অদ্ভুত কান্না ৪র্থ_পর্ব -শেষাংশ
.
নাদিয়া ঘুমোচ্ছে, ভয় পেলে মানুষ যেভাবে গুটিশুটি খেয়ে ঘুমায় সেভাবে। হাবিব টেবিলে গিয়ে বসল। ডায়েরি সমনে রাখা, এই ডায়েরি তার অনেক প্রশ্নের জবাব
দেবে। ‘জবিদাস কে ?’ জবিদাস আত্মহত্যা করল কেন ? জবিদাসের আত্মহত্যার ব্যাপারটা সবাই তার কাছে আড়াল রাখলো কেন ? জবিদাসের সাথে নাদিয়া কি এমন করলো যার জন্য নাদিয়া এবং রেহানা বেগমের মাথায় ঢুকে আছে জবিদাসের আত্মা প্রতিশোধ নেবে ? স্ট্রে-তে হাবিব সিগারেট রাখলো ।
ডায়েরি হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করলো।
‘জবিদাস নামে আমার একটা ক্লাসমেট ছিল। আমরা প্রথম শ্রেনী থেকে দশম শ্রেনী পর্যন্ত একই ক্লাসে পড়তাম। জবিদাস পড়ালেখায় এতটাই ভালো ছিল যে প্রতিটা বার্ষিক পরিক্ষায় জবিদাস হতো এক নাম্বার আর আমি দুই, এটা নিয়ে আমার পরিবারের সবাই খুবই বিরক্ত ছিলো। কারণ আমাদের এলাকায় হিন্দু মুসলমান সংখ্যার দিক থেকে প্রায় সমান, টাকা-পয়সা শিক্ষা-দীক্ষা সবদিকে কেউ কারো থেকে পিছিয়ে ছিলো না, তাই হিন্দু-মুসলমানের মাঝে প্রায় প্রতিটা বিষয়ে প্রতিযোগিতা লেগেই থাকতো। পানিকে জল বললেই আব্বু চোখ রাঙানি দিতেন কারণ হিন্দুরা পানিকে জল বলে। এরকম অবস্থা ছিলো আমাদের।
.
বাংলা সিনেমার সুবাদে ক্লাস সিক্সে থাকতেই আমরা প্রেম-ভালোবাসা বুঝে ফেলেছিলাম, জবিদাস একদিন স্কুল ছুটির পর আমাকে একটা চিঠি দিলো, ক্লাস সিক্সের একটা ছেলে যেভাবে চিঠি লিখতে পারে সেভাবে লিখে আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে , আমি সেই চিঠি নিয়ে আম্মুকে দেখালাম। আম্মু সাবধান করে দিলেন ওর সাথে না মিশতে, জবিদাসের সাথে আমি এরপর থেকে কথা বলিনা, সেও আমার সাথে কথা বলেনা, কারণ ক্লাসের সবাইকে আমি চিঠি দেখিয়েছি, সবাই এখন জবিদাসকে নিয়ে রসিকতা করে, সিক্সের বার্ষিক পরিক্ষা এসেছে, খুব পড়াশুনা করে পরিক্ষা দিলাম, কারণ ‘খাঁন বাড়ির’ মেয়ে একটা হিন্দু ছেলের পেছনে থাকবে সেটা হতে পারেনা। পরিক্ষা শেষ হলো, রিজাল্ট বের হল। সেই একই অবস্থা, জবিদাস এক নাম্বার আমি দুই, পরিবারের সবার আশার মুখে আবার ছাই পড়লো। আম্মু কিছুটা বিগড়ে গেলেন, রাতে আমার পড়ার টেবিলে এসে বললেন, ‘তোকে না জবিদাস প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিল, তুই কাল জবিদাসকে গিয়ে বলবে তুইও প্রেম করতে চাস তার সাথে, তবে ক্লাসের বা এলাকার কেউ যেনো না জানে, জানলে আমার আব্বু-আম্মু মারবেন।’
– আমি অবাক হয়ে বললাম, ‘কেন আম্মু ?’
– আম্মু মুচকি হেসে বললেন, ‘প্রেম করলে ওই ছেলের পড়ালেখায় মন বসবেনা, তখন তুই হবে ক্লাসের এক নাম্বার ছাত্রী। তারপর জবিদাসের সাথে কথা বলা বন্ধ।
আম্মুর সব সময় ছেলেমানুষীর অভ্যাস ছিলো, উনি নিজেকে খুব বুদ্ধিমান মনে করতেন, তাছাড়া আব্বুর একজন অবাধ্য স্ত্রী, আব্বুকে না জানিয়ে যেকোনো কাজ করা উনার শখ ছিলো বলতে পারেন, যেমন হিন্দু কবিরাজের কাছে আমাকে নিয়ে যাওয়া ।
যাইহোক, আমি তখন ছোট ছিলাম, তাই ক্লাসের এক নাম্বার ছাত্রী হতে পারবো শুনেই আমি খুশি।
জবিদাসের সাথে আমি সম্পর্ক করলাম, বিকেলবেলা আমাদের বাড়ির সামনে ঘোরাঘুরি করা, সকালে আমার অপেক্ষায় রাস্তায় দাড়িয়ে থাকা তখন জবিদাসের রুটিন হয়ে গেলো।
জবিদাস আমার প্রেমে এতটাই পাগল হয়ে গেছিল যে, সারাক্ষণ আমার চিন্তাভাবনায় সে থাকতো, পড়ার টেবিলে তার মন বসতো না, আমি তাকে পড়ালেখায় পেছনে ফেলবার জন্য সম্পর্ক করলেও একসময় জবিদাসের নিষ্পাপ-সরল ভালোবাসা দেখে সামান্য হলেও তার প্রতি আমার প্রেম জাগতে শুরু হয়। কিন্তু আমি কখনো হিন্দু কাউকে বিয়ে করবো এটা চিন্তাও করতে পারিনা, তাছাড়া আমার পরিবার খুব ধার্মিক, এরকম কিছু হলে পরিবারের সবাই আত্মহত্যা করবে না হয় আমাকে কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলবে। কিন্তু জবিদাস আমার ছলনা বুঝতে না পেরে প্রথম থেকে নিজের ধর্মকে তুচ্ছ করে প্রেমে মত্ত হয়ে যায়, আমি চিন্তা করিনি জবিদাস আমার প্রেমে এতটাই সিরিয়াস হয়ে যাবে, জানলে এরকম ছলনা হয়তো করতাম না, মাঝে মাঝে এটা নিয়ে আমার অপরাধবোধ হয়, কিন্তু তাকে বিয়ে করা আমার দ্বারা সম্ভব ছিলো না, তবে বিয়ের আগ পর্যন্ত মাঝেমাঝে আমরা কথা বলতাম, একসময় আমার বিয়ে ঠিক হয়ে যায় তোমার সাথে, জবিদাস বিভিন্নভাবে বিয়ে আটকাতে চাইলেও তাদের পরিবার হুমকির মুখে পড়ে, তাদের ধর্মের মানুষ চায়নি মুসলমান একটা মেয়েকে বিয়ে করুক, এদিকে আমাদের প্রভাবশালী খাঁন গোত্রের হুমকির কাছে জবিদাসের কিচ্ছু করার ছিলো না, পরিবারের কথা মতো আমার বিয়ে হয় তোমার কাছে, বিয়ের পর আমি বিভিন্ন এঙ্গেলে তোমার প্রেমে পড়ি, তাই জবিদাসকে আমার স্মৃতি থেকে মুছতে আরও সহজ হয়ে যায়, হিন্দু ক্লাসমেটদের মাঝে আমার খুব ভালো সম্পর্ক ছিলো চৈতালীর সাথে, একদিন সন্ধ্যায় চৈতালী আমাকে ফোন করে বলে, ‘জবিদাস ফাস লেগে মারা গেছে, এলাকার সবাই তোকে দোষী করছে, কিন্তু হিন্দু মাতুব্বররা এটা নিয়ে ঝামেলা করতে চাইছেন না বলে সবাই মুখ বন্ধ করে আছে।’
তারপর অনুপম রায় আমাকে ফোন করে, সেও ছিলো আমাদের ক্লাসমেট, জবিদাসের খুব কাছের বন্ধু, অনুপম রায় ফোন করে কাদতে কাদতে আমাকে গালাগালি শুরু করলো, আর বলতে লাগলো, ‘দেখে নিস, জবিদাসের আত্মা তোকে ক্ষমা করবেনা, এ জগতে মানুষের মন ভাঙার বিচার হয় না, ভালোবাসায় প্রতারিত হলে আদালতে মামলা হয়না, কিন্তু জবিদাসের আত্মার আদালতে ঠিকই ছলনাময়ীর সাজা হবে, কাদতে কাদতে অনুপম এই কথাগুলো বলে ফোন রেখে দিলো, ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে আসতে লাগলো, আরেকটা ভয় ছিলো তুমি যদি জানতে পারো তাহলে আমাকে ঘৃণা করবে।
তারপর সত্যি সত্যি শুরু হলো জবিদাসের আত্মার প্রতিশোধ নেয়া, তুমি কাছে আসলে জবিদাসের আত্মা কষ্ট পায় তাই, জবিদাসের আত্মা আরও কষ্ট পেয়ে কাদতে শুরু করে।
হাবিব আমি জানি, আত্মা যাদের উপর প্রতিশোধ নেয়, তারা কখনো রেহাই পায়না, আমিও পাবো না, আমাদের এলাকায় এরকম অনেক গল্প শুনেছি, গল্পের ভয় পড়েছি, হিন্দি ইংলিশ ফিল্ম দেখেছি, আমি জানি আত্মার প্রতিশোধ কতো জঘন্য, আমার এখন তোমার জন্য কষ্ট হয় হাবিব, তোমার জীবনটাও আমি বিষাদময় করে তুলছি।
ক্ষমা করে দিও, যদি আমি কখনো তোমাকে ছেড়ে চলে যাই।’
হাবিব চিঠিটা পড়ে আরেকটা সিগারেট ধরালো, ভাবছে রেহানা বেগমকে বলবে হিন্দু কবিরাজের সাথে আর কোনো যোগাযোগ না করতে, চিঠি পড়ে হাবিব যতটুকু বুঝতে পারলো, নাদিয়া ধরেই নিয়েছে জবিদাসের আত্মা তার উপর জঘন্য কোনো প্রতিশোধ নিয়েই ছাড়বে, এটা তার জন্য খুব খারাপ ব্যাপার, তাছাড়া নাদিয়ার ছলনার জন্য একটা ছেলে আত্মাহত্যা করছে এটা থেকে অপরাধবোধ আসতে পারে, নাদিয়ার ডায়েরি পড়ে বুঝলাম সে খুব বেশি ভূতপ্রেত, আত্মার গল্প শুনেছে দাদা-দাদীর কাছ থেকে, তাছাড়া এলাকায় হিন্দু অধিকাংশ, ক্লাসে হিন্দু সহপাঠীও ছিল, সব মিলিয়ে নাদিয়ার একটা কাল্পনিক চিত্র আকা আছে আত্মা কিভাবে প্রতিশোধ নেয়, এরকম অবস্থাতে মানুষ ভয়ংকর স্বপ্ন দেখা অস্বাভাবিক, সেটা একজন সাইকোলজিস্টের কাছে জানতে হবে, তাছাড়া ছাদের উপরে কেউ পা টেনে টেনে হাটতে শুনা, কিছুদিন এরকম স্বপ্ন দেখে হাটা শুনে একসময় মানসিক অবস্থা এতটাই কি খারাপ হতে পারে যার জন্য সরাসরি কিছু একটা দেখবে, অথবা শুনবে, আমার চেহারায় অন্য কাউকে দেখে ভয় পাবে, এটা জানতে হবে।
হাবিব এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলো, হঠাৎ নাদিয়া ঘুমের মধ্য চিৎকার দিয়ে উঠলো হাবিবকে না পেয়ে, হাবিবের ঘুম ভেঙে যাবার পর বাতি জ্বালিয়ে নাদিয়ার কাছে গেলো, নাদিয়ার হঠাৎ মনে পড়লো হাবিব ডায়েরিটা পড়েছে, সে মুখ অন্যদিকে দিয়ে শুয়ে পড়লো, হাবিব নাদিয়াকে বলল, ‘ফজরের আজান তো পড়ে গেছে, নামাজ পড়বে না ?’
-নাদিয়া তড়িঘড়ি করে উঠে বসে বলল, ‘কখন আজান পড়লো শুনলাম না তো, যাই অযু করে নামাজ পড়ে আসি।’
-হাবিব মুচকি হেসে বলল, ‘আজান পড়লে তো শুনবে ?’
– ‘তাহলে দুষ্টামী করলে যে ?’
-‘দুষ্টামী করে দেখলাম আজকাল হিন্দুদের আত্মাও নামাজ পড়ে কিনা।’
-নাদিয়া ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললো, ‘মানে ?’
-হাবিব এবার উঠে বসে একটা সিগারেট বের করলো, ‘সিগারেট টানতে টানতে বলল, জীবনে অনেক ভূতপ্রেতের গল্প তো শুনেছো, কখনো কি শুনছো, হিন্দুদের আত্মা যার উপর ভর করে সে নামাজ পড়ে ?’
-নাদিয়া গরগর করে বলতে শুরু করলো, ‘না, ভুতপ্রেত বা আত্মা হচ্ছে খুবই খারাপ, জিনের মধ্য যারা জিন্না মুমিন তারা ধরলে মানুষ নামাজ কালাম পড়ে।’
-‘তোমাকে তো জিন্নে মুমিন ধরার কথা না, হিন্দু আত্মা ধরার কথা, তাহলে তুমি নামাজ পড়ছো কেন সেটা ভাবতে ভাবতে অযু করে নামাজ পড়ে এসো, আজানের সময় হয়ে গেছে।’
-নাদিয়া বাথরুমে গিয়ে পানির ট্যাপ ছাড়ার সাথে সাথে সে শুনতে পেলো কে জানি খিলখিল করে হাসছে, ট্যাপ বন্ধ করলো আবার হাসি বন্ধ, নাদিয়া দৌড়ে এসে বলল, ‘হাবিব আমাকে জবিদাসের আত্মা মনে হয় নামাজ পড়তে বাধা দিতে চাচ্ছে, তুমি আমার সাথে বাথরুমে এসে দাড়িয়ে থাকো, আমি অযু করবো।
হাবিব দাঁড়িয়ে আছে,
নাদিয়া অযু করার পর হাবিব অযু করে দু’জন নামাজ পড়লো।’
-নামাজ শেষ করে নাদিয়া চা করতে গেলো, হাবিব জানে আজকে নাদিয়া একা রান্নাঘরে গেলে সমস্যা হতে পারে, তাই সে চেয়ার নিয়ে রান্নাঘরে বসলো, তারপর দু’জন চা নিয়ে বারান্দায় গিয়ে বসে গল্প করতে করতে চা খাচ্ছে।
হাবিব ভাবছে এখন নাদিয়ার সাথে গল্প করতে করতে ধীরে ধীরে ওর ভিতরের ভয় দূর করতে হবে।
-‘নাদিয়া তুমি কি বিশ্বাস করো মৃত মানুষের আত্মা প্রতিশোধ নিতে পারে, মৃত মানুষের আত্মা মানুষের উপর ভুতপ্রেত হয়ে ভর করে ।’
-নাদিয়া চা-এর কাপ থেকে চুমুক তুলে বলল, ‘হ্যা এটা তো সবাই বিশ্বাস করে, এইতো গেল বছর অমুকের ভুতে ধরেছিল, কিছুদিন আগে তমুকের উপর পেত্নী ভর করেছিল, নাদিয়া এরকম হাজারটা উদাহরণ দিতে শুরু করলো।’
-হাবিব নাদিয়ার কথার মাঝখানে বলল, ‘কিন্তু আমি বিশ্বাস করিনা।’
-‘তুমি বিশ্বাস করোনা কেন ?’
হাবিব মনে মনে ভাবছে, মানুষ ধর্মের প্রতি বেশী দূর্বল থাকে, শুধুমাত্র ধর্মের কথা মানুষ যুক্তি ছাড়া অন্ধভাবে বিশ্বাস করতে পারে, তাই নাদিয়াকে প্রথমে ধর্ম দিয়ে বুঝানো যেতে পারে।
-হাবিব চ-এর কাপটা হাত থেকে রেখে বলল, ‘কারণ ইসলাম এসব আত্মায় বিশ্বাস করেনা, মানুষের মৃত্যুর পরে তার আত্মা ভূতপ্রেত হয়ে মানুষের উপর ভর করতে পারে সেটা ইসলামে নেই, আর যারা এসব বিশ্বাস করবে আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করবেন না।’
-নাদিয়া তেমন একটা আগ্রহ না দেখিয়ে বলল, ‘ও আচ্ছা।’
হাবিব ভাবছে একটু বিস্তারিত বলে ট্রাই করা যেতে পারে।
‘আত্মহত্যাকারী বা অপঘাতে মৃত ব্যক্তির আত্মা
‘ভূত’ হয়ে দুনিয়াতে ঘুরে বেড়ায়, কথাটা সত্যি কিনা মিথ্যা একজন আলেমকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, উনি উত্তরে যা বলেছেন, আমি কাল রাতে আমার একটা ডায়েরিতে লিখে রাখছি, সেটা আমি নিয়ে আসছি, ডায়েরিটা হবিব নাদিয়ার কাছে দিয়ে
চা-এর কাপে চুমুক দিলো, আর নাদিয়া ডায়েরি বের করে পড়তে শুরু করলো ‘ ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী কোনো মানুষ মৃত্যুর পর পুনর্জন্ম লাভ করে বা পুনরায় দুনিয়ায় আগমন করতে পারে না। কেননা মৃত্যুর পর ইমানদার সৎকর্মশীল মানুষের রুহ ‘ইল্লিয়্যিন’ নামক জায়গায় অবস্থান করে বলে কোরআনে আছে।
তাতে তারা কিয়ামত পর্যন্ত পরম শান্তিতে অবস্থান করবে। সেই শান্তির জায়গা থেকে কেউ পৃথিবীতে আসতে চাইবে না।
আর অবিশ্বাসী-পাপী এবং ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্মের লোকদের রুহ ‘সিজ্জিন’ নামক জায়গায় অবস্থান করে। এটি একটি বন্দিখানা, এতে তারা হাশরের মাঠে বিচারকার্য শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত অশান্তি ভোগ করতে থাকবে। চাইলেও পৃথিবীতে আসতে পারবেনা, বিচারকার্য শেষে তাদের জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (দেখুন : সুরা মুতাফিফফীন : ৭-১৮)
এরূপ কোনো কোনো হাদিসমতে শহীদদের রুহ সবুজ পাখির সুরতে আল্লাহর আরশের নিচে উড়তে থাকবে। ছোট শিশুদের রুহও মৃত্যুর পর ঊর্ধ্বাকাশের কোনো আনন্দময় জায়গায় বিচরণ করবে। হাশরের দিবসে সবার দুনিয়াবি শরীরের সঙ্গে রুহ একত্রিত হয়ে পুনরুত্থিত হবে।
মৃত্যুর পর কেউ ফিরে আসবে না ।
পৃথিবীতে পুনর্জন্ম, জন্মান্তর এ ধরনের কল্পনার কোনো বিশ্বাস ইসলাম সমর্থন করে না। কিন্তু বর্তমানে আমাদের সমাজে কিছু অবাস্তব ও আজগুবী কথা প্রচলিত রয়েছে, যার সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। যেমন অনেকে বলে থাকে, মৃত্যুর পর প্রতি সোমবার তারা দুনিয়াবি ঘরে আসে। কেউ কেউ বলে, এক মাস পর্যন্ত তার রুহ ঘরের চারপাশে বিভিন্ন প্রাণীর ছবি ধরে এসে ঘোরাফেরা করে এবং তার আত্মীয়স্বজনদের দেখে। কেউ কেউ বলে, জুমা, ঈদ, শবেবরাত ও শবেকদরে তার ঘরের দরজায় ইসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে আসে। কোথাও প্রচলিত আছে যে খারাপ মানুষের রুহ পৃথিবীতে এসে মানুষদের জিনের ন্যায় আসর করে। আসলে এসব ধারণা উপমহাদেশের মুসলিম সমাজে হিন্দুদের সংস্রবে থাকার কারণে ছড়িয়েছে। এসবের সঙ্গে ইসলামের ন্যূনতম কোনো সম্পর্ক নেই।
নাদিয়া ডায়েরিটা পড়ে খুব আগ্রহ নিয়ে বলল, ‘তাহলে আমার সাথে যা হচ্ছে সেটার ব্যাখ্যা কি ?’
নাদিয়া এমনভাবে হাবিবকে ব্যাখ্যার কথা জিজ্ঞেস করলো, হাবিবের ব্যাখ্যার উপর যেনো অনেক কিছু নির্ভর করছে।
-হাবিব বলল, ‘নাদিয়া তুমি হয়তো জানো, আমার এক বন্ধু সাইকোলজিস্ট, সে দেশের বাহিরে থাকে, আমি গতরাতে তোমার ডায়েরি পড়ে তাকে ফোনে বিস্তারিত বলেছি, সে বলল, দুশ্চিন্তা, ভয়, মানসিক চাপে হ্যালুসিনেশন ঘটে থাকে। একটা শোনার হ্যালুসিনেশন আর অপরটা দেখার হ্যালুসিনেশন!। কানের হ্যালুসিনেশন প্রায়ই ক্ষেত্রে সেকেন্ড পারসন হ্যালুসিনেশন হয়ে থাকে। কানে কানে কেউ বলে যায় ‘তুই শেষ’, ‘সামনে তোর মরণ’।
বিষণ্ন রোগী কানে ভেসে আসা কথাগুলোকে একদম যৌক্তিক ধারণা করে মাথা পেতে নেয়।
হ্যালুসিনেশনে ব্যক্তি যখন কানে গায়েবি আওয়াজ শুনে সেটা কান্না হাসি যেকোনো কিছু হতে পারে, তখন ব্যক্তি তাতে কোন এক ধরনের প্রতিক্রিয়া করে থাকে, প্রথমদিকে ব্যক্তি বেশ আতঙ্কিত হয়। সে মনের এসব অনুভূতি বুঝে উঠতে পারে না। এ কারণে অনেকটা অবাক হয়ে চারপাশে তাকাতে থাকে। অনেকে সারাক্ষণ বক বক করে। তারা আসলে কানের আওয়াজগুলোকে প্রশ্ন করে। অনেকে সামনের লোককে আঘাত পর্যন্ত করতে পারে। কারণ হ্যালুসিনেশনে কানে কোনো আদেশ আসতে থাকে। এর নাম কমান্ড হ্যালুসিনেশন।
স্বাভাবিক সুস্থ মানুষও ইলিউশনের শিকার হতে পারেন। যখন সন্ধ্যায় আলো কমে আসে তখন সামনের ঝোপকে মনে হয় কেউ যেন বসে আছে।
-নাদিয়া তোমার এরকম হওয়া খুব স্বাভাবিক ছিলো, কারণ তোমার জন্য একটা ছেলে আত্মহত্যা করছে, এটা তোমাকে অপরাধবোধে ভোগাচ্ছিল, তুমি নিজের কাছে নিজে অপরাধী ছিলে, তাছাড়া অনুপম রায় যখন বলল, ‘তোমাকে জবিদাসের আত্মা ক্ষমা করবেনা, তার সাথে অবিচারের প্রতিশোধ নেবে, তখন তোমার দাদা-দাদীর বলা আত্মার গল্প, আর ভুতুড়ে গল্প উপন্যাস ইংলিশ হরর ফিল্মের অভিজ্ঞতায় কাল্পনিক একটা চিত্র তোমার চোখের সামনে ভাসছিলো, কিভাবে ভুত আসে কিভাবে শাস্তি দেয় এইসব তোমার চোখের সামনে ভাসছিল, তারপর রাতে ঘুমে রান্নাঘরে কান্নার শব্দ শুনে তুমি ভাবলে বাস্তবে কেউ কাদছে, রান্নাঘরে যখন চা- করতে গেলে তখন বাতাসের সাথে খুব বৃষ্টি ছিলো, তখন ছাদের পাশের আম গাছের ঢাল বাতাসের সাথে বারবার ছাদে লাগছিল আর তোমার কানে আসছিলো কে পা টেনেটেনে হাটছে, এসব হবার প্রধান কারণ ছিলো তুমি বিশ্বাস করে নিয়েছিলে আত্মা তোমার উপর শাস্তি নিবে, এতে তোমার ভিতরে এক ধরনের ভয় জমাট বেধেছিল , এতকিছুর পর হ্যালুসিনেশন হওয়া খুব স্বাভাবিক।
তোমার ভেতর থেকে আত্মার
ভয় দূর করতে হবে, কারণ এটা তোমার ধর্ম গ্রহণ করেনা, বিজ্ঞান ও গ্রহণ করেনা। না হলে ধীরে ধীরে তোমার এমন কিছু একটা হবে, সবাই ধরে নিবে এটা আত্মার শাস্তি।
যদি তুমি আমার কথাগুলো বিশ্বাস করো আর আত্মার বিশ্বাস থেকে বের হয়ে আসতে পারো, তাহলে কবিরাজ নির্মল বিশ্বাসের সাথে যোগাযোগ করতে তোমার আম্মুকে নিষেধ করবে। তারপর আমরা না হয় কোনো ভালো ডাক্তারের কাছে যাবো।
নাদিয়া বসা থেকে উঠে গিয়ে রেহানা বেগমের মোবাইল থেকে কবিরাজ নির্মল বিশ্বাসের নাম্বার ডিলিট করলো।
তারপর সে আবার বারান্দায় এসে বলল, ‘হাবিব, আমার বিশ্বাস, তুমি এখন আমার কাছে আসলে আর কেউ আরও বেশি রান্নাঘরের দিকে কান্না করবেনা।’
ভ্রু কুচকে হাবিব নাদিয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বসা থেকে উঠে দাড়ালো, অনেকদিন পর নিজের বউকে বুকে জড়িয়ে নেয়ার জন্য, এই সুন্দর কুয়াশার সকালে নাদিয়ার কপালে আলতো করে একটা চুমো আঁকার জন্য।’
-সমাপ্তি
লেখকঃ Jobrul Islam Habib
Story nutraly লেখা উচিত , কিন্তু গল্পে এত বেশি হিন্দু
বিদ্বেষ কেন ??