গল্প: ছোঁয়ার শিহরণ পর্ব-০৮

0
2210

গল্প: ছোঁয়ার শিহরণ পর্ব-০৮
লেখনীতে: ফাতিমা আক্তার অদ্রি

সেদিন ছোঁয়াকে দেখে রাখার জন্য শিহরণ মায়াকে বলেছিল–যেন সব সময় ছোঁয়ার সাথে থাকে। মায়া ছোঁয়ার খুব ভালো বান্ধবী । মায়া অবশ্য ছোঁয়াকে সেদিন চোখে চোখে রেখেছিল। সর্বক্ষণ তার পাশে ছিল। স্কুল ছুটির সময় শিহরণ ছোঁয়ার পিছু পিছু ছোঁয়ার বাসা পর্যন্ত গিয়েছিল । যদি কোথাও পড়ে যায় সেই ভয়ে।

এই পৃথিবীর সবচাইতে বিচিত্র প্রাণী হলো মানুষ। তারা ক্ষণে ক্ষণে বদলায়। কারণে অকারণে অনেক কিছু করে থাকে। যার কারণ কখনো তাদের নিজেদের কাছে স্পষ্ট, তো কখনো ব্ল্যাক হোলের তমসার মতো তমসাচ্ছন্ন। তবুও মানুষ ছুটে বেড়ায় নিজ সহজাত প্রবৃত্তির পিছু পিছু। কখনো উত্তর খুঁজে বেড়ায়, আর কখনো প্রশ্নের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে যায় । সত্যিই বড়ই অদ্ভুত এই মানবজীবন।

পরের ছয়দিন সমস্ত কাজ করেছে শিহরণ। একদম টু শব্দটিও করেনি। ছোঁয়া অসুস্থ থাকার কারণে কয়েকদিন স্কুলে আসতে পারেনি। লিভ নিয়েছিল সে। শিহরণ প্রতিদিন বিকেলে তাদের বাড়ির আশেপাশে ঘুরেছে। উদ্দেশ্য একটাই– ছোঁয়া কেমন আছে তা জানা। প্রথম পাঁচ দিন শিহরণ ছোঁয়ার টিকিটিও দেখেনি। তবুও দেখার আশায় তার বাসার সামনে ঘুরঘুর করেছিল। পরেরদিন যখন সে চলে আসতে উদ্যত হলো তখন দেখলো জানালায় দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটা । বাইরে দেখছে অবাক বিস্ময়ে । যেন ধরায় অবতীর্ণ কোনো পরী অবাক বিস্ময়ে পৃথিবীর সমস্ত কিছু পরখ করছে, বুঝার চেষ্টা করছে।
চোখে মুখে উদ্বেগ আর উৎকন্ঠা । শিহরণ কয়েকবার হাত নাড়াল ছোঁয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য। কিন্তু কোনো কাজই হলো না। ছোঁয়া নিষ্পলক কী যে দেখছে কে জানে!

কিছুক্ষণ ব্যর্থ প্রয়াস করার পর শিহরণ উল্টো পথে হাঁটা ধরেছিল। তখন আচমকা অহনা তার সামনে এসে দাঁড়াল। এসেই তার ফেবিকল টাইপ আচরণ করতে লাগল। মেয়েটা একেবারেই গায়ে পড়া স্বভাবের! শিহরণ কথা বলতে চাইছিল না তারপরেও সে এটা সেটা নিয়ে কথা বলে চলেছে তো চলেছেই ! অগত্যা শিহরণ বলল যে তার খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। তখন মোহনা বলল যে এক কাপ কফি না খাইয়ে সে শিহরণকে যেতেই দিবে না।

বহ্নির সূত্রে পরিচয় অহনার সাথে। অহনা বহ্নির সাথেই পড়ে। সব সময় বহ্নির পিছনে ঘুরঘুর করতে দেখেছিল শিহরণ । মাঝেমধ্যে কথাও হয়েছে তাদের মধ্যে । অবশ্যই বহ্নির সামনে স্কুলে কথা হয়েছে। বহ্নি বলতো–ভাইয়া, অহনা তোমার জন্য পুরাই পাগল হয়ে যাচ্ছে। একেবারে ফিদা তোমার উপর। তখন থেকেই শিহরণ এই মেয়েটার সাথে দূরত্ব বজায় রেখে চলে। এমনকি অহনার সাথে থাকলে সে বহ্নির সাথেও কথা বলত না। মেয়েটা যে দেখতে অসুন্দর তা কিন্তু নয়।। সে খুবই সুন্দরী। তবে তার সবকিছুতেই কেমন যেন একটা মেকি মেকি ভাব। যা শিহরণের বিরক্তির প্রধান কারণ।

ছোঁয়াকে একটু কাছ থেকে দেখতে পারার সুপ্ত বাসনাটা মনের মধ্যে আবারো উঁকি দেয়াতে শিহরণ অহনার কফির অফারটা লুফে নিল ।

এত দূর থেকে দেখে সে স্বস্তি পাচ্ছিল না। মনে হচ্ছিল মেয়েটা এখনো খুব একটা সুস্থ হয়ে ওঠেনি। তাই খবর নেয়ার জন্য হলেও তো ঘরের মধ্যে প্রবেশাধিকার দরকার শিহরণের । বিগত কয়েকদিন তো ছোঁয়াকে না দেখেই ফিরতে হয়েছিল তাকে। আর আজ তো ঘরের মধ্যে প্রবেশের টিকিট পেয়ে গেলো। তাই সেটা বানচাল করার মতো নির্বোধ নিশ্চয়ই শিহরণ নয়।

শিহরণকে ভ্রু কুঁচকে ভাবতে দেখে অহনা তাড়া দিয়ে বলল,’কী হয়েছে শিহরণ ভাইয়া? ভিতরে আসো।’

শিহরণ অহনার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসল। মনে মনে বলল–অহনা তুমি আমার কাজটা সহজ করে দিলে। এবার তোমাকে দাবা খেলার গুটি বানিয়েই কার্যসিদ্ধি করব! তারপর কাঁধ শ্রাগ(ঝাঁকুনি) করে মৃদু কণ্ঠে বলল,’ওকে চলো। তুমি যখন এত করে বলছ তখন তোমার কথা না রাখি কি করে!’

ঘরের ভিতরে ঢুকে শিহরণ যারপরনাই অবাক হলো । এত আলিশান বাসা তাদের। অথচ ছোঁয়াকে কত নিম্ন জীবন যাপন করতে হচ্ছে!

অহনা শিহরণকে সোফায় বসতে বলল। ড্রয়িং রুমের এলইডি টিভিটা অন করে দিল। তারপর শিহরণকে বলল,’ভাইয়া, তুমি বসো। আমি এক্ষুণি আসছি।’

শিহরণকে ভাই বলে ডাকতে অহনার ভালো লাগে না। তারপরেও বহ্নির সূত্রে ভাই ডাকতে হয়। বলতে গেলে না ডেকে কোনো উপায় ও নেই। বহ্নি কিছু না বললেও শিহরণ একবার বেশ ভয়ংকর এক ধমক দিয়েছিল তাকে নাম ধরে ডাকার কারণে। সেই থেকে ভাই ডেকে শো অফ করে। মনে প্রাণে সে তো শিহরণের জন্য চরম পাগল।

অহনা দ্রুত বেগে হেঁটে ছোঁয়ার রুমে গেল। ছোঁয়া তখনো উইন্ডোর পাশে ঠায় দাঁড়িয়ে ছিল। অহনা গিয়েই বলল,’তাড়াতাড়ি কিচেনে গিয়ে দু’কাপ কফি আর কিছু নাশতা রেডি কর।’
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share


ছোঁয়া অন্যমনস্ক থাকায় শুনতে পায়নি। অহনা রেগে গিয়ে ওর পাশে গিয়ে তার ডান হাত ধরে টান দিয়ে বলল,’কী বলেছি কানে যায়নি?’

ছোঁয়া যারপরনাই অবাক। সে এখনো ঠিকমত দাঁড়াতে পারছে না। কষ্ট হচ্ছে খুব। দুর্বলতা কিছুটা কাটিয়ে উঠেছে মাত্র। মাত্রই ব্যথা সেরে উঠছিল। যেই হাতটাতে ব্যথার পরিমাণ তুলনামূলক বেশি–সেই হাতটা ধরেই টান দিল অহনা। ব্যথা পাওয়া হাতটাতে চাপ পড়াতে
ছোঁয়া খানিক আর্তনাদ করে উঠল।
তারপর খুব মৃদু স্বরে প্রশ্ন করল,’কী হয়েছে?’

অহনা চেঁচিয়ে বলল,’কিচেনে যা। কফি আর কিছু নাশতা রেডি কর।’

শিহরণ সেই চিৎকারের খানিকটা শুনতে পেল। চকিতে সে বুঝে গেল কী ঘটছে। তার মনের মধ্যে উথাল পাতাল শুরু হয়ে গেছে । মনের মধ্যে শঙ্কা, আতঙ্ক ।

ছোঁয়া বলল,’কেউ কি এসেছে?’

‘তোর কেন লাগতেছে? তোকে যা বললাম কর। তুই কি এ বাড়ির মালকিন–যে তোরে সবকিছু বলা লাগব?’ অহনা ব্যঙ্গ করে বলল।

ছোঁয়া ভাবল এখন কিছু বলা মানে হলো সমস্যা আরো বাড়ানো। তাই সে চুপ করে গেল। ত্রস্ত পায়ে হেঁটে বেরিয়ে গেল নিজ রুম থেকে। ছোঁয়ার রুম থেকে বেরিয়ে ড্রয়িং রুম ফেলে কিচেনে যেতে হয়। ছোঁয়া টলতে টলতে হাঁটছে । টিভি থেকে চোখ সরে গিয়ে শিহরণের চোখ ছোঁয়ার উপর নিবদ্ধ হলো। সে ছোঁয়াকে দেখেই চকিতে বুঝে গেল যে– ছোঁয়া ভালো নেই। ছোঁয়া কাঁপা কাঁপা চোখে দেখতে পেল শিহরণকে । থমকে দাঁড়াল সে। হয়তো ভাবছে শিহরণ এখানে কেন? কয়েক সেকেন্ড দু জোড়া চোখ আটকে ছিল। উভয়ের মনে হলো সময় যেন থমকে দাঁড়িয়েছে । সম্বিৎ ফিরে পেতেই ছোঁয়া হেঁটে চলে গেল ।

কিছুক্ষণ পর অহনা এসে বসল শিহরণের পাশের সোফায় । তাকে খুব উৎফুল্ল দেখাচ্ছে । আর শিহরণের প্রচণ্ড বিরক্ত লাগছে। বিরক্তিতে ছেয়ে গেছে তার পুরো মুখ। তাকে এক পলক দেখলেই যে কারো বুঝতে পারার কথা। কিন্তু অহনা সমানে কথা বলে যাচ্ছে ।

কিছুক্ষণ পর ছোঁয়া কফি আর নুডলস্ নিয়ে আসলো। শিহরণের সামনের ছোট টি টেবিলের উপর ট্রে রাখল সে। শিহরণের কেমন যেন অস্বস্তি হচ্ছিল। পাশাপাশি ভয়ংকর রকমের ক্রুদ্ধ সে অহনার প্রতি। তবে সব চেপে গেল। কারণ তাকে এই বাসায় আসতে হবে। অন্ততপক্ষে এই অসহায় মেয়েটার খোঁজ রাখার জন্য হলেও আসতে হবে।

ট্রে রেখে ছোঁয়া চলে যেতে উদ্যত হলে অহনা তাকে থামতে বলল। আদেশ দেবার ভঙ্গিতে বলল,’সার্ভ করে দেবে কে?’

ছোঁয়া উচ্চবাচ্য না করে খাবার সার্ভ করে দিল। শিহরণ আড়চোখে দেখছিল তাকে। অহনার দিকে সরাসরি তাকাতেই দেখতে পেল তার চোখ মুখ জুড়ে বিরাজ করছে এক পৈশাচিক আনন্দ। ছোঁয়াকে শিহরণের সামনেই অপমান করতে পেরে, তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে সে আনন্দ পাচ্ছে। শিহরণের মনে তখন একটা কথাই বাজছিল–কী নিকৃষ্ট এই মেয়েটা! কী নিকৃষ্ট তার আনন্দ পাওয়ার ধরন!

চলবে…..ইন শা আল্লাহ্

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে