অনুভব_তুমি পর্ব-১৫/১৬/১৭

0
2624

অনুভব_তুমি পর্ব-১৫/১৬/১৭
#সাইমা_ইসলাম(প্রীতি)
.
.
রূপকে এভাবে দেখতে হবে কল্পনাতেও ভাবিনি আমি।
রূপ পুরো রক্তাক্ত অবস্থায় দাড়িয়ে আছেন।মাথা ফেটে অনর্গল রক্ত পড়েই যাচ্ছে।সাদা শার্টটা একেবারে লাল হয়ে গেছে।আশে-পাশে সব কিছু ভাঙ্গা অবস্থায় পড়ে আছে।
ইশু রূপের পাশেই দাড়িয়াছে।রূপকে দেখে আমার নড়ার শক্তিটুকুও হারিয়ে ফেলেছি।
রূপ আমাকে দেখে রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেলেন।একবার ফিরেও তাকালেন না আমার দিকে।কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না আমি।
শুধু এতটুকু জানি রূপকে এই অবস্থায় দেখে কলিজাটা ছিড়ে যাচ্ছে আমার।ওনি চলে যাওয়ার পর ইশু দৌড়ে আমার কাছে এসে আমাকে ঝাঁকি দিয়ে বলল,,,,,,,
-এই সত্যি করে বলত কি করেছিস তুই,,,?
-,,,,,,,,
-এই কি হলো চুপ করে আছিস ক্যান কি বলছি শুনিস না?রূপ ভাইয়া এতো রেগে আছে ক্যান তোর ওপর?
-হুম।রূপ,,,,,।ই,,,ইশু কি হয়েছে আমার রূপের ওনি এভাবে,,,,,,
বলেই ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করলাম।
-সেটাই তো জানতে চাইছি।ওনি দেখি খুব রেগে ছিলেন।শাহাত ভাইয়াকে ইচ্ছা মত মারছে।ওনারে তো হসপিটালে নিছে।তোর জন্যই মারছিল কিন্তু কেনো তা বুঝলাম না।
এই কথা শুনে আমি আর এক মুহূর্ত দাঁড়ালাম না ওখানে।ওনাকে অনেক খুঁজার পর পেলাম অডিটরিয়ামে।
একা বসে আছেন।আমাকে আসতে দেখে কোনো পাত্তাই দিলেন না।
রূপের কপাল থেকে রক্ত পড়ছে এখনো।আমি ওড়না দিয়ে মুছতে নিলেই এক ঝাড়িতে আমার হাত সরিয়ে দিলেন।এক থাপ্পর বসিয়ে দিলেন আমার গালে।
.
-তোমার সাহস কেমনে হলো এতবড় কথাটা আমার থেকে লুকানোর।
-ভুল হয়ে গেছে আমার।(বাচ্চাদের মতো ফুঁফাতে ফুঁফাতে কান্না করে বললাম)
-এটা ভুল ?
-আর হবে না এমন।
-ওই শয়তানের ব*** তোমাকে অনেক আগে থেকে ডির্স্টাব করে বলনি কেনো আমাকে?
ওর সাহস হলো কেমনে তোমার ওড়না ধরে টান দেয়ার।
(রাগে ভীষণ রকম ফুঁসাচ্ছেন রূপ।ওনার এই রূপ দেখে আমারি ভীষণ ভয় করছে ওনার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে)
-আর নেক্সট টাইম আমার থেকে কোনো কথা লুকানোর আগে ভালো করে এই থাপ্পরের কথা মনে করবা।সরো যাও আমার সামন থেকে।
ওনি ওঠে যাওয়ার আগেই ঝাপটে জড়িয়ে ধরলাম ওনাকে।প্রথমে আমাকে ছাড়িয়ে দিতে চেয়ে পড়ে আবার নিজেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন।
যেখানে থাপ্পর দিয়েছেন সেখানে এক নরম পরশে হাত রেগে বললেন,,,,,
-কষ্ট হয়েছে খুব?
– হুম।
-এই কান ধরলাম আর কখনো হবে না।এইবারের মতো মাফ করে দাও প্লিজ।
-আগে প্রমিজ করুন আর কখনো এমন করবেন না।নিজেকে এভাবে কষ্ট দিবেন না।
-হুম।
-কি হুম হে??আপনি জানেন আপনাকে এভাবে কষ্ট পেতে দেখলে আমার কলিজাটা ছিড়ে যায়,,,আজ এক মুহূর্তের জন্য মনে হচ্ছিল কেউ আমার দেহ থেকে রুহৃটা বের করে নিচ্ছে। এমন আর করবেন না আপনি কথা দিন,,,,,,,
-আচ্ছা আচ্ছা বাবা ঠিক আছে করব না।এখন তুমি আমার সাথে যাবে। চলো।
-কোথায়?
-জাহান্নামে।
-মানেহহহ।
-এতো প্রশ্ন ক্যান করো?চুপচাপ চলো আমার সাথে।
-না আগে আপনি যাবেন আমার সাথে হসপিটালে তারপর যাব আমি।
-এই না না হসপিটালে না।
-তাহলে আমিও কোথাও যাচ্ছি না হুম।
.
রাত দুইটা বেজে সতের মিনিট।
সবাই ঘুমে ব্যস্ত ।রাস্তায় ঘেউ ঘেউ করছে কয়েকটা কুকুর।এরা ছাড়া আর কোন প্রাণি জেগে আছে কিনা অনেক বড় সন্দেহের বিষয়।এদের মতো ঘুম নেই রূপের চোখেও।
ডাইরিটা রেখে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে রূপ।চোখের কোনাটা জ্বলছে যেধ কেউ মরিচ ডেলে দিয়েছে।
শিশির কণা,কুয়াশার মতো নিজের জীবনটাকেও ঝাপসা মনে হচ্ছে রূপের কাছে।এই একটা ডায়েরিই যে ওর জীবন পুরোটা পাল্টে দিতে পারে ভাবতেই কেমন যেন লাগছে।
বাস্তবতা সত্যিই এমন একটা জিনিস যা অনেক মানুষের সবটা তছনছ করে দেয় আবার অনেকের জীবনকে সাজিয়ে দেয় নতুনের বহমানতায়।
খুব বেশিই অবাক লাগছে। একটা মেয়েকে আমি কখনো এতোটা ও ভালোবেসেছি যে তার জন্য এভাবে মার ও খেয়েছি।আর মেরেছিও।
অথচ আমার কিছুই মনে নেই।।।
.
ডায়েরির অপর পাতাটা উল্টে নিলো রূপ।
ডেইট “০৯ই ডিসেম্বর”
.
ওনি যেতে না চাইলেও জোর করে নিয়ে গেলাম হসপিটালে।
ওইখানে শাহাত ভাইয়াকেও দেখলাম।শাহাত ভাইয়া রূপের ক্লাসমেট প্লাস ওর বিপরীত গ্যাং লিডার।ওই শয়তানে অনেক আগে থেকেই খারাপ নজর দিত আমার ওপর।
রূপ ভালোমত পিটিয়েছেন।একদম ভালো করছেন।
ওনাকে দেখে মনে হলো আগামী তিন মাসেও ওঠতে পারবেন না বেড থেকে,,হিহি।
.
ডাক্তার রূপের হাতে ও কপালে বেন্ড করে দেয়ার পর ওনি আমাকে নিয়ে গাড়িতে ওঠলেন।বরাবর খুব স্প্রিডেই গাড়ি চালান ওনি।আজ আরো জোরে চালাচ্ছেন।
প্রায় আধ-ঘন্টা এভাবে চলানোর পর ভয়ে ওনাকে বলেছিলাম একটু আস্তে চালাতে।
কিন্তু কি হলো?
ওনি হুট করে গাড়ি থামিয়ে আমার চোখ একটা কালো কাপড় দিয়ে বেধে দিলেন………………….
.
.
.
To be continue ?

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share

#অনুভবে_তুমি
পর্ব-((১৬))
#সাইমা_ইসলাম (প্রীতি)
.
.
চোখ খুলে টিপ টিপ করে তাকাতেই দেখি আমি গাড়ির ব্যাক সিটে শুয়ে আছি।চারপাশ কেমন যেন ঝাপসা লাগছে।

গাড়ি থেকে নেমে আশে-পাশে তাকিয়ে রূপকে খুঁজছি।আজ চন্দ্রক্ষয়ের তৃতীয় দিন।রাতের আকাশটা একটু বেশিই সুন্দর লাগছে।
.
-হিংসে হচ্ছে।
(রূপ হঠাৎ কোথা থেকে এসে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেছেন আমায়।)
-খুব হিংসে হচ্ছে। আমি ঠিক বুঝতে পারছি।(রূপ)
-কার?
-চাঁদের। তোমায় দেখে।

লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললাম আমি।

-একটা মেয়ে যে এতো ঘুমখোড় হতে পারে সিরিয়াসলি তোমাকে না দেখলে আমি জানতাম না।
-এ,,,এক,,টুই তো ঘুমিয়েছি এমন করেন ক্যান।
-একটু!!!
-ওফ ছাড়েন তো।এটা কোথায়?
-ওহ চল।

রূপ হাত ধরে আমায় একটা নদীর পাড়ে নিয়ে এলেন।নদীর ঘাটে পরপর তিনটে নৌকা বাধা।নৌকা তিনটার সামনেই একটি করে ছোট্ট হারিকেন ধরানো।

-বলো কোনটাতে আগে ওঠবে?একেকটার স্পেশালিটি একেক রকম।
-কি রকম?
-ওঠার পর নাহয় দেখবে।এই তিনটাই আমি নিজ হাতে সাজিয়েছি শুধু তোমার জন্য।
-উম প্রথমটাতেই।
-ওকে কিউটি।

রূপ নিজে আগে নৌকায় ওঠে আমাকে ওঠতে বললেন। আমি এমনিতেই পানি খুব ভয় পাই।তার উপর নৌকাটা দুলছে ভীষনভাবে।
রূপ টেনে তুললেন আমায় নৌকাতে।
চারদিকে ভেজা মাটির গন্ধ স্পষ্ট।
নৌকাতেই ওঠতেই একপশলা মিষ্টি বাতাস ছুঁয়ে দিয়ে গেল আমার চোখ,মুখ,ঠোঁট।
রূপ আমার চুলের কাটাটা খুলে পানিতে ফেলে দিলেন।খুলে দিলেন চুল।
নৌকার ছাওনিটা বেশ বড়। পুরো ছাওনিটাতে আমার ছবি লাগানো।কতগুলো আমার আর রূপের একসাথে আর বেশির ভাগেই আমি একা।একা সবগুলো ছবিই আমার অগচোরে তোলা।
তবে সবচেয়ে অবাক বিষয় রূপের সাথে দেখা হওয়ার আগের অনেক ছবিও এখানে আছে।
পুরো ছাওনিটাই আমার ছবি আর মরিচবাতি দিয়ে খুব সুন্দরভাবে সাজানো।

সেকেন্ড নৌকাটাতে নিয়ে যাওয়ার পর আমি পুরোই টাসকি।।।
ওনি এত্তো সুন্দর করে কিভাবে সাজালেন এই নৌকাটা?
নৌকাটাতে শুধু একটা হারিকেন ছাড়া আর কিছুই ছিল না।আমি পা রাখতেই রূপ কাচের জারে রাখা জোনাকি-পোকা আর ছোট হলুদ প্রজাপতি গুলো খুলে দিলেন।পুরো নৌকাটাই জোনাকিপোকা আর প্রজাপতি দিয়ে ভরে গেলো।
আর সাথে আমার ফেবারেট সং টা প্লে করে দিলেন মৃদু টোনে,,,,,
“”Ho ho o…….
Heer heer ma akho adiyo
Main te sahiba hoi
Ghodi leke aave le jaaye
Ghodi leke aave le jaaye
.
Ho mainu le jaaye mirza koi
Le jaaye mirza koi
Le jaaye mirza koi……
.
Heer heer ma aakho adiyo
Main te sahiba hoi
Ghodi leke aave le jaaye
Ghodi leke aave le jaaye
.
Ohde je hi main te oh mere varga
Hans da ai sajra savere varga
Ankha bandh kar laa te thande hanere varga
Ohde je hi main te oh mirza mere vagra
Ohde je hi main te oh mirza mern vagra
Ho heer heer ma akho adiyo
Main te sahiba hoi
Ghodi leke aave le jaaye
Ghodi leke aave le jaaye
Ho mainu le jaa je mirza koi
Le jaaye mirza koi
Le jaaye mirza koi
Le jaaye mirza koi………””

অসম্ভব সুন্দর আলোক আভায় ভরে গেল আমার চারপাশ আর মুখরিত হয়ে গেল এক রোমান্টিকতায়…………..

হালকা বাতাসের ছন্দময়ী ঢেউয়ে দুলছে নৌকাটা………….
অল্প অল্প ভয় আর তৃপ্তির এক অন্য রকম স্বাদ পাচ্ছি রূপের কাছাকাছি থেকে।
আমি ঠিক এতটাই সারপ্রাইজড হয়েছি যা বুঝানোর মত না। জোনাকি-পোকা গুলোর সাথে খেলায় ব্যস্ত হয়ে গেছি আরো অনেক আগেই………..

হঠাৎই রূপ আমার সামনে এসে হাটু গেড়ে বসে পড়লেন।

-আমার গানের সুরের কারণ তুমি……
আমার প্রত্যেকটা মুহূর্তের কারণ তুমি……
আমার চাহনির মাঝে নেশার কারণ তুমি…..
আমার নিজেকে হারানোর কারণ তুমি…….
জানো মিহিন,,,,।সেই……সেই প্রথম দিন এক পলকে ভালোবেসছি তোমায়।সেই মুহূর্ত থেকে হারিয়ে ফেলেছি আমি রূপকে।আমার দেহের প্রত্যেকটা রক্তকণায়… বাস করে শুধু মিহিন।
আমি জানিনা……আমি জানি না আমি কখন কিভাবে কেন তোমায় এতটা ভালোবেসছি………..
আমার মনের প্রত্যেকটা কোণে শুধু তোমার বিচরণ।তোমার ভালোবাসার পরশ…….
তোমার অস্তিত্ব,,,শুধু তোমার রাজত্ব।
ভালোবাসতে চাই মিহিন…….
শুধু তোমাকেই……
খুব করে ভালোবাসতে চাই…..ঠিক ততটা যতটা আজ পর্যন্ত নিজেকেও বাসতে পারিনি।খুব করে চাই তোমায়..আমার পুরোটা অস্তিত্বে।শুধু মৃত্যু পর্যন্ত না,, এর পরও শুধুই তোমাকে চাই মিহিন।
will you love me mihin?
will you be mine….forever?
will you give me a chance to love you?
please…………

(রূপ আস্তে করে ওঠে দাড়ালেন)

ওনার চোখ দুটো ছলছল করছে।চোখে পানি।লাল হয়ে গেছে চোখ দুটো।
হয়ত আজ এই দুটো চোখই যথেষ্ট ওনার ভালবাসার প্রমাণ দিতে।যার কাছে হার মানবে পৃথিবীর সব কিছু।
মনে হচ্ছে……মনে হচ্ছে এই চোখের ভালোবাসাতেই ডুবে মরে যেতে……………….
আমি দ্রুত রূপকে জড়িয়ে ধরলাম।জড়িয়ে ধরেই চোখের জল আর আটকে রাখতে পারলাম না।একটা মানুষ আমাকে তার নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসতে চায়!
কোন ভালো কাজের বিনিময়ে আল্লাহ্ রূপকে পাঠিয়েছেন আমার জীবনে আমি জানি না।কিন্তু ভালোবেসে ফেলিছি তাকে বড্ড।

রূপের বুকের উষ্ঞতায় নিজেকে লুকিয়ে পাগলের মত কাঁদছি।ওনি খুব দ্রুত আমাকে ছাড়িয়ে চোখের জল মুছে দিলেন।

-এই পাগল মেয়ে তো দেখি সবকিছুতেই খালি কাঁদে। কাঁদছো কেন এভাবে?তোমার চোখের জল আমি সহ্য করতে পারি না জানো না।
-……………………..
-কি হলো টা কি?এভাবে কাঁদলে কিন্তু আমি চলে যাব বলে দিলাম।
-উহু,,,,,,,,,,,,
-কি উহু।জানো কিউটি তুমি যখন কাঁদো আর রাগ করো তোমাকে একেবারে টমেটোর মতো লাগে।
এই যে এখন লাগছে,,,,,,,,,,
পরে খেয়ে ফেললে কিন্তু আমার দোষ নাই বলে দিলাম,,,,,,,,,,,

এই কথা শুনে আমি রূপের হাতে বুকে ইচ্ছা মতো মারলাম।এমা ওনি হাসছেন।
-আ…আমি টমেটো না…….??আপনি………আপনি তো হলেন একটা পটল।
– হাহা………তাহলে তুমি মিষ্টি কুমড়া হা,,,,,,হাহা…….
-ইউউ মিস্টার চিচিংগা……..

আমার কথা শুনে রূপ হাসতে হাসতে পাগল।
তারপর রূপ আমাকে তৃতীয় নৌকাটায় নিয়ে গেলেন।এইটাতে কোনো ছাওনি নেই।। রূপ আর আমি নৌকার ধারে পানি পা ভিজিয়ে বসলাম।জোনাকি-পোকা গুলো দিয়ে পুরো জায়গাটা ছেয়ে আছে।
গানটা তখনো বেজেই চলছে।

আমি বসেবসেই জোনাকি ধরতে ব্যস্ত আর রূপ এক নাগারে দেখে যাচ্ছেন আমাকে।আচ্ছা ওনি বোর হয়ে যান না আমাকে দেখতে দেখতে?
সারাক্ষনই একটা নেশাতুর দৃষ্টিতে চেয়ে থাকেন।অবশ্য আমারও খারাপ লাগে না।নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে হয়।

রূপের এক হাত দিয়ে আমার ডান হাত চেপে ধরে রেখেছেন ওনার বুকের সাথে।আর আরেক হাত খেলা করছে আমার চুলে।

রূপ আমার হাতে কিস করে দুটো ডায়মন্ডের চুড়ি পড়িয়ে দিলেন……………..

To be continue?

(((£££সমালোচনার জন্য উম্মুক্ত ।আপনাদের সমালোচনা আমার উৎসাহ আর পাশে থাকা আমার অনুপ্রেরণা ।সবাই গল্পটা পড়ে সমালোচনা করবেন প্লিজ।তা ভালো হোক আর খারাপ।
আর সকল পাঠক-পাঠিকাদের জন্য আমার অসীম ভালোবাসা,যারা শত ব্যাস্ততার মাঝে আমাকে একটুকু হলেই জায়গা করে দিয়েছেন তাদের কাজে ও মনে।££)))

#অনুভবে_তুমি
পর্ব-((১৭))
#সাইমা_ইসলাম(প্রীতি)
.
.
-এগুলো কি না দিলেই নয়?
-ধরে নেও ভালোবেসে দিলাম।
-আমার ভালোবাসার সামনে এ তুচ্ছ।
-জানি।
-তাহলে কি বলতে চাইছেন?
-ভালো বাসি এই রূপবতীকে।
.
রূপ লক্ষী ছেলের মতো আমার পায়ের উপর মাথা রেখে শুয়ে পড়লেন।
নিরবতায় ছেয়ে গেল সবটা।দুটো মানুষের ভালো বাসা লুকিয়ে লুকিয়ে দেখে নিচ্ছে শুধু ঐ বেহায়া চাঁদ।নদীর স্রোতে ক্রমশঃ কেঁপে কেঁপে ওঠছে নৌকাটা।
.
– জানো মিহিন এই চুড়ি দুটো আমার মায়ের।তার একমাত্র ছেলের বউয়ের জন্য খুব যত্ন করে রেখেছিলেন।নিজের হাতে আশির্বাদ করবেন।

বলেই এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লেন রূপ।

-কিন্তু তার আগেই যে……….।
-মানেহ!কি বলছেন আপনি এসব?আপনার মা………
তাহলে সীমান্তি আন্টি……
-মামনি।আম্মুর বোন হয় ।আম্মুর মৃত্যুর পর আমার জন্য বাবা তাকে বিয়ে করে,বউয়ের মর্যাদা দিয়েছে ঠিকই কিন্তু অধিকার দেয়নি কখনোই।ভালোবাসেনি কখনো।ভালোবাসে এখনো আম্মুকেই।কিন্তু মামনির এদিকে মাথা ব্যথ্যা নেই।আমাকে নিজের ছেলে ভাবে।সারাটা জীবন আমাকে দিয়েই নষ্ট করেছে।
-আন্টিকে একবার দেখেছি আমি তাও ছবিতে।
-পরেরবার দেখবে তোমার বাসায় তাও খুব জলদি।
.
রূপের কথা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে গেছি আমি।রূপ ওঠে বসে আমাকে তার বাহুডোরে নিয়ে নদীর স্রোত দেখাচ্ছেন।
.
.
ফোনটা বাজতে বাজতে কেটে যাচ্ছে বারবার।আমি (মিহিন) আয়নার সামনে দাড়িয়ে কানের দুলটা পরছি আর বার তাকাচ্ছি খাটে রাখা ফোনের দিকে।
রূপ সেই সকাল থেকে এত জ্বালাতন করছে না কি বলব।কল রিসিভ করতেই কেটে গেল।আমি কলবেক করার আগেই মি. আবার কল করলেন।
.
-আমি তৈরি হচ্ছি।এতো তাড়া দিলে কিভাবে হয় বলুন তো।
-আরে বাবা তাড়াতাড়ি মামা অপেক্ষা করছেন তো তোমায় দেখার জন্য।
-এইতো হয়ে গেছে।আপনার কথা মত শাড়ি পড়েছি আর চুল গুলো খোপা করে নিয়েছি।
-হুম।আমি নিচে আছি।এসো ।দ্রূত।
.
রুম থেকে বের হয়ে নানুর রুমে চলে এলাম।রাহি ঘুমোচ্ছে।নানু রাহিকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছেন।
রাহি আর নানু কপালে একটা কিস করতেই নানু আমার হাত ধরে ফেললেন।আমার কানের পেছনে কাজলের ফোঁটা দিয়ে দিলেন।
যদিও এগুলো কুসংস্কার তাও চুপ করেই রইলাম।নানু-দাদুরা যে এখনো এতে বিশ্বাসী তাদের বিশ্বাসের জন্য এই টুকুনি করাই যায়।

-হে আল্লাহ্, আমার সোনার টুকরা নাতনিটার খুশিতে যেন কারো নজর না পরে।
.
.
রূপ আর আমি পাশাপাশি বসে আছি।আমার বরাবর বসে আছেন রূপের মামা।পাঁচ ফুট আট ইন্চ্ঞি লম্বা,উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের সুঠাম দেহের অধিকারি মানুষটা। চুল গুলো সব কালো।ফরমাল ড্রেসে এসেছেন ওনি।
প্রথমে আফজাল রহমানকে দেখে কিছুটা ভয় লাগলেও ওনার হাসি মিশ্রিত কন্ঠে ভয় সব পালিয়েছে।
.
-মা মিহিন ই তো নাম তোমার তাইনা?
-জি।
-রূপ তো সারাক্ষনই এই নামই জপে।ভালোলাগল তোমায় দেখে।
রূপের মামার কথায় লজ্জা পেয়ে মুখ নিচু করে ফেললাম।

-আচ্ছা তোমায় চেনা চেনা লাগছে খুব।এর আগে কি দেখা হয়েছে কখনো আমাদের?
-না মামা।আমি এই প্রথম দেখলাম আপনাকে।
-ওহ আচ্ছা।
.
সেদিনের পরিচয়ের পর রূপের মামার রূপে যেন আমি নিজের বাবাকে খুঁজে পেয়েছিলাম আবার।
মাঝে মাঝে মনে হতো ওনি রূপকে যতটা আদর করেন তার চেয়ে বেশি করেন আমায়।আজ চারটা বছর পরও কমেনি এই আদর,স্নেহ,ভালোবাসা।
রূপ হয়ত পাশে নেই আছে ওর স্মৃতি।বেঁচে থাকার এক নির্মম আবাছা কারন।রয়ে আছে আমার অনুভবে……. হয়ে গেছে আমার
অনুভবের তুমি……….
কিন্তু মামা ছাড়েন নি আমাকে আগলে রেখেছেন মেয়ের মতন।
.
.
১০ই জানুয়ারি,,,,,,,,,,,,,
রাত ৩ .১৫ মিনিট…………
প্রচন্ড জ্বরে মাথা তুলবার জো নেই।নানু মাথার পাশে বসে জ্বল পট্টি দিচ্ছেন।রাহিও ঘুমায়নি এখনো।
নানু সেই কখন থেকে রূপের নম্বর ট্রাই করে যাচ্ছে কিন্তু তুলছেনা কেউ।ভয়ে কলিজা কেঁপে ওঠছে মিহিনের বারবার।
কিছু হয়নি তো রূপের আবার?কিছুক্ষনের মধ্যেই জ্বর চরম পর্যায়ে ওঠলো আমার, জ্ঞানও নেই।নানু আর না পেরে রূপের মামাকে কল দিলেন।আজমল মামা এসে ইমিডিয়েট হসপিটালে ভর্তি করলেন আমাকে।
.
সকালের দিকে জ্ঞান ফিরলে আজমল মামা বলেন রূপ নাকি ব্যাস্ত ছিলেন তাই কল রিসিভ করতে পারেনি।
কথাটা বুকের মাঝখানটাতে লেখেছে একদম।কিন্তু নিজেকেই শান্তনা দিলাম সত্যিই ব্যস্ততা একটু বেশিই হয়ত।নতুন বাবার অফিসে জয়েন করেছে তাই।
.
পরদিনই রিলিস দেয় আমাকে।বাসায় এসে যা দেখলাম তাতে আমি অবিভূত………….
রূপ গাড়ি নিয়ে আমাদের বাসার সামনে…….

To be continue?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে