#পর্ব-১
#What_a_হাসবেন্ড
#Tamanna_Tabassum(লেখনীতে)
এইতো! এই একটু আগেই ভাবীরা আমাকে বাসরঘরে বসিয়ে দিয়ে চলে গেলো। আমি আমার প্ল্যান অনুযায়ী শাড়ী চেঞ্জ করে দরজার পেছনে দাঁড়িয়ে আছি, যেই না সে ঢুকবে সেই আমি ক্যারাটে দেখিয়ে তাকে গু ম করে দিবো। কিন্তু হায়! আধাঘন্টা যাবত দাঁড়িয়ে আছি তাও বান্দার দেখা নাই। মানে কী? সে কী বউ ছাড়া বাসর করবে নাকি? কই গেলো উনি?
আমার ধ্যান ভাঙ্গলো দরজার খটখট আওয়াজে। তাকিয়ে দেখলাম লক করা, উফ🙆♀️ ভেতর থেকে আটকায় বসে আছি। লক খুলে দরজার পেছনে দাঁড়ালাম। হা ম লা করতে গিয়েও থেমে গেলাম। হঠাৎ মাথায় শ য় তা নি বুদ্ধি আসলো,,,,
.
.
.
.
হাতে পায়ে প্রচন্ড ব্যাথা করছে, তাই চিংড়ি মাছের মতো করে শুয়ে আছি। কিছুক্ষণ পর লাইট বন্ধ হয়ে গেলো। ভাবলাম গ ন্ডা র টা র ফাজলামি শেষ তাই আমি পরবর্তী হা ম লার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করলাম। একটু নড়েচড়ে শুতেই পাশ থেকে শুনলাম সে বলছে, ” আবার কী ক্যারাটে দেখানোর ইচ্ছা জেগেছে? যদি ইচ্ছা করে তাহলে আমাকে বলো কেমন? আমিও দেখাবো ☺️।”.
ইচ্ছা তো করছে টেংরা মাছ খেয়ে ম রে যেতে, কিন্তু কী করার এই ব জ্জা তের জন্য নিজের সাধের জীবন তো আর ব লি দিতে পারি না তাই ঘুমিয়ে পড়লাম। মাঝরাতে ঘুম ভাঙ্গলে প্র তি শো ধ নিতে আমি ভুলবো না হুহ😏।
.
.
অনেক চেষ্টা করেও ঘুমাতে পারছি না। কনুই, হাটু, পিঠ প্রচুর ব্যাথা করছে৷ খাট থেকে নেমে লাগেজের কাছে গেলাম। মলমটা সাথে করে নিয়ে এসেছিলাম ভেবেছিলাম তাকে নাস্তানাবুদ করবো, এখন নিজেই যে নাস্তানাবুদ হয়ে বসে আছি। মনের দুঃখ কাকে বলি?
এখন আপাতত আমি আর কোনো ঝামেলা করছি না। মলম লাগিয়ে ঘুমিয়ে যাবো। সকালে এর ব্যবস্থা করবো। জায়গাগুলো কেমন ফুলে আছে, নিজের এতো যত্নের শরীরের এমন করুন অবস্থা দেখে কার না খারাপ লাগবে। অশ্রুসিক্ত নয়নে আমার সাধের হাটুর দিকে তাকিয়ে আছি, আর ভাবছি আজ থেকে প্রায় ৫ মাস আগের কথা……
.
.
আম্মু আব্বুকে নিয়ে দিন তো আমার বিন্দাস কাটছিলো। কিন্তু এই বিন্দাসে পানি ঢালতে একজন লাল দাতঁওয়ালা বেডি মানুষই যথেষ্ট ছিলো। মহিলা টা কে কোথায় থাকে আমি কিছুই জানি না কিন্তু মাঝেমধ্যেই আমাদের বাড়িতে আসতেন। কিন্তু সবথেকে বড় ব্যাপার হলো সে যতোবারই আসতো ততোবারই একটা করে ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ারের কথা আমার আম্মুর মাথায় ঢুকাতো। আর আমার ইন্টারন্যাশনাল ভাঙ্গা রেকর্ড আম্মু সেই কথা আহুনে নাচতে থাকতো। নিজে তো নাচতো সাথে আমাদেরও নাচাতো। নাচতে নাচতে মাঝেমধ্যে ঘরে আমার মাথায় আর আব্বুর মাথায় আ গু ন ধরে যেতো। আমাদের ভাষণ শুনে আম্মু শান্ত হতো।শান্ত হতে না হতেই আবার ওই মহিলা এসে হাজির হতো। কিন্তু প্রতিবারই আব্বুর জন্য আমি বেচেঁ যেতাম এইসব প্যারা থেকে। কিন্তু একদিন আম্মু কেঁদে দিলো। বুঝলাম না আমার আব্বুর যেন কী হলো সেও রাজি হয়ে গেলো, তবে শর্ত দিয়েছিলো ছেলে যদি পছন্দ হয় তবেই সব পাকাপোক্ত করবেন নাহলে আগের গুলোর মতো গেট আউট করে দিবে। আমি তো বেজায় খুশি। মনে মনে ধরেই রেখেছিলাম যে আব্বু ছেলেকে একদমই পছন্দ করবেন না, কেননা আগের ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারদের যদি না করতে পারে তোহ একটা ম্যাজিস্ট্রেট কে না করতে আব্বুর দু’বার ভাবা লাগবে না।কিন্তু আমাকে আব্বু অবাক করলো , নিরাশ করলো , আমার ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করলো।
আমি প্রতিরাতের মতো নিশ্চিতে ঘুমাচ্ছিলাম কিন্তু সেদিন হঠাৎ একটা খা রা প স্বপ্ন দেখলাম। স্বপ্নে দেখছিলাম একটা ছেলে হলুদ কালার শার্ট পড়ে আছে। চেহারা বোঝা যাচ্ছিলো না , আমি অনেক চেষ্টা করেও বান্দার চেহারা টা স্পষ্ট দেখতে পারলাম না। মনে হচ্ছিলো তার চেহারায় কেউ এনার্জি বাল্ব ঝুলিয়ে রেখেছে। গায়ে বড় করে সাইনবোর্ডের মতো করে লিখা আমি ম্যাজিস্ট্রেট! এরপর আরো কী কী জানি দেখলাম সেগুলো আমার মনে নাই, কিন্তু শেষের দিকে দেখলাম সে আমার ঠ্যাং ধরে আমাকে টেনে কোথায় যেন নিয়ে যাচ্ছে আর বলতেছে “আমি তোমাকে ছাড়া বাচঁবো না, চলো মুন চলো ”
তার এমন কথা বার্তায় আমি আশ্চর্য হলাম, বড় বড় চোখ করে বললাম, “আমাকে ছেড়ে দেন ভাই, আমাকে যেতে। আমি যাবো না। আমার ঠ্যাং ছাড়েন। ধুরো মিয়া ছাড়েন কচু ”
আমি এতোটাই বিরক্ত ছিলাম যে স্বপ্নের মধ্যেও তারে ধ ম ক দিচ্ছিলাম, আর সে আকুতিমিনতি করছিলো যেন আমি তার সাথে যাই। শেষে প্রচন্ড রাগ হয়ে যখন তার হাতে কামড় দিলাম তখন মিনে হলো আমি শূন্যে ভাসছি। বুঝার চেষ্টা করছিলাম যে কী হচ্ছে!
২/৩ সেকেন্ডের মধ্যে কী যেন হলো আমি ধপাস করে নিচে পড়ে গেলাম। আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। আশেপাশে তাকিয়ে দেখি আমি আমার রুমের মেঝেতে পড়ে আছি। হঠাৎ আমার পায়ের কথা মনে হলো। তারাতাড়ি পায়ের দিকে লাইট ধরলাম, দেখলাম নাহ সব ঠিকঠাকই আছে। হঠাৎ খুব পানির তৃষ্ণা পেলো, আব্বু আম্মুর রুমের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় যা শুনলাম তাতে আমার পায়ের তলার মাটি উধাও হয়ে গেলো। পানি খাওয়ার ইচ্ছা জনমকার মতো মিটে গেলো।
আমি শুনলাম আব্বু বলছিলো যে তার নাকি ছেলেকে অনেক মনে ধরেছে, এই ছেলের ভালো মতোন খোঁজ নিবে। আমাকে যদি পছন্দ করে তাহলে নাকি এই ম্যাজিস্ট্রেট ছেলেকে সে আর ছাড়বে না। মনম’রা হয়ে পানি না খেয়েই শুয়ে পরলাম। রাতে আমার আর ঘুমানো হলো না।
.
.
.
আব্বুকে যখন কোনো ভাবেই বোঝাতে পারছিলাম না তখন আমি আমার কচুরিপানা ফ্রেন্ডগুলোর কাছে সাহায্য চাইলাম। ওরা সাহায্য করতে রাজি হলো। আমরা সবাই প্রস্তুত, কার কী করতে হবে বুঝিয়ে দিলাম।
.
অবশেষে সেই দিনটিও আসলো। আজ আমাকে পাত্র পক্ষ দেখতে আসবে। আম্মু সকাল থেকে দৌড়াদৌড়ি করছে, আর চিল্লাচ্ছে। আমি কেন কাজ করি না। কেন বসে আছি। আজ কেন আমি ১০ টা বাজে ঘুম থেকে উঠছি ইত্যাদি ইত্যাদি।
বিকেলের দিকে আম্মু আমার হাতে একটা শাড়ী ধরিয়ে দিলো, বলল সুন্দর করে সেজেগুজে যেন বসে থাকি। আমি সেজেগুজে দাঁড়িয়ে রইলাম, কেননা আমার আম্মুর একটা কথাও ভালো লাগছিলো না। দাড়াতে বললে বসে পরি, বসতে বললে দাঁড়িয়ে থাকি। আম্মু সেই তখন থেকে বকবক করেই যাচ্ছে, একটা কথা বলতে বলতে রেগে যাচ্ছে, আবার শান্ত হয়ে কথা বলছে। মানে আমি বুঝলাম না এনার মনে হয় সেকেন্ডে সেকেন্ডে মুড সুইং হয়। হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠলো। আম্মু আমাকে বলল দরজা খুলতে, আমি হনহন করে দরজা খুলতে গেলাম। পেছন থেকে শুনলাম আম্মু বলছিলো, ” মাশাল্লাহ! কী সুন্দর লাগছে তোকে।”
.
দরজা খুলে থম মে রে দাঁড়িয়ে রইলাম। কেননা আম্মু বলছে দরজা খুলতে, দরজার ওপাশে যারা আছে তাদের ঢুকতে দিতে বলে নাই। আমাকে খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে থাকতে থেকে আম্মু এসে পিঠে দিলো এক ঘু ষি with a চোখ গরম। আমাকে সাইডে দাড় করিয়ে আম্মু দরজা পুরোটা খুলে দিলো। আমি সাইডে সঙ-এর মতো দাঁড়িয়ে রইলাম। আমাকে সঙের মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আম্মু আবারও চোখ গরম দিলো হাতে চিমটি দিলে বলল, “যা সালাম দে। আর ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকবি না লজ্জা লজ্জা ভাব করবি ”
.
আমি তাদের সামনে দাঁড়িয়ে মাথা নিচু সালাম দিলাম। আম্মু আমাকে লজ্জা পেতে বলছে, আমি কী আম্মুর কথা ফেলতে পারি? আমিও লজ্জা পেলাম। লজ্জার ভাব দেখাতে গিয়ে তাদের মাটিতে বসে পরলাম। মাথা নিচু রেখে বসে রইলাম। কেননা আম্মু আমাকে লজ্জা পেতে বলছে। আর আমি লজ্জাই পাচ্ছি। আসলেই! আমি কিন্তু সিরিয়াস 😐
চলবে..