কে কোথায় যায়? পর্ব ১৫

0
615

কে কোথায় যায়? পর্ব ১৫
শুভা পিছন থেকে হাত তালি দিয়ে বললো,
——–‘এটা আবার কোন গান?’
তামিম পিছনে ফিরে তাকালো।মিষ্টি হেসে বললো,
———‘না গান না,কিন্তু একদিন হবে অবশ্যই!’ শুভা হেসে এসে বসলো তামিমের পাশে!
মেঘলা আকাশ, বইছে হিমেল হাওয়া।সেদিন দিন ছিলো মেঘলা আকাশ। বিষন্ন মন উতল হয়েছে হেমন্তের ভেজা বাতসে নোনাপানি উচ্ছ্বসিত, উপসাগরে ঢেউ উঠেছে।প্রাগৈতিহাসিক দিনগুলোতে প্রাণীদের মধ্যে বিদ্যমান প্রতিহিংসা চরিতার্থ হয়েছে ব্যাপকবিস্তৃত লোভাতুর প্রলাপে!পৃথিবীতে চিহ্নিত কিছু মানুষ এখনো অধর্ম প্রচার করছে,সুগার কোডেড কুইনাইন।সে যাক!শুভার চুল বাতাসেতে উড়ছে,বারবার তামিমের মুখে এসে তামিমকে বিরক্ত করছে।তামিম শুভার চুলের ঘ্রাণ নিচ্ছিলো মাতাল হয়ে!শুভা চুল সরিয়ে নিয়ে খোপা করলো।সরু গলায় বললো,
——–‘চুলগুলো তোরে বিরক্ত করছে তাই খোপা করে নিলাম!’
তামিম নির্বিকার গলায় বললো,
——–‘থাক না ওরকম!বেশ’ই তো লাগছিল!’
শুভা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো,
———‘এমা, তাই নাকি?তাইলে তো মাথায় উড়না দেয়া দরকার।পরে যদি নজর লেগে যায় কারো!’
তামিম বিড়বিড় করে বললো,
——–‘নজর তো লেগেই গেছে অনেক আগে!’
শুভা ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো,
——-‘কি?কি বললি?’
তামিম দুষ্টু হাসি হেসে বললো,
——–‘আমি বলতেসিলাম তুই কেমন আছিস?’
শুভার হাসি নিভে এলো!সে ঠিক কেমন আছে?ভালো না খারাপ?মধ্যরকমের ভালো না খারাপ?পুরো রকমের খারাপ কি?
শুভা মুচকি হেসে বললো,
——–‘বেশ ভালো।’
শিকলে বাঁধা মানুষটি খাঁচায় বন্দি পাখির মতো মুক্তির জন্য ছটফট করে, তার অন্তরে আগুনের লেলিহান শিখা যখন তাকে দগ্ধ করে তখনও সবাই বলে সেতো বেশ সুখেই আছে। আহারে মানুষের চোখ শুধু বাইরেই দেখে, রক্ত মাংসের ভিতরে লুকানো অদৃশ্য হৃদয়টা কেউ দেখতে পায় না।
রাতে শরীর কাপিয়ে জ্বর এলো শুভার!এটা ক্যান্সারের ক্ষেত্রে ঘটবে স্বাভাবিক।তবে বন্ধুদের সবাই তো এটা জানে না,ওরা এই বিষয়টা অস্বাভাবিক ভাবেই নিচ্ছে!তামিম শুভার মাথায় পট্টি দিয়ে বললো,
——‘এভাবে জ্বর ক্যান বাধিয়েছিস?আলগা দরদ করবো বলে নাকি?’
শুভা মনে মনে বললো,
———‘প্রিয় জ্বর আর কিছুদিন থাকো, অন্তত এই বাহানায় আর কিছুদিন সে আসুক আমার কপালে হাত ছুঁয়ে ছুঁয়ে, সে যদি আমার ভিতরের অসুখ বুঝতে পারে!’
নীহারিকা রাগে গজ গজ করতে করতে বললো,
——–‘কি রে?বয়রা হয়ে গেছোস নাকি?’
শুভা ধ্যান ভেঙ্গে বললো,
——–‘হু শুনতেছি!’
রাফি হুংকার ছেড়ে বললো,
——–‘তাইলে বল!’
শুভা কাপা কাপা গলায় বললো,
——–‘এমনিই হয়ে গেছে জ্বর!জ্বরের সাথে আমার আত্মীয়তা নাকি যে কখন আসবে বলে আসবে?’
তামিম পট্টি কপাল থেকে নিয়ে আবার ভিজাতে ভিজাতে বললো,
——-‘পাগলামি বন্ধ কর!নিজের খেয়ালও রাখতে পারিস না ঠিকমতো।তোরে বিয়ে করে তোর জামাই কপালে নিজের ঘুষি দিবে!’
শুভা কপাল কুচকালো!রুদ্রমূর্তি ধারণ করে বললো,
——–‘শয়তানের বাচ্চা!শয়তান উৎপাদনের কারখানা শালা!সর!’
বন্ধুদের এত এত ভালোবাসা যে তার কপাল সহ্য করতেই চাচ্ছে না।সে হয়তো আর থাকবে না এই দুনিয়াতে,থাকবে না এই পাগলদের মাঝে!চোখের কোণা তখন ভিজে এলো তার।ভোর সেটা লক্ষ করে বললো,
——-‘আপুই তোর চোখে পানি যে?এ্যানি প্রবলেম আপুই?’
শুভা কথাটা যেন কর্নপাতই করলো না।বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,
——–‘এক হঠাৎ ঝড়ো হাওয়ার মতোই প্রিয়জন হয়তো হয়েছিলাম। ভালোবাসায় ছেয়ে ছিলো সবটা আমার।কিন্তু হঠাৎ করেই হয়ে গেলো সব এলোমেলো হয়ে গেল!সব থাকুক অনুকূলে,আমিই বরঞ্চ যাই চলে পরপারে!’
ইতিমধ্যে চোখের কোটর থেকে এক ফোটা জল গাল বেয়ে পড়ে গেল শুভার।তামিম এবার রুদ্রমূর্তি ধারণ করে বললো,
——-‘তুই সত্যিই বয়রা হয়ে গেছোস!কানে সমস্যা দেখা দিছে নাকি?পরে কানের পর্দা ফেটে গেলে আমাদের কথা শুনবি কি করে?আর আমার ম….’
কথাটা অসম্পুর্ণ রেখেই সে সমাপ্ত করলো তার কথার।শুভার যেন এই অস্পুর্ণ কথাটার জন্য ব্যাকুলতা বেশি!সে নির্বিকার গলায় বললো,
——‘তোর ম কি?কি যেন বলতে চাইছিলি? বল না।’
তামিম কাপা কাপা গলায় বললো,
——–‘না না কিচ্ছু না!’
রুদ্র এবার মুখ খুললো।রেগে গজ গজ করতে করতে বললো,
——-‘মেয়েটা অসুস্থ!তোদের কি মায়া দয়া নাই?’
নীহারিকার যেন এতক্ষণে হুশ এলো।সে শুভার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,
——-‘তো আজ রাত কে শুভার খেয়াল রাখবে?’
তামিম নিদ্বির্ধায় বললো,
——-‘আমি থাকবো!’
চলবে…
©ইভা আহমেদ চৌধুরী
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে