কে কোথায় যায়? পর্ব ৭
সবাই রাত দু’টা সময় বান্দরবানের একটা হোটেলে অবস্থান করলো।ভোর-শুভা,রিতু ও তার দুই বন্ধু,তামিম-রুদ্র ও রাফি-নীহারিকা সবাই আলাদাভাবে ভাগ হয়ে রুম নির্ধারণ করলো।রুদ্র ও তামিম এক রুমে!তামিম রুমে ঢুকে রুদ্রের দিকো বিরক্তমুখ নিয়ে বললো,
——-‘দয়া কইরা রাইত’টা নাক না ডাকাইয়া শুইস!’
রুদ্র ব্যাগ বিছানায় রাখলো।চুল হাত দিয়ে ঠিক করতে করতে বললো,
——-‘উহু,যদি ডাকাত আইসা পড়ে?’
তামিম টি-শার্ট খুলতে খুলতে বললো,
——‘এটা তোর বাড়ি পাইছিস?কত্ত বড় হোটেল ডাকাত কি তার বাপও আসতে পারবো না।’
রুদ্র মুখ ভেংচি মেরে বললো,
——-‘এহ!’
ফ্রেশ হয়ে সবাই জড়ো হলো।কাল কোথায় যাবে,কতটুকু ঘুরবে সব ডিসিশান নিলো!রিতুই সব নিয়ন্ত্রণ করলো।কাল ওরা বগালেক যাবে!নীহারিকা উৎসুক চোখে বললো,
——‘বগালেক কেমন দেখতে?এটা কেমনে আরম্ভ হলো?’
রিতু মিষ্টি হেসে বললো,
——‘বগাকাইন লেক বা বগালেক বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলা থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে কেওক্রাডং পাহাড়ের কোল ঘেসে সমুদ্রপৃষ্ট থেকে প্রায় ১২০০ ফুট উচ্চতায় ২০০০ বছর আগে প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট এক হ্রদ। ভূ-তত্ত্ববিদগনের মতে এটি মৃত কোন আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ অথবা উল্কাপিণ্ডের পতনের ফলে এই লেক তৈরী হয়েছে। বগালেক অনেকের কাছে ড্রাগন লেক বলে পরিচিত।’
পরদিন….
নাস্তা করে সবাই পাখির মোড়/ধনেশের মোড়ে এলো চান্দের গাড়ি খুঁজতে। সেখানে সার বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকে সবুজ চান্দের গাড়ি আর সাদা মাহিন্দ্রা।
কিন্তু লাইনের গাড়িগুলো সিন্ডিকেট করে দাম বাড়তি চাচ্ছিল। তাই আগে থেকেই যেই গাইডের সাথে কথা বলে রেখেছিল রিতু তাকে ফোন দিয়ে একটা গাড়ি ঠিক করে নিলো। সে সিন্ডিকেটের বাইরের। ৩৫০০ টাকা দিয়েই রাজি হলো রুমা পর্যন্ত যাওয়ার জন্য!
রুমা পর্যন্ত যাওয়ার পথে মিলনছড়ি চেকপোস্টে একবার, আর ওয়াই-জংশনের পরে একবার এন্ট্রি করতে হয় ট্যুরিস্টদের৷ রুমায় নেমে আরেকবার এন্ট্রি করতে হয় আর্মি চেকপোস্টে। সেখানে অঙ্গিকারনামায়ও সাইন করে আসতে হয়। সবকিছু গাইড আর ড্রাইভারই বলে দিবে।
রুমা থেকে বগালেকের দিকে রওনা দেওয়ার সময়ই মুরগী আর বারবিকিউ’র যাবতীয় সব জিনিস কিনে নিয়েছিলাম রুমা বাজার থেকে। বগালেকে এসব কিনতে পাওয়া যায় না। গাইড আগে থেকেই বগালেকে কটেজ বুক করে রেখেছিলো। লাঞ্চ ওখানে গিয়ে করবো বলাতে লাঞ্চেরও অর্ডার দিয়ে রেখেছিল। বগালেক থেকে রুমার ভাড়া ২৫০০ টাকা!
বগালেকে পৌঁছে আরেকবার এন্ট্রি করতে হয় চেকপোস্টে। এন্ট্রি করে একটু উপরের দিকেই মূল লোকালয়ে চলে গিয়ে নিজেদের কটেজের দিকে আসলো বন্ধুমহল। তাদের কটেজটা বাজার থেকে একটু সাইডের দিকে। নীরব এবং নতুন। কিম বমের কটেজ বললেই গাইড ওখানে ঠিক করে রাখবে। এই কিম বম প্রচন্ড স্মার্ট একজন মানুষ। আর তার দোকানেই আছে সব ধরনের খাবারের আয়োজন। রান্না খুবই মুখরোচক। ওরা কটেজে গিয়ে ব্যাগ-ট্যাগ রেখে ফ্রেশ হয়েই খেতে বসে গিয়েছিলো। প্রচন্ড ক্ষুধায় খাবারগুলো অমৃত মনে হচ্ছিলো।
এরপর রুমে ফিরে জামাকাপড় খুলে সাতজন মিলে গোসল করে নিলো বগালেকে। বলে রাখা ভাল, পানিতে নেমে সাঁতরানোর পারমিশন নাই!শুভা বিরক্তি নিয়ে তামিমকে বললো,
——-‘শালারা সাতার কাটতে দিচ্ছে না ক্যান?’
তামিম মিষ্টি হেসে বললো,
——–‘বগালেকের উচ্চতা ১০০০ ফিটেরও উপরে বলে ওখানে সাতরাতে গেলে খুব অল্পতেই হাঁপিয়ে যাবি এবং বুঝে উঠার আগেই ডুবে যেতে পারিস। এমন ঘটনা ঘটেছে বলেই এখন পানিতে নামা বন্ধ।’
শুভা ভয়ে চুপসে গেল!ছোট্ট করে বললো,
——-‘ওহ!’
এছাড়াও বগালেককে ওখানকার মারমা জনগোষ্ঠীরা পবিত্র লেক মনে করে, তারাও চায় না ওখানে মানুষ নামুক, দাপাদাপি করুক। তাই মগ কেটে গা ভিজিয়ে নেওয়াই ভাল।
ওখান থেকে ফিরে গরম জামা-কাপড় পরে বিকেলে সমগ্র এলাকাটা ঘুরে দেখলো ওরা! ছবি-টবি তুললো। সন্ধ্যায় আগুন জ্বালিয়ে বারবিকিউ করে গানের আসর বসিয়ে প্রকৃতির সান্নিধ্য উপভোগ করতে লাগলো।
শুভা তামিমের পাশে বসে হাত ধরেছে,রাফি ও নীহারিকা এক জুটি,ভোর ও রুদ্র ও রিতু ও তার বন্ধু অনুভব!আরেক বন্ধু কাজে অন্য কোথায় গেছে!সবাই গান গাচ্ছে….আজকের সারাটা দিন অনেক মজা করেই কাটিয়েছে ওরা!স্মরণীয় দিন হয়ে থাকবে এই বন্ধুমহলের স্মৃতির পাতায়।
তামিম ঠান্ডায় খানিকটা কাপতে কাপতে বললো,
——‘কেওক্রাডং এখনো দেখা বাকি!’
তামিমের হাত ধরে শুভা বললো,
——-‘শুন রে, রাতে নাকি বগালেক দেখতে খুব সুন্দর! আমার সাথে থাকবি রাত পর্যন্ত এই বগালেকে?প্লিজ!’
তামিম খানিক ভাবলো।তারপর মৃদু স্বরে বললো,
——-‘আমরা সবাই তো কেওক্রাডং এর উপর উঠে সূর্যাস্ত দেখে হোটেল ফিরবো!তবে?’
শুভা মিষ্টি হেসে বললো,
—-‘বাকিটা আমি সামলাবো!’
বগালেকে বিকেল পাঁচটার পর থেকেই হাড় কাঁপানো ঠান্ডা শুরু হয়। একেতো লেকে কুয়াশা জমে থাকে, তার উপরে প্রচন্ড বাতাস। কটেজটা বাঁশের তৈরি বলে হু-হু করে বাতাস ঢোকে। সব মিলিয়ে প্রচন্ড ঠান্ডার অভিজ্ঞতা হয়েছে।
চলবে…..
©ইভা আহমেদ চৌধুরী
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/