তিনি এবং ও !
১.
-আরে তুমি নাজমুলের ছেলে নাকি?রশিদ সাহেব নিদ্রের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে কথাটি বললেন।
নিদ্র একটু হেসে তার বাবার বয়সী লোকটার দিকে তাকিয়ে রইলো। তার বাবার বাল্যকালের বন্ধু রশিদ সাহেব বেশ হাসিখুশি মেজাজের।
নিদ্র কোনোভাবেই বুঝতে পারছেনা এই মানুষ টা কীভাবে তার বাবার বন্ধু হলো। তার বাবার সাথে রশিদ সাহেবের কোনো মিলই নেই, বরং অমিলে পরিপূর্ণ।
রশিদ সাহেব নিদ্রের হাত ধরে বললেন
– বাবা তোমার নাম টা বলো? খুব জানতে ইচ্ছে করছে।
রশিদ সাহেব নিদ্রের নাম থেকে শুরু করে সবকিছুই জানেন। তারপরও সে আলাপ জমানোর জন্য প্রশ্নটা করলেন। ২১-২১ বছরের যুবকের সাথে গল্প করার মজাই আলাদা। এদের রক্ত টগবগ করে ফুটছে। বুকের ছাতিতে হাজারো স্বপ্ন জমে থাকে। সেই স্বপ্নগুলো জানার প্রবল ইচ্ছা।
নিদ্র বলল
– নিদ্র।
রশিদ সাহেব বললেন
– তা বাবা তোমার প্লেনে কাটলো কেমন?
নিদ্র একটু চিন্তিত হয়ে পরলো। সে প্রশ্নটা ধরতে পারছেনা। প্রশ্নের উত্তর দিবে কীভাবে?
নিদ্রের চুপ থাকা দেখে রশিদ সাহেব বললেন
– তো এখন যাওয়া যাক। ঢাকাশহর বুজেছো বাবা।
রশিদ সাহেব নিদ্রের হাত ধরে এয়ারপোর্ট এর বাইরে পার্কিং করা তার গাড়ির দিকে নিয়ে এলেন।
নিদ্রের মনে হচ্ছে সে এখনো ছোট্ট বালক। একটু অসাবধানতায় সে পথ হারিয়ে ফেলবে। অবশ্য বাংলাদেশে এটাই তার প্রথম আসা। কিন্তু তাতে ভয় নেই, গুগোল ম্যাপ আছে।
রশিদ সাহেব গাড়ির ড্রাইভার কে বললেন,নিদ্রের ব্যাগপত্র গাড়িতে তুলতে। নিদ্রকে গাড়ির পেছনের সিটে বসিয়ে সে ড্রাইভারের পাশের সিটে বসলো।
নিদ্র তার ঘাড়ে ঝোলানো ব্যাগ টাকে তার পাশে রেখে চোখ বুজে বসে রইলো। বাবা তাকে কেনো এখানে পাঠালেন, সেটা ভেবে বের করা দরকার।
প্রায় দেড় ঘণ্টা যাবত জ্যামে বসে আছে। খুবই বিরক্ত লাগছে তার।বাংলাদেশে এখন শীতকাল চলছে। তাই সে সোয়েটার পড়ে এসেছে কিন্তু এখানে এসে তার উল্টো ব্যাপার টা ঘটলো। ঠাণ্ডা তো দূরে থাক গরম পরেছে, সে খুব ঘামছেও।
রশিদ সাহেব বললেন
– বুঝছো বাবা এই হইলো ঢাকা। যেখানেই যাও জ্যাম পিছ লেগেই থাকে।
নিদ্র বলল
– আমি যতদূর জানি আমাদের গন্তব্যে পৌছাতে ৫ ঘণ্টা লাগবে।
রশিদ সাহেব হেসে বললেন
– সাথে জ্যামের হিসাবটা করছিলা?
– না, বাবা তো বলে নাই এরকম কিছু।
– আমি জানতাম ওই ব্যাটা কিছুই বলবে না। বাবা তুমি কিছু খাবে?
– চাচা খুব খিদে পেয়েছে কিন্তু ফ্রেশ না হয়ে কীভাবে খাই?
– দেখো বাবা এখন দুপুর ৩ টা বাজে। বাসায় পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে।
– আচ্ছা, হালকা খাবার থাকলে দিন।
রাত ৮ টায় নিদ্র আর রশিদ সাহেব গন্তব্যে পৌঁছালেন।
গাড়ি থেকে নেমে বিশাল উঠানের একপাশের বাড়িটার দিকে তাকিয়ে নিদ্রের বেশ ভালো লাগলো। বাড়িটা তার পছন্দ হয়েছে, এখানে থাকতে তার কোনো সমস্যা নেই। সোডিয়াম আলোতে পুরো পরিবেশ টা তার ভালো লাগছে।
রশিদ সাহেব নিদ্রকে হাত ধরে নিয়ে গেলেন বাড়ির মধ্যে।
বাড়ির মধ্যে ঢুকতে বিশাল ড্রয়িংরুম এ সোফায় রশিদ সাহেব বললেন
– বাবা, তুমি এখানে যত দিন ইচ্ছা থাকবে।
১২-১৩ বছরের একটা মেয়ে এসে রশিদ সাহেবকে বলল
– চাচা, আপামনি তো….
রশিদ সাহেব বললেন
– তুই ওকে ওর রুমটা দেখিয়ে দে। যা যা লাগবে ওকে ঠিকমতো দিবি। আর যত্নে কোনো কমতি যেনো না হয়।
তারপর নিদ্রের হাত ধরে বললেন
– বাবা আমি যাই।
নিদ্র অবাক হয়ে বলল
– আপনি কোথায় যাবেন?
– বাসায়, বাবা আমার বাসায় অনেক মানুষ। তোমার থাকার মতো জায়গা নেই। তাই এখানে রেখে গেলাম।
– আমি একটা হোটেলেই থাকতে পারতাম।
– এখানে তোমার থাকার মতো ভালো হোটেল নেই। এটা মফস্বল শহর।
– হ্যা, ঢাকা থেকে তো দূরে।
– বাবা, আমার একটা ব্যাপার খুব ভালো লাগছে। তুমি বিদেশে বড় হয়েও এতো স্পষ্ট বাংলা বলতে পারো। খুবই ভালো।
নিদ্র আর কিছুই বলল না। রশিদ সাহেবের চলে যাওয়াটা দেখছে।
রাতে তার ঘুম তেমন ভালো হলো না।খুব ভোরেই বিছানা ছেড়ে উঠে পরলো। ঘুম না আসলে বিছানায় শুয়ে থাকাটা বিরক্তিকর।
হাত মুখ ধুয়ে সে নিজের আনা হিটার দিয়ে পানি গরম করে টি প্যাক দিয়ে চা বানিয়ে ফেলল। প্রিয় চায়ের মগ হাতে নিয়ে নিঃশব্দে সে নিচে নেমে এলো। বাড়িটা ডুপ্লেক্স তাকে দেয়া হয়েছে দোতলার উত্তরের রুমখানা। এখনো তার ভালোভাবে রুমটা দেখা হয়নি।
হাতে চায়ের মগ নিয়ে বাড়ির বাইরে বের হলো।
দক্ষিণ দিকটাতে ফুলের বাগান দেখে নিদ্রের খুব ইচ্ছা করলো ফুলগুলোকে ছুঁয়ে দেখতে। তার নিজস্ব একটা বাগান আছে। সেখানে অবশ্য এখানকার থেকেও বেশি ফুল। ফুলগুলো দেখতে গিয়ে নিদ্রের দোতলার একটা খোলা জানালায় চোখ পরলো।
জানালার ধারে একজন যুবতী এলোমেলো খোলা চুলে দাঁড়িয়ে আছে। যার চোখের দৃষ্টি আকাশের দিকে। হালকা বাতাসে যুবতীর চুল গুলো দুলছে কিন্তু মেয়েটার সেদিকে খেয়াল নেই। মেয়েটার মুখের উপর এক চিলতে রোদ এসে পরলো। নিদ্র চায়ের মগে চুমুক দিয়ে একটা শব্দ বারবার আওড়াতে লাগলো
– এলো চুলে বিষণ্ণ যুবতী। কী কারণ হতে পারে তার বিষণ্ণতার?? কী কারণ???
চলবে…….!