#the_unlimited_love❤️
#part_6
#writer_nusrat
কম্বল নিয়ে টানাটানি করতে করতে কখন ঘুমিয়ে পরেছি টেরই পায়নি৷ সকাল সকাল মুখে কিছু পরায় ঘুম ভেঙে গেলো আমার৷ ভালো করে চোখ ডলে তাকিয়ে দেখলাম উনি পানি ছিটে দিচ্ছেন আমার ওপর৷ এই লোকটার জন্য আমি শান্তিতে একটু ঘুমাতেও পারিনা৷
“একি আপনি আমার মুখে পানির ছিটে দিচ্ছেন কেনো”
“আমাকে ঘুমাতে না দিয়ে তুমি আরাম করে ঘুমাবে সেটা আমি কিছুতেই হতে দিবো না৷ কাল রাতে তোমার জন্যে শান্তিতে ঘুমাতে পারি নাই৷সম্পুর্ন কম্বল টেনে নিজের কাছে নিয়ে গিয়েছিলে৷আর এখন আরাম করে ঘুম হচ্ছে৷ ”
“এতই যখন ঠান্ডা লাগে আপনার তাহলে আপনার বাড়ি থেকেই কম্বল সাথে করে নিয়ে আসতে পারতেন৷”
“কেন কেন বাড়ি থেকে কম্বল নিয়ে আসতে যাবো কেন৷ তোমাদের বাড়িতে কী একটাই কম্বল আর নাই”৷
“উহু আছে৷ বাট আম্মু তো একটাই দিসেন”৷
সবার সাথে আনন্দ ফুর্তি করে,উনার সাথে ঝগরা মারামারি করে কেটে গেলো আরও দুইদিন আজ আমাকে আবার উনাদের বাড়িতে যেতে হবে৷ যদিও যেতে ইচ্ছে করছেনা৷ তবুও যেতেতো হবেই৷ মন খারাপ করে বসে আছি আমি আম্মু আর আব্বু এমন ভাবে আমাকে এডভাইস দিচ্ছেন যেনো মনে হচ্ছে এক বছরের বাচ্চাকে কথা বলা শেখাচ্ছেন৷ এটা করুনা ওটা করুনা,,অসহ্য৷
শশুড় বাড়িতে এসেছি আজ তিন দিন হলো৷ গতকাল আদিল আমায় বাসর রাতে চড় দেওয়ার জন্য আমার কাছে ক্ষমা চাইসে৷ আমিও উনাকে ক্ষমা করে দিসি৷ তবে এই কথাও বলেছেন আমাকে বউ হিসেবে মানবে না৷ না মানলে নাই,, হুহ!!!!!
রুম গোছাচ্ছি এমন সময় আদিল এসে বললেন,, “শুনো আরুহি আজ আমার একজন ক্লাইন্ট এসেছেন আমাদের বাড়িতে৷ তাই তুমি নিচে যাবা না একদম৷ উনি আমাদের বিয়ে সম্পর্কে কিচ্ছু জানেননা৷ বিয়েতে মত ছিলোনা তাই কাউকে তেমন ইনভাইট করা হয়নি এখন যদি উনি জানতে পারেন আমি বিয়ে করেছি তাহলে খুব অভিমান করবে আমার উপর৷ খুব ভালো সম্পর্কতো উনার সাথে তাই৷ ”
“আমিও মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললাম যে আমি যাবোনা৷”
এক ঘন্টা যাবত ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছি৷ উনি সেই যে গেসিলেন এখনও আসেন নাই৷ পাশে তাকাতেই দেখলাম রুবা দাড়িয়ে আছে৷
“একি রুবা তুমি কখন আসলে৷”
“তুমি যখন গভীর চিন্তায় মগ্ন ছিলে তখন এসেছি৷ খুব কষ্ট হচ্ছে তোমার তাইনা ভাবি”???
“কষ্ট, কষ্ট কেনো হবে৷”???
“এই যে ভাইয়া এত সময় ধরে সোহানি আপুর সাথে বসে বসে গল্প করছে”৷
“সোহানি!!সোহানি আবার কে”???(চিনেও না চেনার ভান করে)
“কেনো ভাবি তুমি জানোনা সোহানি আপু তো ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড৷”
“কিহ!!!সোহানি,ও কোথায় থেকে আসলো, আর উনি যে আমায় বললেন উনার নাকি একজন ক্লাইন্ট এসেছে”৷
“ভাইয়া তোমাকে মিথ্যা কথা বলেছে ভাবি৷ক্লাইন্ট আসলে বাবার সাথে মিট করতে আসতো”৷ কথাটা বলে রুবা ব্যালকনি থেকে নিজের রুমে চলে গেলো৷
“আচ্ছা তাহলে ইনিই হলেন উনার ক্লাইন্ট৷ যিনি আমাদের বিয়ের কথা শুনে অভিমান করবে৷ কচু করবে৷”
অনেক্ষন ধরে ভেবেই চলেছি এই সোহানিকে কী শাস্তি দেওয়া যায়”এই ফকিন্নিকে তো একটা না একটা শাস্তি দিতেই হবে৷
কি শাস্তি দেওয়া যায়🤔🤔 হুম পেয়েছি”৷
“আস্তে আস্তে কিচেনে গেলাম৷ উকি দিয়ে দেখলাম মা কাপে চা ঢালছেন৷ হুম এটাই সুযোগ হাত ছাড়া করা যাবেনা৷ কিন্তু প্ল্যান সাকসেস করতে হলেতো আগে মাকে কিচেন থেকে বের করতে হবে কি যে করি৷ পাশে থাকাতেই দেখলাম একটা ফুলদানি পরে আছে মাটিতে৷ওটাকে তারাতাড়ি তুলে নিয়ে ছুড়ে মারলাম একটা স্টিলের চেয়ারে৷ স্টিল হওয়ায় খুব জোরেই শব্দ হয়েছে৷ মা তারাতাড়ি বেরিয়ে আসলেন কিচেন থেকে কিসের আওয়াজ হয়েছে দেখার জন্যে৷
“আমিও আর টাইম নষ্ট না করে ঢুকে গেলাম কিচেনে৷এখানে দুটো কাপে চা রাখা আছে৷ একটা আদিলের আরেকটা নিশ্চয়ই ওই ফকিন্নির জন্যে”৷
” নিজের বাড়ি চা নাই তাই আমার শশুড় বাড়িতে আসে চা খাওয়ার লাগি৷”
“তারাতাড়ি গুঁড়া মরিচের বৈয়াম থেকে এক চামচ মরিচ গুঁড়ো নিয়ে ঢেলে দিলাম একটা কাপে৷ তারপর ভালো করে মিক্স করে জলদি সবকিছু টিকটাক করে বেরিয়ে গেলাম কিচেন থেকে৷ আমি বের হওয়ার সাথে সাথে মাও চলে এলেন কিচেনে একটুর জন্যে বেচে গেছি”৷
মা চা নিয়ে উপরে যাচ্ছেন৷ আমিতো ভীষন ভয়ে আছি যদি মরিচের কাপটা আদিলের ভাগে যায় তাহলেতো সব শেষ হয়ে যাবে৷ মা চা টা দিয়ে সোহানির দিকে তাকিয়ে মুখ বাকিয়ে চলে গেলেন৷
আমি আস্তে আস্তে দরজার আড়ালে দাড়ালাম৷ তারপর দরজার ফাক থেকে দেখার চেষ্টা করলাম মরিচের কাপটা কার কাছে যায়৷দরজার ফাক থেকে ওই ফকিন্নির মুখটা দেখা যাচ্ছেনা, নাহলে দেখতাম কেমন বান্দরের চেহারা নিয়ে আমার বরকে পাগল করেছে৷
“একি কোন কাপে মরিচ মিশাইছিলাম সেটাইতে ভুলে গেছি”৷
কিছুক্ষণ পর আদিল একটা কাপ নিলেন তারপর মুখে দিয়ে সোহানির দিকে তাকিয়ে বললেন৷”চা টা খুব মজা হইসে খেয়ে দেখো”৷
কথাটা বলে উনি একটান দিয়ে সম্পুর্ণ কাপ খালি করে ফেলসেন৷ঠান্ডা ছিলো তাই সহজেই চা টা খেয়ে নিলেন”৷
উনার চা খাওয়া দেখে আমি একটা স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লাম৷,,”যাক বাবা আল্লায় বাসাইছে৷ উনার ভাগে মরিচের কাপটা যায়নাই৷”
আদিলের দেখাদেখি সোহানিও একটান দিয়ে সব চা মুখে ঢেলে দিসে৷ সাথে সাথেই ওর চোখ লাল হয়ে উঠেছে ঝালে৷ হাত থেকে কাপটাও ঠাস করে ফ্লোরে ফেলে দিসে৷
“এমা আমার শাশুড়ী মায়ের এতো দামি কাপটা ওই ফকিন্নিটা ভেঙে দিলো”৷ 😱😱
মা আওয়াজ শুনে তারাতাড়ি উপরেই দৌড়ে আসছেন দেখে আমিও সেখান থেকে পালিয়ে গেলাম৷
“বাবা গো বাবা আমি এখান থেকে যাই নইলে সবাই আমাকে সন্দেহ করবে”৷
মা সেই রুমে ঢুকার সাথে সাথেই আমি আবার চলে গেলাম দরজার চিপায়৷ আর শুনতে চেষ্টা করলাম কি হচ্ছে ভিতরে৷ মা এগিয়ে এসে বললেন,,” কি হচ্ছে এখানে”?
আদিলও বললো,,”সোহা কী হয়েছে তোমার,,শরীর খারাপ নাকি”???
“না আদি আমার শরীর একদম ঠিক আছে৷”
“তাহলে তুমি এমন করছো কেন”??
“আদি আমাকে কেউ মারার প্ল্যানিং করছে৷ তাই চায়ের সাথে মরিচের গুঁড়ো মিশিয়ে দিয়েছে যাতে আমি ঝালে মরে যাই”৷
ঝালের কারনে ভালো করে কথাও বলতে পারছেনা সোহানি৷
“এই মেয়ে এসব তুমি কি বলছো হ্যা,,ঝাল খেয়ে কেউ মরে নাকি৷ আর চায়ে মরিচের গুঁড়ো আসবে কোথায় থেকে আমি নিজের হাতে চা বানিয়েছি৷ বুয়াকে পর্যন্ত বানাতে দেই নাই আর তুমি বলছো তোমার চায়ের সাথে কেউ মরিচ গুঁড়ো মিশিয়ে দিয়েছে৷ আদিল তুমিতো চা টা খেয়েছো তোমার কি ঝাল লেগেছে”৷
“না মা”৷
“এই মেয়ে সব সময় এই বাড়িতে আসে আমাদের উপর মিথ্যা অপবাদ দেওয়ার জন্য৷ আজ বলেছে চায়ের সাথে মরিচের গুঁড়ো মিশিয়ে দিয়েছি আবার কাল বলবে বিষ মিশিয়ে দিয়েছি৷ আদিল এই মেয়েকে বলে দাও যাতে এই বাড়িতে আর না আসে৷ যত্তসব”,,,
কথাটা বলে মা রেগে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলেন৷
“আদিল আমি আর তোমাদের বাড়িতে আসবোনা”
“আচ্ছা আসিস না আমরা তোর জন্য কাদব নাকি ফকিন্নি,,হুহ!!!!”
“ঠিক আছে সোহা কাল না হয় ক্লাবেই দেখা হবে”৷
“ওকে বেবি বায়,লাভ ইউ”
“এই শাকচুন্নিটা আমার বরকে লাভ ইউ বলছে৷ মন তো চাচ্ছে একে লাত্তি মেরে উগান্ডায় পাঠিয়ে দেই”😡😡
“লাভ ইউ টু৷ কথাটা বলে আদিল সোহানির কপালে একটা কিস করলো৷ দরজার ফাক থেকে এটুকুই দেখতে পেয়েছি আমি৷ চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছি সেদিকে৷”
“আদিল ওই ফকিন্নিকে কিস করলো আবার লাভ ইউ টু ও বললো৷ কই আমি যে তার বিয়ে করা বউ অথচ আমার হাত ধরে ওতো দেখেনা”৷
“মিস্টার আদিল খান,রেডি থাকেন আজ আপনার একদিন কী আমার যত দিন লাগে”৷
চলে এলাম সেখান থেকে এক বস্তা রাগ নিয়ে৷
চলবে,,,,,,,