#the_unlimited_love❤️
#part_9
#writer_nusrat
“বেশি কিছুনা জাস্ট এই মেয়েকে শুধু ফলো করতে হবে৷ কি করে না করে,কোথায় যায় না যায় এসব কিছু জানতে হবে তারপর আমাকে ইনফর্ম করবে৷ এই মেয়ের জন্য আদি আমায় বিয়ে করেনি৷ ঠকিয়েছে আমায়৷তাই এই মেয়েকে এর উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে৷ ও নাকি আমার আদিকে সব বলে দিবে তার আগে আমি ওকেই আদির জীবন থেকে সরিয়ে ফেলবো৷,,কথাটা বলেই সোহানি একটা শয়তানি হাসি দিলো৷”
আমি এখনো ক্লাবের দরজার সামনে দাড়িয়ে আছি কিভাবে যাবো এখন৷ কোনো রকমে দারোয়ানের সামনে গিয়ে বললাম,,,,
“এই যে আমি বাড়িতে যাবো৷”
“তো যান আমি কি না করসি না কি”৷
আমি যেতে নিবো ওমনি আবার আটকে দিলো৷
“একি আপনি যার সাথে এসেছিলেন সে কোথায় আপনি একা একা যেতে পারবেননা৷”
এখন আমি কি করবো,কিভাবে যাবো৷ যদি আদিল চলে আসে তাহলে কি হবে৷ না না আমায় যেভাবেই হোক বাসায় যেতে হবে৷(মনে মনে)
“চাচা এই দেখেন আপনি যার কথা বলছিলেন সে আপনার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে”৷
দারোয়ান পিছনে তাকাতেই আমি ভো দৌড়৷ পালাই বাবা পালাই না হলে অনেক বকা আর কেলানি খেতে হবে৷
কোন রকমে সেখান থেকে পালিয়ে তো আসলাম বাট এখন কথা হলো যাবো কিভাবে৷ এত রাত্রেতো গাড়ি পাওয়া সম্ভব নয়৷ কিছুক্ষন পর দেখলাম একটা সিএনজি যাচ্ছে৷ সেটায় উঠেই বাসায় চলে আসলাম৷
ধিরে ধিরে রুমে ঢুকে তারাতাড়ি বোরকাটা খুলে লুকিয়ে ফেললাম৷ তারপর আবার আগের মতো শুয়ে পরলাম৷ কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছেনা৷নানান ধরনের চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে৷
“আচ্ছা উনাকে কি আমি সোহানির পিক গুলা দেখাবো৷ নানা দেখাবো না৷ উনাকে আমি জাস্ট এটাই বলবো যে সোহানি মেয়েটা ভালো নয়৷ যদি উনি বিশ্বাস করেন তাহলে করলেন আর না করলে নেই৷ তাছাড়াও মেঘ কখনো সূর্যকে ঢেকে রাখতে পারেনা৷তাই সোহানিও আদিলের সামনে যতো ভালো হওয়ার অভিনয় করুক না কেন তার সত্য একদিন আদিল ঠিক জানতে পারবে৷ এসব ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পরলাম টেরই পায়নি৷
সকালে ঘুম থেকে উঠে ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখলাম সকাল ১০ঃ০০ বাজে৷ তাই আর দেরি না করে তারাতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে গেলাম৷গিয়ে দেখি মা আর আদিল ডাইনিং টেবিলে বসে আছে খাওয়ার জন্যে৷ আমায় দেখেই মা বললেন,,,,
” আয় মা বস৷”
আমিও আদিলের পাশে বসে পরলাম৷
খাওয়ার সময় হঠাৎই মা বলে উঠলেন,,
“আদিল অনেক দিন হয়েছে তোমাদের বিয়ের অথচ এখনোও আরুহি মা কোনো শপিং টপিং করেনি৷ তাই তুমি আজ আরুহিকে শপিং করাতে নিয়ে যাবে৷”
“মা আমি বিজি আছি৷ তুমি আহিল বা রুবাকে বলো ওরা না হয় আরুহিকে নিয়ে যাবে৷ ”
“রুবা আজ হোস্টেলে চলে যাবে৷ আর আহিল অনেক আগেই অফিসের একটা কাজে বাইরে চলে গেছে তাই তুমিই ওকে নিয়ে শপিংয়ে যাবে আর এটাই আমার ফাইনাল কথা ”
আদিলের দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি কপাল কুচকে নিজের খাবারের দিকে তাকিয়ে আছেন৷ হয়তো উনি আমায় শপিংয়ে নিয়ে যেতে চাননা৷ তাই আমিই মাকে বললাম,,
“থাক না মা আমার অনেক কাপড় আছে৷ আমি নাহয় সেগুলো পরে নিবো৷”
“না আরুহি আমি যা বলেছি তাই হবে৷”
উনি কিছু না বলে খাবার শেষ করে উঠে গেলেন৷ তারপর মায়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,,,,
“মা ওকে রেডি হতে বলো ফাস্ট৷ আমার অনেক কাজ আছে৷ আমি ওতো সময় নষ্ট করতে পারবো না”৷ কথাটা বলে উনি রুমে চলে গেলেন৷
আমিও মুখ বাকিয়ে খাবারে মনোযোগ দিলাম৷
“রুমে আসতেই দেখলাম উনি শার্ট প্যান্ট পরে রেডি৷ আমার দিকে একবার তাকিয়ে বললেন”
“রেডি হয়ে নাও তারাতাড়ি”
আমি একটা থ্রি-পিস পরে নিলাম৷ তারপর ঠোঁটে হাল্কা লিপস্টিক লাগিয়ে চুলটা কিছু আছরিয়ে নিলাম শেষ আমি রেডি৷
তারপর আদিলকে নিয়ে বেড়িয়ে পরলাম৷
এদিকে,,
“সোহা ওরা শপিং মলে এসেছে৷ কি করতে হবে আমায়”??
“এখন না পরে আমি যখন বলবো তখন”
“আচ্ছা সোহা আমরা কি কাজটা ঠিক করছি??”
“চুপ একদম চুপ৷ যা করতে বলবো তাই করবা বুঝেছো তুমি””
______
একটার পর একটা ড্রেস দেখেই যাচ্ছি বাট একটাও পছন্দ হচ্ছেনা৷ উনার দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি ভাবলেশহীন ফোন টিপে যাচ্ছেন৷ হঠাৎই একটা ড্রেসের প্রতি চোখ গেলো আমার খুব সুন্দর ড্রেসটা৷ তাই ড্রেসটা নিয়ে তারাতাড়ি ঢুকে পরলাম ট্রায়াল রুমে৷ দরজাটা বন্ধ করার সাথে সাথেই কেউ একজন এসে আমায় জড়িয়ে ধরলো কিছুই বুঝতে পারছিনা আমি৷ লোকটাকে আমি ধাক্কা দিয়ে যেতেই লাগলাম অটোমেটিকলি৷ বাট তাকে কিছুতেই সরাতে পারছিনা৷ লোকটা আমায় প্রায় এক মিনিট পরে ছেড়ে দিলো৷ তারপর ধাক্কা মেরে ফ্লোরে ফেলে দিয়ে চলে গেলো৷ আমি এখনো ছেলেটার মুখ দেখিনি৷ দেখবো কি করে দেখার সুযোগই দেয়নি৷
কোনোরকমে কয়েকটা জামা কাপড় কিনে বাসায় চলে আসলাম৷ কিন্তু কিছুতেই ট্রায়াল রুমের কথা মাথা থেকে বের করতে পারছিনা৷ কে এই লোক আর আমায় এভাবে জড়িয়েই বা ধরলো কেনো??কি তার উদ্দেশ্য৷
ছাদে দাড়িয়ে আছে আদিল৷ হঠাৎই তার ফোন বেজে উঠলো৷ ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখলো সোহানি ফোন করেছে৷ আদিল ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে সোহানি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলে উঠলো,,
“আদি তুমি বিয়ে করে ফেলেছো?? কিন্তু তুমি যে আমায় বলেছিলে আমাকে ছাড়া আর কাওকে বিয়ে করবেনা৷ তাহলে কিভাবে তুমি বিয়ে করতে পারলে বলো কিভাবে”??
“দেখো সোহা আমি বিয়েটা অনেক চাপে পরে করেছি৷ আমি এখনো আরুহিকে নিজের স্ত্রীর মর্যাদা দেইনি৷ আর তুমি কি করে জানলে আমি যে বিয়ে করেছি???কে বলেছে তোমায়”??
“কে আবার, তুমার নিজের স্ত্রী আরুহি বলেছে আমায়”৷
“আরুহি!!!আরুহি তোমায় কোথায় পেলো”৷
“ক্লাবে এসেছিলো কাল৷ তুমি কেমন মেয়েকে বিয়ে করলে আদি৷ কাল তোমার স্ত্রী এসে আমায় শাসিয়ে গেসে যাতে আমি আর তোমাকে ভালো না বাসি৷ আমার জন্য নাকি তুমি ওকে মেনে নাওনি৷ শুনো আদি এখনো টাইম আছে তুমি ওকে পরক করে দেখো৷ ও কেমন সেটা ভালো করে দেখো বুঝো৷” কথাটা বলে সোহানি খট করে ফোনটা কেটে দিলো৷
“আরুহি কাল ক্লাবে গিয়েছিলো৷ কিন্তু কেন???৷ শুধুই কি সোহাকে শাসানোর জন্য নাকি অন্য কিছু৷ আমায় এখনি ওর সাথে কথা বলতে হবে৷” কথাটা বলে রুমে চলে গেলো আদিল৷
আমি ঠিক করে নিয়েছি যতো তারাতাড়ি সম্ভব আদিলকে সোহানির কথা বলে দিবো৷ উনাকে জানাতে হবে কেমন মেয়েকে ভালোবেসেছেন উনি৷ আমার কথা শেষ হতে না হতেই উনি রুমে প্রবেশ করলেন৷
“শুনুন আপনাকে কিছু বলার ছিলো৷ ঐ সোহানি মেয়েটা একদম ভালো না৷ ওকে আমি,,,,কথাটা শেষ না করার আগেই উনি আমার গালে সজোরে চড় বসিয়ে দিলেন৷
“সোহা ভালো, না তুমি বুঝি খুব ভালো”
“এ আপনি কি বলছেন আমি কি করেছি”??
“কি করেছো,কি করো নাই সেটা বলো”??
“কি বলছেন আপনি আমিতো কিছুই বুঝতে পারছিনা”?
“বুঝতে পারছোনা তাইতো,ওকে বুঝাচ্ছি,,,,, সোহা ভালো না সেটা তুমি কি করে জানলে,আই মিন ওকে তুমি কোথায় পেলে”??
আমি কিছু বলছিনা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছি,কিই বা বলবো উনাকে,এখন যদি ক্লাবের কথা বলি আর উনি উল্টাপাল্টা ভেবে নেন তাহলে,,,
“এ্যান্সার মি ডেম ইট”
উনার এমন রাগ দেখে আমি কিছুই বলতে পারছিনা৷শুধু নিচের দিকে তাকিয়েই আছি৷
“বলবে নাতো,বলবেই বা কী করে,বলার মতো মুখ আছে তোমার৷ তুমি কি ভেবেছ?? আমি কিচ্ছু জানিনা৷ আরে তুমি কোথায় যাও না যাও সব খবর আসে আমার কাছে”
উনার কথা শুনে ভয়ার্ত চোখে তাকালাম উনার দিকে৷
উনি আমার তাকানো দেখে বললেন,,
“কী হলো ভয় পেয়ে গেলে,যে আমি কি করে জানলাম৷ তাহলে শুনো সোহা বলেছে আমায়, তুমি কাল ক্লাবে গিয়েছিলে ওকে শাসানোর জন্য৷ শুধুই কি ওকে শাসানোর জন্য গিয়েছিলে নাকি অন্য কিছু(সন্দেহের দৃষ্টিতে)”
“দেখুন আপনি আমার কথা বিশ্বাস না করে উল্টাপাল্টা ভাবতে পারেননা৷ আমি ভেবেছিলাম আপনাকে কথার দ্বারা বুঝাব কিন্তু আপনিতো বুঝলেন না৷ আমার কাছে যথেষ্ট প্রমাণও রয়েছে৷ আপনার সোহানি কতটা ভালো কতটা নিষ্পাপ৷ ওয়েট দেখাচ্ছি “,,, কথাটা বলে ফোনটা হাতে নিতেই উনি আমার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে ফ্লোরে আছাড় মারলেন৷ ফোনটার ব্যাটারি,মেমোরি, সিম সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে আছে৷
“তুমি কি মনে করেছো তোমার এসব সো-কল্ড প্রমানে বিশ্বাস করে আমি সোহাকে ছেড়ে, নেভের৷ আমি তোমায় ছাড়তে পারি বাট সোহাকে নয়৷ বিকজ,আই লাভ হিম৷বুঝেছো তুমি৷ আর সোহাকে শাসানোর জন্য তুমি আর জায়গা পেলেনা৷ ক্লাবেই যেতে হলো৷আমারতো এখন মনে হচ্ছে তোমার চরিত্রে দোষ আছে৷ নাহলে একটা মেয়ে একা একা এতো রাত্রে ক্লাবে যায় কি করে৷ তাছাড়া ক্লাবেতো কাপল ছাড়া ঢুকতে দেয়না তাহলে তুমি কি করে গেলে বলো,কি করে৷ নিশ্চয় কেউ আছে যার সাথে পারসোনাল ডেট করার জন্য গিয়েছিলে৷ আর শুনো তোমায় যাতে আমি আমার রুমে আর না দেখি গট ইট৷,,, কথাটা বলে উনি হনহনিয়ে চলে গেলেন৷ আমায় কিছু বলার সুযোগও দিলেন না৷
ভীষন কান্না পাচ্ছে আমার৷ চিৎকার করে কাদতে ইচ্ছে করছে৷ আমি আর পারছিনা এসব নিতে৷ যার চরিত্রে দোষ আছে সে উনার চোখে ভালো হয়ে গেলো নিষ্পাপ হয়ে গেলো৷ আর আমি চরিত্রহীন হয়ে গেলাম৷ কত্তো সহজেই উনি আমায় চরিত্রহীনের ট্যাগ লাগিয়ে দিলেন৷বিশ্বাস ভালো কিন্তু অন্ধ বিশ্বাস ভালো নয়৷ আপনি দিনের পর দিন আমায় অপমান করে যাচ্ছেন৷ আমি ওতো একটা মানুষ নাকি৷ আমার ওতো মন বলে কিছু আছে৷ চোখ থেকে অঝোরে পানি পরছে আমার৷ কিন্ত এই পানি দেখার মতো তো আর কেউ নেই৷
লিভিং রুমে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে আদিল৷ রাগে তার নাক মুখ লাল হয়ে আছে৷ হঠাৎই কলিংবেল বেজে উঠলো৷ আদিল একরাশ বিরক্ত নিয়েই দরজাটা খুললো৷ খুলতেই দেখলো একটা ছেলে দাড়িয়ে আছে৷
“একি কে আপনি”??
চলবে,,,,,,,,