#Unending_love♥️
লেখা- পূজা
পর্ব- ৩
সবাই গাড়িতে উঠে বসলো। তিনটা চান্দের গাড়ি। বর্ন আর আয়ান একটা গ্রুপ এর সাথে এসেছিলো। একটা সিট খালি থাকার কারনে তিয়াকে ওরা সাথে নিয়ে যেথে পারছে। তিয়া আর আয়ানের মাঝখানে বর্ন। হঠাৎ তিয়া বর্নকে বললো,,
—- আপনি নাকি মেয়েদের সাথে কথা বলতে পছন্দ করেন না।
তিয়ার কথা শুনে বর্ন আয়ানের দিকে তাকালো। আয়ান কানে হেডফোন দিয়ে গান শুনছে। বর্ন তিয়াকে বললো,,
—- এটা নিশ্চই আয়ান বলেছে।
—- হুম। কেনো। সত্যি না।
—- আমার মেয়েদের বেশি পছন্দ না। সবসময় গায়ে পরে কথা বলে।
—- কিইইই? আমি আপনার সাথে গায়ে পরে কথা বলেছি। তো কথা বলছিলেন কেনো আমার সাথে। আমি তো প্রথমে আপনার সাথে কথা বলি নি। আপনার সাথে কথা বলার জন্যই আমি আমার ফ্রেন্ডদের হারিয়ে ফেলেছি।
অনেকটা রেগে কথাটা বললো তিয়া।
—- আরেএএ আমি আপনাকে বলি নি। আপনি তো অনেক ছোট। আমি আমার সমবয়সীদের কথা বলেছি।
—- ও। তো আপনি আমাকে আপনি করে বলছেন কেনো। আমি আপনার থেকে তো অনেক ছোট।
—- আমি পারমিশন না নিয়ে কাউকে তুমি বলি না।
—- ও। তাই। ওকে। আমি পারমিশন দিলাম। আমাকে তুমি করেই বলতে পারেন।
—- ওকে।
ওরা কথা বলতে বলতে খাগড়াছড়ি পৌছে যায়। সেখানের একটা হোটেলে ওরা লাঞ্চ করে নিলো। বর্ন আর তিয়া ড্রেস ও চেন্জ করে নিলো হোটেলে। তারপর তারা রওয়ানা দিলো রিসাং ঝর্নার দিকে। বৃষ্টি এসে যাওয়ার কারনে বেশি দুর যেথে পারে নি গাড়ি। গাড়ি থেকে নেমে হেটেই যাওয়া শুরু করে ঝর্নার দিকে। বৃষ্টির কারনে রাস্তার অবস্থা খুব একটা ভালো না। অনেক নিচে নামতে হবে তাদের। তিয়া তো ভয় পাচ্ছে পিছলে না পরে যায়। বর্ন ব্যাপারটা বুঝতে পারে তাই নিজের হাত এগিয়ে দেয় তিয়ার দিকে। তিয়াও হাতটা খুব শক্ত করে ধরে। তারপর আয়ান তিয়া বর্ন আর বাকিরা নিচে নামতে শুরু করলো। অবশেষে পৌছে যায় ঝর্নার কাছে। বর্ন তিয়া এখানেও সায়রা আর বাকিদের খুজেছে পায়নি। তারপর তারা ঝর্নার কাছে গেলো। তিয়া ঝর্না দেখেই ওখানে যাওয়ার জন্য পা বারায়। বৃষ্টির কারনে জায়গাটা পিছলে গেছে। ভালোভাবে হাটা ও যাচ্ছে না। আর তিয়া যেভাবে যাচ্ছে পরে গিয়ে হাত পা ভাঙ্গবে। তাই আয়ান বর্নকে বললো,,
—- এই কারনে আমি মেয়ে মানুষ নিয়ে কোথাও যাওয়া পছন্দ করি না। ওরা লাফালাফি একটু বেশিই করে। মেয়েটা পরে গিয়ে হাত পা ভাঙ্গবে। যা গিয়ে দেখ।
—- তুই যা না। সব কিছুতে আমাকে পাটাস কেনো?
—- আমি ওসবে নেই। তুই মেয়েটার রেসপন্সিবিলিটি নিয়েছিস। আমি ও সাথে আছি তর যা।
তো বর্ন বাধ্য হয়ে গেলো তিয়া পিছনে। পিছন থেকেই গিয়ে হাতটা ধরে তিয়াকে আটকালো। আর বললো,,
—- এই মেয়ে তুমি দেখতে পাচ্ছ না। জায়গাটা কতটা পিছলা। পরলে কি হবে তা ভেবে দেখেছো।
—- না। হাত ছাড়ুন। আমি ঝর্নায় বিজবো।
—- যাওয়াটা রিস্কি হয়ে যাবে।
—- হোক। তবু ও আমি যাবো।
বর্ন মনে মনে ভাবলো। পিচ্ছি মেয়েদের নিয়ে এই এক প্রবলেম। যা বলবে তাই করবে। কারো কথা শুনবে না। তবে মুখে বললো,,
—- ঠিক আছে। আমি নিয়ে যাচ্ছি। আমার হাত ছারবে না কিন্তু।
—- ওকে।
বর্ন বড় দেখে একটা লাঠি নিলো। এক হাতে লাঠি। অন্য হাতে তিয়ার হাত। লাঠির উপর ভর করেই বর্ন নিয়ে গেলো তিয়াকে ঝর্নার কাছে। তিয়া ঝর্নার নিচে গিয়ে বর্নর এক হাত ধরেই লাফাচ্ছে। আর বর্ন তিয়াকে দেখছে আর ভাবছে,, মেয়েটা পাগল নাকি এভাবে কেউ লাফায়। ওর সাথে সাথে আমাকে নিয়ে ও পরবে।
—- অনেক হয়েছে। এবার আসো।
—- প্লিজ। আর একটু। অনেক মজা লাগছে।
—- না। দেরি হয়ে যাবে।
বর্ন তিয়ার হাত ধরে ঠান দেয়। তিয়া গিয়ে পরে বর্নর বুকে। তিয়া বর্নর হার্টবিট শুনতে পাচ্ছে কতো ফাস্ট চলছে। হঠাৎ তিয়া নিজের মাথাটা বর্নর বুকে রাখলো হার্টবিট শুনার জন্য। বর্ন হা করে তিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। আর ভাবছে মেয়েটা এসব কি করছে। দুর থেকে আয়ান চিৎকার করে বললো,,,
—- বর্ন দশ মিনিটের ভেতর ওরা চলে যাবে তারাতারি আয়।
আয়ানের চিৎকারে তিয়ার হুশ এলো। ও মনে মনে ভাবছে,, এসব আমি কি করছিলাম। ছিঃ!! না জানি উনি কি ভাবছেন। তিয়া অনেকটা লজ্জা ও পেলো। বর্ন তাকিয়ে দেখে তিয়ার নাক আর দু গাল লাল হয়ে গেছে। বর্ন মনে মনে ভাবছে,, মেয়েটা লজ্জা পাচ্ছে নাকি। কিন্তু কেনো। মুখে বললো,,
—- চলো।
—- হুম।
তারপর তারা এখান থেকে চলে এলো। একটা হোটেলে গেলো সবাই যারা যারা ভিজেছেন সবাই ড্রেস চেন্জ করে নিলো। রিসাং ঝর্না দেখে তারা গেলো আলুটিলা রহস্য গুহা দেখতে। তখন বাজে সারে পাচঁটা। ছয়টার পরে গুহা বন্ধ হয়ে যায়। সবাই আলুটিলা গুহার সামনে চলে আসে। বাইরে থেকে আয়ান তিনটে মশাল কিনে আনলো। কারন গুহার ভেতর অনেক অন্ধকার। একটা মশাল নিজের কাছে রাখলো। একটা তিয়া আর অন্যটা বর্নকে দিলো। টিকিট কেটে এর ভিতরে ডুকতে হয়। আয়ান টিকিট ও কেটে নেয়। তারপর তারা ভেতরে ডুকলো। তিয়া এক হাত দিয়ে বর্নর হাতটা ধরে রেখেছে অন্য হাত দেয়ে মশাল। অনেকটা ভিতরে গিয়ে বর্ন তিয়াকে জিজ্ঞেস করলো,,
—- এখন কি মনে হচ্ছে।
—- আমার?? মনে হচ্ছে ইন্ডিয়ানা জোন্সের মতো আমিও অংশ নিয়েছি কোনো রোমাঞ্চকর অভিযানে।
—- এক্সজাক্টলি।
—- ভেতরে এতো পানি আর পাথর ঠিকভাবে হাটতেই পারছি না।
—- এগুলার জন্যই তো মনে হচ্ছে। সাবধানে দেখে হাটো।
—- হুম।
মাত্র পনেরো মিনিটের অভিযান। আলুটিলা রহস্য গুহা ভেতরে অন্ধকার থাকলে ও। ভেতরে গেলে অনেক ভালো লাগে। তাই তো সবাই খাগড়াছড়ি এলে এখানে যাওয়া মিস করে না। মশাল কিনে অভিযান শুরু করে।
আলুটিলা গুহা থেকে বেরিয়ে আসে ছয়টা বাজার আগেই। এখনো কিছুটা আলো রয়ে গেছে। তাই তারা টিলার উপর যায় যেখান থেকে খাগড়াছড়ির পুরো ভিউ দেখা যায়।
সব দেখা শেষ করে তারা একটা হোটেলে যায়। রাত হয়ে গেছে। আর কিছুই দেখার নেই। দশটার আগে বাস ও আসবে না। বর্ন আর আয়ানের প্লেন ছিলো। খাগড়াছড়ি থেকে সোজা বান্দরবন যাবে। কিন্তু তিয়ার জন্য এখন ওদের ঢাকা যেথে হবে।
হোটেলে গিয়ে হালকা নাস্তা করে একটু রেষ্ট নেয়। দশটা বেজে গেছে। বাস এসে গেছে। তাই সবাই বাসে উঠে পরে। বাসে উঠে বর্ন তিয়াকে বললো,,
—- তুমি এই সিটে বসো। কোনো মেয়ে এসে বসবে তোমার পাশে। আমি পিছনে আয়ানের সাথে আছি।
—- আপনি এখানে বসেন না। যদি কোনো মেয়ে না বসে ছেলে বসে। আমার ভয় করছে।
—- আরেএ গাধা এখানে ভয় পাওয়ার কি আছে। আমরা আছি না পিছনে।
—- না আপনি এখানে বসেন।
—- ওকে।
আয়ান আমি সামনে বসছি। ও একা বসতে ভয় পাচ্ছে।
—- ওকে।
বর্ন তিয়ার পাশে বসলো। তিয়ার বেগটা উপরে রাখলো। কানে হেডফোন লাগিয়ে চুপচাপ বসে আছে। কিছুক্ষণ পর গাড়ি ছেড়ে দিলো। তিয়া সিটে হেলান দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করছে। বর্ন বাসে ঘুমাতে পারে না। ওর তো বড় বিছানা লাগে। হাত পা ছড়িয়ে ঘুমায়। তাই টাইম পাস করার জন্য গান শুনছে। পাশে তাকিয়ে দেখে তিয়া ঘুমিয়ে গেছে সিটে হেলান দিয়ে। কিছুক্ষণ তিয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। আর ভাবলো,,
—- মেয়েটা দেখতে খুব মিষ্টি। তবে বোকা ও। মানুষকে খুব সহজে বিশ্বাস করে নেয়। পিচ্ছি তো তাই। আমরা দুটা ছেলের সাথে আসতে রাজি হয়ে গেলো ভাবলো না ওর সুযোগ ও নিতে পারি। অবশ্য আর কোনো রাস্তা ও ছিলো না ওর কাছে।
তিয়ার কিছু চুল ওর মুখে এসে পরলো। বর্ন ওর হাত দিয়ে চুলগুলা সরিয়ে দিলো। আর তিয়ার মাথাটা ওর কাধে রাখলো। জানালায় মাথা লেগে ব্যাথা পেতে পারে তাই।
তারপর বর্ন ও সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে গান শুনতে শুরু করলো।
রাত তিনটে। বাস তার নিজের গতিতে চলছে। হঠাৎ তিয়ার ঘুম ভেঙ্গে যায়। ও তাকিয়ে দেখে বর্নর কাদে মাথা রেখে শুয়ে আছে। সাথে সাথে মাথা তুলে নিলো। আর বর্নর দিকে তাকিয়ে দেখলো ঘুমিয়ে আছে। বর্ন ঘুমায় নি। জাস্ট চোখ বন্ধ করে রাখছে। হালকা আলোয় বর্নর মুখ স্পষ্ট দেখতে পারছে তিয়া। মনে মনে ভাবছে,,
—- ছেলেদের চেহারা ও এতো মায়াবী হয়। ঘুমালে উনাকে কত্তো কিউট লাগে। ঠোটের মাঝে তিল ও আছে কি সুন্দর গোলাপি ঠোট। ইশশশশ,, আমি এভাবে উনার দিকে তাকিয়ে আছি কেনো। কখনো তো কোনো ছেলের দিকে তাকাই নি। এতো ভালো ও লাগেনি কাউকে। তাহলে…….
বর্নর মনে হচ্ছে কেউ ওর দিকে তাকিয়ে আছে। তাই ও চোখ খুললো। চোখ খুলে দেখে তিয়া ওর দিকে তাকিয়ে আছে। বর্নর তাকানো দেখে তিয়া তারাতারি নিজের চোখ সরিয়ে নিলো। আর অনেক লজ্জা ও পেলো। মনে মনে ভাবলো,,”না জানি উনি কি ভাবছেন।”
—- তুমি এইভাবে তাকিয়ে ছিলে কেনো।
—- না। মানে।। আমি তাকাই নি।
—- তারমানে কি আমি ভুল দেখছিলাম।
—- হয়তো।
—- তুমি হয়তো জানো না। আমি কখনো ভুল দেখি না। এখন মিথ্যে কথা না বলে বলো। কেনো এভাবে তাকিয়ে ছিলে।
—- আপনাকে দেখছিলাম।
মুখ ফসকে বলে ফেলে। এটা বলার সাথে সাথে মুখে হাত দিয়ে দেয়। “ইশশশ এসব কি বলেছি”
বর্ন তিয়ার কথা শুনে হা করে তিয়ার দিকে তাকালো আর বললো,,,
—- কিইই??
—- আসলে আপনার গালে একটি মশা বসেছিলো। ওটাই দেখছিলাম।
—- রিয়েলি।
—- হুম।
—- বাট আমার কাছে তো মনে হয়নি। আমার গালে মশা বসেছে।
—- আপনার কাছে কিভাবে মনে হবে আপনি তো ঘুমিয়ে ছিলেন।
—- আমি ঘুমিয়ে ছিলাম না। জাস্ট চোখ বন্ধ করে ছিলাম। আমি বাসে ঘুমাতে পারি না। আমার বিছানা লাগে।
তিয়া এখন কি বলবে বুঝতে পারছে না। এইভাবে ধরা খেয়ে গেলো। কেনো যে দেখতে গেলাম। তিয়া কিছু বলছে না দেখে বর্ন আবার বললো,,,
— আচ্ছা এটা বাদ দাও। তোমার ফ্রেন্ডরা তো নিশ্চই তোমাকে খুজছে। তাদের একবার ইনফরম করবে না।
—- হ্যা তাই তো। কিভাবে ওদের জানাবো। কারো নাম্বার মনে নেই। শুধু সায়রার নাম্বার মনে আছে।
—- তাহলে সায়রাকেই ফোন দাও। এই নাও ফোন। দেখো এখন পাও কিনা।
—- ওকে।
তিয়া বর্নর ফোন দিয়ে সায়রাকে কল করলো। সাথে সাথে কল রিসিভ হলো।
—- হ্যালো সায়রা আমি তিয়া বলছি।
—- তিয়া তুই কোথায়। জানিস কোথায় কোথায় না তকে খুজেছি। আমি আর স্যার তো সাজেক থেকে গেছি। শুধু তকে খুজার জন্য।
—- কি? তরা চলে আয়। আমি ঢাকা যাচ্ছি। তদের হারানোর পর আমি তকে ফোন করেছিলাম বাট তুই ফোন ধরছ নি। আয়ানভাইয়া আর উনার ফ্রেন্ড আমাকে সাথে নিয়ে যাচ্ছে।
—- কিইই?? কাল যে ছেলেটার সাথে কথা বলেছিলাম। ও।
—- হুম।
—- থ্যাংক গড। আমি খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম। আমি তো ভাবছি তুই অন্য গাড়িতে আছিস তাই আর কোনো খুজ নেই নি। খাগড়াছড়ি পৌছে তকে খুজে পাই নি। তারপর আমি রিয়া আর স্যার আবার সাজেক বেক করি সব জায়গা খুজি। তর কাছে ফোন ও নেই যে কন্টাক করবো।
—- তুই এখন কোথায়।
—- আলো রিসোর্ট এ। স্যার তো খুব ভয়ে আছেন। তর ফ্যামিলিকে কি জবাব দেবেন।
—- তুই স্যারকে সব বল। আর কালই চলে আয়।
—- ওকে। এখন রাখছি। সাডধানে যাবি। আর গিয়ে ফোন দিস।
—- ওকে। তুইও সাবধানে। আসিস।
ফোন কেটে একটা স্বস্থির নিশ্বাস ফেললো তিয়া। বর্নর দিকে তাকিয়ে দেখে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।
—- কি?
—- কিছু না। কি হয়েছে।
ফোনে যা যা কথা হয়েছে সব বর্নকে বললো।
—- কি ইরেসপন্সিবল। একজন স্টুডেন্ট গাড়িতে নেই তা তারা খেয়ালই করে নি। আমরা না থাকলে তো। তুমি সিয়র হারিয়ে যেথে। এতো ছোট মেয়ে কিই বা বুঝবে।
—- ও হ্যালো। বার বার ছোট বলেন কেনো। আমি যথেষ্ট বড়। আর সব বুঝি ও। আপনারা না থাকলে প্রথমে একটু ভয় পেতাম এটা ঠিক। বাট মাথা ঠান্ডা করে কোনো উপায় ঠিক বের করতাম।
—- তা আমি বুঝতে পারছি। কাল তো বাসায় ফিরে যাবে। গিয়েই আমাদের ভুলে যাবে তাইনা।
—- ভুলবো কেনো। আপনারা আমার এতো হেল্প করেছেন। আপনাদের কি ভুলতে পারি।
—- আর তো দেখা হবে না। কিছু দিন পর ঠিক ভুলে যাবে। দেখা নেই কথা নেই কিভাবে মনে রাখবে।
বর্নর এই কথায় তিয়ার অনেক খারাপ লাগলো। একদিনেই বর্নকে অনেকটা ভালো লেগে গেছে। কখনো কোনো ছেলেকে এতোটা ভালো লাগেনি।
—- আপনার সাথে আর কখনো দেখা হবে না??
—- হয়তো না। আবার হতেও পারে। রাস্তায়। আয়ানের সাথে ওদিকে গেলে। আমি তো বনানী থাকি না।
—- ওহ।।
তিয়া বাইরের দিকে তাকালো জানালাটা খুলে। বাতাসে তিয়ার চুল উরে বর্নর মুখে এসে লাগলো। বর্ন চুখ গুলো সরালো না। খুব ভালো লাগছে। এক অন্যরকম ফিলিংস। বর্ন মনে মনে ভাবলো,,
—- আমার এরকম লাগছে কেনো? এতো ভালো কেনো লাগছে। এমন তো কখনো হয়নি। এই পিচ্ছি মেয়েটা তো দেখছি আমায় পাগল করে দেবে। বর্ন তুই যা ভাবছিস তা মাথা থেকে জেরে ফেলে দে। আর ওই মেয়ের দিকে তাকাবি না। ঘায়েল করে দিছে তকে। মন চুরি হতে দিস না।😖😖
—- আপনি গান গাইতে পারেন??
—- এটা কেনা পারে। কেনো?
—- আমি তো পারি না। একটা গান শুনাবেন।
—- তোমার মাথা ঠিক আছে। সবাই ঘুমিয়ে আছে। আর তুমি বলছো। গান শুনাবো।
—- তো আপনার গান শুনবো কি করে।
—- অন্য একদিন।
—- আর দেখা হবে??
—- দেখা হলে।
—- যদি না হয় আর।
—- হা হলে নাই।
তিয়া মন খারাপ করে আবার বাইরের দিকে তাকালো। বর্ন এসবে নজর দিলো না। ও আবার চোখ বন্ধ করে সিটে হেলান দিয়ে গান শুনতে শুরু করলো। তিয়া তাকিয়ে দেখে বর্ন চোখ বন্ধ করে আছে। তাই ও কিছুক্ষণ বর্নর দিকে তাকিয়ে তাকলো। কখন ঘুমিয়ে গেছে বুঝতেই পারে নি।
সকাল সারে ছয়টায় বর্নর ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো। ওরা ঢাকা পৌছে গেছে।
—- কি হয়েছে।
—- ঢাকা এসে গেছি। গাড়ি থেকে নামো।
—- ওহ। আচ্ছা।
তিয়া ব্যাগ নিয়ে গাড়ি থেকে নামলো।
আয়ান বর্নর কাছে এসে বললো,,,
—- তুই মেয়েটাকে বাসায় পৌছে দিস। আমি একটু পর যাচ্ছি।
—- কেনো? তুই এখন কোথায় যাবি।
—- আমি ফোনে তকে সব বললো। এখন যা তুই।
—- ওকে।
বর্ন তিয়ার কাছে গেলো একটা সিএনজি নিয়ে।
—- গাড়িতে উঠো।
—- আয়ানভাইয়া কোথায়।
—- ওর কি একটা কাজ আছে। পরে আসবে। আমি তোমায় পৌছে দেবো বাসায়। এসো।
তারপর তিয়া সিএনজিতে উঠলো। বর্ন পাশে বসলো। আটটায় তিয়ার বাসার সামনে গাড়ি দার করালো। বর্ন আর তিয়া গাড়ি থেকে নামলো।
—- ওকে। যাও বাসায় ভালো থেকো।
—- আপনিও।
তিয়া চলে গেলো বাসার ভিতর বর্ন দারিয়ে দারিয়ে তিয়ার যাওয়া দেখলো। কিছুক্ষণ পর গাড়িতে উঠে সেও চলে গেলো। তিয়া গিয়ে কলিংবেল বাজালো। তিয়ার মা দরজা খুলে দিলেন।
—- তুই!!! আয় ভেতরে। কেমন আছিস?
—- ভালো মা। তোমরা কেমন আছো?
—- বাড়ির মেয়ে বাইরে। যোগাযোগ ও নেই কিভাবে ভালো থাকবো।
—- বাবা ভাইয়া। ওরা কোথায়।
—- ঘুমাচ্ছে।
—- ওকে। আমি যাই রুমে।
—- আচ্চা।
তিয়া ওর রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে বিছানায় বসলো। আজ ওর আফসোস হচ্ছে একটা ফোন না থাকায়। ফোন থাকলে তো বর্নর সাথে কথা বলতে পারতো। তিয়া ওর মাকে বললো সায়রাকে ফোন দিয়ে জানিয়ে দিতে যে ও বাসায় পৌছে গেছে। আর বর্নর কথা ভাবতে ভাবতে তিয়া একসময় ঘুমিয়ে পরে।
এদিকে বর্নকে দেখে ওর মা অনেক অবাক হয়।
—- তর না আরো পনেরোদিন পর বাসায় ফেরার কথা।
—- একটা প্রবলেম এর জন্য আসতে হলো।
—- কিসের প্রবলেম।
—- পরে বলি। খুব ঘুম পাচ্ছে। তুমি তো জানো আমি বাসে ঘুমাতে পারি না।
—- ওকে। তুই ফ্রেস হয়ে আয়। আমি হালকা নাস্তা রেডি করছি। খেয়ে ঘুমিয়ে পরবি।
—- ওকে।
বর্ন গিয়ে ফ্রেস হয়ে নিলো। বর্নর মা হালকা নাস্তা এনে ওকে দিলো। বর্ন খেয়ে ঘুমিয়ে পরলো।
।
চলবে?🙄