আপন মানুষ ৪র্থ পার্ট

0
2959

আপন মানুষ ৪র্থ পার্ট.
ছোট বোনদের জড়িয়ে ধরে ঘুমাতাম ৷তাই অভ্যাস হয়ে গেছে
*
মাঝ রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে যায় কারো ফুপিয়ে কান্নার শব্দে!
তাকিয়ে দেখি বউ মৌ পাশে নেই আমার!!
লাফ দিয়ে উঠে দেখি মেঝেতে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ পড়ে মোনাজাতে বসে কাঁদছে মেয়েটা!
এই দৃশ্য দেখে অজানা কোন এক মায়ায় পড়ে গেলাম আমি।
ওর কান্না দেখে বুকের মধ্যে একটা কষ্ট নামক ঝড় বইছে আমার।
আমি কোন ভুল করছি না তো?
এই নিষ্পাপ মেয়েটার কি দোষ?
সে তো আমায় কখনো বলেনি আমায় বিয়ে করো।
সে তো জোর করে আমায় বিয়ে করেনি।
অন্য সবার মতো তারও তো স্বামীর ভালোবাসা পাওয়ার আশা ছিলো।
সেই আশাটাকে তছনছ করে দিচ্ছি না তো আমি?
এসব ভাবতে ভাবতে চোখের কোনে পানি জমে গেছে আমার।
আমি কি করবো এই মুহুর্তে? কোন পথ বেছে নেবো?
ওর মোনাজাত শেষ হওয়া লক্ষ করে চোখ দ্রুত মুছে স্বাভাবিক ভাবে শুয়ে পড়লাম।
ঘুমের ভান করে শুয়ে আছি।
তাড়াহুড়া করে শুতে গিয়ে অপরদিকে মুখ না করে বউয়ের দিকেই মুখ করে শুয়েছি।
মৌ একটুপর এসে খাটে উঠলো।
কিছুক্ষন যাবার পর অনুভব করলাম ও একটা হালকা চাদর আমার শরীরের উপর দিলো।
এরপর আমার কপালে একটা চুমো দিয়ে বুকের মাঝে জড়িয়ে নিলো আমায়।
আমার নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসছে।
বুকের ভিতর ধুক ধুক করছে অজানা কোনো এক শিহরনে।
ও বুঝতে পারেনি আমি জেগে আছি।
ঘুমের ভাব নিয়েই এই প্রথম মৌ”কে আমি বুকের সাথে নিজ থেকে জড়িয়ে নিলাম।
কিছুক্ষন ওভাবেই কাটালাম।
মেয়েটা ছটফট করছে আমার ছোয়া পেয়ে। আমি বুঝতে পারছি ও ওর স্বামীর আদর, ভালোবাসা পাবার জন্য ব্যাকুল।
কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছে না আমায়।
আমার ভিতরের পুরুষত্ব জেগে উঠছে।
পরক্ষনেই জুঁই এর কথা মনে পড়তেই আবার পাথর হয়ে গেছি।
চুপ করে অবুঝ বালকের মতো মৌ”এর বুকে শুয়ে আছি।
নিজেকে আজ অপরাধী মনে হচ্ছে।
কেন আমি জেনেশুনে বিয়ের পিরিতে বসলাম।
কেনই বা বিয়ে করেও দুইটা জীবন নিয়ে খেলছি।
মনে হচ্ছে বিয়ে করা বউটার উপর একটু বেশি অন্যায় করে ফেলছি আমি।
ভোরে ঘুম থেকে ডেকে তুললো ছোট শালি।
-এই দুলাভাই। রাতে কি গল্প করা বেশি হইছে আপুর সাথে?
উঠে হাত মুখ ধুয়ে নেন। খেতে হবে, খাবার রেডি।
আমি উঠে শালির সাথে বাথরুমে গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে আসলাম।
খাওয়া দাওয়া সেরে দুই শালীকে নিয়ে একটু ঘুরতে বের হলাম।
এই গ্রামটা আমার খুবই পরিচিত।
কারন ছোটকাল থেকেই এখানে আসা, যাওয়া আছে।
গ্রামটা দারুন। রাস্তার একপাশে ঘরবাড়ি অন্য পাশে একটা ছোট নদী বয়ে গেছে।
হাটতে বেশ ভালোই লাগছে।
হঠাৎ মোবাইলে রিংটোন বেজে উঠলো আমার।
তাকিয়ে দেখি জুঁই কল করেছে।
আমি শালীদের চেয়ে একটু দুরে গিয়ে ফোনটা ধরলাম।
-হ্যালো, কেমন আছো জুঁই? (আমি)
-যেমনটা রেখেছো আমায়।
তুমি নিশ্বচয়ই নতুন বউকে নিয়ে খুব সুখে আছো? (জুঁই)
-আমিও ভালো নেই জুঁই। আমি বিয়েটা করেছি পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে।
তুমি চাইলে আমি তোমার কাছে চলে আসবো জুঁই।
-বাহ…! এসব নাটক বাদ দাও এখন।
যদি আমার কাছে আসতে তবে বিয়ে না করেই আসতে।
এখন তুমি অন্য কোন মেয়ের স্বামী।
তুমি অন্য কোন রক্তে মিশে গেছো।
-নাহ জুঁই। আমি বিয়ে করেছি ঠিকই। কিন্তু বউ বলে ওকে মেনে নেইনি।
এখনো আমাদের মধ্যে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক হয়নি।
-ঠিকাছে, তাহলে তুমি আমার কাছে আসো। আমায় নিয়ে দুরে কোথাও চলে যাও। যেখানে আমাদের কেউ বাধা হয়ে দাড়াবে না।
-হা আসবো। তুমি কয়টা দিন সময় দাও। আমার বিয়ে করা স্ত্রীও এ ব্যাপারে আমায় সাহায্য করবে।
-বিশ্বাস হয়না। কোন মেয়ে তার স্বামীকে হারাতে চাইবে না।
আর তুমি বলছো ও তোমায় এ ব্যাপারে সাহায্য করবে!!
-হ্যা সত্যি। ও খুবই ভালো মেয়ে।
-আচ্ছা তুমি পাকা সিদ্ধান্ত নিয়ে আমায় ফোন করো।
আমি সব সামলে তোমার জন্য বাড়ি থেকে পালিয়ে আসবো।
-ওকে জুঁই রাখি। আমার শালীরা আছে সাথেই।
পরে কথা হবে।
-ওকে রাখো।
কল কেটে দিয়ে শালীদের কাছে এগিয়ে গেলাম।
দেখি বাদাম কিনে খাচ্ছে আর কয়েকটা মেয়ের সাথে কথা বলছে।
আমি এগিয়ে যেতেই বড় শালী আমায় দেখিয়ে ওই মেয়েদের উদ্দেশ্যে বলল ইনিই আমার দুলাভাই।
মেয়েগুলো আমায় সালাম দিলো।
আমি উত্তর দিয়ে ওদের দিকে তাকালাম।
একটা মেয়ে আমায় দেখে চোখ কপালে তুলে, অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে বলল…
-আপনি ……. না (নামটা গোপন রাখলাম )
-হা, আপনি চেনেন আমায়?
-আরে ভাইয়া আমি ইরানি সুলতানা। আপনার গল্প নিয়মিত পড়ি আমি।
আপনার সাথে তো মাঝে মধ্যে কথা ও হয়।
-ও হা। আপনি সেই মেয়ে!
আসলে আপনাকে দেখা হয়নি তো আগে তাই চিনতে পারিনি।
-হুম, আপনি বিয়ে করেছেন তাইতো আর গল্প পাচ্ছিনা ফেসবুকে।
তো ভাইয়া আমাদের বাসায় আপনার দাওয়াত। চলুন আমাদের সাথে।
-ধন্যবাদ আপু। তবে আজ যেতে পারছি না। বিয়ে যেহেতু এই এলাকায় করলাম পরবর্তীতে এসে ঘুরতে যাবো আপনাদের বাসায়।
একটু পর আমাদের ওখান থেকে লোক আসবে।
এখন ফিরতে হবে আমাদের।
এই বলে ওনাদের বিদায় দিয়ে শ্বশুরবাড়ির দিকে রওনা দিলাম।
-দুলাভাই আপনি গল্প লেখেন তা তো বলেননি।
আমি তো গল্পখোর মেয়ে। (বড় শালী)
-এ বিষয়ে কথা উঠলে তো বলবো।
-আচ্ছা বাসায় গিয়ে আপনার সব গল্প পড়বো আমরা।
বিকেলে আমাদের পক্ষের লোক আসলো। খাওয়া দাওয়া হলো।
এইদিকে আমার ফোন নিয়ে গল্প পড়ায় ব্যস্ত আমার দুই শালী।
-এই যে আপুরা। এতো প্রেমের গল্প পড়লে আবার ভিতরে প্রেম চলে আসবে তোমাদের।
তখন আবার আমার ছোট ভাইদের সাথে লাইন মারতে চাইবে।
-উহ… একটা ভাই ও তো নাই আপনার।
যেই কাজিনগুলা আছে। একেকটা একেক রকম বান্দর স্টাইলে ঘুরে বেড়ায় সামনে।
ওসব স্টাইলওয়ালা ছেলেদের ভালো লাগেনা দুলাভাই।
আপনার মতো একটা সুইট শান্ত পোলা থাকলে না হয় দেখতাম।
এই বলে হি-হি হাসছে দুই বোন।
-আচ্ছা আমার মতো পোলাই খুঁজবো নে। এখন ফোনটা দাও। একটুপর বিদায় নিতে হবে।
-দুলাভাই আপনার গল্পের ভক্ত হয়ে গেলাম আমরা। দারুন লেখা।
আমরাও ফেসবুক আইডি খুলে আপনাকে বন্ধু করে নেবো নে।
-ওকে নিও। এখন যাও তোমাদের আপুকে তাড়াতাড়ি সাজিয়ে বের করে দাও।
রাত আটটার দিকে গাড়িতে উঠলাম।
শ্বশুড়-শ্বাশুড়ী সহ বাড়ির সবাই মৌ কে আমার হাতে তুলে দিয়ে দোয়া করে দিলো।
আমার শ্বাশুড়ী বারবার কান্নাজড়িত কন্ঠে আমার হাত ধরে তার মেয়েটাকে আমার হাতে তুলে দিলো।
তার মেয়েটাকে যেন দেখে রাখি।
বুকে আগলে রাখি।
এইদিকে মৌ এর ছোট বোনদুটোও বোনকে ধরে কাঁদছে।
এতো মায়া, এতো ভালোবাসা দেখে সত্যিই আমি কেমন যেন হয়ে যাচ্ছি।
শালী দুটো আমার হাত ধরে কেঁদে কেঁদে বলছে আমার আপুটাকে দেখে রেখো ভাইয়া।
মনের ভিতরটা কেমন জানি কেঁদে উঠছে আমার।
শালী দুটোকে আপন বোনের মতো বুকে জড়িয়ে বললাম তোমরা ভালো থেকো বোন।
তোমাদের বোনকে দেখে রাখবো আমি।
*গাড়ি ছেড়ে দিয়েছে ,কিন্তু মৌ

প্রিয় পাঠক আপনারা যদি আমাদের (গল্প পোকা ডট কম ) ওয়েব সাইটের অ্যাপ্লিকেশনটি এখনো ডাউনলোড না করে থাকেন তাহলে নিচে দেওয়া লিংকে ক্লিক করে এখনি গল্প পোকা মোবাইল অ্যাপসটি ডাউনলোড করুন => ??????

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.golpopoka.android

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে