আজ আমার বিয়ে পার্ট ১১+১২+১৩

0
2876

আজ আমার বিয়ে পার্ট ১১+১২+১৩
লেখা আশিকা জামান

রুমে ঢুকেইই ইভান ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো….
কিছুক্ষণ পর বের হয়ে এলো..
একটা থ্রি কোয়ার্টার পরে..

খালি গায়ে চুল মুছতে মুছতে…
দেখে মনে হচ্ছে এখনি শাওয়ার নিয়া আসছে…
খালি গায়ে আঘাতের চিন্হগুলো স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে..
ইভান বিছানায় শুয়ে পড়লো..
আমি ধপ করে বিছানা থেকে নেমে পড়লাম।
ইভান আড়চোখে আমার দিকে তাকালো….
ইভান কিছু বলতে যাবে,
তখনি মা আসে একটা গোলাপি কালার শাড়ী নিয়ে..
– অরিন, যা চেঞ্জ করে আয়…
যেহেতু আমি এক কাপড়ে বের হয়ে এসেছি…
তাই এই শাড়ীই এখন আমাকে পড়তে হবে…
আমিতো শাড়ী ঠিক মত
ক্যারি করতে পারি না। আল্লাহ জানে কি যে হবে…??
আমি শাড়িটা এক হাতে নিয়ে ওয়াশরুমে গেলাম।
মেকাপ তুলে ফ্রেশ হয়ে, শাড়ীটা প্যাচিয়ে কোনরকমে চলে আসলাম…
রুমে ঢুকেই দেখি ইভান আমার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকাই আছে…
– এইটা কে কি শাড়ী পরা বলে??
তাড়াতাড়ি ঠিক করো..
আচ্ছা বুঝলাম না
এত বড় মেয়ে হয়েছো, এখনো শাড়ি পরা শিখো নাই।
সামনে এসো ঠিক করে দেই..
– লাগবে না
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/



আমি এইটা বলেই সোজা রুম থেকে বের হয়ে গেলাম।
শাশুড়ি মাকে দেখলাম এদিকেই আসছে..
উনি আমার শাড়িটা ঠিক করে দিলেন।
আর বললেন ইভানকে খাবার টেবিলে ডেকে আনতে…
আমি রুমে ঢুকেই দেখি ইভান সেভাবেই শুয়ে আছে..
– মা তোমাকে খেতে ডাকছে??
– খাবো না।
তুমি খেয়ে আসো।
ওর কথা শুনে মনে হচ্ছে ওর খুব শরির খারাপ..
– ইভান তোমার শরীর কি বেশি খারাপ…
– না
আ’ম ওকে।
– তুমি কিন্তু এখনো ওষুধ খাও নাই…
আচ্ছা বক্স টা কোথায়..
ইভানের উত্তরের অপেক্ষা না করেই খুজতে লাগলাম..
ওয়্যারড্রোব এর উপরে ওষুধের বক্সটা খুজে পেতে খুব একটা অসুবিধা হলো না।
বক্স থেকে মলমটা নিয়ে ইভানের কাছে গেলাম..
ইভান উল্টোদিকে ঘুরে শুয়ে আছে…
– আমার দিকে ঘুরো,
মলমটা লাগিয়ে দেই..
ভালো লাগবে..
– লাগবে না।
যেতে বলেছি না তোমাকে??
ছোট খাট একটা ধমকের মত মনে হলো.
আমিও একদম রেগে ওকে ইচ্ছে করে আমার দিকে ঘুরাই…
তারপর মলমটা খুলে লাগাতে লাগলাম.
ইভান আমার হাত ধরে ফেলে..
– হাত ছাড়ো…
কাজটা করতে দাও…
ইভান আমার দিকে তাকায়.
ওর দিকে চোখ ফিরতেই দেখি চোখদুটো অশ্রুসজল।
ও হাত ছেড়ে দিয়ে চুপ করে রইলো..
আমি মলমটা লাগানো শেষ করে..
চলে যেতে লাগলাম.
ইভান খপ করে আমার হাতটা ধরে.
আমি টাল সামলাতে না পেরে ওর উপর পড়ে গেলাম..
– এইটা কি হলো??
হাত ছাড়ো..
– তুমি আমার উপর যেভাবে জোর খাটাতে পারো..
আমি কি পারি না জোর খাটাতে..??
ইভান আমার দিকে তাকালো.
আমি চোখটা নামিয়ে নিলাম
– নাহ পারোনা কারন সেই অধিকারটা তুমি অনেক আগেই হারিয়েছো..
আমি হাতটা ছাড়িয়ে নিলাম.
দরজায় দেখি মা দাঁড়িয়ে.
– কি ব্যাপার।
এখনো আসছোনা কেন?
খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে??
আমি আর ইভান মার পিছু পিছু খাবার টেবিলে গেলাম।
চুপ চাপ খাচ্ছিলাম।
– কি ব্যাপার ভাইয়া, ভাবী তোমরা এমন চুপচাপ কেন??
আজকে কি হলো না হলো..??
কিছুই তো শোনা হলো না।
– ইরা দেখতে পাচ্ছোতো তোমার ভাইয়ার কি অবস্থা.
আজকে একটু রেস্ট নিতে নাও।
কালকে তোমার বাবা ঢাকা থেকে ফিরুক তখন ইভান সবটা বলবে কেমন…
– আচ্ছা মা।
– কি ব্যাপার অরিন তুমিতো কিছুই খাচ্ছো না..??
এইভাবে খেলে হবে
ঠিক করে খাও..
আরেকটু ভাত দেই..
– নাহ মা ঠিক আছে।
আমি আর খাবোনা।
আমি রুমে চলে আসলাম।
মনটা খুব বিষন্ন।
আজকে দিনটা জন্য কত দিন অপেক্ষা করেছিলাম।
আজকে আমার বাসার রাত, আমার স্বপ্নপুরুষ ইভানের সাথে…
কিন্তু কি কপাল…
আগে যদি জানতাম তাহলে হয়তবা এই দিন চাইতাম না…
সেইদিনের সেই সব কিছু আমি উড়িয়ে দিতে পারি না।
সব কিছু আমি ভুলে যেতে পারি না।
কেন করলে ইভান এইটা??
অজান্তেই চোখে জল এসে গেছে…
ভাবনার অবসান ঘটে ইভানের সজোরে দরজা লক করার শব্দে..
সরাসরি বিছানায় এসে বসে পড়লো..
– অরিন তোমার চোখে জল কেন??
– কেন আমার চোখে জল আসতে পারে না।
– না দেবনা আসতে জল..
একদম আমার সামনে তুমি কান্না করবা এই বলে দিলাম।
– অন্য কোথাও যে যাবো সেই সুযোগটাতো তুমি দিলে না।
সেহেতু এইটুকু তোমাকে সহ্য করতে হবে..
– অরিন আমাকে আঘাত করে যদি তুমি খুশি হও, তবে করতে পারো..
আমি কিছু বলবো না।
ইভান বালিশ নিয়ে ওপাশ ফিরে শুয়ে পড়লো..
আমি অন্যপাশে শুয়ে পড়লাম..
সারাদিন অনেক ধকল গেছে..
কখন যেন চোখটা লেগে গিয়েছিলো…
ঘুমের ঘোরে ইভানের উপর হাত পড়তেই দেখি,
ওর শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে…
আমি ঘুম থেকে উঠে পড়লাম।
ইভানের একদম কাছে গিয়ে ওর কপালে হাত রাখলাম..
ইভান আমার হাতটা সরিয়ে দিলো…
– এত জ্বর..??
তুমি আমাকে ডাকলে না ক্যান??
এইটা বলেই আমি আবার ওর কপালে হাত রাখলাম…
– যার উপর আমার কোন অধিকার নেই তাকে ডাকার সাহসতো আমার নেই…
ইভান আমার হাতটা সজোরে সরিয়ে দিলো
হাতটা বালিশের উপর পড়লো..
বালিশটা পুরা ভিজা…
ইভান কি এতক্ষণ কান্না করেছে??.
কিন্তু কেন??
– ইভান এখানে সাহসের প্রশ্ন আসছে কেন??
তাছাড়া তোমার প্রতি আমার কিছু দায়িত্ব -কর্তব্য আছে??
– ওয়েল, এগুলা পালন করার জন্য তোমাকে কেউ জোর করেনি।
প্লিজ তুমি এইগুলা অন্য কোথাও দেখিও..
আমাকে দেখাতে এসো না..

পার্ট ১২

আমি ইভানের কথার কোন পাত্তা দিলাম না।
কারন ওর সাথে অহেতুক তর্ক করার কোন ইচ্ছে আমার নেই।
অন্য সময় হলে হয়তবা ব্যাপারটা অন্যরকম কিছু হতো।
সে যাই হোক যেহেতু অসুস্থ তাই কথা বাড়ালাম না।
থার্মেমিটার টা নিয়ে ওর জিব্বাহ’র নিচে দিতে গেলাম..
কিন্তু ও কিছুতেই দিতে দিচ্ছিলো না..
আমি একরকম জোর করেই ওকে হা করিয়ে মুখে ঢুকাই দিলাম..
ও মা ১০২ ডিগ্রী জ্বর…
– ইভান তুমি কিন্তু মেডিসিন নাও নাই এখনো..
– চাই না।
কি হবে ওষুধ খেয়ে…
– একদম হেয়ালি করবা না..
জাস্ট সেট আপ।
আমি একদম জোর করেই ওকে প্যারাসিটামল খাইয়ে দিলাম…
আমি একটা ভেজা টাওয়েল এনে ওর শরীর মুছতে লাগলাম…
ইভান আমাকে বাধা দিতে চেয়েও পারলো না..
ইভানকে খালি গায়ে দেখে আমার অদ্ভুত শিহরন লাগতে থাকলো…
খুব অস্বস্তি হচ্ছিলো…
ও আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে…
আচ্ছা ও কি বুঝে ফেলেছে??
নাহ ধুর ওর কি বোঝার কথা..
ইভান আমার হাত ধরে ফেললো..
এক হাত আমার গালে রাখলো…
– অরিন তুমি কি করে পারলে, অন্য কারো সাথে বিয়ের পিড়িতে বসতে…
এক্টিবার তো তুমি আমাকে জানাতে পারতে….
এক্টুর জন্য কাল কি হতে যাচ্ছিলো…
– ইভান এখন থাক এসব।
আমার তোমাকে আপাতত কিছু বলার নেই।
– অরিন আমার সবচাইতে খারাপ লাগছে কি জানো,
তুমি কেন আমাকে জানালে না.??
আমি ইভানের থেকে হাতটা সরিয়ে উঠে আসলাম।
– অরিন তুমি কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর দাও নি??
– তুমি কি বুঝতে পারছোনা, প্রশ্নটার উত্তর দেবার প্রয়োজন আমি বোধ করছি না।
আমি অন্য পাশে শুয়ে পড়লাম…
মাঝখানে অবশ্য একটা বালিশ দিয়ে..
আমার খুব কষ্ট হচ্ছে ইভানের সাথে রাফ ব্যাবহার করার জন্য…
কিন্তু এটাও আমি জানি যে, ইভানকে ক্ষমা করা আমার পক্ষে সম্ভব না।
আজকের দিনটা বারবার ফ্ল্যাশব্যাক হচ্ছে.
বাবাকে খুব মনে পড়ছে.
সাথে সাথে নওরিনের কথা ভেবেই দু চোখ জলে ভরে যাচ্ছে…
আমি ঘুমিয়েছি কখন জানি না…
সকালে ঘুম ভাংগে ইরার দরজা ধাক্কানোর শব্দে….
আমি ঘুম ভেংগে ইভানের দিকে তাকাতেই দেখি..
সে আমার দিকে তাকাই আছে…
চোখাচোখি হওয়াতে চোখ নামিয়ে নিলো।
আমি নিজের দিকে তাকিয়ে দেখি,
যা ভেবেছিলাম তাই..
আমার শাড়ির আচল সরে গিয়েছে কোথায়.
মনে হয় প্যাচ খেয়ে গেছে…
আর শাড়ি হাটুর উপর উঠে গেছে..
আমি তাড়াহুড়ো করে উঠে শাড়ী ঠিক করে, ইভানের দিকে তাকালাম….
সে এখনো অসভ্যের মত আমার দিকে তাকিয়ে আছি..
– এইরকম করে হা করে এতক্ষন কি দেখছো তুমি..??
– যা তুমি দেখালে আমি সেটাই দেখছি…
– তুমি এইভাবে নিলজ্জের মত আমার দিকে তাকাবে না….
আমি বিছানা থেকে উঠতে লাগলাম..
ইভান আমার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলো..
ওর জ্বর কমেছে মনে হয়..
– আমার জিনিসে আমি না তাকালে, কে তাকাবে..??
আর আমি আমার স্রীর দিকে তাকিয়েছি। এটাকে কখনো নিলজ্জতা বলা যেতে পারেনা…
জানি না এই প্রশ্নের কি উত্তর দেয়া যায়…
আমি ওর দিকে তাকিয়ে হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম।
কিন্তু পারছিলাম না দেখে,
ইভান একাই আমার হাত ছেড়ে দিলো…
– আমি জোড় করলে তুমি আমার সাথে পেরে উঠবে না।
অহেতুক এনার্জি কেনো লস করো…
আর তুমি ভালো করেই জানো আমি কখনো কারো উপর জোর খাটাই না।
আমি তাড়াহুড়া করে দরজা খুলে দিলাম…
ইরা ভিতরে আসলো।
– ভাবী বাবা এসেছে…
আর শোন বাবা কিন্তু এত বেলা অব্দি ঘুম প্রছন্দ করে না।
নেক্সট টাইম মাথায় রেখো..
আর ভাইয়া তুইও তো নিজে উঠবি নাকি??
– হুম
আসলে কালকে রাতে আমার জ্বর হয়েছিলোতো..
তাই তোর ভাবী রাত জেগেছিলো..
তাই লেট হয়ে গেছেরে…
– সেকি ভাইয়া তুই আমাদের ডাকলি না কেন??
আর ভাবী ভাইয়ার জ্বর আসলে যা অবস্থা করে।
সবাই নাজেহাল হয়ে যায়।
আর সিরিয়াসলি তুমি একা কি করে সামলালে..??
তোমার এলেম আছে বলতে হবে..
আমি ইভানের দিকে তাকালাম।
– যা তোকে আর পাকামো করতে হবে না।
তুই যা আমরা আসছি ফ্রেশ হয়ে….
– আচ্ছা বাবা।
যাচ্ছি যাচ্ছি…
আমরা দুজনেই ফ্রেস হয়ে ড্রয়িংরুমে যেতে যেতে ইভান আমাকে বলে..
– অরিন তুমি তো আমার বাবাকে আগে দেখনি।
মা যতটা হাসিখুশি, বাবা ঠিক ততটাই গুরুগম্ভীর।
তুমি দেখলেই বুঝতে পারবে।
সো তোমাকে যদি কিছু বলে ফেলে কিছু মনে করোনা।
– তোমাকে এতকিছু ভাবতে হবে না।
আমি ড্রইংরুমে দেখি সোফায় আমার শ্বশুর বসে আছে…
ইভান পুরা ওর বাবার কার্বনকপি।সুদর্শন, ফর্সা, লম্বা, হ্যান্ডসাম এখনো চেহারার যে জৌলুস আছে…
সিরিয়াসলি দেখলে কেউ বলবে না এতো বড় ছেলের বাবা।
আমি ওনাকে দেখেই পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলাম।
উনি আমাকে মাথায় হাত রেখে বলেন.
-সালাম লাগবে না।উঠ উঠ…
আমি এমনিতেই তোমাদের জন্য দোয়া করবো…
বস আমার পাশে।
একদম আমাকে উনার পাশে এনে বসালেন..
– তোমার আমাদের সবাইকে কেমন লাগছে??
মানিয়ে গুছিয়ে চলতে পারবেতো??
বলেই ইভানের দিকে তাকালো.
– কি রে তুই ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন??
এখানে আয়..
ইভানকে আমার পাশে এনে বসালো.
– নাহ দুজনকে বেশ মানিয়েছে…
জানোতো অরিন ও আমার একমাত্র ছেলে।
ওর বিয়ে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন ছিলো….
প্রথম যখন ইভানের মার মুখে তোমাদের ব্যাপারটা শুনি তখন খুব খারাপ লেগেছিলো..
এখন অবশ্য আর তা মনে করছি না.
তোমাকে আমার বেশ পছন্দ হয়েছে..
এবার তোমাদের ঘাড়ে পুরো সংসার তুলে দিতে পারলে, বাকী জীবন নাতি পুতি নিয়ে হেসে খেলেই কাটানো যাবে…
বলেই একটা মুচকি হাসি দিলো…
ইভানকে দেখলাম সেও হাসছে…
– বাবা তুমি না পারো..??
– কেন তুই লজ্জা পেলি??
আচ্ছা তুই কালকে কেমন উত্তম- মাধ্যম খেলি??
আচ্ছা লজ্জা পাসনা…
আমিতো প্রেম করার তোর মামার হাতে…
মা রান্নাঘর থেকে তেড়ে আসলো
– আচ্ছা এইগুলা কি হচ্ছে??
মেয়েটা সবে নতুন এসেছে.
আর তুমি ওর সামনে এইগুলা কি কি বলছো??
ও কি ভাববে??
আমার দিকে ঘুরে বাবা বললেন
– অরিন তুমি কি কিছু মনে করেছো??
– না বাবা। আমি কিছু মনে করিনি। আপনি চাইলে গল্পট কম্পলিট করতে পারেন.
ইভানের বাবাকে আমার বেশ প্রছন্দ হয়েছে। অহেতুক ইভান বাবা সম্পর্কে কি কি বললো।
– কি সোহিনী??
ওতো বললো কিছু মনে করেনি..??
তাহলে..
-তাহলে খেতে আসো সবাই।
আর কোন কথা শোনতে চাচ্ছি না.
সবাই খেতে গেলাম।
খাবার টেবিলে বাবা আমাকে এটা সেটা নেয়ার জন্য জোড়াজোড়ি করলো।
এত কম খেলে হবে না এইসব হাবিজাবি বুঝালেন।
খাওয়া শেষ করে আমি রুমে আসলাম কেমন যেন মাথাটা ঝিমঝিম করছে…
একটু পর ইভান আসলো..
ইভান ওয়্যারড্রোব থেকে তিনটা শার্ট বের করলো..
এরপর বাকী দুইটা বিছানায় ছুড়ে মারলো..
আর এ্যাশ কালারটা পড়ে নিলো..
তারপর ওভাবেই বের হয়ে যাচ্ছিলো..
– তুমি এই শরীর নিয়ে কোথায় যাচ্ছো??
– একটু দরকার আছে…
বাইরে যাচ্ছি..
তোমার কিছু লাগলে বলতে পারো?
– নাহ লাগবে না। তুমি তোমার কাজে যাও??
আর বেশি লেট করোনা??
– এইগুলা কি ভালোবাসা নিয়া বলছো??
নাকি ঘৃনা নিয়ে??
আমি সিরিয়াসলি বুঝতে পারি না তোমাকে এখন…
– আমাকে বোঝার কোন দরকার নেই। তুমি তোমার কাজে যাও।
আমার সিরিয়াসলি ভালো লাগছে না…
এইসব..
প্লিজ আমি একটু একা থাকতে চাই।
ইভান আর কোন কথা না বলেই চলে গেলো দরজাটা জোরে লাগিয়ে দিয়ে…

পার্ট ১৩

দুপুরের আগে আগে ইভান বাসায় আসলো হাতে কিছু শপিং ব্যাগ নিয়ে।
আমি মাকে রান্নাঘরে হেল্প করছিলাম।
ইভান সরাসরি রুমে ঢুকে..
আমি তখন সালাদাএর শসা কাটতেছিলাম।
মা আমার দিকে তাকায়…
– কি রে অরিন??
তুই এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছিস ক্যান??
যা,ছেলেটা আমার এই জ্বর শরির নিয়ে বাহির থেকে আসছে…
যা অন্তত একগ্লাস পানি নিয়ে যা…
আমি কোন কথা না বলেই রুমে ঢুকলাম এক গ্লাস পানি নিয়ে…
ইভান বিছানায় বসে আছে নিচের দিকে তাকিয়ে…
– নাও পানি খাও
গ্লাসটা ওর সামনে ধরলাম।
ইভান গ্লাসটা আমার হাত থেকে নিলো…
পানিতো প্রতিদিন খাই..
অন্য কিছুতো দিতে পারতে..
ওর অন্য কিছুর মিনিংটা আমি ভালোভাবেই বুঝেছি..
কিন্তু এমন ভাব করলাম যেন আমি কিছুই বুঝি নাই
– না তুমি বাহির থেকে আসছো তো…
যা গরম পড়েছে।
এটাই তোমার জন্য বেটার হবে।
হুম ভালো বুঝছো।
ইভান ঢগঢগ করে পুরো গ্লাস খেয়ে ফেললো…
আমি চলে যাচ্ছিলাম।
পিছন থেকে হাতে টান দিয়া সোজা ওর পাশে এনে বসায়..
– কোথায় যাচ্ছিলে..
বস কথা আছে…
ইভান পিছন থেকে কতগুলো শপিং ব্যাগ বের করে বলে..
– এইগুলা সব তোমার..
দেখতো প্রছন্দ হয় কিনা।
– দেখতে হবে না। তুমিতো দেখেই নিয়াসছো..
– ওকে তোমার দেখতে হবে না। আমি দেখলেই হবে..
যাও গোসল করে পড়ে এসো..
শোন তোমাকে আর শাড়ী পড়তে হবে না। যতদিন শাড়ি ভালোভাবে পড়া না শিখবে ততদিন পড়তে হবে না।
যাও এবার…
আমি শুধু একটা থ্রি পিস নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে যাচ্ছিলাম..
– অরিন দাঁড়াও..
নাহ তোমার সেন্স অফ হিউমার ভালো, কিন্তু মাঝে মাঝে খাটাও না কেনো??
– মানে কি বলতে চাচ্ছ..??
-এদিকে আসো…
– আচ্ছা তুমি শাওয়ার নিতে যাচ্ছ…
ভালো কথা..
কিন্তু সাবান, শ্যাম্পু, ফেস ওয়াস, টাওয়েল, আরো অন্য কিছুও তো লাগবে সেগুলা কি তুমি নিয়েছো??
আচ্ছা আমি তোমাকে যে এইগুলা দেখতে বললাম সেইটা কি এমনি এমনি বলছি…
– ও হ্যা…
আচ্ছা দাঁড়াও দেখছি..
– নাহ আমি এখন দাড়াতে পারবোনা। বসে আছি বসেই থাকবো…
আমি সবগুলো ব্যাগ দেখতে লাগলাম…
ইভান পাঁচটা থ্রি পিস এনেছে…
সবগুলোই অনেক সুন্দর..
আরেকটা শপিং ব্যাগে সাবান,শ্যাম্পু, লোশন, ক্রিম এইসব হাবিজাবি অনেক কিছু..
আর সবকিছুই আমি যেটা ইউস করি সেই ব্র‍্যান্ড..
আরেকটা শপিংব্যাগ যখন ধরতে যাবো, তখন ইভান আমার দিকে তাকিয়ে বলে…
– অরিন তুমি চাইলে আমি রুমের বাহিরে যেতে পারি…
তারপর না হয় তুমি দেখলে যে ঠিকঠাক হইছে কিনা??
– নাহ লাগবে না। এই হয়ে গেছে…
ইভান আমার দিকে মুচকি হাসি দিচ্ছে..
ওর হাসিটা কেমন যেন রহস্যময়….
আমি ব্যাগটা খুলে যা দেখলাম তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না..
আমি লজ্জায় ইভানের দিকে তাকাতে পারছিলাম না…
আমি ভাবতেই পারিনি ইভান এইসব আন্ডারগার্মন্টেস ও নিয়াসবে…
আমি কি করবো এখন…
ওর সামনেতো এইগুলা বের করতে পারবো না…
আমি লজ্জায় উঠে চলে যাচ্ছিলাম…
ইভান আমার হাতটা আবার টান দিয়া ধরে…
একদম আমার কানের কাছে এসে বলে..
– সব কিছু নিয়া তারপর যাও…
দেখো ঠিকঠাক লাগে কিনা…??
মনে হয় সাইজ ঠিকি আছে..
আমার লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে..
তারপর জোর করে আমাকে ওর দিকে ঘুরায়…
আমার থুতনি ধরে উপরের দিকে তুলে..
– প্লিজ আমার সামনে অন্তত এতো লজ্জা পেয়ো না।
চুপ করে তখনো ঠাই দাঁড়িয়ে ছিলাম…
– আচ্ছা আমি বাহিরে যাচ্ছি..
ততক্ষনে তুমি এগুলো গুছিয়ে রাখো।
আমি সবকিছু সুন্দর করে গুছিয়ে,
তারপর শাওয়ার নিতে গেলাম।
তারপর জামা কাপড় পড়ে দেখলাম সব একদম ঠিকঠাক।।
আচ্ছা ও আমার সাইজ জানলো কিভাবে???
থাক আমার আর বুঝে কাজ নেই??
আমি বের হয়ে আসলাম।
আয়নার সামনে চুল মুছতে লাগলাম।
কিছুটা অন্যমনষ্ক হয়ে গেছিলাম।
পিছনে কেমন যেন শিরহন অনুভুত হলো …
আয়নায় তাকিয়ে দেখি ইভান আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরেছে…
আমি আয়নার চোখ পড়তেই সরিয়ে নিলাম।।
– ইভান প্লিজ সরো…
ইভান আমার কথাটা শোনলো কিনা কে জানে..??
আমার ভেজা চুল্গুলোতে ইভান কিছুক্ষন নাক ডুবিয়ে নিঃশ্বাস নিতে লাগলো।
– অরিন তোমার ভেজা চুলে না একটা মিষ্টি সুঘ্রাণ আছে। খুব নেশা ধরে যায়…
আমার অনেক দিনের লোভ এটার সুঘ্রাণ নেয়ার…
– ইভান কি হচ্ছে সরো …
আমি ওকে সরিয়ে দিতে চাইলাম।
কিন্তু ইভান না সরে আমার ভেজা চুলগুলো সরিয়ে আমার ঘাড়ে একটা চুমু দিলো…..
এইবার আমি ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম।
আমি পিছাতে লাগলাম।
আমি ওর দিকে তাকালাম।
ইভান আমার দিকেই আসছে এক পা করে।
আমি পুরা ওয়ালের সাথে লেগে গেলাম।
ইভান আমার কানের পিছে চুলগুলোতে এক হাত রাখলো।
আরেক হাত আমার কোমরে ধরলো..
ইভান আমার দিকে ওর ঠোট এগিয়ে দিলো…
আমি আমার হাত দিয়ে ইভানের মুখ চেপে ধরলাম।
ইভান ওর হাত দিয়ে আমার হাত ধরে নিচে নামি য়ে শক্ত করে চেপে ধরলো…
তারপর সে আমার ঠোটে আলতো করে ঠোট ছোয়াতে লাগলো।
এরপর সে আমাকে গভীর করে চুমু দিতে লাগলো…
অদ্ভুত অনুভবে আমার সারা শরিরে শিহরণ হতে লাগলো…
আমি আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছিলাম না।
আমি পিছন থেকে ওর গলা জড়িয়ে ধরলাম।
কিছুক্ষন পর দরজায় নক হলো…
ইভান এক ঝটকায় আমাকে সরিয়ে দিয়ে..
দরজাটা খুলে দেখে ইরা.
– মা তোমাদের খেতে ডাকছে….
ইভান আধো আধো গলায় বললো
-তুই যা আসছি…
ইভানের মতিগতি আমার ভালো ঠেকছিলো না।
আমি ইরার হাত ধরে চলে গেলাম….
চলবে।।।

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে