ্য বাদুড় দেখে ওঁদের চক্ষু ছানাবড়া। অনীহা বাদুড় খুব পায়। ভয়ে তানভীরের হাত জড়িয়ে রাখল।
এক দিক দিয়ে ঢুকে অন্যদিক দিয়ে বেরোতে হয়।

মাঝখানে লাঞ্চ বিরতি সবাই খেল চওমিন।
পুরো নেপাল জুড়ে ভোদকা সহ যে সব ধরনের বিদেশী মদ এভেইলেভল। অলি গলিতে এসবের দোকান প্রচুর।

এরপর বাস নিয়ে গেলো বেগনাস লেক। ওখানে বোটে চড়ে ঘুরা যায়। তবে দাম অনেক।

এরপর বাস গেলো আরেকটা গুহার সামনে।

সর্বশেষ যাওয়া হলো ডেভিডস ফল এ। বিশাল একটি প্রাকৃতিক ঝর্ণা আছে ওখানে। সবাই ছবি তোলায় ব্যাস্ত হয়ে পড়ল। সাইমুন উচ্চস্বরে সবাইকে লক্ষ্য করে আকাশের দিকে তাকাতে বলল। অনন্যা বিস্মিত হয়ে গেল আকাশে খুবই মোহনীয় এক রংধনু দেখে।
সাইমুন ব্যাপারটা লক্ষ্য করে বলল,
” এই রংধনু কীভাবে তৈরি হলো কেউ বলতে পারবি?”
কেউ বলতে পারল না।
” এই ডেভিড ফলসটা মূলত ফেওয়া লেকের পানি, ঝর্নাধারার মত নেমে এসেছে। যখন পানির প্রবল চাপ থাকে ধর বর্ষাকালে বেশি হয়। উপর থেকে পানি পড়ে তা জলকণার মত বাষ্প হয়ে উড়ে যায় আর সূর্যতাপে রংধনু হয়ে চোখে পড়ে।”

ওখান থেকে বের হয়ে তানভীর দোকানে গিয়ে পেল প্রাণের চিপস। দেশী প্রোডাক্ট দেখে মনটা যেন নেচে উঠলো। বাংলাদেশের পণ্য এখানেও পাওয়া যায় খুশিতে সে সবার জন্যই কিনে নিল।

সেদিনের মতো ভ্রমণ শেষ করে ওরা হোটেলের পথে রওয়ানা দিল। এরমাঝেই তানভীরের ফোন বেজে উঠলো। কথা বলা শেষ করে এক অজানা আনন্দে মুখটা ভরে গেল। বারবার চোখ ট্যারা করে অনন্যার দিকে চেয়েছিল। অনন্যা তানভীরের এহেন রুপ দেখে রাগে দুঃখে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে রাখল।
চলবে…

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

1 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে