#Unending_love♥️
লেখা- পূজা
পর্ব- ৬
।
।
তিয়া রুমে গিয়ে কাদছে। তিয়ার মা তুষার আর তিয়ার বাবাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
—- এটা কি করলে। খেতে বসতে না বসতেই এসব বলতে হলো তোমাদের। মেয়েটাকে একেবারে মেরে ফেলতে চাও না খাইয়ে। তিলে তিলে না মেরে বিষ এনে দাও খেয়ে একে বারে মরে যাক।
তিয়ার বাবা রেগে বললেন,
—- এসব কি বলছো তুমি।
—- ঠিকই বলেছি। মেয়েটা এমনিতেই ঠিক মতো খায় না ঘুমায় না। এখন খেতে বসেছে তা ও তোমাদের সহ্য হলো না। এসব কথা এখন না বললে কি হতো।
তিয়ার ভাবি এগিয়ে এসে বললো,
—- বাবা ছোট মুখে বড় কথা বলছি মাপ করে দিবেন। কিন্তু এটা না বলে পারছি না। আমি জানি না আপনার আর বর্ন ভাইয়ার বাবার মাঝে কি হয়েছিলো। কিন্তু আপনারা এখন যা করছেন এটা ঠিক করছেন না। আপনাদের শত্রুতার জন্য আপনাদের ছেলে মেয়ে যে কতো কষ্ট পাচ্ছে তা আপনারা দেখতে পারছে না।
তুষার রেগে বললো,
—- তোমাকে এসব দেখতে কে বলেছে। তুমি চুপ থাকবে। আমায বোনের বিষয়ে একদম কথা বলতে আসবে না। আমরা ওর ভালোটাই দেখবো। ওই ছেলেটা ভালো না।
তিয়ার মা তুষার কে একটা চর দিয়ে বললেন,
—- তুই কতো ভালো এটা দেখ। অন্যদের উপর আঙ্গুল তুলা তো তর সভাব হয়ে গেছে।
—- মা তুমি আমায় মারলে ওই ২টাকার ছেলের জন্য।
—- হ্যা মেরেছি দরকার হলে আরো মারবো। মেয়েটার কষ্ট তো তোমাদের চোখে পড়ে না। বরং আরো কষ্ট কিভাবে দেওয়া যায় তা দেখো।
তিয়ার বাবা শান্ত হয়ে ওদের কথা শুনছেন। এবার রেগে বললেন,
—- আমি আর যেনো এসব কথা এই বাড়িতে না শুনি। যদি কেউ বলে। তাকে এই বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হবে।
এটা বলেই উনি রুমে চলে যান। তুষার ও চলে যায় রুমে। তিয়ার মা আর ভাবি টাস করে চেয়ারে বসে পরেন। সব আশা শেষ হয়েগেলো।
।
।
তিয়া রুমে গিয়ে বালিশে মুখ গুছে শুধু কাদছে। ফোন বের করে বর্নকে ফোন দিলো। বর্ন ফোন রিসিভ করছে না। তিন বার দিলো। চারবারের সময় রিসিভ করলো। তিয়া বললো,
—- এতো সময় কোথায় ছিলে।
—- ফোন রুমে ছিলো আমি খেতে গেছিলাম। তোমার কষ্ঠ এমন শুনাচ্ছে কেনো তুমি কি কাদছিলে।
—- ভাইয়া আমার জন্য ছেলে দেখেছে।
এই কথাটা শুনে বর্নর বুকে চিনচিনে ব্যাথা অনুভব করে। যদি সত্যি ওরা তিয়ার বিয়ে দিয়ে দেয়। তাহলে ওর কি হবে। এতো দিন মনকে অনেকভাবে মানালে ও এখন মানাতে পারছে না। এখন মন শুধু তিয়াকেই চায়। বর্নকে চুপ থাকতে দেখে তিয়া জোরেই কেদে দিলো। আর কেদে কেদে বললো,
—- তুমি ছাড়া অন্য কারো সাথে আমার বিয়ে হলে আমি মরে যাবো।
বর্ন শান্ত গলায় বললো,
—- ছেলে দেখছে মানে এই না তোমার বিয়ে হয়ে গেছে। চিন্তা করো না। বিয়ে তোমার আমার সাথেই হবে।
—- কিভাবে। প্লিজ যা করার তারাতারি করো আমি আর পারছি না। খুব কষ্ট হয়।
—- তার আগে কান্না বন্ধ করো। আমি দেখছি কি করা যায়।
।
।
আয়ান ওর মা বাবা আর ছোট ভাই আবির ডাইনিং টেবিলে বসে আছে। আয়ান কি বলে শুরু করবে বুঝতে পারছে না যদি ওর বাবা কারন জিজ্ঞেস করে তাহলে এসব কিভাবে বললে। শেষে বলেই ফেললো,
—- বাবা তুমি বর্নর বাবাকে ছোট বেলা থেকে চিনো। তাইনা।
—- হুম। কেনো?
—- মি.তিয়াশ আহম্মেদ কে চিনো?
—- নামটা চিনা চিনা লাগের। উনার বাসা কোথায়? এখানেই থাকে?
—- না। গুলশান।
আয়ানের বাবা অনেকক্ষণ ভাবলেন তারপর বললেন,
—- হুম মনে পরেছে। বর্নর বাবা আর তিয়াশ তো একসাথেই পরতো।
—- হুম। শুনছি উনারা নাকি বেষ্টফ্রেন্ড ছিলেন।
—- হুম ছিলেন তো। আমি ওদের এক বছরের সিনিয়র ছিলাম।।তারপরো ওদের সাথে আমার খুব ভালো রিলেশন ছিলো।
—- এখন তো ওরা একজন আরেক জনকে সহ্যই করতে পারে না। তুমি কি জানো ওদের মাঝে কি হয়েছিলো।
—- এসব আমি কিভাবে জানবো। তবে শুনেছি। খুব বড় একটা ঝামেলা হয়েছিলো। শুনেছি ওরা মারামারি পর্যন্ত করেছিলো কলেজে। কিন্তু কেনো এটা শুনি নি।
—- কে এসব জানবে তুমি বলতে পারো।
—- তদের মাহিমচাচা আছে না। ও বলতে পারবে। ওরা এক সাথে এক বেচেই পরতো।
—- থ্যাংক ইউ বাবা।
—- তুই এসব জেনে কি করবি।
—- আমি না বর্ন জানতে বলেছে। কেনো বলেছে। এটা তোমায় পরে বললো।
—- আচ্ছা।
আয়ান খাওয়া শেষ করে রুমে গিয়েই বর্নকে ফোন দিলো। ফোন ওয়েটিং এ দেখাচ্ছে। আয়ান বুঝতে পারছে তিয়ার সাথে কথা বলছে।
বর্ন আয়ানের কল দেখে তিয়াকে বললো,।
—- তোমার সাথে পরে কথা বলছি। আয়ান কল দিতেছে। হয়তো কোনো দরকার। তুমি শুয়ে পরো।
—- ওকে। গুড নাইট।
বর্ন তিয়ার কল কেটে আয়ানকে কল বেক করলো। আয়ান ফোন রিসিভ করেই বললো,
—- এটা গুড নিউজ আছে।
—- কি?
—- বাবার কাছ থেকে অনেক কিছু জেনেছি। বাকিটা মাহিম আংকেল এর কাছ থেকে জানবো।
—- কি কি জেনেছিস।
আয়ার ওর বাবার সাথে যা যা কথা বলেছে সব বললো।
সব শুনে বর্ন বললো,
—– যাক একটা আশার আলো পাওয়া গেছে। কাল তো আমার অফিস আছে। বিকেলে যাবো আংকেল এর কাছে।
—- ওকে। গুড নাইট।
—- গুড নাইট।
বর্ন ফোন কেটে একটা শান্তির নিশ্বাস ফেললো। এখন মনে হচ্ছে কিছু একটা করতে পারবে তিয়াকে পাওয়ার জন্য আজ একটা শান্তির ঘুম হবে।
বর্ন আর কিছু না ভেবে ঘুমিয়ে পরলো। কাল অফিস আছে। টাইম মতো যেথে হবে।
।
।
পরের দিন যথারিতি ঘুম থেকে উঠে বর্ন অফিস আর তিয়া ভার্সিটি চলে গেলো।
বিকেলে বর্ন অফিস শেষ করে আর বাসায় ফিরলো না। আয়ানের অফিসে চলে গেলো ওখান থেকে আয়ানকে ড্রপ করে মাহিম আংকেল এর কাছে চলে গেলো দুজন।
এখন ওরা বসে আছে মাহিম আংকেল এর ড্রয়িংরুমে। কিছুক্ষণ পর উনি আসলেন। আর বললেন,
—- তোমরা এখানে কেনো। কোনো দরকার।
বর্ন বললো,
—- খুব বেশি দরকার আংকেল। প্লিজ আমাদের হেল্প করো।
—- বল কি হেল্প করবো তদের।
—- আমার বাবা আর মি.তিয়াশ আহম্মেদ কে তো চিনো।
—- চিনবো না কেনো। ওরা তো আমার ফ্রেন্ডই ছিলো।
—- তাহলে এটা বলো ওদের মধ্যে এমন কি হয়েছে যার জন্য এখন ওরা একজন অন্য জনকে সহ্যই করতে পারে না।
—- এসব তদের কি ভাবে বললো।
আয়ান বললো,
—- প্লিজ আংকেল বলে ফেলো। খুব দরকার।
—- কি হয়েছে। আমাকে বল।
আয়ার বর্ন আর তিয়ার পুরো ব্যাপারটা বললো।
তা শুনে উনি বললেন,
—- তাহলে তো তদের বলতেই হয়। মনে হয় না কোনো কাজ হবে।
বর্ন বললো,
—- প্লিজ বলো। কাজ হয় কিনা এটা পরে দেখবো।
।
চলবে?