চাঁদের_আলোয়_জোছনা_ভাঙ্গে পর্ব ২৯

0
2258

চাঁদের_আলোয়_জোছনা_ভাঙ্গে পর্ব ২৯
লেখা আশিকা জামান

জাভেদ প্রায় আধা ঘন্টা যাবৎ প্রত্যেকটা রুম ঘুরে ঘুরে দেখছিল। কারো রুমে ঢুকতে হলে পারমিশন নিয়ে ঢুকতে হয়।

এই নুন্যতম সেন্স টুকু তার নেই। অন্বেষা বিছানায় আধশোয়া হয়ে পড়ছিলো সেখানেও সে উদ্ধতভাবে ঢুকে গেছে।
যারপরনাই অন্বেষা ভয় পেয়ে মায়ের আঁচল ধরে দাঁড়িয়ে আছে।

অনীলা ড্রয়িংরুমের এক কোণে বিষন্ন মুখে বসে আছে। জাভেদের কীর্তিকলাপ মোটেও সুবিধের লাগছে না। কি চায় সে? কেন এসেছে এত বছর পর!
নুরী এসে দাঁড়ায় নিঃশব্দে, তবে হাতে ধরা ট্রের উপর কাপ পীরিচে ঠুকা লেগে শব্দ হয়। অনীলা পেছনে তাকায়।
” চা এসে গেছে! খেয়ে বিদেয় হও। যাই হয়ে যাক না কেন, অতিথিকে খালি মুখে বিদেয় দেওয়ার রেওয়াজ এই বাড়িতে নেই।” অনীলা উঠে দাঁড়ায়।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/



” তা, নিয়ম টা কি নতুন! না আগে এমন ছিল বলে তো মনে হয় না। সে যাক গে, পরের টাকায় ফুঁটানি করতে তো আর গায়ে বাজে না।” জাভেদ চা হাতে নিতে নিতে বলল।

অনীলা নুরীকে ধমকিয়ে উঠলেন,
” সঙ সেজে দাঁড়িয়ে আছিস কেন! কাজে যা।”
আজকাল কাজের মেয়েটার ও বাড় বেড়েছে। প্রায়শই দেখা যায় আড়ি পাতছে। মনে মনে বেশ বিরক্ত হয়ে উঠলেন।

” অন্বেষা ঘরে যাও।”
মেয়ে চলে যেতেই অনীলা জাভেদের দিকে চোখ তুলে তাকায়।
” কিসের ফুটানি? জাভেদ এইসব কি ধরনের কথাবার্তা। ”

জাভেদ তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে ড্রয়িংরুমের চারপাশে আরও একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে বলল,
” নাহ্ ভালোই তো ঘর বাড়ি সাজিয়েছেন! বিদেশী ফার্নিচারে চারপাশ সয়লাব। আর হবেই তো সুপারস্টার অঙ্কন চৌধুরীর বাড়ি বলে কথা। ”

” খবরদার জাভেদ, অঙ্কনের নাম ও তুমি নেবে না।” অনীলা ঝাঁঝালো গলায় বলল।
ইমতিয়াজ কে সেই কখন টেক্সট করেছেন এখন পর্যন্ত আসার নাম গন্ধ ও নেই। এই স্কাউন্ডেল টা ঠিক আর কতক্ষণ এখানে থাকবে কে জানে! যে ভাবেই হোক এই নিকৃষ্ট লোকের ছায়া অঙ্কনের উপর কিছুতেই পরতে দেবে না। মনে মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়ে উঠে।

” কেন, পাঁপ হবে পাঁপ!” জাভেদ হো হো করে হেসে উঠল।
তারপর চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলল,
” আমার অনুমতি ব্যাতিত আমার ছেলের বিয়ে ঠিক করতে তোমাদের পাপবোধ হলো না। আমাকে জানানোর প্রয়োজন বোধ ও করলে না।”

” অঙ্কন, আমাদের ছেলে। ও তোমার ছেলে হলো কবে থেকে! খবরদার এই হাস্যকর দাবি নিয়ে আর কোনদিন ও আসবে না। গেট লস্ট। এক্ষুনি বেরিয়ে যাবে।”

” জোর করে সত্যিটা বদলে দেওয়া যায় না। সত্যিটা সত্যিই থাকে। আমি আমার ছেলের কাছে এসেছি তোমরা বললেই চলে যাব না। কই সে?”

” অঙ্কনের সাথে তোমার দেখা হবে না। আর কি হাস্যকর ছেলের কাছে এসেছি! তা এই বাইশ বছরে কি ছেলের খুঁজ নিয়েছিলে? কেবল জন্ম দিলেই পিতা হওয়া যায় না।”

” তাই নাকি! বাইশ বছর নেই নি বলে যে এখনও নিব না এর কোন মানে নেই। আমি যে কোন সময় আমার পিতৃত্বের দাবি করতে পারি, সেই রাইট আমার আছে।”

” না, তোমার মত খুনির কারো বাবা হওয়ার অধিকার নেই। তানিয়া কে তিলে তিলে মেরেও তোমার শান্তি হয় নি! তানিয়া মৃত্যু সয্যায় অঙ্কনকে আমার হাতে তুলে দিয়েছিল আমার জীবন দিয়ে হলেও আমানত আমি রক্ষা করবই।”
অনীলার মাথাটা অসহ্য যন্ত্রণায় ফেটে যাচ্ছে। দুই হাতে মাথা চেপে ধরে সোফায় বসে পরেন।

” আমি তানিয়াকে মেরেছি এই টপিক টা তো আদালতে প্রমাণ করতে পার নাই। আর আমার আর জেসমিনের পরকীয়া সম্পর্ক ও প্রমাণ হয় নাই। আর বউ মরার পর বিয়ে আমি করতেই পারি। তাহলে এই অযৌক্তিক দাবীর জন্য কিন্তু আমি মানহানির কেস করতে পারি।”

” ও তাই না-কি? তোমার মান সম্মান আছে না কি?”

জাভেদ অগ্নি চোখে তাকায়। অনীলা শুষ্ক ঠোঁট ভেজাতে ভেজাতে বলল,
” চোখ নামিয়ে কথা বল। তোমার ভাই এ এস পি জীবন সমস্ত এভিডেন্স নষ্ট করে, স্টেটমেন্ট বদলে দিয়ে প্রশাসনকে ঘুষ খাইয়ে মামলায় জিতেছিলে। সেসব কারো অজানা নয়। আজ এত বছর পর সেসব প্রসঙ্গে আমি টানব না। তাই বলে অঙ্কনের দিকে তুমি হাত বাড়াবে সেটা আমি মেনে নিব না।”

” হ্যাঁ অবশ্যই মেনে নিতে তো কষ্ট হবে। কিন্তু ভাবি সাহেবা, কষ্ট হলে আর কি করার বলুন। এই যে আমার ছেলের ঘাড় ভেঙে আপনারা লাক্সারিয়াস লাইফ লিড করছেন এটাও মেনে নিতে আমার কষ্ট হয়। ”

” শাট আপ জাভেদ, অঙ্কনের টাকা পয়সায় আমরা হাত দেই না। অযৌক্তিক কথা বলবা না। আর অঙ্কনের টাকা পয়সা যদি আমার প্রয়োজনে ব্যাবহার করেও থাকি তাতে তোমার লাগে কেন?”

” অঙ্কন আমার ছেলে। আমার প্রতি ওর দায়িত্ব আছে। সেই দায়িত্ব কর্তব্য ওকে পালন করতেই হবে।”

” হ্যাঁ অবশ্যই যেই অঙ্কনের টাকা হয়েছে অমনি বাবা হওয়ার শখ জেগেছে। তোমার থেকে এর থেকে বেশি আর কি আশা করা যায়। জাভেদ প্লিজ তুমি চলে যাও। আমাকে একটু একা থাকতে দাও।”
ছেলেটা কাল রাত থেকে বাড়ি নেই। কি অবস্থায় কিভাবে, কোথায় আছে, কে জানে! তার উপর মরার উপর খাড়ার ঘাঁ এই ইতর লোকটা! এই লোকটাকে দেখামাত্র অঙ্কনের কি অনুভূতি হবে সেটা ভেবেই অনীলা আরও দ্বিগুন দূর্বল হয়ে পড়লো। অঙ্কন যতটা স্ট্রং নিজেকে দেখায় ভেতরে ভেতরে ততোটাই দূর্বল। ভেতরে একটা চাপা কষ্ট ছোট থেকেই লালন করে এসেছে অনীলা তা বুঝতে পারে। সেদিনের পর থেকে একবারের জন্যেও এই লোকের কথা অঙ্কন মুখে পর্যন্ত উচ্চারণ করেনি। অনীলা অনেক ভেবেও কূল পায় না।
হঠাৎ অনীলার ধ্যানভঙ্গ হয় চেনা পায়ের শব্দ শুনে। অঙ্কন দাঁড়িয়ে! কখন এসেছে, কতটা শুনেছে? দ্বিধাগ্রস্ত চোখে অনীলা ছেলের মুখপানে তাকায়।

” বাবা, আমার কত্ত বড় হইয়া গেছোস! কি খবর আব্বা! সব ভালো তো।”
জাভেদ উচ্ছ্বসিত গলায় বলল।

” কেন এসেছেন! মা উনাকে চলে যেতে বলো। এক্ষুনি বলো।”

অনীলা ছেলের পিঠে হাত বুলায়,
” বাবা একটু শান্ত হ।”

” ছিঃ ছিঃ বাপকে কেউ এইগুলা বলে। আমি মনে কিছু নেই নাই। তোমার মামা মামী নিশ্চয়ই এইগুলা শিখাইছে। তোমার আর কি দোষ। বাবা, আমি তোমার কাছে পিতৃত্বের দাবি নিয়া আসছি। আসো বাপের বুকের আসো।”

অঙ্কন উত্তেজনায় নিজের মাথার চুল নিজেই ছিড়তে লাগল। গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে চিৎকার করে বলল,
” আমি ইমতিয়াজ চৌধুরীর একমাত্র ছেলে এটাই আমার পরিচয়। আর অতীতের সেই কালো অধ্যায় আমি বাল্যকালেই মুছে ফেলেছি। আমার ফুলের মতো নিষ্পাপ মা, মারা যাওয়ার সাথে সাথে আপনার সাথে সব সম্পর্ক ও চুকে বুকে গেছে। প্লিজ কোন খুনীর বুকে ঝাপিয়ে পরা এজন্মেও সম্ভব নয়। যান বেরিয়ে যান।”

” আমি তোমার জন্মদাতা পিতা! আমি চেয়েছি বলেই তুমি পৃথিবীর আলো দেখতে পেয়েছিলে। এই ঋন তুমি জীবনেই শোধ করতে পারবে না। আবার বড় বড় কথা শিখেছো।”

অঙ্কন লম্বা লম্বা পা ফেলে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ায়। জাভেদ হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে। তার ঠিক মিনিট পাঁচেক পর অঙ্কন হাতে ধরা একটি চেক নিয়ে জাভেদের মুখোমুখি দাঁড়ায়।

” আপনি এত বছর পর ঠিক কেন এসেছেন তা আমার অজানা নয়। চেকটা ধরুন এতে মনে হয় আপনার এখনকার প্রয়োজন মিটবে। দয়া করে চেকটা নিয়ে বিদেয় হোন।”

জাভেদ চেকটা লুফে নেয়। ইদানীং ব্যাবসায় মন্দা যাচ্ছে। যাক কাজের কাজ কিছু হয়েছে।
তবে মুখে বলল,
” এসবের কোন দরকার ছিল না। তবে তুমি ছেলের কর্তব্য করলে তো আর বাধা দিতে পারি না। দেখো ব্যাটা, আমি কেবল তোমার বাবার পরিচয়ে পরিচত হতে চাই আর কিছু চাইনা।”

” আপনি আমার বাবা এটা যতবার আমার মনে হয় ততবার ঘৃনা লজ্জায় আমার মরে যেতে ইচ্ছে করে। তার চেয়ে আমাকে মেরে ফেলুন তবুও অতীত মনে করিয়ে দেবেন না।”
কথাটা বলেই অঙ্কন ঝড়ের গতিতে নিজের ঘরে ঢুকে শব্দ করে দরজা লক করে।
অনীলা সেদিকে তাকিয়ে নীরব চোখের অশ্রু বিসর্জন দেয়। ছেলেটা আজ বড় কষ্ট পেয়েছে। এত বছর পর সেই কালো অতীত কেন ফিরে এলো? কি তার উদ্দেশ্য?
চলবে…

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে