কালো মেঘ পর্ব :- ০২

0
2063

গল্প :- কালো মেঘ
পর্ব :- ০২
Writer :- Kabbo Ahammad
.
.
.
-: নুসরাত গলায় ওড়না পেঁচিয়ে পাখার সাথে ঝুলে আছে! তার বাবা দৌঁড়ে গিয়ে নুসরাতের পা ধরে উঁচু করে রাখলেন। তার চিৎকার শুনে আশেপাশের সবাই চলে আসলো। নুসরাতকে নামিয়ে হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হলো। হাসপাতালে এসে নুসরাতের বাবা কাব্যকে ফোন করে বিষয়টা জানিয়ে দিলো। তখন কাব্য মাত্র খাবার টেবিলে বসবে আর তখনই তার কাছে ফোন কল আসে। এমন একটা সংবাদ শোনার পর কাব্য খাবার টেবিলে বসার শক্তিটুকু হারিয়ে ফেললো। তারপর নাহিদা আপাকে কিছু না জানিয়ে হাসপাতালের দিকে ছুটলো। নাহিদা আপা খাবার নিয়ে এসে কাব্যকে পেলো না। বেশ কয়েকবার ফোন করার পর অপর পাশ থেকে কেউ একজন ফোন ধরলো। নাহিদা আপা একটু অবাক হলেন কারণ, কণ্ঠটা কাব্যর না! কিন্তু কাব্য তো মাত্র ই এখানে ছিল। এতটুকু সময়ের ভিতর কোথায় চলে গেলো? ফোনের অপর পাশেই বা কে? একটু চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

–“কে বলছেন আপনি? আর কাব্য কোথায়?

কিন্তু বিপরীত পাশ থেকে কোনো উত্তর পেলেন না। তাই আবার জিজ্ঞেস করলেন।

–“কী হলো কথা বলুন? কে আপনি? যার ফোন তার কাছে দেন।

কিন্তু এবারও কোনো উত্তর মিললো না। ফোনের লাইনটা কেটে দিলো। বাসা থেকে বেরিয়ে রাস্তায় চলে আসলেন। আশেপাশে তাকিয়ে কাব্যকে খুঁজতে লাগলেন। কিন্তু কোথাও কাব্যকে দেখতে পেলেন না। তারপর রুমে এসে আবার কল দিলো কাব্যকে। এবার অপর পাশ থেকে একটা মেয়ে বললো।

“দুঃখিত! এই মুহূর্তে আপনার ডায়েলকৃত নাম্বারটিতে সংযোগ দেওয়া সম্ভব না।

নাহিদা আপার চিন্তা ক্রমাগত বাড়তে লাগলো। কোথায় গেলো? ফোন ধরলো কে? এখন আবার বন্ধ বলছে! মাথায় কাজ করছে না। কী করবে বুঝে উঠতে পারছে না। হঠাৎ তখন কলিং বেল বেজে উঠলো। কলিং বেলের আওয়াজে নাহিদার বুক কেঁপে উঠলো। দৌঁড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলেন। মিমি এসেছে স্কুল থেকে। রুমে ঢুকতে ঢুকতে মিমি জিজ্ঞেস করলো।

–“মা তোমাকে কেমন চিন্তিত মনে হচ্ছে?

নাহিদা তখন কিছু না বলে দরজা লাগিয়ে দিয়ে সোফার উপর বসলেন। মিমি ঘাড় থেকে স্কুলের ব্যগ রাখে তার মায়ের কাছে এসে বসলো। মায়ের ঘাড়ে মাথা রেখে আবার জিজ্ঞেস করলো।

–“কী হলো মা? চুপ করে আছো কেন? বলো কী হয়েছে?

–“তোর মামা এসেছিল।

কাব্য মামা’র কথা শুনে খুশিতে মিমি লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালো।

–“কোথায় মামা?

–“লাফালাফি করিস না। এখানে চুপ করে বস।

মিমির হাসি মুখটা সাথে সাথেই অন্ধকার হয়ে গেলো। কিছু একটা হয়েছে এটা মিমি বুঝতে পেরেছে।

–“মা কী হয়েছে বলবে??

তারপর নাহিদা শুরু থেকে সবকিছু খুলে বললো। মিমিও বেশ চিন্তায় পড়ে গেলো। কিছুক্ষণ নীরবতা পালন করে মা’কে বুঝ দেবার জন্য বললো।

–“মামা হয়তো রাস্তায় কোনো কাজে গিয়েছে। সময় হলে ঠিক ই চলে আসবে। তুমি চিন্তা করো না তো মা।
.
.
.
ওদিকে জাফর মিয়া হাসপাতালের বারান্দায় একটা বেঞ্চের উপর চুপ করে বসে আছে। চিৎকার করে কান্না না করলেও, তার চোখ বেয়ে পানি পড়েই যাচ্ছে। মনে হয় কেউ সুই দিয়ে তার চোখ ছিদ্র করে দিয়েছে। তার আশেপাশে অনেকেই আছে। কেউ কেউ তার কষ্টে দুঃখ প্রকাশ করছে, আবার কেউ কেউ নুসরাতের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছে। কিছুক্ষণ পর একজন ডাক্তার তাদের দিকে এগিয়ে আসলেন। ডাক্তারকে দেখে জাফর মিয়া দৌঁড়ে ডাক্তার এর সামনে আসলো। ডাক্তার একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো।

–“আল্লাহ আপনাদের উপর রহম করছেন। ফাঁসটা তেমন ভাবে লাগেনি। আর একটু দেড়ি করলে হয়তো আপনার মেয়েকে বাঁচানো সম্ভব হতো না। এখন সে সুস্থ আছে। তবে ঘাড়ে আঘাত লেগেছে খুব।

ডাক্তার এর কথা শুনে জাফর মিয়া খুশিতে ডাক্তারকে জড়িয়ে ধরলেন।

এদিকে রাসেল খোঁজ পেয়ে হাসপাতাল ছুটে চলে আসে। সম্পূর্ণ হাসপাতালে খুঁজতে খুৃজতে অবশেষে নুসরাতের খোঁজ পেলো। জাফর মিয়া নুসরাতের মাথার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলেন। সে জানে তার মেয়ে ভুল করেছে অপরাধ করেছে। তবুও সন্তান তো তাই ফেলে দিতে পারেন না। এতকিছুর পরেও আঁদরে কমতি রাখলেন না। হঠাৎ খেয়াল করলেন তার পাশে রাসেল দাঁড়িয়ে আছে। রাসেলকে দেখার সঙ্গে সঙ্গে তার শরীর জ্বলে উঠলো। রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন জাফর মিয়া। অন্য কোনো সময় হলে হয়তো রাসেলকে বকাঝকা করতেন। কিন্তু আজ নুসরাত অসুস্থ থাকার কারণে কিছুই বললেন না। বললে হয়তো নুসরাত কষ্ট পেতে পারে। মৃত্যুর পথ থেকে ফিরে এসেছে তার মেয়ে, তাই আর কষ্ট দিতে চান না।

রাসেল নুসরাতের বাবা’কে দেখে একটু বিভ্রান্ত বোধ করলো। তিনি রুম থেকে চলে যাবার পর রাসেল নুসরাতের একদম পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। নুসরাতের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলো। নুসরাত রাসেলকে দেখে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নুসরাতের মন চাচ্ছে রাসেলের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে। মন চাচ্ছে চিৎকার করে রাসেলকে অপমান করতে। কিন্তু তার গলা দিয়ে কোনো আওয়াজ বের হচ্ছে না। তখন রাসেল আরও পাশে এসে দাঁড়ালো। নুসরাত তখন ভাঙা ভাঙা সুরে ফিসফিস করে বললো।

–“তুমি আমার সামনে থেকে চলে যাও!

রাসেল এই কথাটা শুনে বেশ অবাক হলো। কারণ এমন একাট কথা সে নুসরাতের কাছ থেকে আশা করেনি। তখন ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো।

–“তুমি এমন করছো কেন? রেগে আছো মনে হয় আমার উপর?

–“আমি এখন কথা বলতে পারছি না। আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। প্লিজ রাসেল তুমি চলে যাও আমার সামনে থেকে।

রাসেলর অবাকের মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ছে। নুসরাতের প্রতিটা কথা তাকে অবাক করতে বাধ্য করছে।

–“আচ্ছা আমার অপরাধটা কী শুধু এতটুকু বলো?

নুসরাত ঘার নাড়াতে পারছে না। অনেক কষ্টে অন্যদিক ফিরে বললো।

–“তোমার কোনো অপরাধ নেই। প্লিজ তুমি এখান থেকে চলে যাও রাসেল। আমার আর সহ্য হচ্ছে না।

রাসেল আর নিজেকে সামলে রাখতে পারলো না। প্রচণ্ড রাগ লাগছে। মন চাচ্ছিল নুসরাতের গালে টেনে একটা চর মারতে। কিন্তু এটা এখন কিছুতেই সম্ভব না। তাই রাগটাকে কন্ট্রোল করার জন্য পাশে থাকা চেয়ারটায় জোরে একাটা লাত্থি মেরে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। শব্দ পেয়ে জাফার মিয়া এগিয়ে আসে রুমের দিকে। রাসেল মাথা নিচু করে বেরিয়ে গেলো। জাফর মিয়া চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকিয়ে রইলেন। তারপর নুসরাতের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন।

–“কী হয়েছে মা??

নুসরাত কোনো কথার জবাব দিলো না। তার চোখ বেয়ে শুধু পানি পড়ছে। কান বেয়ে চোখের পানি গড়িয়ে বালিশ ভিজে যাচ্ছে। জাফর মিয়া আবার জিজ্ঞেস করলেন।

–“কী হলো চুপ করে আছিস যে?

নুসরাত এবারও চুপ করে রইলো। কোনো উত্তর দিলো না। জাফর মিয়া নিজের মেয়ের চোখের পানি সইতে পারলেন না। তাই রুম থেকে বেরিয়ে হাসপাতালের বারান্দায় গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে রইলেন।

নুসরাত উপরের সিলিং এর দিকে তাকিয়ে আছে। তার মাথা বরাবর সোজা একটা পাখা ঘুরছে ধীরে ধীরে। পাখা ঘোরা দেখতে দেখতে নুসরাত হারিয়ে গেলো তিন বছর পিছনের স্মৃতিতে।
.
.
.
সকালবেলা বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে নুসরাত। উদ্দেশ্য কলেজে যাবে, তাই রিকশার জন্য অপেক্ষা করছে। চারপাশে কঁড়া রোদ। গা পুঁড়ে যাবার উপক্রম। বেশ কিছুক্ষণ রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে অধৈর্য হয়ে গেলো। তাই আর কিছু না ভেবে হাঁটা শুরু করলো। কিছুদূর যাবার পর হঠাৎ চারপাশ অন্ধকার হয়ে আসলো। আকাশে কালো মেঘ জমেছে। বৃষ্টি হবে। প্রচুর গরম পড়েছে। বৃষ্টি আসছে ভেবে একটু খুশি হলেও আবার চিন্তায় পড়ে গেলো। তার কাছে ছাতা নেই। ভিজে ভিজে তো কলেজে যাওয়া সম্ভব না। তাছাড়া অনেক দেরি করে ফেলেছে। এসব ভাবতে ভাবতে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো। আশেপাশে তাকিয়ে একটু ছায়া খু্ঁজতে লাগলো কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। হঠাৎ পিছন থেকে কেউ একজন তার মাথার উপর ছাতা ধরলো। নুসরাত বেশ চমকে উঠলো। পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে, তাদের এলাকার বখাটে ছেলেদের ভিতর এ একজন। নাম রাসেল। তবে আজ রাসেলকে দেখে মনে হয় না সে বখাটে, মনে হচ্ছে সে আজ আদর্শবান একজন পুরুষ।

এভাবে প্রায় তাদের রাস্তায় দেখা হতো। কথা হতো। দিনদিন তাদের সম্পর্ক টা ভালোর দিকে যেতে লাগলো। আগে যে ছেলেটাকে দেখলে নুসরাত মুখ ঘুরিয়ে চলে যেত, আজ সেই ছেলেটাকে একদিন না দেখলে ভালো লাগে না। ধীরে ধীরে একে অপরকে ভালো লাগতে শুরু করে। আর এই ভালো লাগা থেকে শুরু হয় ভালোবাসা। নুসরাতের বাবা তাদের এই সম্পর্ক কখনও মেনে নিবে না। তাই তারা গোপনে বিয়ে করে ফেলে! বিয়ে করার কয়েক মাস পরেই নুসরাতের বাবা জাফর মিয়া বুঝতে পারে, তার মেয়ের চলাফেরা ইদানীং ভালো না। তাই ছেলে খুঁজতে থাকে। এবং পেয়েও যায় কাব্যকে।

তারপর কাব্য সম্পর্কে নুসরাতকে বললে সে সোজা না বলে দেয়। জাফর মিয়া হার্টের রুগী। একদিন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। আর সেই সুযোগে একটু চালাকি করে নুসরাতকে এই বিয়েতে রাজি করান। বাবা’র সুস্থতার কথা ভেবে নুসরাত কাব্যকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যায়। কিন্তু তার পরেই নতুন একটা সমস্যার সৃষ্টি হয়!!
.
.
চলবে……………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে