গল্প:- দুই_বধূ_এক_স্বামী পর্ব:-(১০)

0
2087

গল্প:- দুই_বধূ_এক_স্বামী পর্ব:-(১০)
লেখা:- AL Mohammad Sourav
!!
দুই বউয়ের অপেরেশন হয়ছে দাঁড়িয়ে চিন্তা করছি কার কাছে আগে যাবো? ছোট বউ তসিবার কাছে যাবো নাকী বড় বউ মীমের অপেরেশন ঠিক ঠাক হয়ছে কিনা দাড়িয়ে শুনবো? ভাবতে ভাবতে পা বাড়িয়েছি তসিবার দিকে তখনি মীমের ডাক্তার বলে।

ডাক্তার:- দেখুন আপনাদের মেয়ের অপেরেশন সবকিছু ঠিক ঠাক মত হয়েছে। তবে এখনো জ্ঞান ফিরেনি ঘন্টা খানেক পরে বলা যাবে। তবে চিন্তার কোনো কারণ নেই একদম ১০০% ঠিক হয়ছে অপেরেশন।

শ্বাশুড়ি:- ঠিক আছে! এখন কি আমরা মীমকে দেখতে পারবো?

ডাক্তার:- হ্যা পারবেন তবে এখনো জ্ঞান ফিরেনি রুমে ঢুকে কোনো আওয়াজ করবেন না। (কথা গুলি শুনে আমি তসিবার রুমে গেলাম। তসিবার কাছে বসে ওর হাতটা ধরেছি তখনি তসিবা বলে)

তসিবা:- আমাকে ক্ষমা করে দিবেন আমি আপনার কাছে অনেক বড় সত্য লুকিয়েছি।

আমি:- হ্যা আব্বা আম্মা আর মীমের বাবা মা সব বলে দিয়েছে।

তসিবা:- মীম কেমন আছে?

আমি:- তুমি ঠিক আছো?

তসিবা:- বলেন মীম কেমন আছে ওর অপেরেশন ঠিক ঠাক হয়েছে তো?

আমি:- তোমার কথায় সত্যি হয়েছে তোমার জমজ বাচ্চা হয়েছে। দেখতে ঠিক তোমার মত সুন্দর আর কিউট হয়েছে।

তসিবা:- কি হলো কথা ঘুরাচ্ছেন কেনো? মীম ঠিক আছে তো ওর কিছু হয়নি তো?

আমি:- এখনো কিছু বলা যাচ্ছেনা মীমের জ্ঞান ফিরবে ঘন্টা খানেক পরে। এখন বলো তুমি কি বলতে চেয়েছো?

তসিবা:- আপনি তো সব যেনে গেছেন এই গুলি বলতাম। আচ্ছা মীম যদি সুস্থ হয়ে যায় তাহলে কি আমাকে আগের মত ভালোবাসবেন?

আমি:- কেনো না তোমাকে ঠিক আগের মত ভালোবাসবো। মীমের কাছে আমার ক্ষমা চাওয়া উচিত।

তসিবা:- সব দোষ আমার কারণ আমি তো সব জানতাম তাও আপনাকে কিছু বলিনি আমাকে ক্ষমা করে দেন প্লিজ। (তসিবা কান্না করছে আর কথা গুলি বলছে)

আমি:- কান্না করছো কেনো? তুমি তো মীমের কথা মত আমার সাথে ব্যাবহার করেছো এর জন্য কান্না করতে হবে না। তখনি নার্ছ এসে তসিবার কুলে একটা মেয়ে দিয়েছে। আরেকজন নার্ছ অন্য একটা মেয়ে কুলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

নার্ছ:- মেম বাচ্চা গুলিকে একটু দুধ পান করিয়ে দেন। স্যার বলছে আপনি এখুনি ওদের দুধ খাওয়াতেন।

তসিবা:- হ্যা দেন। তসিবা মেয়ে গুলিকে দুধ খাওয়াচ্ছে আর কান্না করছে। আমি তসিবার চোখের পানি মুছে দিলাম।

আমি:- আর কান্না করবেনা যা হবার তা তো হয়ে গেছে এখন দুইটা মেয়ে আমাদের ভালো ভাবে বাচতে শেখাবে।

তসিবা:- মীম বলেছিলো যদি বেচে থাকে তাহলে যেনো একটা মেয়ে দিয়ে দেয়। সে আমাদের কাছ থেকে অনেক দূরে চলে যাবে।

আমি:- ঠিক আছে তাই হবে। কিন্তু এত ছোট বাচ্চা কি মীম নিয়ে রাখতে পারবে? তখনি আম্মা এসেছে!

আম্মা:- সৌরভ মীমের জ্ঞান ফিরছে! মীম তোর সাথে কথা বলতে চাচ্ছে যা বাবা একটু দেখা করে আয় আমি তসিবার পাশে বসে থাকি। আমার নাত্নি গুলি তো একদম আমার মত হয়েছে। বলে আম্মা তসিবার কুলেরটা নিয়েছে।

তসিবা:- হ্যা যান আপনি মীমের সাথে একটু কথা বলেন। মীমের ভরসা হবে নিজের প্রতি কিছুটা বিশ্বাস ফিরে পাবে।

আমি:- কিন্তু?

তসিবা:- কোনো কিন্তু নেই আপনি যান দেখবেন সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।

আমি:- ঠিক আছে! উঠে এক পা দু পা করে বেরুলাম রুম থেকে। কিছুটা চিন্তা করে মীমের কেবিনে ঢুকলাম দেখি মীমের পাশে ওর বাবা মা বসে আছে। আমাকে দেখে মীমের মা বাবা দুজনে উঠে বাহিরে চলে গেছে। আমি মীমের পাশে বসেছি তখনি মীম হাত বারিয়ে আমার হাতটা ধরেছে।

মীম:- তসিবার নাকী আজকে অপেরেশন হয়ছে?

আমি:- হ্যা দুইটা মেয়ে হয়ছে আর তসিবা ভালো আছে।

মীম:- মেয়ে গুলি দেখতে কার মত হয়েছে?

আমি:- কিছুটা তসিবার আর কিছুটা আমার মত হয়েছে।

মীম:- যদি আমার গর্ভে সন্তান হত তাহলে ঠিক এমনটাই হত তাইনা (কথাটা বলে মীম কান্না করে দিয়েছে)

আমি:- হ্যা এমনটাই হত। তুমি আমার কাছে এত বড় অভিনয় করবে আমি বুঝতে পারিনি।

মীম:- সরি সৌরভ কি করবো বলো তুমি যদি আমার যায়গায় থাকতে তাহলে তুমি কি করতে?

আমি:- তাহলে তোমার মত করতাম না বরং তোমাকে সাথে নিয়ে বাচার জন্য আপ্রান চেষ্টা করতাম। আমি সব বলে দিতাম আর যতদিন বেচে থাকতাম ততদিন তোমাকে অন্য কারো হতে দিতাম না।

মীম:- তাহলে কি ভালোবাসার জয় হত?

আমি:- তা জানি`না তবে আমি তো সূখে থাকতাম ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে এতেই আমার ভালোবাসার জয় হত।

মীম:- বাহ আজকাল তো দেখছি অনেক গুচিয়ে কথা বলা শিখে গেছো নিশ্চয় তসিবা এসব শিখায়ছে?

আমি:- সব সময় গুচিয়ে বলি শুধু সময় বুঝে কথা বলি। এখন বাদ দাও এসব কথা বাত্রা।

মীম:- আমার ডির্ভোসের কাগজটা কবে পাঠাবে? (ডির্ভোসের কথা শুনে বুকে হাল্কা ব্যাথা অনুভব করেছি তাও চুপ করে আছি তখন আবার মীম বলে) কি হলো কবে দিতেছো আমাকে

আমি:- তুমি সুস্থ হও তারপর পেয়ে যাবে!

মীম:- কেনো এখন দিলে সমস্যা কি?

আমি:- সমস্যা নেই কিন্তু তসিবা তো বলছে তুমি নাকী একটা মেয়ে নিবে?

মীম:- সেইটা তসিবার সাথে আমার চুক্তি করা আছে যদি বেচে থাকি তাহলে ওর দুইটা সন্তান হলে একটা আমাকর দিবে। তুমি আমাকে কবে ডির্ভোস দিতেছো সেইটা বলো?

আমি:- তুমি না আমাকে জড়িয়ে ধরতে চাইছো এখন জড়িয়ে ধরবে?

মীম:- নাহ এখন কোনো ইচ্ছে নেই! আমি চাইনা তোমার আর আমার প্রানের দোস্ত তসিবার সংসারে কোনো রকম অশান্তি হোক। তাই আমি সিদ্যান্ত নিয়েছি আমি চলে যাবো বাহিরে এদেশ ছেরে দূরে অনেক দূরে। যেখানে আমাকে কেও কোনো কিছুর জন্য কিছুই বলবে না।

আমি:- ঠিক আছে তাহলে কিছুদিনের মধ্যে তোমার ডির্ভোসের কাগজ পেয়ে যাবে। আচ্ছা তাহলে আমি যাই তুমি রেস্ট নাও বলে উঠে আসছিলাম তখনি মীম হাত ধরে রাখছে। কি হলো হাত ছারো আমি যাবো তো?

মীম:- না করেছি নাকী তুমি যাও।

আমি:- তাহলে হাত ধরে রাখছো কেনো?

মীম:- হাত তো আমি ধরিনি আমার হাত ধরে রাখছে। আচ্ছা সৌরভ তুমি কি সেই আগের মত আমাকে ভালোবাসবে?

আমি:- মানে?

মীম:- ঠিক ঐ আগের মত যখন তুমি আর আমি দুজনে মিলে যেমন ছিলাম। রাতে লং ড্রাইবে চলে যেতাম যেখানে চাঁদের আলো ছাড়া কিছুই ছিলোনা।

আমি:- তাহলে তসিবাকে কি করবো? মীম এখন চাইলে আমি আর আগের মত হতে পারবোনা কারণ আমার সাথে এখন শুধু তসিবানা সাথে আমার দুইটা মেয়ে জড়িয়ে আছে। তাই এখন তুমি চাইলেও আমি আগের মত হতে পারবোনা।

মীম:- বুঝতে পারছি নাও ছেড়ে দিলাম তোমাকে। যাও তোমার জীবন থেকে আমি দূরে সরে যাবো কারণ আমি দূরে গেলে তুমি তসিবা আর তোমার মেয়েরা অনেক সূ্খে থাকবে।

আমি:- আচ্ছা এখন এসব বাদ দাও সময় বলে দিবে কে থাকবে আর কে যাবে তুমি এখন ঘুমাও কথা গুলি বলে বেরিয়ে এসেছি। মীমের বাবা মা সহ আমার বাবা মা সবাই মিলে কথা বলছে।

আব্বা:- সৌরভ তুই বাড়িতে যা আমরা আছি! তসিবাকে দুই দিন পর আর মীমকে সাত দিন পর ছাড়বে।

আমি:- নাহ আপনারা চলে যান আমি আছি।

আম্মা:- এক সাথে দুই রুম দেখবি কি করে। তার চাইতে ভালো হবে দুজনকে এক কেবিন রুমে নিয়ে আসতে বল ডাক্তারকে।

শ্বশুড়:- হ্যা তা মন্দ নয়। আমি ডাক্তারের সাথে কথা বলে আসছি। আমরা দাঁড়িয়ে আছি কিছুক্ষণ পর ডাক্তার সহ শ্বশুড় এসেছে।

ডাক্তার:- আচ্ছা আমি দুজনকে এক কেবিনে এনে দিতেছি।

আব্বা:- ধন্যবাদ আপনাকে। (কিছুক্ষনের মধ্যে মীম আর তসিবাকে এক কেবিনে এনে দিয়েছে। সবাই ওদের সাথে কথা বলে বিদায় নিয়ে এসেছে)

আম্মা:- সৌরভ আমার দুই বউ আর দুই নাত্নির যেনো কিছু না হয়?

আমি:- আচ্ছা আমি খেয়াল রাখবো। ওরা চলে গেছে আমি রুমে ঢুকছি মীম তসিবা দুজনে হাসা হাসি করছে আমাকে দেখে দুজনে চুপ হয়ে গেছে। আমি দুই মেয়ের সাথে দুষ্টমি করছি এমনি তসিবা বলে।

তসিবা:- মীম সৌরভ তো সব যেনে গেছে তাহলে এখন কি আমি আগের মত তোকে ডাকতে পারবো?

মীম:- হ্যা সমস্যা নেই এখন সবাই সব কিছু যেনে গেছে।

আমি:- দয়া করে আপনারা এখন ঘুমান রাত অনেক হয়ছে আমি ঘুমাবো।

মীম:- ঘুমাবো মানে?

আমি:- তোমাকে বলিনি?

তসিবা:- আমার তো ঘুম পাচ্ছেনা।

আমি:- তোমাকে তো বলিনি! আমি বলেছি আমার দুই মেয়েকে। তসিবা আর মীম দুজনে মুড অফ করে নিয়েছে ( এভাবে আজকের আর দুই দিন কেটে গেছে। আমি মীম আর তসিবাকে অনেক কেয়ার করেছি যদিও এক জন মানুষ দুজনকে কেয়ার করা অনেক কষ্ট। আজ তসিবাকে রিলিজ করে দিবে মীমের মন খারাপ।)

তসিবা:- মীমকে ডাক্তারের সাথে কথা বলে আমাদের বাড়িতে নিয়ে গেলে ভালো হবে। মীম এখানে থাকলে অনেক কষ্ট পাবে প্লাজ তুমি মীমকে নিয়ে চলো?

আমি:- ঠিক আছে ডাক্তারের সাতে কথা বলে দেখি। ডাক্তারের সাথে কথা বলার পর ডাক্তার রাজি হয়নি তাই তসিবাও বাসায় যেতে রাজি হয়নি ওরা এক সাথে বাসায় যাবে। ডাক্তারকে বলে রাজি করিয়েছি দেখতে দেখতে সাত দিন চলে গেছে আব্বা আম্মা এসেছে।

আম্মা:- মীম চলো তুমি যতদিন বিদেশে না যাবে ততদিন আমাদের বাড়িতে থাকবে?

মীম:- আম্মাজান না তা হয়না আমি আমাদের বাড়িতে যাবো।

তসিবা:- মীম চল আমার সাথে থাকবি। এখন তুই যদি না যাস তাহলে আমি একা দুইটা বাচ্চা সামলাবো কি করে? তুই বলেছিস বলে তো আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করেছি আমার দুইটা বাচ্চা হতে। এখন আমাকে আর আমার বাচ্চা রেখে তুই একা একা থাকবি?

মীম:- ঠিক আছে তবে ছয় মাস পরে আমি চলে আসবো তোদের ছেড়ে আর আমার একটা মেয়ে নিয়ে যদি রাজি থাকিস তাহলে বল?

তসিবা:- ওকে রাজি আছি এবার তো চল?

আমি:- চলো মীম! (তারপর সবাইকে নিয়ে বাড়িতে এসেছি আজকে বাড়িটা একটু অন্য রকম মনে হচ্ছে! তসিবা ছোট মেয়ের নাম তানুশা ইসলাম রাখছে আর মীম বড় মেয়ের নাম ইশরাক জাহান মিশু। এভাবে ভালোই চলছে দেখতে দেখতে পাঁচ মাস পেরিয়ে গেছে হঠাত একদিন তসিবা আর মীমের মাঝে ঝগড়া হয়ে যায় অনেক বড় ধরনের কথা কাটা কাটি হয়ে যাই)

মীম:- সৌরভ তুমি আমাকে ডির্ভোস দিতেছোনা কেনো?

আমি:- হঠাত তোমার কি হলো?

তসিবা:- আমি বাপের বাড়িতে চলে যাবো?

আমি:- তোমার কি হলো?

তসিবা:- আপনি দিয়ে আসবেন নাকী আমি একা চলে যাবো?

আমি:- কেনো কি হয়ছে বলবে তো?

মীম:- তসিবা তোর কোথাও যেতে হবেনা আমি চলে যাচ্ছি বলে মীম গিয়ে তার ব্যাগ আর মিশুকে সাথে নিয়ে এসেছে। আমি চলে যাচ্ছি তুমি ডির্ভোসের কাগজ পাঠিয়ে দিও কেমন? তখনি আমি গিয়ে মীমের হাত ধরেছি তা দেখে তসিবা তানুশাকে নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিলো তখন আরেক হাত দিয়ে তসিবাকে ধরেছি। মীম আর তসিবা দুজনে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

তসিবা:- হাত ছারেন বলছি!

আমি:- ছারবো তো ঠিক আছে তবে আমার মেয়ে দাও বলে তসিবার কাছ থেকে মেয়েকে কুলে নিয়ে নিয়েছি।

মীম:- তাহলে আমার হাত ছাড়ো।

আমি:- হ্যা তোমারটাও ছারবো বলে মীমের কাছ থেকেও মেয়েকে কুলে নিয়েছি। দুই মেয়েকে কুলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি মীম আর তসিবা তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আচ্ছা তসিবা আর মীম তোমরা এবার চাইলে যেখানে খুশি সেখানে যেতে পারো বলে আমি আমার দুই মেয়ে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উপরের দিকে হাটা দিয়েছি। To be continue,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে