কে কোথায় যায়? পর্ব ২১

0
556

কে কোথায় যায়? পর্ব ২১
তামিম আয়েশ করে বলছিল,
——–‘Happiness is a country’
গাড়ির চারপাশ হতে আগত বাতাসে চুল উড়ে যাচ্ছিল শুভা’র।তামিমের মুখে কথাটা শুনে কৌতুহলবশত জিজ্ঞেস করল,
——-‘কি ভুলভাল বকতেছিস?এটা কি?’
——-‘ভূটান এর মূলমন্ত্র!’
পুরো এশিয়ার সবচেয়ে সুখী দেশ এবং বিশ্বের সুখী দেশগুলোর একটি। অনেকেই মনে করে ইন্ডিয়া বা নেপাল যত কাছে ভূটান বুঝি তত কাছে নয়। কিন্তু ভূটান বাংলাদেশ বর্ডার থেকে মাত্র ২-৩ ঘন্টা ড্রাইভিং দূরত্বে অবস্থিত। তাই বাই রোডে , শান্তির ছোঁয়া নিয়ে আসতে পারা যায় অতি সহজে।
দক্ষিন এশিয়ার ছোট্ট একটি দেশ ভুটান! এটি বজ্র ড্রাগনের দেশ নামেও পরিচিত!ভুটান পৃথিবীর একমাত্র কার্বন নেগেটিভ দেশ । ভুটানের আয়তনের প্রায় ৭০ ভাগ বনভুমি রয়েছে । এজন্য ভুটানকে বলা হয় অক্সিজেনের দেশ । ভুটান পৃথিবীর অন্যতম সুখী দেশ । আমরা জানি যেকোন দেশের উন্নয়ন এর মাপকাঠি হল GDP বা GNP কিন্তু ভুটান এর ক্ষেত্রে এটি ব্যাতিক্রম । তাদের উন্নয়ন এর মাপকাঠি হল GNH অর্থাৎ Gross National Happiness!
বন্ধুমহলের ভুটান ট্যুরের গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ছিল কমই । তাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল কল্যাণপুর বাস টার্মিনাল থেকে!
রাতের বাসে ঢাকা থেকে বুড়িমারি পৌছায় সকাল ৭ টায় ।তারপর ফ্রেশ হয়ে বুড়ির হোটেল এ নাস্তা সেরে নেয় ওরা । এবার ইমিগ্রেশন এর পালা । বুড়িমাড়ি পোর্ট এ ইমিগ্রেশন চলে বাস এর সিরিয়াল অনুযায়ী । স্পীড মানি ছাড়া ইমিগ্রেশন কমপ্লি্ট করা খুব কঠিন । আর ট্রাভেল ট্যাক্স তামিম চেষ্টা করেছে ঢাকা থেকে দিয়ে যেতে, তাহলে বর্ডারে সময় বাচবে,চ্যংরাবান্ধাতে­ও একই অবস্থা । তারপর কারেন্সি এক্সচেঞ্জ করি এবং একটি জিপ নিয়ে জয়গাও এর উদ্দ্যেশ্যে রওনা দেই । চ্যংরাবান্ধা থেকে জয়গাও এর দুরত্ত প্রায় ১০০ কিলোমিটার এর মতো । যেতে সময় লাগে ৩ ঘন্টা । ভুটানে কিন্তু ইন্ডিয়ান রুপি চলে । তাই সব টাকা বা ডলার রুপিতে কনভার্ট করে নিলো সবাই ।
শুভা আহ্লাদের সুরে বলল,
——-‘কোথাও যেতে হলে কতই না ঢঙ করতে হয়! ‘
ইন্ডিয়ান রুপি এবং ভুটানিজ় নিউলট্রাম এর মান সমান ।
বন্ধুমহলের সবাই জয়গাও পৌছায় প্রায় ৪ টার দিকে । জয়গাও এর ইমিগ্রেশন অফিস খুব নিরিবিলি । সাধারনত মানুষের তেমন ভিড় থাকেনা । জয়গাও এর ইমিগ্রেশন শেষ করে সবাই চললো ভুটান গেটে । মেইন গেট দিয়ে গাড়ি চলাচল করে । এর পাশেই হেটে যাওয়ার জন্য ছোট গেট আছে । তারপর পায়ে হেটে ভুটান প্রবেশ করে।
ভোর উত্তেজনায় লাফাতে লাফাতে বলল,
——‘আমি বিশ্বাস করতে পারতেছি না,হেটে হেটে ভুটান?ইয়াহু!কি মজা,কি মজা!’
ফুন্টশোলিং থেকে ভুটানের ভিসা নিয়ে এবং ইমিগ্রেশন শেষ করে থিম্ফুর উদ্যেশ্যে রওনা দেয় প্রায় সাড়ে পাঁচ টায় এবং থিম্ফু পৌছায় রাত ১১ টায়।
শুভা স্বস্থির নিশ্বাস ফেলে বলল,
——-‘আর কি চাই ওদের?সব কাজ শেষ তো নাকি?এবার মজ্জা হবে,মজ্জা!’
তামিম ভ্রু কুচকে বলল,
——-‘বাংলাদেশের সাথে যেহেতু ভুটানের কোন বর্ডার নেই তাই বাই রোডে ভুটান জেতে হলে ভারতের ট্রানজিট ভিসা লাগবে । ট্রানজিট ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হলঃ মিনিমাম ৬ মাস মেয়াদসহ পাসপোর্ট এবং পাসপোর্টের কপি, জাতীয় পরিচয় পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধন এর কপি, বিদ্যুত বিল অথবা গ্যাস বিল অথবা যেকোন ইউটিলিটি বিলের কপি,ব্যাংক স্টেটমেন্ট অথবা ডলার এন্ডোর্সমেন্ট অথবা ইন্টারনেশনাল ক্রেডিট কার্ড এর কপি, পেশার প্রমানপত্র অর্থাৎ চাকুরীজিবী হলে এন ও সি, ব্যবসায়ী হলে ট্রেড লাইসেন্স, স্টুডেন্ট হলে আইডি কার্ডের কপি ইত্যাদি, ১ কপি ছবি ২ বাই ২ সাইজের সাদা ব্যাকগ্রউন্ড সহ, ঢাকা বুড়িমারি ঢাকা বাস টিকেট, হোটেল বুকিং, পুর্বের ভিসা থাকলে এর কপি, সকল পুরাতন পাসপোর্ট জমা দিতে হবে।’
রাফিও বাদ যাবে কেন?সেও লম্বা চওড়া একটা বাণী দিতে লাগল,
——‘সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ হলো ভিসার জন্য এপ্লাই করার তারিখ! ট্রানজিট ভিসার মেয়াদ যেহেতু খুব কম মাত্র ১৫ দিন তাই খুব হিসাব নিকাশ করে এপ্লাই করতে হবে । সবচেয়ে বেস্ট টাইম হল যাত্রার তারিখ থেকে ৭ অথবা ৮ কর্ম দিবস আগে জমা দেয়া । এর চেয়ে বেশী আগে জমা দিলে টুর শেষ হওয়ার আগেই ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যেতে পারে । আবার এর চেয়ে পরে জমা দিলে ভিসা পাওয়ার আগেই ট্রাভেল ডেট পার হয়ে যাবে ।’
নীহারিকা ঠোঁঠে কামড় বসিয়ে বলল,
——‘বেশ কাজ আছে তো দেখি!’
রুদ্র ভেংচি কেটে বলল,
——-‘সবকিছু এত সহজে হয়ে যায় নাকি?ধর তোর বিয়ে,প্রথমেই বিয়ে হয়ে যায় নাকি?গায়ে হলুদ,আরো কত কি!তারপর বিয়ের আসরে বসবি।’
শুভা হাসলো!পার্স থেকে কারো কল আসার শব্দ পেলো শুভা,পাড়স খুলে একটু নামটা দেখলো।’ডাক্তারসাহেব’­ স্কিনে ভেসে উঠলো।বন্ধুদের কাছ থেকে নিজেকে আড়াল করতে কিছুটা দূরে চলে আসতে চাইলে,রুদ্র ধারালো কন্ঠে তাকে ডাক দিল,
——‘কই যাস একা একা?এদিকটায় এসে বস!’
শুভা তাড়া নিয়ে বলল,
——‘একটু দরকার আছে,তোরা এখানে থাকিস আমি আসতেছি!’
কথাটা বলে আর উত্তরের অপেক্ষা করলো না শুভা।লম্বা পায়ে হেটে তাদের থেকে আড়াল হয়ে গেল।নীহারিকা শুভার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে ভোরকে বলল,
——-‘কেমন একটা গিলটি ফিলিংস হচ্ছে মোর!শুভার এমন কি কাজ পড়ে যে আমাদের থেকে লুকোয়?’
ভোরও একই দৃষ্টিতে শুভার দিকে তাকিয়ে বলল,
——‘ঠিক নীহাপু!আপুই’র আলাদা এমন কি কাজ?আগে তো এমন করতো না।’
চলবে..
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে