আজ আমার বিয়ে পার্ট- ১৮+১৯+২০ একসাথে

0
2585

আজ আমার বিয়ে পার্ট- ১৮+১৯+২০ একসাথে
লেখা আশিকা জামান

মা, বাবা, নওরিন, সোহান সবাই এসেছে আমার জন্মদিনে যা আমি এক্সপেক্টইই করিনি। খুশিতে আমার চোখে জল এসে গেছে। বাবা এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরে।
– কি রে মা তুই এভাবে কাঁদছিস কেন??
দেখ আমরা সবাই এসেছি..
আমি কোন কথা বলতে পারছিলাম না।

মা আর নওরিনকে জড়িয়ে ধরে আরো কাদতে লাগলাম।
– বাবা তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি।
– ধুর পাগলি। আমি কি তোর উপর রাগ করে থাকতে পারি। তুই যে আমার মা। তাছাড়া ইভানের মত এত ভালো মনের মানুষের সাথে তোর বিয়ে হয়েছে ।

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/



সত্ত্যিই আমি আর তোদের প্রতি রেগে নেই। মন থেকে তোদের দোয়া করছি সারা জীবন সুখি হও..
বাবা আমাকে আর ইভান দুই জনকেই বুকে টেনে নিলেন।
– কি অরিন ওনাদের কি দাড় করাই রাখবা নাকি বসতে বলবা।
আমার শাশুড়ি মা আর শ্বশুর মশাই হাজীর।
– হ্যা সবাই বস। আসলে আমারি ভুল হয়ে গেছে। আসো
সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।
আমি আমার শ্বশুর শাশুড়ির দিকে তাকাতেই দেখি..
আমার শ্বশুর আমমার বাবাকে দেখেই বলে উঠলো
– ইমতিয়াজ তুই??
আমার বাবা আমার শ্বশুর কে জড়িয়ে ধরলো…
-ইকবাল এত বছর কোথায় ছিলি?? তোর সাথে যে আমার দেখা হবে তা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি??
কত খুজেছি তোকে??
কোথায় ছিলি বন্ধু??
আমরা সবাই একে অন্যের দিকে চোখাচোখি করতে লাগলাম।ব্যাপারটা কি হচ্ছে বুঝতে পারছিলাম না।
– আমিও তোকে অনেক খুজেছি। দেখ এত কাছে থেকেও আমরা কেউ কাউকে খুজে পাইনি। আজকে ছেলে মেয়ে দুটোর জন্যই তোকে ফিরে পেলাম ।
– হ্যা রে সে হিসেবে বলতে গেলে আমরা ওদের কাছে ঋনী।
ইভান তার বাবার দিকে ঘার ঘুরিয়ে প্রশ্ন করে।
– বাবা তোমরা কি আগে থেকেই পরিচিত??
নাহ আসলে আমরা বুঝতে পারছি না।
আমার বাবা ইভানের দিকে তাকিয়ে বললেন..
– হ্যা তোমার বাবা আমার বাল্যবন্ধু। সেই ক্লাস ওয়ান থেকে পরিচয়। একজন আরেকজনকে ছাড়া কিছুই বুঝতাম না।
এতটাই মিল ছিলো যে একজন আরেকজনকে ছাড়ার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারতাম না। আমি তখন ক্লাস টেনে পড়ি তখন আমার বাবা মারা যায়। আমার চাচারা আমাদের সমস্ত সসম্পত্তি নিয়ে আমাদের অনাথ করে দেয়। সেই সময় ছোট ভাই বোন, মা কে নিয়ে আমি খুবই দুঃ সময়ে পড়ে যাই। তখন আমার মামা আমাদের ঠাই দেয়।
মামা আমাকে পড়াশুনো করিয়েছে..
চাকরি হয়েছে পরে তোমার শাশুড়ি মা মানে আমার মামাতো বোনকেই বিয়ে করি।
এরপর চাকরীর সুবাধে এখানে থাকতে থাকতেই সেটেল হয়। অবশ্য তোমার বাবার অনেক খুজ নেয়ার চেষ্টা করেছি কিন্তু পাই নি।
যাই হোক ইকবাল তুই তো আমার খোজ করতে পারতি??
– তুই এটা বলতে পারলি??.
আমি তোকে কত খুজেছি। তুই চলে যাওয়ার পর আমি পুরা একা হয়ে যাই।
বাবা আমাকে বিদেশে পাঠায় ‘ল পড়ার জন্য। সব ছেড়ে চলে যাই। এরপর জর্জ কোর্ট এ জয়েন করি। এরপর এই চাকরি, বউ, বাচ্চা,সংসার নিয়াই পড়ে আছি।
আমার শাশুড়ি মা এগিয়ে এসে বলে
– এইবার আপ্নারা আপনাদের মান অভিমানের পালাটা শেষ করুন। মেয়েটার আজকে জন্মদিন বলে কথা। তাছাড়া আল্লাহ যা করেন।ভালোই করেন।
সবাই মিলে হৈ হৈ করে আমার জন্মদিন পালন করলাম।
কেক কাটার সময় আমি সবসময় বাবাকে প্রথম কেকটা খাওয়াতাম।
আজকেও তাই করতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু বাবা আমাকে উহু, বলে কেকটা ইভানের দিকে এগিয়ে দিতে বলে।
আমি ইভানের দিকে কেক টা এগিয়ে দিলাম..
ইভান কেকটা নেয়ার সময় আমার আংগুলে আলতো করে একটা কামড় বসায়..
অন্যসময় হলে কি করতাম জানি না, কিন্তু আজকে আমি ইভানের প্রতি খুবই প্রসন্ন। আজকে আমি খুব হ্যাপি। মনে হচ্ছে এইটা আমার বেস্ট জন্মদিন।
সবার জন্য খাবার সার্ভ করার জন্য আমি কিচেনে গেলাম। নওরিন ও আমাকে হেল্প করতে আসলো।
আমি ওকে একা পেয়েই জিজ্ঞাস করলাম ও কেমন আছে সোহানের সাথে।
ও বললো, সোহানের সাথে ও খুব হ্যাপি। আমার মাথা থেকে যেন একটা বোঝা নেমে গেল।
– আপি ইভান ভাইয়া তোকে আমাদের কথা বলেনি??
– না আমি কিছুই জানতাম না। আমি আজকে খুব অবাক হয়েছি।
– হুম। আমরাও হয়েছিলাম।
ইভান ভাইয়া কয়েকদিন ধরেই আমাদের বাসায় আসা শুরু করছে।
বাবা তো ইভান ভাইয়ার সাথে কথাই বলেনি। দেখেই দরজা বন্ধ করে দিতো। মাকে বলতো ভাইয়াকে যেন চলে যেতে বলে । তারপর ও ভাইয়া বাবার রাগ ভাংগাতে আবার চলে আসতো। ভাইয়া সেইদিন বাবার পা ধরে কি কান্না করেছিলো তোকে ক্ষমা করে দেয়ার জন্য।
বাবা শেষে বুঝতে পেরেছিলো ইভান ভাইয়াই তোর যোগ্য। তাই সবাইকে অবাক করে দিয়ে বাবা আজকে এখানে আসতে চাইলো।
আর আমার শ্বশুর ইভান ভাইয়াকে কি অপমান করেছিলো। অপমানের পরো ইভান ভাই আমাকে দেখতে গেছে। আমার খুব কষ্ট হচ্ছিলো কিন্তু কিচ্ছু করতে পারছিলাম। শেষে সোহান আমাকে সবার অমতে এখানে নিয়ে এসেছে।
– এত কিছু হয়েছে কিন্তু দেখ ইভান আমাকে কিছুই জানায়নি।
– ইভান ভাইয়া খুব ভালোরে । তুই তোর যোগ্য সজ্ঞীকেই প্রছন্দ করেছিস..
– কিন্তু আমিতো ইভানকে বিয়ে করতে চাই নি।
– আপু তুই এইগুলা আর কারো সামনে বলিস না। তুই সব ভুল বোঝাবোঝি মিটিয়ে নে। ভাইয়া তোকে খুব ভালবাসে রে…
আর কষ্ট দিস না ভাইয়াকে।
– তুই এই বাটিগুলো নিয়ে আসই। খাবারের লেট হয়ে যাচ্ছে…
আমি যে নওরিনকে এড়িয়ে গেলাম ও সেটা ভালোভাবেই বুঝলো।
রাতে সবাই খাওয়া দাওয়া করে চলে গেল।
এতক্ষন অনেক বিজি ছিলাম, তাই ইভানের সাথে আলাদা করে কোন কথাই হয় নাই।
সব কাজ গুছিয়ে আমি রুমে আসলাম অনেক টায়ার্ড লাগছে।
ওকে দেখলাম ফোন টিপাটিপি করছে…
আমি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পিন খুলছিলাম শাড়ির।
আমি আয়নাতে দেখছিলাম ইভান আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।
আমি পিঠের ওখানের পিনটা খুলতে পারছিলাম না।
বার বার চেষ্টা করছিলাম।
ইভান এসে আমার পিছনে দাঁড়ায়।
আমার পিঠে হাত দিয়ে শাড়ির আচলটা ধরে পিনটা খুলতে লাগলো।
পিন খুলে ইভান আমাকে ওর দিকে ঘুরালো।
আমার হাতে পিনটা দিলো।
– নাও, ধরো।
আমি নিচে তাকাই ছিলাম।
আমার থুতনি ধরে মুখটা উপড়ে তুলে।
– তোমাকে আজকে খুব সুন্দর লাগছিলো।
আমি তো চোখি ফিরাতে পারছিলাম না।
হঠাৎ মনে হলো তোমার যদি নজর লাগে,
তাই কেক খাওয়ার সময় হাতে একটা কামড় দেই।
কি ভালো করেছি না।
আমি ইভানের বুকে দুইটা কিল দিয়ে ধাক্কা দিয়ে সরাই দেই।
– এই কি?? কি করছো??
– কি?? আবার..
আচ্ছা আমি যে ব্যাথা পেলাম সেটার কি হলো???
কামড় দেয়া নাহ…
– ও ময়না তুমি ব্যাথা পাইছো??
আচ্ছা আজকে বেশি করে আদর দিয়া পোষাই দিবো।
ইভান আমার দিকে এক পা করে আগাতে থাকে।
– এই না না বলছি। একটুও আগাবা না বলছি। সরো, সরো..
আমি ইভানকে ধাক্কা দিয়া সোজা বিছানায় ফেলে দিলাম।
ইভান ও কম যায় না বিছানায় পড়ার আগে আমার কোমড় ধরে আমাকে সাথে নিয়া বিছানায় পড়ে।
ইভান নিচে আর আমি উপরে। আমার কোমড়ে তখনো সে ধরে আছে শক্ত করে।
– এবার??
কি করবা??
– ইভান ছাড়ো…
প্লিজ…
হুম ছাড়বো কিন্তু তার আগে….
আমি ইভানের মুখ ছাপিয়ে ধরলাম।
– আর একটাও বাজে কথা বলবা না।
ইভান আমাকে উপড় থেকে নিচে শোয়ায় আর সে আমার উপড়ে এসে পড়ে।
– ইভান সরো??
সরো বলছি।
আমি ঘার ডানে বামে ঘুরাতে লাগলাম।
ইভান কিছুতেই সরছিলো না।আমার অসহ্য লাগছিলো।
– এই তুমি যাবা। মেজাজ খারাপ হচ্ছে। এতসব জোড়াজোড়ি আমার প্রছন্দ না। বিরক্তিকর…
আমি খুব কড়াভাবেই কথাগুলো বললাম। ইভান সাথে সাথে সরে গেল।
আমি চেঞ্জ করে এসে বিছানায় শুয়ে পড়লাম।
ইভান তখনো ফোন নিয়েই পড়ে আছে…
– ইভান তুমি ফোনটা রাখলে কিছু বলতাম।
– বল, শুনছি।
– আজকের দিনের জন্য ম্যানি ম্যানি থ্যাংকস…
আসলেই আজকে আমি খুব হ্যাপি।
ইভান ভ্রু কুচকে বললো
– অনলি থ্যাংকস..

পার্ট ১৯

আমি কোন ধন্যবাদ পাওয়ার জন্য কিছু করিনি।
– তো কেন করেছো??
– আমার ইচ্ছা হয়েছে তাই.
– সেই ই তোমারা ছেলেরা সত্যিই ইচ্ছা হলেই যা খুশি তাই করতে পারো। বাট আমাদের ইচ্ছার কোন মুল্য কেউ দেয় না।
– হঠাৎ এতো নারীবাদী লেকচার??
– যা সত্যি তাই বলছি..
– তুমি না মাঝে মাঝে অনেক অবাঞ্ছিত কথা বলো।
এখন কি আমাদের এইগুলা বলা উচিৎ। আচ্ছা নিউলি মেরিড কাপলরা কি এইরকম বিহেভ করে??
এখন আমাদের নিজেদের মধ্যে কত ভালো টাইম স্পেন্ড করার কথা।
কিন্তু তুমি কি করছো আমার সাথে??
ধুর ভাল্লাগেনা কিছু…
– তুমি যতটা সহজলভ্য আমাকে মনে করো ঠিক ততটা আমি নই??
– ও তাই!! তাহলে আপনাকে পাওয়ার জন্য কি? আমার সাত সমুদ্র তেরো নদী পাড়ি দিয়ে সাত নড়ির হার আনতে হবে।
যত্তসব..
তুমি যা করছো ভেবে করছোতো??
আমি শুধু একটা কথাই বলবো তুমি জাস্ট এক্সেস করছো।গট ইট??
– হুম যদি এইটা এক্সেস হয়তো এক্সেস…
তোমাকে মনে করিয়ে দেই,
আমি কোন গ্রামের সহজ, সরল, হাবলা, গুবলা মেয়ে নই। যা,বুঝাবা সব মেনে নিবো। আমি যথেষ্ট শিক্ষিত, স্মার্ট মেয়ে, তাই কোনটা ভালো, কোনটা মন্দ আমি বুঝতে শিখেছি। সুতরাং কি যেন বলে??
ও হ্যা প্রতিব্রতা স্রীদের মত বিহেভ আমার থেকে আশা করোনা।
– তোমার সাথে কথা বলা আর পাগলের সাথে কথা বলা সিরিয়াসলি এক সমান।
আমার পাগলের প্রলাপ শোনার কোন ইচ্ছা নেই।
বিরক্তিকর লাগছে।তুমি কি দয়া করে চুপ করবে। না হলে আমি এক্ষন ঘর থেকে বের হয়ে যাব।
আমি আর ওর সাথে কথা বাড়ালাম না।
কালকে সকালে আবার আমাদের বাসায় যাওয়ার কথা। বেশি কিছু বললে যদি সাথে না যায়। তাই আপাতত চুপ করলাম।
অসহ্য লাগছে সব কিছু, রাতে আমার আর ঘুম হলো না। জানি না ও কি করলো।
কিছু কিছু রাত থাকে না, অসহ্যকর ঠিক তেমনি একটা রাত পার করলাম।
খালি মনে হচ্ছিলো কখন ভোর হবে…
অনেক ভোরে উঠে পড়লাম..
তখন আর কেউ উঠে নি।
ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে গেলাম।
রান্না করতে করতেই মা উঠে পড়ে।
আমাকে এত সকালে দেখে খুবি অবাক হয়।
– কি রে এত সকালে উঠে পড়েছিস??
রাতে ভালো ঘুম হয়েছে??
চোখ মুখ এমন দেখাচ্ছে কেন??
সব ঠিক আছেতো?.
আমার শাশুড়ি মার এইটাই সমস্যা বেশি কুয়েশ্চেন করে।
– নাহ মা সব ঠিক আছে। আসলে আজকে না তাড়াতাড়ি ঘুম ভেংগে যায়। তাই রান্নাঘরে আসলাম…
– হয় হয়..
বেশি এক্সাইটমেন্টে এইরকম হয়। বাপের বাড়ী যাবি বলে কথা..
বলেই মা হেসে দিলো।
আমিও তার সাথে তাল দিয়ে এমনি হাসলাম।
ইভান সেদিন লেট করে ঘুম থেকে উঠে।
খাবার টেবিলে কেমন গম্ভীর হয়ে বসে ছিলো। এইটা দেখে আমার আর ওকে বাসায় যাওয়ার কথা বলার সাহস হয় নাই।
আমি ড্রইংরুমে বসে টিভি দেখছিলাম।
হঠাৎ শোনলাম ইভান আমাকে ডাকছে..
আমি রুমে গিয়ে দেখি ইভান পুরা ওয়্যারড্রোব এলো মেলো করে কাপড় এদিক সেদিক ফেলে রাখছে।
– এইগুলা কি করেছো তুমি??
কি অবস্থা??
– একটা জিনিস ও ঠিক করে খুজে পাবো না। আমার ব্লু কালার শার্ট টা কোথায়??
– কোথায় মানে এখানেই আছে।
আমাকে দেখতে দাও..
বিছানার উপরে ব্ল্যাক কালার শার্ট এর নিচেই ফেলে রেখেছে…
আমি শার্টটা ওর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলি ,
– এইটা কি??
ইভান আমার থেকে শার্টটা নিয়ে নেয়।
– সবসময় অন্য মনষ্ক হয়ে থাকলেতো কিছু খুজে পাবা না।
– ইচ্ছে হলেও কি থাকার জো আছে??
এনিওয়ে তুমি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে নামো, আমি নিচেই আছি…।
ইভান শার্টটা পড়ে হন হন কর বেরিয়ে যায়…
আমি রেডি হয়ে সবাইকে বলে নিচে নামি।
নিচে নামতেই দেখি ইভান দাঁড়িয়ে আছে।তারপর রিক্সায় করে আমাদের বাসায় গেলাম। কিন্তু পুরা রাস্তা ও আমার সাথে একটা কথাও বললো না। বাসায় পৌছুতেই নওরিন এসে দরজা খুলে দিলো।
— কি দুলাভাই অবশেষে আসতে পারলেন তাহলে??
— হুম, এত সুন্দর শালিকা থাকলে কি না এসে পারা যায়।
বলেই আমার দিকে তাকিয়ে হি হি করে হেসে দিলো।
নওরিন ও বেহায়ার মত হাসতে লাগলো।
— তাহলে দুলাভাই মানছেন তো, আপনার বউ এর থেকে আমি বেশি সুন্দরী!!
— কি যে বলোনা? তুমি কার সাথে কার তুলনা করো? ছিঃ নওরিন পেত্নীর সাথে নিজের তুলনা করে না।
নওরিন আমার দিকে ভয়ে ভয়ে তাকায়। ও বুঝে গেছে এইবার আমি রেগে গেছি।
পিছন থেকে সোহান এসে হাসতে লাগলো।
— ইভান ভাইয়া আপনি না পারেন ও..
আমি রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে রুমে ঢুকি।
— দুলাভাই দিলেতো আপুকে রাগিয়ে।
— ধুর ওসব নিয়ে ভেবোনা। ওইটা নিত্যদিনের রুটিন। প্রতিরাতে ওই হাড়ি মুখ দেখে ঘুমাতে যাই, সকালেও ওই সেইম কাহিনী। আমার উপর তোমার আপু জীবনেও প্রসন্ন হবে না।
— আসলেই আপু না বেশি বেশি…
— নওরিন জামাইকে কি দাড় করায়ে রাখবি।
— আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন মা??
— এইতো আলহামদুলিল্লাহ। এখন আমাদের ভালমন্দ সব তোমাদের উপরে নির্ভর করে। তোমরা ভালোতো আমরাও ভালো।
আচ্ছা বসো বসো।
আচ্ছা অরিন কোথায় গেল??
মেয়েটা যে কি??
অরিন?? এই অরিন??
— হ্যা মা বলো। আচ্ছা বাবা কোথায়??
— তোর বাবা একটু বাহিরে গেছে। আর জামাইকে একা রেখে কোথায় গিয়েছিস?? না তোর কোনদিনো আক্কেল বুদ্ধি হবে না।
আমি রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে ইভানের পাশে বসলাম।
— আপু তোমরা বসো আমি নাস্তা নিয়াসি।
সোহান ও নওরিনের পিছে পিছে গেলো।
একটু পর নওরিন ট্রেতে করে নুডুলস, চিকেন ফ্রাই, পাচ রকমের পিঠা, সেমাই নিয়াসলো।
— শালিকা এত খাবার!! অসম্ভব আমি এতো খেতেই পারি না।
— উহু না বললে শুনছি না। সব আমি নিজে হাতে বানিয়েছি।
— ও তুমি বানিয়েছো গ্রেট। নাহ, এইবার বলতেই হয় সোহান তোমার কপালটা ভালোই।
সোহান ইভানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।
— মনে হয় এইগুলা আর কেও বানাতে পারে না। নওরিন একাই পারে।
ইভান আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
— কই কোনদিনতো কেউ খাওয়াইলো না।
— আমার এত দায় পড়েনি কাউকে খাওয়ানোর জন্য।
সোহান ভাই উঠে আমার কাছে এসে বসে।
— অরিন তুমি কি ফান বুঝো না। তুমি যত চেতবা ওর তত মজা নিবে। বোকা কোথাকার?
— আসলেই ভাইয়া আমি খুব বোকা। তাই আমাকে যে কেউ সহজেই বোকা বানাতে পারে।
সোহান ভাই আমার মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে।
তার অবশ্য কথার ধাচটা বোঝার কথা না। তবে ইভান ঠিকিই বুঝেছে।
আমাদের বাসায় এসে ইভান সবার সাথে বেশ মানিয়ে গেছে। একদিনেই যে সবার মন জয় করে ফেলেছে সে আমি ভালোই বুঝেছি। দুপুরে খাওয়ার সময় দেখলাম বাবা ইভানকে তার পাশে বসিয়ে খাওয়াচ্ছে। এইভাবে আমাদের দুই বোনকেও কখনো খাওয়াইনি।
বিকেল থেকে নওরিনকে দেখলাম ইভানের সাথে ফাজলামোটা অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে গিয়েছে। আমার কেন জানি এইগুলা নিতে পারছিলাম না। আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে ইভানকে বলতে লাগলো,
— দুলাভাই, আপনি কোন টেনশন করবেননা। আপুর মোড আমি রাতের মধ্যেই ঠিক করে দিবো।
সোহানকেও দেখলাম নওরিনের কথায় বেশ সায় দিচ্ছে।
— তোমার বোনের যে প্যাচার মত মুখ দেখছি আল্লাহ ই জানে কপালে কি আছে।
— আমার উপর একটু ভরসা রাখেন।
বলেই কি হাসি।
আমি রাগে সোফা থেকে উঠে পড়ি।
— কি আমি প্যাঁচা নাহ??
আজকে আমি দেখাবো কে প্যাঁচা??
আর একমুহুর্তও এখানে থাকতে ইচ্ছে হচ্ছে না।
আমি সোজা রুমে চলে আসলাম। ইভানকে কখনো আমাকে নিয়ে এইভাবে ফাজলামো করতে দেখিনি।
আমার বেশ রাগ লাগছে নওরিনের উপর। সকাল থেকে আমার উপর যাতা শুরু করেছে।

পার্ট ২০

আমি রুমে এসেই কিছুক্ষন ইভানের জন্য ওয়েট করলাম। নাহ তার আসার নাম নেই।
শাড়ীটা অসহ্য লাগছে খুলে ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছে।
সামনে তাকাতেই দেখি নওরিন বদটা হাজীর। সাথে ২টা গ্লাস।
— আপু তুই কি আমার উপর রাগ করেছিস??
— না।
— তাহলে মুখটা অমন করে রেখেছিস কেন??
— ইচ্ছে হচ্ছে তাই।
— সরি আপু, আমিতো মজা করছিলাম। প্লিজ আপু রাগ করেনা।
নওরিন আমাকে জড়িয়ে ধরে।
— আচ্ছা আমি রেগে নেই বলেছিতো।
এইবার ছাড়।
— সত্যি তাহলে এইটা খা।
আমার দিকে গ্লাসটা এগিয়ে দেয়।
— কি এইগুলা। কেমন যেন স্মেল আসছে। নাহ খাবনা।
— আরে খাও। অনেক মজা। সোহান কানাডা থেকে নিয়াসছে। খাও না।প্লিজ আপু।
— আচ্ছা দে।
আমি গ্লাসটা হাতে নিতেই দেখি ইভান রুমে ঢুকলো।
— কি শালিকা এখানে কেন?? যাও তোমার উনি আবার বেহুঁশ হবেন।
ইভান হাসতে হাসতে ওয়াশরুমে ঢুকে।
— আচ্ছা আপু আমি যাই। তুই খা আর ভাইয়াকেও খেতে বলিস।
আমি ভয়ে ভয়ে খেতে লাগলাম। কেমন যেন একটু তেতো লাগলো।বাট খাওয়ার পর বেশ লাগলো। আমি ইভানের গ্লাসটা সহ ঢকঢক করে খেয়ে ফেললাম।
ইভান ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ওর শার্টটা খুলে টি শার্ট পড়তে যাচ্ছিলো।
— ইভান এভাবেই থাকো। আর কিছু পড়োনা প্লিজ।
— কেন??
— তোমাকে খালি গায়ে বেশি সুন্দর লাগে।
ইভান আমার দিকে বড় বড় চোখে তাকায়।
— আচ্ছা তুমি ওইভাবে আর তাকাবা না প্লিজ। আমার না ভয় হয়…
— কিসের ভয়??
— যদি তুমি আমাকে খেয়ে ফেলো।
আবার ইভান আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকায়।
— তুমি আবার ওইভাবে তাকাচ্ছো। আচ্ছা তুমি কি ওখানে দাঁড়িয়ে থাকবা নাকি বিছানাতে আসবা??
ইভান ঠিক আগের ভংগিতে দাঁড়িয়ে আছে।
— কি হলো??.
— আমি না তোমাকে কখনো কখনো বুঝতে পারি না।
— থাক তোমার বুঝা লাগবে না।
আমিই বুঝাচ্ছি।
আমি বিছানা থেকে লাফ দিয়ে ইভানের কাছে আসলাম।
তাল সামলাতে না পেরে পড়ে যাচ্ছিলাম।
ইভান আমাকে ধরে ফেলে।
— এইভাবে কেউ লাফ দেয়। যদি পড়ে যেতে তখন কি হতো।
— কি আর হতো পা ভেংগে যেতো। তখন সবসময় তোমার কোলে চড়তে পারতাম।
ইভান আমার মুখে একটা আংগুল দেয়..
— চুপ, একদম বাজে কথা বলবা না।
আমি ইভানকে জড়িয়ে ধরে ভ্যা ভ্যা করে কাঁদতে থাকি।
— অরিন কি হয়েছে?? তুমি কাদছো কেন?? আমি কি তোমাকে বকেছি??
— হুম তুমি খুব পচা আর আমাকে খুব বকেছো। আমাকে প্যাঁচা বলেছো, আমি কিছুই পারিনা বলেছো। সবার সামনে আমাকে তুমি পচিয়েছো।
— ধুর পাগলি আমিতো মজা করে বলেছি। তুমিতো পরী, আমার ছোট্ট পরী।
— নাহ তুমি নওরিনকে বেশি সুন্দরি বলেছো।
— ধুর, তুমিইতো বেশি সুন্দরি। নওরিন একদম পচা। এইবার হয়েছে।
— হুম।
— তাহলে আমাকে এইবার ছাড়ো আর নিজেও ঘুমাও কেমন।
— না ছাড়বো না। তুমি আমাকে একটুকুও ভালোবাসো না। খালি দূরে সরাই দাও।
— আমি ভালোবাসি নাহ। ভালোই বললা। দুরেতো তুমি নিজেই সরে যাও। এখন আমার দোষ??
— আচ্ছা তুমি আমাকে একটু কোলে নিবা।
— এই তোমার আজকে কি হয়েছে??
— আমাকে না আজকে প্রেমরোগে ধরেছে। তুমি রোগটা সারিয়ে দিবা??
— হুয়াট??
আমি ইভানের পায়ের পাতার উপর আমার দুই পা রেখে,মাথাটা আমার দিকে ঝুকিয়ে এনে ওর কপালে চুমু দেই।
ইভান আমাকে ঝটকায় কোলে তুলে নেয়। আমি আমার দুই হাত দিয়ে ওর গলা জড়িয়ে ধরি।
আমি ওর চোখের দিকে তাকালাম। পলক আর ফেলছে না। অদ্ভুত সুন্দর দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ওর ওই মায়াবী চোখের প্রেমে আমি অনেক আগেই পরে গেছি। এখান থেকে উঠা যে আমার কম্ম নয় তা আমি আগেই বুঝে গেছি। চোখের পলক এখনো ফেলছে না। কি দেখছে ও??
জানি না জানতেও চাই না। শুধু ওর চোখ দেখেই বুঝে গেছি আজ আমার সর্বনাশ।
আজ যে সব কিছু উজাড় করে ওকে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে। সুখের সাগরে অবগাহন করার যে বড় সাধ জেগেছে।
ও আমাকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শোয়ায়।
আমার শাড়ীর আচল সরে যায়। আমি লজ্জায় উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ি। আমি আমার পিঠে ওর স্পর্শ অনুভব করছিলাম। ও আমার ঘাড়ে কিস করতে লাগলো।আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে কানে কানে বলে উঠে,
— মুখটা এদিকে ঘুরাও। এখনি এত লজ্জা পেলে পরে কি হবে। কি গো এদিকে ফিরো।
আস্তে আস্তে ও আমাকে ওর দিকে ঘুরায়। আমি ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরি। সেও আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখে কিছুক্ষন। এরপর আমাকে আলতো করে বালিশে শোয়ায়। আমার কপালে কিস করে। ঠোটের উপর আলতো করে ঠোটের ছোয়া দিতে থাকে। চুমু গভীর থেকে গভীরতর হতে থাকে। ভালবাসার উষ্ণতায় আমার সমস্ত শরীর পুড়ে যাচ্ছিলো। ইভান আচমকা আমার নাভীর নিচে শাড়ীর কুচি ধরে খুলে ফেলে তারপর সেটা ফ্লোরে ছুড়ে মারে। আমি এক লাফে শোয়া থেকে উঠে পড়ি।ইভান ও শোয়া থেকে উঠে বসে। আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে, কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,
– কি হলো??
আমি লজ্জাজড়িত কন্ঠে বলে উঠি
— প্লিজ লাইট টা অফ করে দিয়ে আসে।
— তাহলেতো কিছুই দেখা যাবে না। না থাক।
— উঁহু, নইলে আমি লজ্জায় মরেই যাবো, প্লিজ তোমার দোহাই লাগে।
ইভান আমাকে ছেড়ে দিয়ে, তাড়াতাড়ি করে লাইটটা অফ করে দিয়ে আসে। হঠাৎ করেই বাহিরে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামে। ইভান জানালাগুলো লাগিয়ে দিয়ে আমার কাছে ছুটে আসে।
বাহিরে প্রাকৃতিক বৃষ্টি, ভিতরে ভালবাসার বৃষ্টি। আজকে যে দুজনার ভালবাসার বৃষ্টিতেই অবগাহন করতে ইচ্ছে হলো। ইভান আমাকে সুখের সাগরে ভাসিয়ে নিয়ে গেলো নিজের অজান্তেই। জানি না এই সুখের কোন অন্ত আছে কিনা?
চলবে

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে