আফিম বড্ড নেশালো পর্ব-১৭+১৮

0
2716

#আফিম_বড্ড_নেশালো
পর্বঃ১৭
লেখিকাঃমাহযাবীন

“আপনি দয়া করে কক্ষ ত্যাগ করুন,আফিম।আমি একা থাকতে চাইছি।”
নিজের কান্না যথা সাধ্য আটকাবার চেষ্টা করে শান্ত কন্ঠে কথাটি বলে নাফিয়া।অবাধ্য অশ্রু কণা গাল বেয়ে গড়িয়ে পরছে তার।আফিম অসহায় দৃষ্টিতে কিছুটা সময় নাফিয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে ধীর পায়ে নাফিয়ার দিকে এগিয়ে আসতে আরম্ভ করে।
নাফিয়ার একদম কাছে এসে নিজের ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে আলতো করে নাফিয়ার গাল বেয়ে পরা চোখের অশ্রু স্পর্শ করে আফিম।চোখের পানি মুছে দিয়ে নাফিয়াকে এক টানে নিজের বুকে নিয়ে এসে বলে ওঠে,
-তুমি একা নও তাই একা ছাড়ার প্রশ্নই ওঠে না।
কথাটি বলে একটু থামে আফিম।নাফিয়াকে বুকের মাঝে আঁকড়ে ধরে নিজের চোখজোড়া বুজে বলে ওঠে,
-তোমাকে শক্ত হতে হবে,মিসেস.আফিম ইবনান।এ রোগের আতংকে ভেঙে পরা চলবে না।বরং সাহসের সাথে মোকাবেলা করতে হবে।আমি আছি তো প্রতিটি কদমে তোমার ঢাল হয়ে।
আফিমের বুকের সাথে লেপ্টে নিজের ভেতরের অনুভূতিগুলোকে অশ্রু রূপে বিসর্জন দিয়ে নিজের ভেতরের কষ্টটাকে কিছুটা কমানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে নাফিয়া।অনেকটা সময় এভাবেই চলার পর ধীরে ধীরে আফিমের বুক হতে মাথা উঠায় সে।মৃদু স্বরে বলে ওঠে,
-এ রোগ আমার সৌন্দর্য কেরে নিবে,আফিম।
-পারবে না।
-এমনটি আপনি আমার মন রাখতে বলছেন কিন্তু সত্যি টা এটাই।
নাফিয়ার কথায় তাকে নিজের বাহুবন্ধনী হতে মুক্ত করে তার গাল আলতো করে দু’হাতের মাঝে নিয়ে আফিম বলে ওঠে,
-তোমার সৌন্দর্য তোমার ভাসা ভাসা মায়াবী এই চোখ জোড়ায়,খাঁড়া এই নাকটিতে এবং এই মুগ্ধ করা ঠোঁটে যা প্রথম দেখাতেই আমাকে ঘায়েল করেছিলো।সেই সাথে তোমার সব থেকে বড় সৌন্দর্য তোমার মানসিকতা,চিন্তাধারা এবং চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য যা প্রতিনিয়ত আমায় মুগ্ধ করে।এসবের মাঝে,শরীরের সৌন্দর্য তো আকর্ষণ মাত্র যা সময়ের সাথে সাথে শেষ হয়েই যায়।
কান্নার বেগ বৃদ্ধি করে নাফিয়া বলে ওঠে,
-আপনি শুধু মাত্র আমার কষ্ট লাঘব করবার জন্যেই এগুলো বলছেন,আফিম।কিন্তু একটি মেয়ের শারীরিক সৌন্দর্য কতোটা গুরুত্বপূর্ণ তা আমি জানি।
-যে ব্যক্তিত্বের মুগ্ধতায় আটকে যায় তার কাছে রুপ মূল্যহীন।আমি তোমাতে মুগ্ধ মিসেস.আফিম ইবনান,তোমার রুপে নই।তাই তোমার শারীরিক সৌন্দর্য আমার কাছে গুরুত্বহীন।
-আপনি আমার সাথে সুখি থাকবেন না,আফিম।
-তোমার উপস্থিতিই আমার সুখ।রাতে আমার বুকে তোমার অস্তিত্ব অনুভব করা টা আমার সুখ।অফিসের কাজ বেশি হলে রাত জেগে যখন কাজ করতে হয় তখন তুমিও রাত জেগে কাজে আমার সাহায্য করো।সে সময় তোমার মুখে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে।কাজের ফাঁকে ফাঁকে তোমার সেই রুপ দেখাটা আমার সুখ।বিষন্ন হয়ে কোথাও বসলেই যখন এক কাপ কফি হাতে আমায় কোম্পানি দিতে হুট করেই চলে আসো সেই সময়টুকু আমার সুখ।কাজের চাপে মাথা ব্যথা করলে যখন কিছু বলে উঠার আগেই কপালে তোমার হাতের স্পর্শ পাই ঠিক ঐটাই আমার সুখ।মাঝ রাতে স্লো মিউজিকে যখন ড্যান্স করার ইচ্ছে হয় তখন তোমার সঙ্গটাই আমার সুখ।এমন আরো অসংখ্য সুখ শুধু তুমিই আমায় দিতে সক্ষম, মিসেস. আফিম ইবনান।
কান্নার বেগ কমার জায়গায় আরো বেড়ে গেলো নাফিয়ার।অসংখ্য অনুভূতিরা তার মনে এসে জায়গা করে নিচ্ছে।আফিমের উচ্চারিত প্রতিটি শব্দে নিজেকে ভীষণ সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে তার।এতো টা ভালোবাসা সে তার স্বামী হতে পাবে তা ভাবনাতিত ছিলো তার।কিন্তু সে এটিও কোনোভাবে ভুলে যেতে পারছে না যে,তার এ শারীরিক ত্রুটি কোনো সামান্য বিষয় নয়।সারাজীবন নারীত্বে এ ত্রুটি নিয়েই কাটবে তার।এ ক্রুটি নিয়ে সে কোনো ক্রমেই আফিমের যোগ্য নয়।তবে আফিম কেনো থাকবে তার সাথে?আফিমের মতো এতো সুন্দর ছেলে চাইলেই কোনো আগুন সুন্দরী মেয়েকে বৌ বানিয়ে আনতে পারে তাহলে আফিম কেনো সারাটি নিজের জীবন তার সাথে কাটিয়ে সমঝোতা করে যাবে?এখন হয়তো আফিম আবেগের বসে এসব বলছে কিন্তু ক’দিন পর হয়তো এই আবেগ টা আর থাকবে না।তখন হয়তো সে নিজের জন্য সুন্দর কোনো মেয়েকেই বাছাই করে নিবে।ঠিক তখন কোথায় যাবে নাফিয়া?কিভাবে মেনে নিবে সে সবটা?তখনের পাওয়া কষ্টটার থেকে এখনই আফিমকে ছেড়ে দেওয়াটিই উত্তম নয় কি?
অল্প সময়ের মাঝেই অনেকটা ভেবে নাফিয়া অশ্রুসিক্ত নয়নে আফিমের চোখে চোখ রেখে বলে ওঠে,
-এসব আবেগে বলছেন আপনি।আমার উপর দয়া হচ্ছে আপনার সেজন্য বলছেন।আমার অপারেশনের পর আমি কুৎসিত হয়ে যাবো।তার আগেই আপনি আমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করুন।
কথাটি শোনা মাত্রই যেনো আফিমের মাথায় রক্ত উঠে গেলো।দু’হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে চোখ জোড়া বুজে নিয়ে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে সে।মুহূর্তেই ফর্সা চেহারা রক্তিম বর্ণ ধারণ করছে তার।আফিমের এমন রাগ ১০ মাসে এই প্রথম দেখলো নাফিয়া।ভীষণ ভয় লাগছে তার আফিমের এমন রূপে।কথাটি বলা যে কতোটা ভুল হয়েছে তা এখন বুঝতে পারছে নাফিয়া।কিন্তু তার কাছে তো কথাটি সঠিকই মনে হচ্ছে।
নাফিয়ার মানসিক অবস্থার কথাটি ভেবে কিছুটা সময় নিয়ে আফিম নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে।কিছুটা সময় চোখ বুজে থাকবার পর নিজের রাগ টা নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হলো সে।অতঃপর চোখ মেলে নাফিয়ার দিকে তাকিয়ে সে বলে ওঠে,
-একবার বলেছো,বলেছো! কিন্তু দ্বিতীয়বার সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা মাথায় আনলেও মেরে এখানেই পুঁতে রেখে দিবো।আফিম ইবনানের রাগ সমন্ধে তুমি এখনো অবগত নও।
কথা বলার সময় আফিমের কন্ঠস্বর ও লাল হওয়া চোখজোড়া দেখে ভয়ে মাথা নুইয়ে নেয় নাফিয়া।আঁখির জল যেনো আজ তার ফুরচ্ছেই না।আফিম কিছুটা সময় ক্রন্দনরত নাফিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।নাফিয়ার চোখের অশ্রুগুলো আফিমের হৃদয়কে পোড়াচ্ছে ভীষণ।না পারছে সইতে আর না পারছে কষ্টটা দূর করতে।নিজেকে ভীষণ অসহায় মনে হচ্ছে তার।
অসহায় দৃষ্টিতে কিছুটা সময় নাফিয়াকে দেখে নিয়ে আলতো পায়ে নাফিয়ার কাছে গিয়ে অনতিবিলম্বে নাফিয়াকে নিজের বুকে টেনে নেয় আফিম।মাথায় হাত বুলিয়ে বলে ওঠে,
-তুমি বড্ড বেশি ভেবে এ বিষয়টিকে বড় বানিয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছো।তুমি আমার অর্ধাঙ্গিনী,মিসেস. আফিম ইবনান।অর্থাৎ আমার অর্ধেক অংশ।এখন আমার ডান হাতের একটি আঙুলে যদি কোনো ত্রুটি হয় তাহলে কি আমি আমার পুরো ডান পাশটিই কেটে নিজের থেকে আলাদা করে ফেলবো?আর যদি এমনটি করি তাহলে আমি বেঁচে থাকতে পারবো?পারবো না।ঠিক তেমনই মিসেস. আফিম ইবনান কে ছাড়া আফিম ইবনান বাঁচতে পারবে না। তুমি আমার কাছে এখন যেমন সুন্দর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ঠিক এমন সুন্দরই থাকবে।
আবেগাপ্লুত হয়ে আফিমকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নাফিয়া।একদিকে আফিমের মুখ হতে উচ্চারিত শব্দ গুলো তাকে সুখানুভূতি দিচ্ছে,ভরসা দিচ্ছে,আশ্বাস দিচ্ছে,নিশ্চয়তা দিচ্ছে ঠিক তেমনই তার রোগটিকেও সে ভুলতে পারছে না।কিন্তু এই মূহুর্তে সে এই রোগটি সম্পূর্ণরূপে ভুলে যেতে চাইছে।কারণ আফিমের হৃৎস্পন্দনে সে নিজের জন্য এতোটা ভালোবাসা খুঁজে পাচ্ছে যে পুরো দুনিয়াটা তার মিছে মনে হচ্ছে,এসব রোগ অতি তুচ্ছ মনে হচ্ছে।

!!
আফিমের দাদীর কক্ষে পাতানো সোফায় নাফিয়ার প্রেসক্রিপশন হাতে নিয়ে বসে আছেন সানিয়া বেগম।সম্পূর্ণ প্রেসক্রিপশনে চোখ বুলিয়ে নেবার পর তার আর বুঝতে বাকি রয় না রোগটির বিষয়ে।তিনি এখন এও বুঝতে পারছেন যে তখন নাফিয়ার ওমন দৌড়ে নিজের কক্ষের উদ্দেশ্যে গমন করার কারণ কি ছিলো!সানিয়া বেগম একটি দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে গম্ভীর কণ্ঠে তার শাশুড়িকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠেন,
-আম্মা একটি বিষয় আপনাকে জানাতে চাইছি।
-নাফিয়ার বিষয়ে?
-জ্বি।
-বেশ দুশ্চিন্তা হচ্ছে বৌমা।বলো তো কি হলো মেয়ে টার?ওমন কাঁদছিলো কেনো?আর ওভাবে দৌড়ে কক্ষেও বা গেলো কেনো?
ভীষণ মন খারাপ নিয়ে মৃদু স্বরে সানিয়া বেগম বলে ওঠে,
-নাফিয়ার ব্রেস্ট ক্যান্সার হয়েছে বলে ধারণা করছে ডাক্তার।
-কি বলো!এ রোগের চিকিৎসা কি?
-এ রোগ শরীরে কতো টা ছড়িয়ে পরেছে সেটির উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা নির্ধারণ করা হয়।নাফিয়ার হয়তো অপারেশন করতে হবে।হয় টিউমারটি কেটে ফেললেই রেহাই মিলবে নাহয় যে পাশে টিউমার হয়েছে সে পাশটি পুরোটাই কেটে ফেলতে হবে।
-কি!!যদি এমনটিই হয় তবে কি এমন একটি ত্রুটিপূর্ণ মেয়ের সাথেই সারাটি জীবন কাটাবে আমাদের,আফিম?
-কি বলতে চাইছেন,আম্মা?

চলবে

#আফিম_বড্ড_নেশালো
পর্বঃ১৮
লেখিকাঃমাহযাবীন

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে নাফিয়া।নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে সে।তাকে দেখতে কোনো আগুন সুন্দরীর মতো না লাগলেও সে যথেষ্ট সুন্দরী।কোমর অব্দি লম্বা চুল তার।চুল বেশি ঘন না আবার একদম যে পাতলা তাও না।তার এই ভাসা ভাসা চোখে গাঢ় কাজল লাগিয়ে,কোমর অব্দি লম্বা সোজা চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে শাড়ি পরিহিত অবস্থায় দেখতে নাকি মারাত্মক লাগে।যে কেউ নাকি এ রূপের প্রেমে পরতে বাধ্য।অবশ্য এ কথার প্রমাণও পেয়েছে সে।প্রথম যখন এভাবে আফিমের সামনে নিজেকে উপস্থাপন করেছিলো তখন আফিমের নেশালো চাহনিই বলে দিয়েছিলো নাফিয়া এ রুপে কতোটা মোহনীয়!
আচ্ছা,অপারেশনের পরও কি তার এ রুপ,এ সৌন্দর্য,এ মোহনীয়তা থাকবে?অপারেশনের পর যখন তার শারীরিক পরিবর্তন আসবে তখনও কি তার দিকে এতোটা নেশালো চাহনিতে তাকাবে আফিম?
প্রতিটি মেয়েই আদুরে হয়।তার প্রিয় মানুষ টির সামনে সে নিজেকে যথাসাধ্য সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করতে চায়।প্রিয় মানুষটির কাছ হতে নিজের সৌন্দর্যের বর্ণনা শুনতে পছন্দ করে,নিজের প্রশংসা শুনতে পছন্দ করে।প্রিয় মানুষটির চোখে নিজের প্রতি মুগ্ধতা দেখতে পছন্দ করে।পছন্দ করে দুষ্টু মিষ্টি প্রেমময় আদর নিতে।নাফিয়াও এর বিপরীত নয়।সেও আফিমের চোখে নিজের জন্য একরাশ মুগ্ধতা দেখতে চায়।আফিমের সামনে নিজেকে যথাসাধ্য সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে চায়। কিন্তু তা কি আর সম্ভব হবে!
সৌন্দর্যই যেনো মেয়েদের মনোবল বৃদ্ধি করে।একটি মেয়ে নিজেকে যখন সুন্দর ভাবে তখন তার মাঝে এক আলাদা মনোবল তৈরি হয়।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে যখন নিজেকে সুন্দর হিসেবে দেখে তখন তাদের মাঝে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়।আবার এই সৌন্দর্যের অনুপস্থিতি একটি মেয়ের আত্মবিশ্বাস শূন্যে আনতে সক্ষম।তাদের মনোবল ভেঙে গুড়িয়ে দিতে সক্ষম।
নাফিয়াও যেনো ধীরে ধীরে নিজের মনোবল হারিয়ে ফেলছে।নিজের মাঝেই নিজে ভেঙে পরছে সে, নিজের আত্মবিশ্বাস ক্রমশ হারিয়ে ফেলছে।নিজেকে কেমন যেনো নিজের কাছেই ভালো লাগছে না তার।

!!
-তোমাকে কিছু কথা বলবার জন্যে এখানে ডেকেছি।

দাদীর গম্ভীর কন্ঠস্বরে এমন কথা শুনে কিছু টা চিন্তিত হয় আফিম।নাফিয়াকে নিজের বাহুডোর আঁটকে রাখা কালীন সময়ে একজন গৃহপরিচারিকা তাদের কক্ষের দরজায় কড়া নেড়ে আফিমকে খবর দেয় দাদী ডাকছে।তাই ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও নাফিয়াকে একা রেখে সে দাদীর সাথে কথা বলবার জন্যে দাদীর কক্ষে আসে।
ব্রু কুঁচকে দাদীকে উদ্দেশ্য করে আফিম বলে ওঠে,
-কি কথা?
-নাফিয়ার রোগ সমন্ধে ডাক্তার যা বলেছে তা তোমার মায়ের কাছ হতে শুনেছি।ডাক্তার সাহেবা এ রোগ নিয়ে নিজের মন্তব্য ব্যক্ত করবার পূর্বে কি কিছু পরিক্ষা করেছেন?
-কোনো টেস্ট করা হয়নি।তবে ওকে আলাদা নিয়ে হয়তো ওর বুকে যে চাকার মতো অনুভব হয় সেটি পরিক্ষা করে দেখেছেন।সেই সাথে নাফিয়ার মেডিকেল রিপোর্টস চেক করেছিলো এবং প্রয়োজনীয় সকল তথ্য নিয়েছেন।
-এ রোগের চিকিৎসা বলেনি।তাই তো?
-টেস্ট করবার পর জানাবে।
একটি দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে দাদী বলে ওঠেন,
-যদি অপারেশনের মাধ্যমে পুরো পাশটি কাটতে হয় তবে?
-ওর সুস্থতাই আমার এক মাত্র কামনা,দাদী।
-দেখো আফিম নিজের স্ত্রীর মন্দ সময়ে তার পাশে থাকা অবশ্যই একজন স্বামীর কর্তব্য।আর তুমি যেমন নাফিয়ার সাথে আছো ঠিক তেমনই আমরাও নাফিয়ার সাথে আছি।ওর ভালোটাই আমাদের সবার কাম্য।
মলিন চেহারায় একটু হাসি ফুটিয়ে আফিম বলে ওঠে,
-জানতাম।ধন্যবাদ দাদী।তবে কি আমি যেতে পারি?
দাদীও নিজের ঠোঁটে একটু হাসি এনে বলে ওঠে,
-আরেকটু বসো।
নাফিয়ার চিন্তায় দাদীর কাছে দুদণ্ড বসাও বেশ কঠিন হয়ে পরছে আফিমের কাছে।তাও সে নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করে আর স্থান ত্যাগ করলো না।
দাদী আফিমকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
-নাফিয়ার চিকিৎসায় কোনো ধরনের কমতি থাকুক তা আমি মোটেও চাচ্ছি না।ও সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে থাকুক এমনটিই চাইছি আমি।কিন্তু একটি বিষয় যা এখন বলাটা সমুচিত কি নয় তা বুঝে উঠতে পারছি না।তুমি তো জানোই আমি নিজের মাঝে কথা দাবিয়ে রাখতে পারি না।তাই এখনই বলছি,আমি চাই না আমার পোতা এমন ত্রুটিযুক্ত মেয়ে নিয়ে পুরো জীবন পাড় করুক।
ব্রু জোড়া কুঁচকে আফিম বলে ওঠে,
-কি বলতে চাইছো?
-দ্বিতীয় বিয়ের…….
দাদীর আর কিছু বলে উঠার আগেই উঠে দাঁড়ায় আফিম।রাগে নিজের দু’হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয় সে।কিছু কঠিন শব্দ জিহ্বা অব্দি আসার পরও তা উচ্চারণ না করে নিজেকে সংযত করে সে বলে ওঠে,
-নাফিয়ার জায়গায় যদি আমি হতাম তাহলে এই পরামর্শ তুমি নাফিয়াকেও দিতে?
-স্বামী আর স্ত্রী এক নয় আফিম।মেয়েদের মেনে নিয়ে এবং মানিয়ে নিয়ে সংসার করতে হয়।
-তাহলে নাফিয়ার জায়গায় আফরিন(আফিমের সৎ বোন)হলে ওর স্বামীকে তুমি এই পরামর্শ দিতে?
উত্তরে চুপ হয়ে যান দাদী।নিজের ছেলের মেয়ে সতীনের সংসার করবে এমনটি কখনোই সহ্য করতে পারবেন না তিনি।
দাদীর নিরাবতা দেখে আফিম বলে ওঠে,
-নারীরাই নারীদের শত্রু।আফরিনের বেলায় যা তোমার সহ্যের বাইরে নাফিয়ার বেলায় তুমি তাই ই চাইছো।এ কেমন নীতি তোমার?আরেকটি কথা,যাকে তুমি ত্রুটিপূর্ণ বলেছো,সে আমার অর্ধাঙ্গিনী।আর এ রোগ মোটেও তার ত্রুটি নয়।সে সুন্দর তার মনের সৌন্দর্যের জন্য।শরীরের সৌন্দর্য নিয়ে তো দেহব্যবসায়ীরা পরে থাকে।
বলে আর দাঁড়ায় না আফিম।দ্রুত পদে কক্ষ ত্যাগ করে।

!!
আয়নার সামনে দাঁড়িয়েই নিচের ঠোঁট কামড়ে চোখ জোড়া বুজে একটু শব্দ করেই কাঁদছে নাফিয়া।ঠিক এই মুহূর্তেই কক্ষে প্রবেশ করে আফিম।একে তো দাদীর কথায় রাগে ফুঁসছে সে।এর মাঝে নাফিয়াকে এভাবে কাঁদতে দেখে আরও রাগ বেড়ে যায় তার।দ্রুত পদে নাফিয়ার কাছে এগিয়ে গিয়ে নাফিয়ার বাম হাতটি ধরে এক হেঁচকা টানে নিজের কাছে নিয়ে আসে সে।এক হাতে কোমর আঁকড়ে ধরে ও অপর হাতে নাফিয়ার চুল মুঠোবন্দি করে ঠোঁটে ঠোঁট বসিয়ে দেয় আফিম।আফিমের এমন কাজে চমকে যায় নাফিয়া।চোখ বড় বড় করে আফিমের দিকে তাকায় সে।কিন্তু আফিম চোখ বুজে নিজের কাজে ব্যস্ত।সময়ের সাথে সাথে নিজের চোখজোড়াও বুজে নেয় নাফিয়া।ধীরে ধীরে আফিম নামক নেশালো ঘোরে প্রবেশ করতে আরম্ভ করে সে।নিজের দু’হাত ধীরে ধীরে আফিমের মাথা অব্দি নিয়ে আফিমের চুলগুলো শক্ত করে আঁকড়ে ধরে সে।
নাফিয়া পুরোপুরি শান্ত হতেই তাকে ছাড়ে আফিম।একে-অপরের কপালে কপাল ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে তারা।আফিম আলতো করে নিজের দু’হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে নাফিয়ার চোখের পানি মুছে দেয়।অতঃপর কিছুটা সময় উভয়ই চোখ বুজে কাটাবার পর আফিম চোখ মেলে তাকিয়ে নাফিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
-আর যদি তোকে কাঁদতে দেখি,জানে মেরে ফেলবো।
-চোখের পানি সহ্য করতে পারেন না তাহলে মারবেন কি করে?(ঠোঁটে হাসি টেনে বলে ওঠে নাফিয়া)
-ওয়ান্না সি হাও?[দেখতে চাও,কিভাবে?]
-হুম।
নাফিয়ার সম্মতি পেয়ে আফিম ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে তোলে।সেই সাথে আর দেরি না করে নাফিয়ার গলার নিচের অংশটায় কামড় বসিয়ে দেয় সে।ব্যথায় শব্দ করে চেচিয়ে উঠে নাফিয়া।কিন্তু আফিমের ছাড়ার নাম নেই।আফিমকে নিজের থেকে দূরে সরানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছে নাফিয়া।অবশেষে কিছুটা সময়ের মধ্যেই আফিম নাফিয়াকে ছেড়ে কিছু টা দূরে সরে দাঁড়ায়।ঠোঁটে তার এখনো বাঁকা হাসি ঝুলছে।আফিমের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আয়নায় নিজের ক্ষত টার দিকে দৃষ্টিপাত করে নাফিয়া।জায়গা টা লাল হয়ে দাঁতের দাগ বসে কিছুটা রক্ত বেড়িয়ে এসেছে।সেই সাথে জায়গাটা ভীষণ জ্বলছে।
রাগী দৃষ্টিতে আফিমের দিকে তাকিয়ে নাফিয়া বলে ওঠে,
-এই নিয়ে দ্বিতীয়বার আপনি আমায় এভাবে কামড়ালেন!নিজেকে কি ভ্যামপ্যায়ার মনে হয় আপনার?
-ইয়েস।এভাবেই কামড়ে কামড়ে মারবো তোমায়।(বলে চোখ মারে আফিম)
-আচ্ছা তাই?আজ এর শোধ আমি নিবোই।
বলেই আফিমের দিকে এগিয়ে যায় নাফিয়া।এদিকে নাফিয়াকে নিজের দিকে এগিয়ে আসতে দেখেই দৌড়ে সরে যায় আফিম।আফিমের পেছন পেছন নাফিয়াও দৌড়াচ্ছে।পুরো রুমটা টায় গোল গোল কয়বার দৌড়াবার পরও নাফিয়া আফিমকে ধরতে সক্ষম হয় না।
দৌঁড়ানোর মাঝেই আফিমের কানে আসে,”আহহ” শব্দটি।পেছন ফিরে তাকাতেই দেখে নাফিয়া বিছানায় বসে আছে।চেহারায় ব্যথা পাবার চাপ প্রকাশ পাচ্ছে।আফিম দেরি না করে নাফিয়ার কাছে এগিয়ে গিয়ে বিছানায় বসে।নাফিয়ার কাঁধে হাত রেখে বলে ওঠে,
-আর ইউ ওকে,মিসেস.আফিম ইবনান?
উত্তরে কিছু না বলে আফিমকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নিজে আফিমের উপরে উঠে একটি শয়তানি হাসি দিয়ে নাফিয়া বলে ওঠে,
-এখন আপনাকে কে বাঁচাবে?
কথাটি বলে আর সময় অপচয় করে না নাফিয়া।আফিমের গলার নিচের অংশে দাঁত বসিয়ে দেয় সে।ফর্সা শরীরে কামড়ের জায়গাটা একদম লাল হয়ে গিয়েছে।দাঁতের দাগ বসে কিছুটা রক্তও বেড়িয়ে এসেছে সেথা হতে।নাফিয়া জায়গা টায় চোখ বুলিয়ে ব্রু কুঁচকে বলে ওঠে,
-এমন কামড়ে ব্যথা তো অনেক পাওয়ার কথা!সেখানে আপনি তো “আহ” শব্দ তাও করেন নাই।
ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে আফিম বলে ওঠে,
-এসব ইঁদুরের কামড়ে আফিম ইবনানের কিছুই হয় না।
-কি!আমি ইঁদুর?
-কামড় তো তাই ই বলছে।ছোট ছোট দাঁত!(বলেই ঠোঁট চেপে হাসে আফিম)
রাগে নাফিয়া আবারও আফিমের বুকে কামড় বসাতে যায় কিন্তু তার আগেই আফিম তাকে বিছানায় ফেলে তার উপর ভর দিয়ে শুয়ে পরে।আচমকা আফিমের এমন কাজে হতবাক হয়ে যায় নাফিয়া।আফিম নাফিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
-এখন আপনাকে কে বাঁচাবে মিসেস.আফিম ইবনান?
নাফিয়া এর উত্তরে কিছু বলতে পারে না।এক দৃষ্টিতে আফিমের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে সে।আফিমের চোখে ভীষণ মাদকতা দৃশ্যমান।আফিম তার নেশালো চাহনিতে কিছুটা সময় নাফিয়ার চোখে চোখ রেখে ধীরে ধীরে নাফিয়ার অনেকটা কাছে চলে আসে।চোখে জোড়া বুজে নিয়ে নাফিয়ার গলায় মুখ ডুবায় সে।নাফিয়াও চোখ জোড়া বুজে নিয়ে দু’হাতে আফিমের চুল আঁকড়ে ধরে।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে