আমি তুমিতেই আসক্ত পর্ব-০৮

0
1764

#আমি_তুমিতেই_আসক্ত।
#পর্ব_৮
#সুমাইয়া_মনি।

-“স্যার মেয়েটি কে?” নিভ্রকে দেখা মাত্রই ক্রোধ নিয়ে বলে ওঠে নবনী।

নবনীর কন্ঠে এমন রাগ আজ প্রথম নয় এর আগেও দেখেছে। কিন্তু আজকের রাগ যেন অন্য কিছু বলছে। জিজ্ঞেস নয় আদেশ করছে। চোখেমুখে এক রাশ চিন্তিত ছাপ। নিভ্র মাত্রই কফি বানিয়ে কিচেন থেকে বাহিরে এসেছে। আর তখনই নবনীর তীক্ষ্ণত্ব কন্ঠের স্বর শুনে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকে। তারপর মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলে,
-“সে একটি মিসিং কেস নিয়ে এসেছে। আপাতত সে আমার গেস্ট হিসেবে পরিচিত।”

শুনে বুকের ভেতর থেকে যেন ভারী পাথরটা সরে গেল নবনীর। স্বস্তির নিঃশ্বাস ত্যাগ করে নীরবে। নিভ্র ফের নবনীর উদ্দেশ্যে বলে,
-“গাছে পানি দেওয়া শেষ?”

-“জি!”

-“কলেজে যাও।”

-“আচ্ছা।” বলেই মেয়েটির দিকে একবার তাকিয়ে প্রস্থান করে।

নিভ্র এবার মেয়েটির দিকে তাকায়। বলে,
-“মিস.জায়রা আপনি বসুন।”

জায়রা বসে। সে নিভ্রর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“আপনি কি থানায় গিয়ে কেইস ফাইল করবেন?”

-“জি,আপনি কিছুক্ষণ বসুন। কফি খা’ন, আমি রেডি হয়ে আসছি।”

মাথা দুলিয়ে সায় দেয় জায়রা। নিভ্র তার কক্ষে এসে দ্রুত রেডি হয়ে নেয়। আজ ব্রেকফাস্ট অফিসে করবে। কিছুক্ষণ পর গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে থানার উদ্দেশ্যে। নবনী মাঝ রাস্তায় নিভ্রর গাড়ি দেখতে পায়। কেন জানি ওর মনটা খচখচ করছে। আনমনে হেঁটে চলেছে সে।
.
গাড়ি তার নিজ গতিতে চলছে।হঠাৎ মাঝ পথে জায়রা তার ব্যাগ থেকে পিস্তল ফের করে নিভ্রর দিকে তাক করে ধরে। বলে,
-“চালাকি তো করবেনই না অফিসার। তাহলে আমার পিস্তলের একটা গুলি, আর আপনি সোজা ওপরে।”

নিভ্র হেসে ফেলে। সামনের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
-“পিস্তল বের করতে একটু দেরি করে ফেললেন না মিস.জায়রা। আরো আগে বের করা উচিত ছিল।”

ভ্রু কুঁচকে ফেলে জায়রা। নিভ্রর কথার ধরণ দেখে বোঝা যাচ্ছে, পিস্তল তাক করাতেও তার কিচ্ছু যায় আসে না। মনে হচ্ছে সে আগে থেকেই এমন আলামত পেয়েছিল। জায়রাকে এভাবে থম মেরে বসে থাকতে দেখে নিভ্র শব্দ করে হাসে। বলে,
-“প্রশ্ন জানছে মনে?”

জায়রা কিছু বলে না। চুপ করে রয়। নিভ্র তাচ্ছিল্য স্বরে বলে,
-“ক্রিমিনালদের চোখে মায়া থাকে না। আপনার চোখ দেখেই আমি বুঝতে পেরেছি। সেথায় মিথ্যের সাগর বইছে।”

-“বাহ! পুলিশ অফিসারের তো দেখছি ভালোই গুন আছে। তবে এখন আর কোনো লাভ নেই।”

নিভ্র ফের জায়রার কথায় অবজ্ঞাসূচক হাসে। এ হাসি যেন বলে দিচ্ছে নিভ্রর শান্ত ভঙ্গির মধ্যে থাকা বিস্তৃত হিংস্রতার ছলাকলা। কিলিং লুক নিয়ে জায়রার চোখের দিকে তাকিয়ে সানগ্লাস পড়ে। তারপর ঠোঁট কুঞ্চিত করে জিভের সাহায্যে শিস বাজাতে আরম্ভ করে।
এরি মাঝে জায়রার চোখ আস্তেধীরে ঝাপসা হয়ে আসছে। মাথা ঘুরছে। পিস্তল পড়ে যায় হাত থেকে। সে নিজেও ঢলে পড়ে সিটে। অজ্ঞান হয়ে যায় জায়রা নামের অচেনা মেয়েটি। নিভ্র এক নজর তাকিয়ে বাঁকা হেসে মনোযোগ দিয়ে গাড়ি চালাতে থাকে।
আগে থেকেই নিভ্রর জানা ছিল মেয়েটি ছদ্মবেশে অন্য কোনো মতলবে এসেছে। এভাবে এত সকালে কেউ কেন নিভ্রর বাড়িতে আসবে, তাও মিসিং কেস নিয়ে। আগেই সে আইডিয়া করেছিল, কোনো আগন্তুক শত্রু তাকে মারার জন্য বা ফাঁদে ফেলার উদ্দেশ্যে প্লান করে পাঠিয়েছে তাকে। যেটা বুঝতে নিভ্রর অসুবিধা হয় না। তাই তো নিভ্র নিজেও মাথা খাঁটিয়ে চাল চালে। কফির মধ্যে এমন এক মেডিসিন মিশিয়ে দেয় যার ইফেক্ট দশ-পনেরো মিনিট পর কাজ শুরু করে। নিভ্র জায়রার আসল উদ্দেশ্য জেনেও চুপ ছিল। শুধু অজ্ঞান হবার অপেক্ষা করছিল। আর সে সফল হয়।
.
.
মায়া নবনীর জন্য কলেজের বাহিরে অপেক্ষা করছিল। দশ মিনিট আগে ফোন দিয়ে বলেছে বাড়ি থেকে বের হয়েছে। কিন্তু এখনো না আসার কারণে এখন তার অপেক্ষা করতে হচ্ছে। কঁড়া রোদ। ভ্যাপসা গরম অনুভব করছে। বার বার ওড়না দিয়ে বাতাস করছে। বিরক্ত মায়া।

-“হাই!” বলে কিউটি স্মাইল দিয়ে মায়ার সামনে এগিয়ে আসে জিনান।

মায়া জিনানকে দেখেই অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়ায়। অপমানে মুখ থমথমে হয়ে আসে জিনানের। তবুও সে আগ বাড়িতে মায়ার সামনে এসে বলে,
-“আমাকে দেখে রাগ হচ্ছে না-কি বিরক্ত?”

-“দুটোই!” অকপটে বলে ওঠে মায়া।

-“স্যরি বললে কী রাগ,বিরক্ত ভেনিস হবে?” সুন্দর করে গুছিয়ে কথাটা বলে মায়ার চোখের পানে সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকায়।

মায়া জিনানের দিকে একবার তাকিয়ে নজর সরিয়ে বলে,
-“এখানে কেন এসেছেন?”

-“আমার উত্তর কিন্তু এটা নয়। প্রশ্ন আমি আগে করেছিলাম।”

মায়া বিরক্তিতে মুখ থেকে ‘চ’ উচ্চারণ করে। একে তো নবনীর খবর নেই, তার ওপর গরম। আবার এর মধ্যে হাজির হয়েছে জিনান। সব মিলিয়ে মায়া বিরক্তিতে মাখোমাখো।
উত্তর না দিয়ে চুপ থাকতে দেখে জিনান ফের বলে ওঠে,
-“বিরক্ত হচ্ছেন বুঝতে পেরেছি। আমি কিছু কথা বলেই চলে যাব।”

মায়া এবারও উত্তর দেয় না। দেওয়ার প্রয়োজনও মনে করে না। জিনান নিজেই বলে,
-“সেদিনের জন্য স্যরি। আমি দ্বিতীয় বার আপনাকে থানায় দেখি। আমার ভালো গেলে যায় আপনাকে। ভালোবাসার মধ্যে আমি যাব না। ডিরেক্ট বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছি। আপনি কী আমাকে বিয়ে করবেন?” শীতল একটি বাতাস যেন মায়ার শিরদাঁড়া দিয়ে বয়ে যায়। বুকের মাঝে অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে। বেশ ক’জন ছেলের কাছ থেকে সে প্রপোজ পেয়েছে। কিন্তু আজ কোনো ছেলের মুখ থেকে বিয়ের প্রস্তাব পাবার অনুভূতি সে কিছুতেই প্রকাশ করতে পারছে না। সরু চোখে চেয়ে রয় জিনানে পানে। মৃদু হেসে জিনান ফের বলে,
-“এভাবে তাকাবেন না। আমি সত্যি আমার অর্ধাঙ্গিনী বানাতে চাইছি আপনাকে। ভেবে বলবেন। নাম্বার এই ভিজিটিং কার্ডে আছে। কল দেওয়ার দরকার নেই। যদি আপনি রাজি থাকেন জাস্ট একটা মিসড কল দিবেন। আমি হ্যাঁ সংকেত পেয়ে যাব। আর যদি একান্তই না বলে দিতে চান, তবে নো ডিরেক্ট কল, নো মিসড কল, নো টেক্সট। আমি আপনার জীবন থেকে সরে যাব। আর কক্ষনো আমি আপনার সামনে আসব না। ভালো থাকবেন।” কার্ডটি মায়ার হাতে গুঁজে দিয়ে জিনান জায়গা প্রস্থান করে। যতক্ষণ না আড়াল হচ্ছে ততক্ষণ মায়া জিনানের যাওয়ার পানে চেয়ে রয়। কোনো এক ঘোরের মধ্যে চলে গেছে সে।

আচমকাই সজোরে নবনীর থাপ্পড় পড়ে মায়ার পিঠে। ঘোর কেটে যায় মায়ার। নবনীর দিকে তাকিয়ে প্রচুর ঘামছে সে। নবনী টেরা চোখে তাকায়। বলে,
-“হলো কি? ”

-“বি..বিয়ে..” কাঁপা স্বরে আনমনে বলে মায়া।

-“কী! বিয়ে?..”

মায়া চোখ পিটপিটয়ে নবনীর দিকে তাকায়। বলে,
-“তুই ক্যান্টিনে চল বলছি।” হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগল মায়া।
————————-
-“আপনি কী আমার সঙ্গে কথা বলতে বিরক্ত বোধ করছেন?” তনুজা নরম স্বরে প্রশ্নটি করে বসে আপনকে।

আপন ইনিয়ে-বিনিয়ে বলে,
-“আসলে আমি একটু ব্যস্ত আছি। তাই পরে কথা বলি?”

-“ঠিক আছে। ফ্রি হলেই আমাকে কল দিবেন।”

-“শিওর!” বলেই তনুজার আগে আপন ফোন কেঁটে দেয়। স্বাভাবিক ভাবে নিশ্বাস ফেলে পাশের বইটি নিয়ে পড়তে আরম্ভ করে সে।

-“এই তোর ব্যস্ততা?” অকপটে বলে আদি। নজর তার ফোনের ওপর।

আপন বইয়ের ভাঁজে হাত রেখে বিরক্ত স্বরে বলে,
-“বললাম তো আমার ঘ্যানঘ্যান ভালো লাগে না।”

-“কেমন পুরুষ তুই? বিয়ের আগে সবাই হবু বউয়ের সঙ্গে ফোনালাপে ব্যস্ত থাকে। আর তুই কি-না কথাই বলতে চাইছিস না।”

-“সবার সঙ্গে মিলালে তো হবে না। এখন কথা বলিস না বই পড়তে দে আমাকে।”

-“লুস।”

-“আদি!”

-“হুম।”

-“আমি ঢিলা না।”

-“ঢিলা কখন বললাম।”

-“একটু আগে ইংরেজিতে লুস বলেছিস।”

-“লুস বলেছি, ঢিলা তো বলি নি।”

-“একই তো হলো।”

-“ব্রো, আমি লুস তোকেই বলেছি সেটা তুই কি কর বুঝলি?”

-“কথা বাড়াস না আদি।” বিরক্ত স্বরে।

-“অভ্যেস তোর, আমার না।”

-“ইডিয়ট!”

-“থ্যাংক’স!”

আপন আর কিছু বলে না। রেগে বইয়ে ভাঁজে মুখ ডোবায়। আদি একবার আপনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ফোনের স্ক্রিনে তাকায়। আপনকে ছোট্ট টর্চার করল তখন মিথ্যে কথা বলার জন্য। যেটা আপন বুঝতে পারেনি।
.
.
.
#চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে