গল্প: ছোঁয়ার শিহরণ পর্ব -০৭

0
2000

গল্প: ছোঁয়ার শিহরণ পর্ব -০৭
লেখনীতে: ফাতিমা আক্তার অদ্রি

আজ খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠেছে শিহরণ। উঠেই ফ্রেশ হয়ে স্কুল ব্যাগ গুছিয়ে সোজা কিচেনে চলে গেল। তারপর একটা মিডিয়াম সাইজের টিফিন বক্স নিলো। তারপর গ্যাস ওভেনে কয়েকটা স্যান্ডউইচ বানিয়ে নিলো ঝটপট। ফ্রিজ থেকে দুটো আপেল নিলো। টিফিন বক্সটা ব্যাগের মধ্যে ঢুকাল। বেশ ফুলে আছে ব্যাগটা। শিহরণ জানত এমনটাই হবে। তাই সে আজ কয়েকটা বই ব্যাগে ঢুকায়নি। যদিও সেগুলো নেওয়া খুব ইমপর্ট্যান্ট । বইগুলো না নেওয়ার পরেও ব্যাগের এই অবস্থা হলে কেমনে কী হবে! শিহরণ ভাবছে বন্ধুরা যদি এই টিফিন বক্স দেখে তবে তুলকালাম কাণ্ড বাঁধিয়ে দেবে। কিছুক্ষণের জন্য বিভ্রান্ত দেখাল শিহরণকে। পরক্ষণেই ভাবলো বন্ধুরা যদি কোনোভাবে টের পেয়ে যায় তবে বলবে মাম্মি জোর করে দিয়েছে। ব্যস! হয়ে গেলো সমাধান ।

শিহরণকে কিচেনে দেখে তার মাম্মি সাবিহা সাবরিন অত্যন্ত অবাক হলেন। তার উপর গ্যাস ওভেনে একটা স্যান্ডউইচ ও দেখতে পেলেন। তিনি সবিস্ময়ে প্রশ্ন করলেন,’ইজ এভরিথিং ওকে , ডিয়ার?’

‘ইয়েস, মাম্মি । এভরিথিং ইজ ফাইন অ্যান্ড কুল।’

সাবিহা সাবরিন আবার বললেন,’তুমি স্যান্ডউইচ বানিয়েছ? আমাকে বললেই তো হতো।’

শিহরণ আদুরে ভঙ্গিতে বলল,’ মাম্মি , আই ওয়াজ টু হাংগ্রি টু ওয়েট। সো আই জাস্ট থট স্যান্ডউইচ ইজ অ্যা কুইক সলিউশন টু সেটিয়েট মাই অ্যাপেটাইট।’

‘নো প্রবলেম ডিয়ার। কাল থেকে আমিই তৈরী করে দেব।’ সাবিহা সাবরিন মুখে অমায়িক হাসি বজায় রেখে বললেন।

এর মধ্যেই বহ্নি এসে হানা দিল কিচেনে। সে এসেই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো শিহরণের প্রতি। বলল,’হেই ব্রো! ইউ ওয়েক আপ সো আর্লি! ইজ’ন্ট দিস অ্যা মিরাকল!’

শিহরণ চোখ রাঙিয়ে বহ্নির দিকে তাকিয়ে বলল,’বহ্নি, ইউ আর গেটিং টু স্টাবর্ন ডে বাই ডে।’ যদিও শিহরণ জানে এই কথায় বহ্নির মধ্যে বিন্দুমাত্র ও পরিবর্তন হবে না।

‘ওওপস, ব্রো! আই গেট টু স্কেয়ার্ড।’ বহ্নি পরক্ষণেই হাসতে হাসতে বলল,’ভাইয়া কতবার বলেছি তোমাকে আমাকে ধমকানোর চেষ্টা করবে না! তারপরেও তুমি এটা করো! সো স্যাড, ব্রো ! সিরিয়াসলি, দিস জাস্ট ডোন্ট স্যুট ইউ!’

সাবিহা সাবরিন বললেন,’বহ্নি তুমি খুব বাড় বাড়ছ কিন্তু! শিহরণ তোমার বড় ভাই। এই কথাটা ভুলে যেওনা।’

‘মা, ও তো শুধু দুই বছরের বড়। এটাকে একটা বড় হওয়া বলে? ভাইয়ার চেয়ে তো আমার রেজাল্ট অনেক বেশি ভালো। আমি অনেক ব্রাইট অ্যান্ড শার্প স্টুডেন্ট ।’ বহ্নি ক্ষেপে গিয়ে বলল ।

শিহরণ বহ্নির কান টেনে দিয়ে বলল,’আচ্ছা আজ থেকেই তুই আমার বড় বোন! এবার ঠিক অছে?’

‘নাহ্ । ঠিক নেই। তুমিই আমার বড়।’

সাবিহা সাবরিন বহ্নির কথায় আহত হলেন। অতি আদর পেয়ে মেয়েটা দিনকে দিন বিগড়ে যাচ্ছে । এখন থেকেই লাগাম ধরতে হবে। নয়তো কখন যে কী অঘটন ঘটায় তার কোনো পাত্তাই থাকবে না। তিনি নিজের কণ্ঠের স্বাভাবিকতা বজায় রেখে শান্ত স্বরে বললেন, ‘বহ্নি শিহরণকে সরি বলো। তুমি ওর সাথে মিসবিহেভ করেছ।’
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share


‘মম! দ্যাট ওয়াজ জাস্ট ফান। নাথিং এলস।’ বহ্নি বিরস মুখে মাথা দুলিয়ে বলল।

সাবিহা সাবরিন কঠিন গলায় বললেন,
‘সরি বলো।’

শিহরণ বোনের ডিফেন্সে বলল,
‘মাম্মি, এটার তো দরকার নেই। আমরা তো প্রায় এমন দুষ্টামি করে থাকি ।’

‘দরকার আছে শিহরণ । এভাবেই একটু একটু করে মানুষের স্বভাব নষ্ট হয়ে যায় । তারপর ধরাকে সরা জ্ঞান করে।’

বহ্নি মায়ের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে । কোনো কথা বলছে না। তাই সাবিহা সাবরিন উত্তেজিত গলায় আবার বললেন,’সে সরি , বহ্নি ।’

বেশি আদর পেয়ে পেয়ে লাটে উঠছে বহ্নি । সবকিছুরই সীমা আছে। সেই সীমার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেই সব সম্পর্ক সুন্দর ও স্বাভাবিক গতিতে চলতে থাকে। অন্যথায় যে কেউ হোঁচট খেতে পারে। পা পিছলে বিচ্যুত হতে পারে নিজ গন্তব্য থেকে। তাই সাবিহা সাবরিন এমন কঠিন হলেন আজ। যদিও অনেক আগে থেকেই বহ্নির হাল ধরা উচিত ছিল । কিন্তু এখনো খুব বেশি দেরি হয়নি ।

বহ্নি মিইয়ে যাওয়া কণ্ঠে শিহরণের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘সরি ভাইয়া ।’

সরি বলেই বহ্নি শিহরণকে জড়িয়ে ধরল। আর তাদের মায়ের মুখে তৃপ্তির হাসি।

শিহরণ স্কুলে পৌঁছেই ছোঁয়াকে দেখতে পেল। তবে আজ ছোঁয়াকে একদম বিধ্বস্ত মনে হচ্ছে। সে চকিতে দৌঁড়ে গেল ছোঁয়ার কাছে। ছোঁয়া বসেছিল । শিহরণ তার পাশে বসল। কোনো কথা বলল না। ছোঁয়ার দৃষ্টি মেঝেতে নিবদ্ধ । শিহরণ ছোঁয়ার দিকেই তাকিয়ে আছে। হঠাৎ তার দৃষ্টি আটকে গেল ছোঁয়ার হাতে। উজ্জ্বল শ্যামলা গায়ের রং আর ঘন কালো চুলের অধিকারী মেয়েটার হাত লাল হয়ে আছে। একদম রক্তজমাট বেঁধে যাওয়ার মতন। একটু ভালো করেই খেয়াল করতেই সে দেখতে পেলো অপর হাতটির অবস্থা আরো করুণ। জায়গায় জায়গায় কালো কালো রক্তের ছোপ। শিহরণের বুকে যেন প্রলঙ্কারী কোনো ঝড় উঠে গেল। সে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছে না। ছোঁয়ার এমন অবস্থা দেখে তার খুব কষ্ট হচ্ছে। এইভাবে মেয়েটাকে কে আঘাত করতে পারে? কে সেই নির্দয়–যে এমন পশুর মতো আঘাত করতে পারে? তার চোয়াল শক্ত হয়ে আসছে। সে দাঁত মুখ খিচিয়ে প্রশ্ন করল,’কে করেছে এটা?’

তখনো ছোঁয়ার দৃষ্টি নিবদ্ধ মাটির দিকে। একটুও নড়ছে না সে। নিশ্বাস নিচ্ছে। তবুও যেন প্রানহীণ কোনো মানবী! শিহরণ এবার উঁচু গলায় প্রশ্ন করল,’ কে মেরেছে তোমাকে এমন পশুর মতো করে?’

খুব উচ্চ আওয়াজ শুনতে পেয়ে ছোঁয়া একটু লাফিয়ে উঠল। তারপর তার পুরো শরীর কাঁপতে লাগল। মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে মেয়েটাকে না ধরলে সে পড়ে যাবে। শিহরণ পুরো বিষয়টা খেয়াল করল। তাই সমস্ত সঙ্কোচ এক পাশে রেখে সে তৎক্ষনাত ছোঁয়াকে শক্ত করে ধরে ফেলল।

শিহরণ অনুভব করলো প্রচণ্ড উত্তাপ। ছোঁয়ার জ্বর এসেছে। তাও অতিরিক্ত পরিমাণে। শিহরণ নিজেকে খুব অসহায় বোধ করল। সে বুঝতে পারছে না এই মুহূর্তে তার কী করা উচিত। মেয়েটা অনবরত কেঁপে চলেছে। কিন্তু এখনো স্কুলে কোনো স্যার আসেনি। ছোঁয়ার বাসা সে নিজে চিনে না। আবার নিজের বাসায়ও নিয়ে যেতে পারবে না। কারণ এতে ছোঁয়ার সমস্যা হতে পারে। ছোঁয়ার ফ্যামিলির ব্যাপারে শিহরণ তেমন কিছুই জানে না। তাই সে নিজেকে জীবনে প্রথমবারের মতো এতটা বিপর্যস্ত অনুভব করল।

চকিতে তার মাথায় এলো কাছের ফার্মেসি থেকে কিছু ওষুধ এনে খাওয়াতে পারলে জ্বর নিশ্চয়ই ছেড়ে দিবে। তাই সে ছোঁয়াকে তার নিজের ব্যাগের সাথে হেলান দিয়ে বসিয়ে এক দৌঁড়ে স্কুলের কাছের ফার্মেসিতে গেল। ভাগ্য ভালো ছিল যে ফার্মেসি খোলা ছিল। নয়তো আরো খারাপ কিছু হতে পারত। সে দ্রুত কিছু জ্বর আর ব্যাথার কিছু ওষুধ নিয়ে আসলো। তারপর তার ব্যাগ থেকে টিফিন বক্সটা খুলে নিজ হাতে স্যান্ডউইচ খাওয়ালো ছোঁয়াকে। এরপর ওষুধ খাইয়ে দিলো।

ছোঁয়া না খাওয়ার পাঁয়তারা করেছে। কিন্তু শিহরণের কাছে এসব টেকেনি।

শিহরণ দ্রুত পুরো গ্রাউন্ড পরিষ্কার করল। তারপর হাত ধুয়ে এসে ছোঁয়ার পাশে বসল। ছোঁয়া ঘুমিয়ে পড়েছে। দেখে মনে হচ্ছে তৃপ্তির ঘুম ঘুমোচ্ছে । শিহরণ তার হাতটা ছোঁয়ার কপালে রাখল। জ্বর কমে এসেছে অনেক। শিহরণ মনে মনে ভাবলো–ভাগ্যিস সাথে করে স্যান্ডউইচ এনেছিলাম আর ওষুধটা কোনো প্রকার ঝামেলা ব্যতিরেকে পাওয়া গেল।

চলবে….ইন শা আল্লাহ্

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে