আজ আমার বিয়ে পার্ট ৩৪_৩৫_৩৬ একসাথে

0
2586

আজ আমার বিয়ে পার্ট ৩৪_৩৫_৩৬ একসাথে
লেখা আশিকা জামান

আমার যখন সেন্স আসে তখন দেখি আমি বেডে শুয়ে আছি। এদিক সেদিক তাকাতেই দেখি আমার মাথার পাশে টুকটুকি আর মা বসে আছে।
— আন্টি দেখেছেন চোখে জল দিতেই কেমন সেন্স ফিরে এসেছে। প্রেগ্নেন্সির প্রথম স্টেজে এরকম হয় এতে ঘাবড়াবার কিছু নেই।
— মা আজকে তুমি না ধরলে ওর মাথাটা গেছিলো।
যাক ওর সেন্স ফিরেছে।

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/


অরিন মা আমার এখন কেমন লাগছে??
আচ্ছা এই মেয়েটা কেন এখানে আসছে?? ও বাসা কি করে চিনলো?? ইভান কি ওকে এখানে আসতে বলেছে?? আমার সাথে ব্যাপারটা মিটমাট করার জন্য?? উফফ মাথাটা প্রচন্ড ব্যাথা করছে?? এই মেয়েকে আমি সহ্য করতে পারছি না। না কোল বি কোল অরিন।
ঠান্ডা মাথায় ব্যাপারটা হ্যান্ডেল করতে হবে।
— কি রে অরিন কি ভাবছিস?? কেমন লাগছে বললি নাতো।
— মা এইতো ভালো লাগছে। আচ্ছা তুমি এখন যাও আমরা গল্প করি।
মা টুকটুকির দিকে তাকিয়ে বললো,
— আচ্ছা মা আমি আসি তোমরা গল্প করো কেমন..
আমি টুকটুকির দিকে তাকাই দেখি ও কেমন যেন নার্ভাস ফিল করছে। এসির ভিতরেও ঘামছে…
মা চলে যেতেই টুকটুকি আমার পায়ে এসে পড়লো,
এই মেয়ে আমার পায়ে কেন পড়ছে কিছুই বুঝতে পারছি না।
— এই মেয়ে ছাড়ো বলছি এইসব কি হচ্ছে?? আর তুমি এখানে কেন??
— অরিন আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি যা করেছি তার জন্য লজ্জিত। আমি আজকে সব সত্যিটা বলবো যা তুমি জানোনা??
— কোন সত্যি?? আর আমার ইভানকেতো সত্যিই নিজের করে নিয়েছো। এখন আবার আমার কাছে কি?? সরো বলছি…
আর তোমাদের এইসব পরিকিয়া প্রেমের গল্প শোনার মোড আমার নেই।
টুকটুকি কাদতে লাগলো,
— অরিন ইভান তোমারি আছে তোমারি ছিলো। আমি তার দ্বারে কাছেও যেতে পারিনি। তুমি নিজেও হয়তো জানোনা ও তোমাকে কতটা ভালোবাসে। ও মত ছেলেকে এইসব বলোনা আমার মত খারাপ মেয়ের জন্য।
— মানে??
— — আসলে তখন আমি অনেকটা ছেলে মানুষ ছিলাম। বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে হওয়ায় ছোট থেকেই অনেক জেদি আর একরোখা ছিলাম। যেটা চাইতাম সেটা না জোর করে হলেও পেতে চাইতাম।প্রথমদিকে না সব ঠিকি ছিলো, কিন্তু যখন থেকে জানতে পারলাম ইভান ভাইয়া তোমাকে ভালোবাসে। তখন থেকেই মনে হতো ইভান আমার শুধু আমার।
যদিও এখন বুঝি এটা ভালবাসা ভালোলাগা কিছুই ছিলোনা ছিলো একরোখা জিদ। তাই প্রায়শই তোমাদের মাঝে ভুল বুঝাবুঝি তৈরি করতাম। কিন্তু সেদিন হয়তবা সেটা লিমিট ক্রস করে গেছিলো,
আমি প্রথমেই এইরকম কিছু হোক সেটা চাইনি। ওই যে অলস মস্তিষ্ক শয়তানের বাসা।তাই আমাদের গ্রামের বাড়িতে এক্সিডেন্ট এর খবর শুনে মা আর বাবা যখন বাসায় আমাকে একা রেখে চলে যায়। তখন ওই দুষ্টু বুদ্ধিটা মাথায় চাপে। তাই ইভান ভাইকে আমি ঘুমের মেডিসিন খাওয়াই আর ওইরকম করে পিক তুলি। আমি সত্যিএতটা খারাপ ছিলাম যেটা মনে হলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারি না। প্রতিরাতে আমি নিঃশব্দে চোখের জল ফেলি এই অপরাধবোধের জন্য। কবে তোমার সাথে দেখা করবো কবে সত্যিটা বলবো এই চিন্তায় আমি সারাটা ক্ষন বিভোর থাকতাম। তোমার ফোন সবসময় অফ পেতাম কত সহস্রবার যে ট্রাই করেছি সেটা তোমাকে বলেও বোঝাতে পারবো না।
যখন মা আর বাবা আমার বিয়ে ঠিক করে তখনো বুঝতে পারিনি জীবনে কাউকে আমি সত্যি ভালবাসতে পারবো। হ্যা আমার জীবনে তোমার অনন্ত ভাইয়া এসে আমার ফুল লাইফটা পালটে দিয়েছে। জানি না সামনে কি আছে। ভাগ্য আমাকে এমন এক যায়গায় দাড় করিয়েছে….
থাক সেসব কথা। আমি জানতাম না অনন্ত তোমার ভাই। সেদিন ওর ফোন টিপাটিপি করার সময় তোমার আর ইভানের কাপল পিক দেখতে পাই তখন আমি ওকে তোমাদের ব্যাপারে সব জিজ্ঞাস করি…
আমি জানতাম না তোমরা বিয়ে করেছো। সেদিন ই জানতে পারি এই কথা। তাই সেদিন তোমাকে সবটা জানানোর জন্য ইভান ভাইয়াকে কল করি যেহেতু তোমার ফোন অফ। কিন্তু সেটাতো হলোনা মেবি ব্লক করেছিলো নাম্বারটা অবশ্য সেটাই স্বাভাবিক। কথায় কথায় সেদিন তোমার ভাইয়ার থেকে জানতে পারি তুমি এখানে আসছো..
তাই অনেকটা জেদ করেই আমি এখানে আসি শুধু তোমার কাছে ক্ষমা চাইবো বলে। জানি এতকিছুর পরো তুমি চাইবেনা আমি তোমার ভাবী হই। সেটাই স্বাভাবিক। অনন্ত ও অবশ্য সবটা জানলে আমাকে রিজেক্ট করবে। বিশ্বাস করো আমার তাতে আফসোস নেই আমি যে সবটা তোমাকে জানাতে পেরেছি এটাই আমার বড় পাওয়া। আর হ্যা পারলে আমাকে ক্ষমা করো। জোর করছিনা যদি পারো…
আমি বিছানায় বসে বসে কাঁদতে লাগলাম। ছিঃ আমি ইভানকে কত খারাপ ভাষায় গালাগালি করেছি, কত অপমান করেছি। আমি কি করে ওকে এতটা অবিশ্বাস করলাম। আমি সত্যি খুব খারাপ বউ হওয়ার কোন যোগ্যতা আমার নেই।
আমি চোখ মুছে উঠে টুকটুকির দিকে তাকালাম ওই মেয়েও চোখের জল ফেলছে। ওর চোখেতো কোন পাপ আমি দেখছিনা। ও আমার পায়ে এসে আবার পড়তে লাগলো,
— অরিন তুমি ইভান ভাইয়াকে ভুল বুঝোনা। ও সত্যিই খুব ভালো ছেলে। সমস্ত দোষ আমার।
— পা ছাড়ো আবারো বলছি।
টুকটুকি উঠে চোখমুছে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াই।
— অরিন আমি আজকে আসি। হয়তবা আর কোনদিনো দেখা হবেনা।
চলবে।।
#আজ আমার বিয়ে
লেখা আশিকা
পার্ট ৩৫
আচ্ছা আমি কি করবো এখন?? অনন্ত ভাইয়াকে কি সত্যিটা বলে দিবো?? এই মেয়েতো তার দোষ স্বীকার করে আমার কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছে তাহলে.
কিন্তু যদি সত্যিটা না বলি তাহলে কি ভাইয়াকে ঠকানো হবে?
উফফ কিছু ভাবতে পারিছিনা।
টুকটুকি যাওয়ার জন্য পা বাড়ালে,
আমি ওকে পিছন থেকে ডাকলাম,
— ভাবি দাঁড়াও কোথায় যাচ্ছো??
টুকটুকি পিছন ফিরে আমার দিকে হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
কিছু সত্যি সবসময় অপ্রিয় হয়, যে সত্যিতে কারো মঙ্গল নেই সেই সত্যিটা না হয় কেউ নাইবা জানলো।
— অরিন কি বলছো তুমি?? তুমি কি সজ্ঞানে বলছো??
— হুম ভুল কি বলেছি। আমার ভাইয়ের হবু বউকে ভাবী বলাতে আর যাইহোক অন্যায় কিছু নেই। এই ঘরে তুমি আর আমি ছাড়া আর কেউ নেই, তাই যা কথা হলো সেটা আমাদের নিজেদের মধ্যে থাকাটাই বেটার। কি বলো….
টুকটুকি এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো,
— তুমি খুব ভালো, আমার মত খারাপ মেয়েকে তুমি ক্ষমা করে দিলে, তোমার এই ঋন আমি কোনদিন শোধ করতে পারবোনা।
— নিজেকে এতটা ছোট করোনা। যা হয়েছে তা ভুল করে হয়েছে, তাছাড়া মানুষ মাত্রই ভুল। পুরোনো কথা মনে করে কষ্ট পেয়োনা। এখন থেকে শুধু ভাইয়ার কথাই ভাববে কেমন…
এইবার আসোতো আমার সাথে…
আমি ওর হাত টেনে ঘর থেকে বের করলাম।
— কোথায় নিয়ে যাচ্ছো??
— আরে আসো ভুল যায়গায় নিয়ে যাবোনা।
মা টেবিলে খাবার সাজাচ্ছিলো, আমাদের যেতে দেখে দাঁড়িয়ে গেল
— অরিন ওকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস। মেয়েটা এখনো কিছুই মুখে দেই নাই।
— তুমি রেডি করো আমরা একটু সবার সাথে দেখা করে আসি।
মাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আমরা বাসা থেকে বের হলাম। আমাদের বাসাটা টু ইউনিট এর। পাশের ফ্ল্যাট টাই অনন্তভাইয়াদের। আমি গেটটা খুলেই বের হতেই দেখি ছোট মাদের দরজাটা খোলা বোধ হয় কেউ বাহিরে গেছে।
আমি বাহিরে থেকেই ডাকতে লাগলাম
ছোট মা, ছোট মা..
ছোট মা মনে হয় রান্না করছিলো তাই খুন্তি হাতে নিয়েই আসলো,
— হ্যা অরিন বল কি হয়েছে??
ছোট মা আমাদের সামনে এসেই চোখটা কপালে তুললো।
— আরে অর্পিতা যে?? তুই ওকে কোথায় পেলি??
— কেন তুমি ওকে চিনো??
ওতো আমার ফ্রেন্ড, আজকে আমাদের বাসায় আসছে তাই তোমাদের সাথে দেখা করতে নিয়াসছি।
— হুম তুই ওকে নিয়ে ভেতরে আয়। তারপর বলছি..
আমি আর ও দুজন ভিতরে ঢুকলাম।
আমি সোফায় বসে পড়লাম।
টুকটুকি ছোট মা কে সালাম করলো।
— থাক থাক মা সালাম লাগবে না।
ছোট মা ওকে একদম বুকের কাছে নিয়ে আদর করলেন।
— আমি আজকে কার মুখ দেখে যে ঘুম থেকে উঠছিলাম, সকাল সকাল আমার মা এসে হাজির। তা শরীর মন ভালোতো মা। তোমার বাবা মা তো ভালোই আছেন না??
— হুম সবাই ভালোই আছেন। বাবা কোথায় দেখছিনাতো??
— উনি একটি বাহিরে গেছেন।
আমি একটু ভাব ধরে বললাম,
— ছোট মা তোমাদের কথাবার্তা তো মাথার উপর দিয়া যাচ্ছে।
— কেন অনন্ত তোকে ছবি দেখায় নি?? আর তুই জানতি না ও তোর ভাবি লাগে??
— কি?? সত্যি বলছো..
আমি এমন ভাব করলাম যেন এই বিষয়টা আমি মাত্র জানলাম।
খুব খুশি হয়ে আমি ওকে জড়িয়ে ধরলাম।
— তা বেশ ভালোই হয়েছে। তোর বান্ধবী তোর ভাবী কি কপাল রে তোদের?? আচ্ছা আমি অনন্তকে ডেকে নিয়াসি। তোরা বস..
— থাক তোমার যাওয়া লাগবে না। আমরাই যাচ্ছি
বলেই টুক্টুকিকে সজোরে টান দিয়ে ভাইয়ার রুমে নিয়ে গেলাম।
— এই ওতো পড়ে যাবে?? আস্তে যাহ…
ভাইয়া রুমে পায়চারী করতেছিলো,
আমি পিছন থেকে ফিক করে হেসে দিলাম।
আমার হাসির শব্দে ভাইয়া পিছনে ফিরলো,
— ওই এতো টেনশন নিস কেন রে ভাইয়া।
— আরে নারে এমনি কিছুই নাহ..
— হুম সেটা বুঝাই যাচ্ছে। এনি ওয়ে ভাইয়া শেষম্যাষ তুই আমার বান্ধবীকেই বিয়ে করতে যাচ্ছিস??
আগে জানতাম রে তোর অর্পিতাই আমার টুক্টুকিরে…
— রিয়েলি?? তোরা পূর্বপরিচিত??
— হ্যারে আমিতো সকালে ওকে দেখে পুরা তাজ্জব বনে গিয়েছিলাম। শেষে একদম মাথা ঘুরে পড়েই গেলাম…
ভাগ্যিস ডাক্তার সাথেই ছিলো..
বলেই হাসতে লাগলাম।
— হ্যা আর বলোনা ও কিভাবে পড়ে গিয়েছিলো। ততক্ষনে না ধরলে মাথায় একটা বড়সড় ইনজিউরি হত..
এই সকাল সকাল আমার জন্যই সব হতে যাচ্ছিলো। আন্টি খুব টেনশনে পড়ে গিয়েছিলো।
ওদের দুজনকে পাশাপাশি খুব সুন্দর লাগছে মনে হচ্ছে মেড ফর ইচ আদার।
— ধুর তুমি নিজের ঘাড়ে সব দোষ নাও কেন। আবার এইরকম বললে কিন্তু ভালো হবেনা বলে দিলাম।
— আচ্ছা ননদিনী আর ভুল হবে না।
— হুম হয়েছে। তোমরা কথা বলো আমি একটু ছোট মায়ের কথা বলে আসি।
ওদের কথা বলার সু্যোগ দিয়ে আমি চলে আসলাম।
সেদিন রাতে আমি আর টুক্টুকি একসাথে ঘুমাই। ও আমাকে ইভানের কথা বারবার জিজ্ঞাস করায় ওকে আমি সব খুলে বলি। আমি জানতাম এত কিছু শোনার পর ও খুব আপ্সেট হয়ে যাবে তাই প্রথমে বলতে চাইনি কিন্তু নাছোড়বান্দার কাছে এই যাত্রায় হার মানলাম।
সব কিছু শোনার পর ও কাদতে কাদতে নিজেকেই দায়ী করতে লাগলো। আমি জানতাম ও এমনি করবে।

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/



আমি পিঠে হাত রেখে বললাম,
— টুক্টুকি প্লিজ কান্না থামাও। যা,হয়েছে তার জন্যতো আমি নিজেও দায়ী। আজকে যা যা হয়েছে সব আমার জন্য হয়েছে…
এতে তোমার কোন দোষ নেই।
আমি ব্যাল্কনিতে চলে গেলাম। আকাশটা মেঘে ঢাকা মনে হয় একটু পরেই ঝুম বৃষ্টি নামবে। পুরোনো কথা মনে হতেই খুব কান্না পাচ্ছে। খুব কাদিবো আজকে মন খুলে। শুনেছি কান্নাত শোক মন্দীভুত হয়।
সেদিন রাত ছিলো চোখের জলে বালিশ ভিজানোর রাত। সারারাত আর ঘুম হলোনা। সকালেই টুক্টুকি ঢাকায় ব্যাক করে। ও চলে যেতেই ইভানকে আরো বেশি করে মনে পড়তে থাকে।
আমি ওকে ফোন করেই বসি।
দুইবার রিং হওয়ার পর ও ব্যাক করে।
— হ্যালো…
আমি কোন কথা বলতে পারছিলাম না খালি কান্না পাচ্ছিলো।
— হ্যালো, এই হ্যালো, কথা বলতে যখন ইচ্ছে করেনা তখন ফোন না করলেই পারতে..
যত্তসব
— সরি..
— কিসের জন্যে??
না তুমিতো এমন কিছু করোনি যার জন্য সরি হতে পারো। হুয়াই??
— আমার এখানে ভালো লাগছেনা তুমি আমাকে নিয়ে যাও….
ইভান হি হি করে হাসতে লাগলো। আচ্ছা আমি এমন কি বললাম যে ও এইভাবে হাসছে??
— প্লিজ আমি আর হাসতে পারছি না । এই দেখ দুইদিন পর পর ড্রামা ক্রিয়েট করার কোন শখ আমার নেই। যে রিলেশনে কোন বিশ্বাস নেই সেই রিলেশন থাকার থেকে না থাকাটাই বেটার…
ক্লিয়ার…
— প্লিজ তুমি এইবারের মত আমাকে ক্ষমা করে দাও।
এইটা বলতেই ও ফোনটা কেটে দিলো।
আমি ফোনটা বিছানায় ছুড়ে কাদতে লাগলাম।
চলবে।।
#আজ আমার বিয়ে
পার্ট ৩৬
লেখা আশিকা জামান
মা দৌড়ে আসলো আমার কান্না শুনে।
— কি হয়েছে অরিন,
কাদছিস কেন??
আমি কোন কিছু না বলেই আবার কাদতে লাগলাম।
আমি কিছুই বলছিলাম না। মা পরে আমাকে শান্তনা দেয়
–দেখিস সব ঠিক হয়ে যাবে। এখন শুধু বাচ্চাটার কথা ভাব। তুই এইভাবে কান্না করলে সেটা বাচ্চার উপর এফেক্ট পড়বে। আর তোর শ্বশুর শাশুড়ি তো খুব ভালো মানুষ উনাদের উপর একটু ভরসা রাখ।
মা নওরিনকে ফোন করে আমার এখানে আসার জন্য যদি ওকে দেখে মন্টা একটু ভালো হয় এই আশাতেই।
নওরিন আসলে আমি ওকে সব বলে হেল্প চাই ও অবশ্য আমার থেকে অনেক কিছু ভালো বুঝে। যদিও ওর ইভান ভাইয়াকে কষ্ট দেয়ার জন্য ও আমাকে অনেক বকাঝকা করে ৪ ঘন্টা আমার সাথে কোন কথা বলেনি। পরে অবশ্য আমার কাছে এসে আমাকে শান্তনা দিয়েছে ও আছে আমি যেন কোনই টেনশন না করি।
আমি ওর কথাতে কেন জানি এক্টু ভরসা পেলাম।
আমি ইভানকে ফোন ক্রমাগত দিয়েই যাচ্ছি কিন্তু অসভ্যটার এত জিদ ফোন বন্ধ করে রেখে দিছে কল আসার ভয়ে।
বিকেলে ফোন্টা খোলা পেয়ে নওরিনকে দিয়ে কল করালাম।
— হ্যালো দুলাভাই।
— হুম বলো..
— কেমন আছেন??
— মরি নাই বেচে আছি। তোমার বোনকে বলে দিও আমাকে যেন যখন তখন ফোন না করে। আমি অফিসে, বাসায়, যখন তখন ফোন অসহ্য হয়ে গেলাম…
— আপনি কিন্তু আপুর সাথে এটা ঠিক করছেন না। অন্তত বেবির কথাটা ভাবা উচিৎ।
— নওরিন তুমি সব কিছু জেনেও যদি এমনটা বলো তাহলেতো আর কিছু বলার থাকেনা।
আর সব থেকে বড় কথা হলো তোমার আপু আমাকে বিশ্বাস করতেই পারেনা আর বিয়েটাও তো সে করতেও চায় নি। যা হয়েছে তার জন্য আমি দায়ী। সব তোমার আপুর উপর চাপিয়ে দিয়েছি আমি। এখন বাচ্চাটাও…
আসলে আমার মনে হচ্ছে তোমরা অরিন কে প্রেসার ক্রিয়েট করিছো আমার কাছে আসার জন্য। কারন ওকে আমি ভালো করে চিনি ও এমন মেয়েই না। ওর কষ্টটা আমি বুঝতে পারছি না পারছে আমাকে এক্সেপ্ট করতে না পারছে বাচ্চাটাকে একসেপ্ট করতে…
কিন্তু সমাজের জন্য ও হেরে যাচ্ছে। নাহ আমি চাইনা ও হেরে যাক। ওকে জিজ্ঞাস করো ও যেভাবে যা চায় আমি তাই করবো।
— দুলাভাই এটাতো কোন সমাধান হলোনা। এতক্ষন যা বললেন এগুলোতো সব অভিমানের কথা মনের কথা নয়। আর আপনি আপুকে ভুল বুঝছেন। আপু নিজে থেকে আপনাকে চায় আমরা কেউ কোন প্রেসার ক্রিয়েট করি নাই।
— তোমার আপু আর আমি নাহ ব্যাপারটা ঠিক হজম হলো না। দেখ সব মাথার উপর দিয়া যাচ্ছে..
তুমি ফোন্টা রাখ আমি এখন বিজি।
ইভান ফোন্টা বোধহয় কেটে দিলো।
— আপু দুলাভাই ফোন্টা কেটে দিছে..
আচ্ছা তুই টেনশন নিসনা দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।
সেই যে নওরিনের সাথে কথা হলো এরপর আর আমার সাথে কথা হলো না। এতটা অভিমান ও আমার উপর পোষে রাখতে পারে তা আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না।
আমি কি করবো নিজেও বুঝতে পারছি না।
শ্বশুরবাড়ির সবাই ফোন করে খবর নিচ্ছে খালি ওই এমন করছে।
তারপর শাশুড়ি মা আর ইরা দুইদিন পর পর এসে আমাকে দেখে যাচ্ছে।
সেদিন শাশুড়ি মা আমার বাবাকে বলছিলেন,
আমি অবশ্য আড়ালে দাঁড়িয়ে শুনেছি।
–“বিয়েতো হয়েই গেল সবে ২-৩ মাস হলো, আর কিভাবে বিয়ে হলো সেটাতো আমরা জানিই কিন্তু আমার আত্নীয় স্বজনের মধ্যে অনেকেই ইভানের যে বিয়ে হইছে এইটা কেউ এখনো জানেই না।, এখন এই অবস্থায় বাচ্চার খবরটা জানাজানি হলে কি কেলেঙ্কার হবে সেটাই আমি আর ইভানের বাবা কয়েকদিন যাবত ভাবছি।”
— হুম বিয়েটাতো যে পরিস্থিতিতে হয়েছে তাতে অনেকের না জানারি কথা।
তা পরে সবাইকে জানালেই পারতেন।
— হুম সেটাও করা যেত। কিন্তু মাত্র বিয়ে করিয়ে আনলাম তারপর, আপনাদের তখন চিনিও না জানিও না কি থেকে কি হয়ে যায় এইসব ভেবে আর তখন কিছু করা হয়ে উঠেনি। আর তারপর ভাবলাম কিছু একটা করি তখন ইভানের ঢাকা যাওয়ার ডেট আসলো, আবার অরিনের এক্সাম। আর ছেলেমেয়েদুটোর ভাবগতি ভালো ঠেকছিলো না দেখে ওর বাবা অরিনকেও ঢাকায় পাঠায় দিলো। নিজেদের মত করে যেন সময় কাটাতে পারে শুধু এই আশায়। কিন্তু শেষে কি হলো এইভাবে অরিন এসে পড়লো। কি যে হলো আজো জানলাম না। তারমধ্যে এখন এই খুশির সংবাদ। এতকিছুর মধ্যে আসল কাজটাই করা হয়ে উঠেনি…
বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
— হুম সবি বুঝতে পারছি। কিন্তু আসল কথা কি জানেন ছেলে মেয়েদের একা একা ছেড়ে না দয়ে গার্ডিয়ান থাকাটা খুব দরকার। দুজনের মধ্যে যাই হয়ে যাক না কেন তখন যদি আপনি থাকতেন তাহলে ব্যাপারটা হয়ত এতদূর গড়াতে পারতো না।
— হুম সেটাই। কি করবো বলুন যার যার কর্মব্যস্ততার জন্যই কিন্তু একসাথে থাকাটা হয় না।
ওসব নিয়ে এখন আর ভাবছি না ছেলেমেয়ে দুটোর যা হয়েছে ওরা নিজেরাই সেটা মিটিয়ে নিবে বলে আমার দৃড় বিশ্বাস। তাই ওখানে আমাদের হস্তক্ষেপ না করাটাই বেটার।
— তা অবশ্য ঠিকি বলেছেন। কিন্তু এখন সামনের ব্যাপারটা নিয়ে কি করতে চাচ্ছেন??
— আসলে আমি চাচ্ছিলাম ফ্যামিলি মেম্বার সবাইকে ইনভাইট করে লোক দেখানো বিয়ের অনুষ্ঠান করলে কেমন হয়।
তাছাড়া সামনে আপনাদের বাড়ির ছেলের বিয়েও আছে একসাথেই হয়ে গেল..
— হুম অতি উত্তম প্রস্তাব। সত্যি বলতে কি আমি এইভাবে কখনো ভেবেই দেখিনি, তাছাড়া ও আমার বড় মেয়ে ওর বিয়ে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন ছিলো।আগের বার যা হলো তার জন্য আমি নিজেই খুব লজ্জিত…
তাই আর একটা সুযোগতো পেতেই পারি।
— ভাই সাব আসলে আমি যে কি খুশি হলাম আপনার সম্মতি পেয়ে তা আপনাকে বোঝাতে পারবো না।
আমারতো খুব মজা লাগছে ইভান ব্যাটা এইবার দেখি তুমি কোথায় যাও।
খুশিমনে আমি রুমে চলে আসলাম। সারারাত জেগে জেগে গান শোনলাম,
চাঁদ জাগা এই রাতে
দু’চোখের বরষায় ভিজে
ভাবছি তোমায় জেগে জেগে রাত
তুমিও কি ভাবছো আমায়..!
চলবে।।

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে