অবুঝ_বউ পার্ট: ৮

1
5010

অবুঝ_বউ

পার্ট: ৮

লেখিকা: সুলতানা তমা

চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি সোহাগীর মাথায় ডিভোর্স শব্দটা ডুকিয়ে দিয়েছে মৌরি, পরে যদি সত্যি ও আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দেয়….

বারান্দায় দাঁড়িয়ে একের পর এক সিগারেট টানছি রাগটা এখনো কমেনি মৌরিকে আরো কয়েকটা থাপ্পড় দেওয়া উচিত ছিল কতো বড় সাহস সোহাগীকে ডিভোর্স দেওয়া শিখায়, এই পিচ্ছি তো ডিভোর্স এর মানেই বুঝে না
সোহাগী: নাহিল ঘুমাবে না অনেক রাত হয়েছে তো
–তুমি ঘুমাও
–আমার একা ভয় করে তুমি চলো (সোহাগী এসে আমার হাত ধরে টানতে শুরু করলো আমি ওকে টেনে বুকের সাথে জরিয়ে ধরলাম তারপর কাঁদতে কাঁদতে বললাম…)
–সোহাগী তুমি ডিভোর্স এর মানে বুঝ
–নাতো আর তুমি কাঁদছ কেন
–তাহলে মৌরিকে বলেছ কেন বড় হয়ে আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবে
–আপু মাঝে মাঝে বলে দুলাভাই কে ডিভোর্স দিয়ে দিবে তাই বলেছি
–ডিভোর্স মানে সব সম্পর্ক শেষ করে দুজন আলাদা হয়ে যাওয়া, তোমার দুলাভাই পঁচা তাই আপু আলাদা হতে চায় আমি কি পঁচা
–না তুমি অনেক ভালো
–তাহলে আমার থেকে দূরে যেতে চাও কেন
–আচ্ছা বাবা সরি আর এসব পঁচা কথা বলবো না এবার তুমি কান্না থামাও
–হুম (সোহাগী ওর হাত দিয়ে আলতো করে আমার দুচোখের পানি মুছে দিল, এই পিচ্ছিকে আমি অনেক ভালোবেসে ফেলছি ওকে কখনো দূরে যেতে দিব না)

ঘুমের মধ্যে হঠাৎ শ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে মনে হলো লাফ দিয়ে উঠে বিছানায় বসলাম পাশে সোহাগী রাগি চোখে তাকিয়ে আছে
–তুমি আমার নাক চেপে ধরছিলা
–হ্যাঁ কি করবো এতোক্ষণ ধরে ডাকছি উঠই না
–এমন করলে তো আমি মারা যাবো
–মরবা না উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও আমি স্কুলে যাবো তুমি নিয়ে যাইবা
–আজ না গেলে হয় না
–কেন
–না মানে দুজন একটু রোমান্স করতাম
–রোমান্স আবার কি উঠ বলছি আমার পরিক্ষা সামনে অনেক পড়তে হবে
–ওকে

আমি ড্রাইভ করছি আর সোহাগী পাশে বসে বকবক করছে বাতাসে ওর চুলগুলো বার বার এলোমেলো করে দিচ্ছে আর ও বিরক্ত হয়ে বার বার ঠিক করছে হাহাহাহা মায়াবতী পিচ্ছি, সোহাগী গাড়ি থেকে নেমেই দৌড়ে একটা ছেলের সামনে দাঁড়ালো তারপর ওর হাত ধরে টানতে টানতে আমার কাছে নিয়ে আসলো
সোহাগী: নাহিল ও পিয়াল আমার বন্ধু (যে নামটা শুনলেই কেন যেন ভয় হয় সেই মানুষটাকে সোহাগী আমার সামনে এনে দাঁড় করালো)
সোহাগী: নাহিল কি ভাবছ
আমি: হুম কিছুনা

পিয়ালের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে সোহাগী পিয়ালের হাত ধরে হাসতে হাসতে স্কুলের ভিতর চলে গেলো, একটা সিগারেট ধরিয়ে অফিসের দিকে রওনা দিলাম, সিগারেট খাওয়ার অভ্যাস ছিল না কিন্তু এখন….

অফিসের কোনো কাজেই মন বসছে না সোহাগী পিয়ালের হাত ধরে হাসতে হাসতে চলে যাওয়ার দৃশ্যটা শুধু চোখের সামনে ভাসছে, পিয়াল ছেলেটা দেখতে মোটামুটি বড় সোহাগীর ক্লাসমেট যে বুঝার উপায় নেই এই ছেলেটা কে কেন যেন খুব ভয় হচ্ছে

ছাদে দাঁড়িয়ে রাতের আকাশ দেখছি আর ভাবছি সোহাগীর পরিক্ষা শেষ হলেই ওকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাবো, এখানে পিয়ালের আশেপাশে সোহাগী কে রাখা ঠিক হবে না
মুমু: ভাইয়া তুই এখানে আর আমি তোকে সারা বাসা খুঁজেছি
আমি: কিছু বলবি
–হ্যাঁ কিন্তু তোর তো মন খারাপ মনে হচ্ছে
–এসব কিছুনা বল কি বলবি
–মানে ভাইয়া রাগ করবি না তো
–তোর কোনো আবদার অপূর্ণ রাখিনি তাই নির্ভয়ে বল
–আমি একটা ছেলেকে ভালোবাসি
–তাই
–হুম
–আমার পুচকে বোন বড় হয়ে গেছে
–আমি মুটেও পুচকে না অনার্সে পড়ছি
–তাতো বুঝলাম কিন্তু কাঁদছিস কেন
–কোথায়
–আমার কাছে লুকিয়ে লাভ নেই বল কি হয়েছে
–তোমরা তো বলেছ আমার পড়াশুনা শেষ হলে বিয়ে দিবে কিন্তু সজিবকে ওর পরিবার বিয়ের চাপ দিচ্ছে
–সজিব…?
–সজিবকেই আমি ভালোবাসি
–বাসার ঠিকানা দে বিয়ে ঠিক করে রাখবো সোহাগীর সামনে পরিক্ষা তাই পরিক্ষার পর বিয়ে হবে
–ওকে থ্যাংকস ভাইয়া
–হুম
–খাবি চল
–চল

খাবার টেবিলে সোহাগী বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছে সকালের পর আর ওর সাথে কথা বলিনি, একটু রাগ চেপে আছে মনে পিয়ালের সাথে ওর এতো হাসাহাসি করতে হবে কেন কিছু তো বলতেও পারিনা বললেই কান্না করবে
সোহাগী: আম্মু একটা কথা বলার ছিল
আম্মু: বলো
সোহাগী: আমার তো সামনে পরিক্ষা কোচিং করতে হবে
আব্বু: বাড়ির বউ বাইরে গিয়ে পড়ার দরকার নেই নাহিল তোমাকে পড়াবে
আমি: আমি পড়াবো কেন আমি পারবো না
আম্মু: তোর বাবা ঠিকি তো বলেছে আর তুই পড়ালে দোষ কি
আমি: আমার চাকরি
আব্বু: শুনো তোমার চাকরির টাকায় আমার সংসার চলেনা আমার বৌমার জন্য এমন চাকরি ছেড়ে দিলে সমস্যা কি (বাহ্ ওদের বৌমা এখন সব)
সোহাগী: নাহিল পড়াতে হবে না আমার সব বন্ধুরা কোচিং করে তাই পিয়াল প্রতিদিন এসে আমাকে নিয়ে যাবে
আমি: আমি তোমাকে প্রতিদিন পড়াবো আমার চাকরি বাদ আর তুমিও কোচিং এর চিন্তা বাদ দিয়ে দাও
একটু রেগেই কথা গুলো বললাম সবাই আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে, খাবার রেখে উঠে চলে আসলাম আবার পিয়াল মাথাটা পুরাই নষ্ট করে দিছে

মাঝরাত চারদিকে শুনশান নিরবতা আমি ছাদে দোলনায় মাথা নিচু করে বসে বসে সিগারেট টানছি খুব কষ্ট হচ্ছে
–নাহিল (হঠাৎ সোহাগীর ডাকে মাথা তুলে তাকালাম)
–এতো রাতে ছাদে এসেছ কেন
–ঘুম ভেঙে গেছে তুমি রুমে নেই ভয় করছিল, ছাদের দরজা খুলা দেখে বুঝেছি তুমি এখানে আছ
–যাও ঘুমিয়ে পড়
–তোমার কি হয়েছে
–কষ্ট হচ্ছে
–কিসের কষ্ট (সোহাগীর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম ও এসে আমার পাশে দোলনায় বসলো)
–বললা না কিসের কষ্ট
–সোহাগী তুমি চোখ বন্ধ করে কাকে দেখতে পাও আমাকে নাকি পিয়ালকে
–চোখ বন্ধ করলে আবার কিছু দেখা যায় নাকি
–হুম দেখা যায় যাকে ভালোবাসবা তাকে চোখ বন্ধ করেও দেখতে পারবা
–তাই তুমি কাকে দেখ চোখ বন্ধ করে (সোহাগীর দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলাম পাগলীটা আমার ভালোবাসাই বুঝেনা)
–একদিন তুমি নিজেই বুঝতে পারবা আমি চোখ বন্ধ করে কাকে দেখি
–ঠিক আছে
–তুমি কি পিয়ালকে ভালোবাস
–পিয়াল তো আমার বন্ধু
–ভালোবাসা এমন এক জিনিস কখন কাকে ভালোবেসে ফেলবা নিজেই বুঝতে পারবা না, যাকে ভালোবাসবা তাকে ছাড়া কিছুই ভালো লাগবে না সবসময় তাকে দেখার জন্য মন ব্যাকুল হয়ে থাকবে, তার সবকিছুই তোমার কাছে ভালো লাগবে, তাকে ছাড়া তুমি বাঁচার কথা ভাবতে পারবে না
–কারো জন্য তো আমার এমন হয় না
–হবে একদিন হয়তো আমার জন্য নয়তো পিয়ালের জন্য বা অন্য কারো জন্যও হতে পারে

সোহাগী কিছুক্ষণ কি যেন ভাবলো তারপর আমার কাধে মাথা রেখে আমাকে জরিয়ে ধরলো, আমিও জরিয়ে ধরলাম চোখ দুইটা থেকে বৃষ্টির মতো পানি পড়ছে…..

চলবে?

1 মন্তব্য

  1. আপু তোমার golper পিয়াল আর আমার বাস্তবতায় অয়ন নামের একটা ছেলে আমার আর আমার গল্পকথা ( পিচ্চি বউ ) এর মাঝখানে খেজুরের কাটা যেমন শরীরের সব জায়গায় ঘুরে বেড়ায় ঠিক তেমনি আমাদের পুরো সম্পর্কের মাঝে ও ঘুরে বেড়াচ্ছে । যেটা আমার একদমই ভালো লাগেনা ? ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে