আজ আমার বিয়ে অন্তিম পর্ব

0
4006

আজ আমার বিয়ে অন্তিম পর্ব
লেখা আশিকা জামান

আত্নীয়-স্বজনরা এতক্ষনে কানাঘুষা শুরু করে দিছে…
এইটা এতক্ষন তাদের মধ্যেই ছিলো কিন্তু বিপত্তি বাজলো তখন যখন সরাসরি জিজ্ঞাস করা শুরু করলো।
— ইকবাল তোমার ছেলেকেতো দেখছিনা ও কোথায়??
— ও এইতো আছে। চিন্তার করার কিছু নাই। এক্টু বাহিরে গেছে। এখনি এসে পড়বে।
বলেই সেখান থেকে সরার চেষ্টা করলো।
কিন্তু লোক গুলোর কানাঘুষার কারনে আর সরতে পারলেন না।
— ব্যাপারটা কি বউ আছে বর নাই এইটা কি ধরনের ফাজলামি।
— কালে কালে আর কত কি দেখবো..
হয়তবা এইটাই বড়লোকদের নিউ স্টাইল।
বলেই একটা মধ্যাবয়ষ্কা মহিলা ফিক ফিক করে হাসতে লাগলো।
আমার পাশেই কয়েকজনলোক গল্প করছিলো তাদের কথাগুলো আবছা আবছা ভাবে আমার কানে আসতে লাগলো,
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/



— যার বিয়া তার খবর নাই পাড়াপড়শিরর ঘুম নাই।
— ধুর এই বিয়া তো অনেক আগেই হইছে…
— তাই নাকি, জানতাম নাতো…
— আরে হ্যা। ইকবালের পোলা মাইয়ারে বিয়ার দিন উঠায় আনছিলো…
আরেক লোক এসে বলে,
— আরে আমিতো শুনছি অন্য কথা এই মেয়ের নাকি অন্য যায়গায় বিয়ে হইছিলো।
— কি জানি বাপু। আজকালকার ছেলে মেয়েদের কারবার..
— আমার ছেলেমেয়ে এযুগের হলে কি হবে এইরকম বেড রেকর্ড নাই।
— আচ্ছা সেই যাই হোক তা জামাই কই গেলো??
— মনে হয় ভাগছে। এহন আর ভালো লাগেনা। আরে বুঝো না অন্য যায়গায় বিয়ে হইছিলো…
আরো কি কাহিনী হইছে কে জানে…
আমি আর নিতে পারছিনা এইগুলা..
নিঃশব্দে চোখের জল ফেলছি।
এদিকে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে লাগলো। বাবার কানেও হয়তবা কথাগুলো উঠেছ..
বাবা আমার কষ্ট সইতে পারেনা। কি থেকে কি করে বসে ঠিক নেই..
আমার কপাল বেয়ে দরদর করে ঘাম ঝড়ছে এই এসির মধ্যেও…
আমার শ্বশুর কে খুবি চিন্তিত মনে হচ্ছে…
হঠাৎ করেই আমার শ্বশুরের হাত কেউ টান দিয়ে ধরলো..
আমি ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি বাবা..
যে ভয়টাই পাচ্ছিলাম সেটাই কি সত্যি হবে।
আমি বসে থেকে উঠে হাটা দিলাম পিছন দিকে ঠিক বাবার পিছনে দাড়ালাম।
— এই ইভান কোথায়..??
— আসলে ওর ফোন বন্ধ, ফোনে পাচ্ছিনা।
— তুই এতক্ষনে এই কথা বলছিস??
আসলে কি জানিসতো তুই ইচ্ছে করে প্ল্যান করে আমাকে অপমান করার জন্য এই পোগ্রামের আয়োজন করছোস?? এতক্ষনে পুরা ব্যাপারটা ক্লিয়ার।
— এই মুখ সামলে কথা বল। তোর মান-সম্মান আর আমার মান সম্মান কি আলাদা। ছিঃ তুই এই চিনলি..
— কি চিনবো তোরে?? আর কি বাকী আছে চিনার??
আমার মা এসে দোড়ে বাবাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু বাবা রেগেই যাচ্ছে..
ওদিকে শ্বশুরো রেগে উঠছে..
ফলশ্রুতিতে তুমুল ঝগড়া বেজে গেলো।
আমি এইগুলা আর সহ্য করতে পারছিনা। আমি নিঃশব্দে স্থান ত্যাগ করাটাকেই শ্রেয় মনে করে ওখান থেকে সোজা বাসায় চলে আসলাম। আমার পিছুপিছু কখন যে নওরিন এসেছে আমি টেরো পাইনি। আমি পুরা রাস্তা ভাবলেশহীনভাবে হাটতে হাটতে বাসায় ঢুকে যাই। ও অবশ্য আমাকে অনেক ডাকে কিন্তু আমি তখন কিছু শোনারমত অবস্থায় ছিলাম না। বাসায় এসে সোজা রুমে ঢুকে দরজা লক করে দেই। সব কিছু অসহ্য লাগছে। মরে যেতে ইচ্ছে করছে..
ছিঃ ইভান যা বলেছিলো ঠিক তাই করলো!!
আমি ওর নাম্বার কয়েকবার ডায়াল করলাম।
নাহ সুইচড অফ বলছে।
রাগে ফোন্টা ছুড়ে মারলাম। ওকে তো কিছু করতে পারবোনা তাই ফোনের উপরেই ঝাজটা মিটালাম। বুক্টা ফেটে যাচ্ছে.
হু হু করে কাদা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। আমি বিছানায় হুমড়ি খেয়ে পরে কাদতে লাগলাম যতক্ষন পারলাম। আর মনে মনে এই সিদ্ধান্ত নিলাম জীবনে কোনদিন ইভানের নামই নিবোনা, ওর ছায়াও মাড়াবোনা।
আমি কাদতে কাঁদতে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম মনে নেই হয়তোবা অনলি চোখটা লেগে আসছিলো..
এমন সময় দরজায় অনেক জোড়ে জোড়ে নক করার শব্দ হয়..
আমি চমকে উঠি…
অবশ্য চরম রাগ উঠে যায়।
— কে নক করছে?
কার এত বড় সাহস??
আমি একা থাকতে চাই। যেই থাক সরে যাও ।
কিন্তু কোন কথা নাই সেই নক করার শব্দ.
আরো জোড়ে আরো তীব্রভাবে
আমি যতই ডাকি কোন শারা দেই না।
মহা মুশকিলে পড়লাম।এইটা নওরিন ছাড়া আর কেউ হতেই পারে না আমি ওকে ঠাটিয়ে চড় মারবো এইবার। যেই ভাবনা সেই কাজ আমি দরজাটা ধড়াম করে খুলে ফেললাম।
কিন্তু এ যে নওরিন নাহ..
আমি পা থেকে মাথা পর্যন্ত তাকালাম,নেভী ব্লু কালার প্যান্ট, কোর্ট, সাথে পিংক কালার টাই আর ব্ল্যাক সু ইভানকে ভালোই মানিয়েছে। যদিও সব কালারই ওকে মানায়। ওর ফরসা গালে চিন্তার ছাপ দেখতে পাচ্ছি।
আমি হা হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছি। আচ্ছা এইটা কি স্বপ্ন..
আমি কি এখনো ঘুমিয়ে আছি।
আমার হাতে চিমটি কাটার জন্য হাত বাড়ালে ও আমার হাটতাধরে ফেলে…
— চিমটি কাটতে হবে না। আমি ইভান স্বয়ং তোমার সামনে দাঁড়িয়ে আছি।
ছি ছিঃ ছিঃ রুমের কি অবস্থা করেছো, সব এইভাবে ছুড়ে মেরেছো কেন?? হায় আল্লাহ কবে যে এই মেয়ে বড় হবে।
আমার দুই গালে দুই হাত দিয়া ইভান চেপে ধরলো।
আমি ওর হাত সরিয়ে ওখান থেকে সরে যেতে লাগলাম। ও পিছন থেকে আমকে জড়িয়ে ধরলো,
আমার কাধে ওর মুখ নিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলো।
— এই তোমার সমস্যা কি? সরো আমাকে ছোবে না।
সরো বলছি..
— দূরেগেলেতো কেঁদে কেদে অস্থির হয়ে যাও,
কাছে আসলে সরাও দাও এ কেমন ভালোবাসা তোমার।
আমি রাগে তেলেবেগুনে জ্বলে ওর দিকে ঘোরি,
— তুমি ভালবাসার কথা একদম বলবানা।
— কেন বলবোনা??
আমিতো বারবার বলবো..
— এখন তোমার চাকরী নেই?? আফিসের কাজেতো তোমার চিটাগাং থাকার কথা এখানে কেন??
— ধুর বউ আগে না চাকরি?? চাকরি গেলে চাকরী পাবো বউ গেলেতো আর বঊ পাবোনা। তাই চলে আসলাম। ভালো করিনি??
হি হি করে হাসতে লাগলো..
অসহ্য লাগছে…
— এই হাসবানা তুমি। একদম না। তুমি জানো আজকে সবাই আমাকে কতটা অপমান করেছে.. (এটা বলতে গিয়েই কেঁদে দিলাম)
— প্লিজ ময়না কান্না বন্ধ করো..
কে কি বলেছে আমাকে বলো…??
আমি কাদতে কাদতে ওকে সবটা বলে দেই….
ও আমাকে জড়িয়ে ধরে।
— আহারে আসলে আমি সরি ময়না। আসলে বিশ্বাস করো আমি ইচ্ছা করে এমনটা করিনি চিটাগাং থেকে কিছুক্ষন আগেই আমি আসলাম। আর আমিযে আসবো সিউর ছিলাম না তাই সবাইকে না করেছিলাম কিন্তু আমার কথা কেউ পাত্তাই দিলোনা। পরে কোনভাবে একদিন আগে কাজটা ম্যানেজ হয়ে যায় তাই এখন আসতে পারলাম। আর এতকিছু হবে জানলে আমি কিছু একটা করতাম।
— তুমি ফোন্টা অফ করছো কেন??
— আমার ফোন অফ!!
দাঁড়াও দেখ..
ফোন্টা বের করে দেখে
— উফ সিট চার্জ শেষ।
— তুমি এইখানে কি করে আসলে।
— আমিতো ওখানে গিয়ে দেখলাম আমার বউ নাই।
তারউপর ওখানে সবাই মিলে তুমুল ঝগড়া লাগিয়েছে। আর আত্নীয় স্বজনরা বসে বসে তামাশা দেখছিলো। পরে আমাকে দেখে সবাই শান্ত হয়…
শেষেতো তোমাকে খুঁজাখুঁজি লেগেগিয়েছিলো..
পরে অনন্ত ভাইয়া এসে বলে তুমি নাকি বাসায়। নওরিন ফোন করে বলেছে।
আচ্ছা এইবার চল…
— কোথায়??
— সেকেন্ড বিয়ে করতে..
আজ আমার বিয়ে!!
বুঝছো সোনা…
এই চান্সতো আমি কিছুতেই মিস করতে পারবোনা।
— ইম্পসিবল। আমি যখন একবার এসেছি পড়েছি তখন আমি একদম যাবোনা।
— আচ্ছা তোমার যেতে হবে না। আমার বাবুর আম্মু গেলেই হবে।
ইভান আমাকে কোলে তুলে নিয়ে হাটতে লাগলো।
— এই নামাও বলছি। আমি যাবোনা ভালো হবেনা কিন্তু..
— এই কে শুনছে তোমার কথা. চুপ চাপ থাক প্লিজ…
নওরিন গাড়িতে উঠো..
নওরিন্টা যেন কোথা থেকে বেরিয়ে আসলো..
— উফ, দুলাভাই হাউ রোমান্টিক। আমার চক্ষু সার্থক হইলো..
ইভান মুচকি হাসছে আর আমি রাগে ফুলছি।
আমরা কিছুক্ষনের মধ্যেই সেখানে পৌছে গেলাম..
ইভান গাড়ি থেকে নেমে আবার আমাকে কোলে তুলে নিলো।
— ইভান প্লিজ ছাড়ো..
সবাই কি ভাববে।
— যা খুশি ভাবুক। এতক্ষন তোমাকে কথা শোনানোর সময়তো কেউ দুইবার ভাবেনি।
আমি ওর গলা জড়িয়ে ধরলাম পরম নির্ভরতায়।
সবাই আমাদের দিকে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে।
ও আমাকে বউ এর আসনে বসিয়ে দিয়ে আমার সামনে হাটু গেড়ে বসে পড়ে..
তারপর ওর পকেট থেকে একটা রিং এর বক্স বের করে আমার হাত ধরে।
— উইল ইউ ম্যারি মি অরিন। বিশ্বাস করো আমি তোমাকে খুব ভালবাসবো, খুব সুখে রাখবো, কোন অভিযোগ করার সুযোগ দিবোনা। শুধু একটু বিশ্বাস করো…
আমার চোখে জল গড়িয়ে পড়ছে। আমি অনুভুতিশুন্য হয়ে গেছি।
আমার হাতে একটা ডায়মন্ড রিং পড়িয়ে দেই। আমি ওকে জড়িয়ে ধরি। কতক্ষন জড়িয়ে ধরে ছিলাম জানিনা। সবার হাত তালি আর সিটি বাজানোর শব্দে আমার ঘোর কাটে।
ও একটু পর আমার পাশে এসে বসে।
সব ফর্মালিটি শেষ হলে মা-বাবার থেকে বিদায় নেই।
এতক্ষনে ঝগড়া শেষে দুই বন্ধুর মধ্যে ভাব ও হয়ে যায়।
আমরা বাসায় আসতে আসতে অনেক রাত হয়ে যায়। বাসায় এসে রুমে ঢুকেতো আমার চোখ ছানাবড়া..
এত সুন্দর করে বাসর ঘর সাজানো হইছে..
ঠিক যেমনটা আমি চেয়েছিলাম, আগের বারতো সব থেকেও হয়নি। কিন্তু আজকে আর তা হচ্ছেনা।
ইভান আমার কাধে হালকা একটা ধাক্কা দিয়া বলে,
— কি গো ম্যাম কি ভাবছেন??
— কিছুই নাহ..
— উহু..
ভাবছিলে কিছু।
চোখতো অন্য কিছু বলছে..
— কি বলছে চোখ..
— ওইটাতো সিক্রেট
বলা যায়না, করে দেখাতে হয়।
“এই রাত তোমার আমার,
এই চাঁদ তোমার আমার,
শুধু দুজনার..
এইটুক বলতেই আমি ওর ঠোট চেপে ধরলাম।
— তুমি আমাকে এত কষ্ট দিলা কেন..??
— ভালবাসা দিয়া পোষাই দিবো প্রমিজ..
— তুমি না অলওয়েজ দুষ্টু।
— শুধু তোমার জন্য। আমি আজকে আউট অফ কন্ট্রোল হয়ে গেছি। প্লিজ এইবারতো কাছে আসো…
ও আমাকে কোলে তুলে সোজা বিছানায় নিয়ে গেল।
এইবার আমি থামি, আমি আবার বকবক করলে থামি না.??
কখন থেকে থামতে চাচ্ছি কিন্তু ওই পুরুনো স্বভাব?
নটে গাছটি মুড়োলো,
আমার গল্প ফুরোলো??
কেমন লাগছে জানাতে ভুলবেননা কিন্তু??

ধন্যবাদ সবাইকে এতদিন ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করার জন্য।?

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে