#The_unlimited_love💖
#Season_2
#Part_5
#Writer_Nusrat
পরের দিন,,,,,,,
“হ্যা জিসান বল৷ ”
“ভাই রকি শহরের বাইরে গেসে “৷
“আচ্ছা,, ধন্যবাদ রাখছি আমি৷ ওকে সর্বদা ফলো করবি৷”
আদনান ফোনটা রেখে আরুহির কাছে গেলো৷
“মা আয়েশা কোথায়??খুব দরকার ছিলো ওকে৷
“ও মনে হয় সামান্তার সাথে ছাদে আছে”৷
আচ্ছা বলে আদনানও ছাদে পা বাড়ালো৷আজ যেভাবেই হোক সামুকে সব সত্যি বলতে হবে৷ এভাবে আর কষ্ট নিতেও পারবোনা আর দিতেও পারবোনা৷
আমি আর আয়েশা ছাঁদের রেলিঙ ধরে দাড়িঁয়ে আছি৷ আয়েশা আমাকে এটা ওটা জিজ্ঞেস করছে আর আমি উত্তর দিচ্ছি৷ এক প্রকার মাথা নষ্ট করে দিচ্ছে বলতে গেলে৷ এতো কথা বলতে পারে৷ হঠাৎ আদনান ভাইয়ার মুখে আমার নাম শুনে চমকে উঠলাম আমি৷ কতোদিন পর ভাইয়ার মুখে আমার নাম শুনলাম৷
“আয়েশা একটু নিচে যা তো সামুর সাথে আমার কিছু কথা আছে”৷ পিচ্চি আয়েশাও ভাইয়ের কথা মতো নিচে চলে গেলো৷
আমিও ছাঁদ থেকে যেতেই ভাইয়া আমায় দুই হাত দিয়ে আটকে দিলেন৷
“শুন সামু তোকে আমি কিছু বলতে চাই তুই সবকিছু শুনে তারপর সিদ্ধান্ত নিস তুই কী করবি?”
“তা এখন কী বলবেন রকি খারাপ ওকে যেন বিয়ে না করি৷ তাহলে আপনিও একটা কথা শুনে রাখেন আপনার কথা কিছুতেই শুনছিনা আমি৷”
“সামু তুই আমাকে আপনি করে বলছিস এতোটা পর করে দিয়েছিস আমাকে৷ আর হ্যা রকি খারাপ এক নাম্বারে খারাপ ও৷ প্লিজ ওকে বিয়ে করিস না৷ তোর জীবন শেষ হয়ে যাবে৷”
“তা আপনাকে বিয়ে করবো নাকি৷ আপনি নিজে ওতো বিয়ে করছেন কই আমি তো কিছু বলিনি৷ তাহলে এবার আমি বিয়ে করবো আপনার এতো সমস্যা হচ্ছে কেনো৷ আর রকি যে খারাপ এটা আপনাকে কে বলেছে৷ ও খুব ভালো খুব৷ কতোবার আমাকে একা পেয়েছে তাও স্পর্শ র্পর্যন্ত করেনি৷ আর আপনি তো ওর উল্টো৷ দেখেন ভাইয়া আমি একবার যখন আমার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি এই সিদ্ধান্ত থেকে আর পিছপা হবোনা৷ ”
ভাইয়া আমার দুই কাধেঁ দুই হাত রেখে বললেন, সামু তুই আমার কথা ভালো করে না শুনে এভাবে উল্টো পাল্টা বলতে পারিস না৷ আগে আমার কথা শুন প্লিজ৷
“আমি আর আপনার কোনো কথা শুনছিনা মিস্টার আদনান৷ আমি জানি আপনি কেনো রকির নামে বাজে বকছেন কারণ রকি তো আমায় খুব ভালোবাসে আর বিয়ে হলে খুব সুখে রাখবে আপনি তো আবার আমার সুখ দেখতে পারেননা৷ তাই তো মানা করছেন ওকে যাতে বিয়ে না করি তাহলে ঠিক আছে আমিও একটা কথা জানিয়ে দিচ্ছি যে আমি রকিকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করবোনা৷ বিয়ে করলে রকিকেই করবো৷”
আদনান আর সামান্তার মুখে রকির নাম সহ্য করতে পারছেনা তাই চিৎকার করে উঠলো,,,
“ব্যস অনেক হয়েছে সামান্তা অনেক আমি তোকে প্রথম থেকেই ভালোভাবে বুঝিয়ে আাসার চেষ্টা করছি কিন্তু তুই তো আমার কথা শুনছিস ওইনা৷ দেখ তোর লাইফ তোর ডিসিশন তোর যা ইচ্ছে হবে তুই তাই কর আমি তোকে কিচ্ছু বলবোনা৷ বাট একটা কথা বলে রাখি যা করবি ভেবে চিন্তে করিস আর এখন একটা কথা বলবো সেটা মন দিয়ে শ্রবণ করবি৷”
“ভাইয়ার মুখে সামান্তা শুনে আমার অভিমান আরও বেড়ে গেলো “(মনে মনে)
“বললাম তো আমি আপনার কোনো কথা শুনতে চাইনা৷ ঘৃণা করি আপনাকে আমি বুঝেছেন আপনি, ঘৃণা করি৷ এই যে আপনার সামনে দাড়িঁয়ে কথা বলছি না, এতেও আমার ঘৃণা লাগছে,রুচিতে বাঁধছে৷ আচ্ছা আপনার কী লজ্জা সরম বলতে কিচ্ছু নেই৷ যদি থাকতো তাহলে এটলিস্ট এতো কিছু হওয়ার পর এভাবে আমার সামনে এসে দাড়াঁতেন না৷ ”
আদনান ভাইয়ার চোখ গরিয়ে পানি পরছে, পরলে পরুক আমার কী৷ আমিও কম চোখের জল ফেলেছি নাকি?
“তুই খুব বড় হয়ে গেছিস সামান্তা খুব৷ নিজের দায়িত্ব নিজেই রাখতেই শিখে গেছিস৷ আমাকে তো তোর ঘৃণা করে৷আমি আরও কয়েকদিন পর যেতাম কিন্তু আমি আজ সন্ধ্যায় চলে যাচ্ছি৷কিছু গুরুত্বপূর্ন কথা ছিলো তোর সঙ্গে কিন্তু তুই তো আমার কথা শুনলি না৷ আর কোনোদিন তোর সামনে এসে দাড়াঁবোনা রে৷ আমার মুখও তোকে দেখাবোনা৷ শুধু তুই আমায় মিস করিসনা৷আমাকে চিন্তে তুই এতো ভুল করলি৷তোকে পস্তাতে হবে সামান্তা পস্তাতে হবে৷ খুজঁবি খুব করে খুজঁবি তুই আমায় কিন্তু তোর খুঁজতে অনেক লেট হয়ে যাবে৷ কথাটা বলে চোখ মুছে চলে গেলো আদনান৷”
আদনান কাঁদছে আর ওর মায়ের রুমের দিকে যাচ্ছে আরুহি আদনানকে কাঁদতে দেখে ঘাবড়ে গেলো৷ সেও পিছু পিছু গেলো৷
“আদনান তুমি কাঁদছো?
“না মা এমনি৷
“আদনান মা হই আমি তোমার৷ ইদানীং তুমি অনেক চুপচাপ হয়ে গেছো৷ প্রায় সময়ই দেখি তোমার চোখ মুখ ফোলা৷ আর এখন কাঁদছো কেনো?তোমাকে তো আগে কোনোদিন কাঁদতে দেখিনি৷ সোনা বলো নিজের মাকে৷”
আদনান ওর মাকে জরিয়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে দিলো৷
“মা মা তুমি জানো সামান্তা নাকি আমাকে ঘৃণা করে৷ আমার সামনে দাড়াঁতেও নাকি ওর রুচিতে বাঁধে৷ মা আমি এমনি এমনি কিছু করিনি৷ সেদিন বিয়েও আমি নিজে থেকে ভাঙ্গিনি৷ মা আমাকে বাধ্য করেছে এসব করতে৷”
আরুহি আদনানের চোখ মুছে দিয়ে বললো,আদনান আমার সোনা আমায় সব খুলেঁ বলো,,,
আদনান বলতে শুরু করলো,,,,,
“মা জানো আমি আর সামান্তা এক রাত্রে রাস্তায় হাটঁতে বেরিয়ে ছিলাম৷সেদিন এক টংয়ের দোকানে আমরা দুজনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খুব এনজয় করে চা খাচ্ছিলাম আর হাসছিলাম৷ ঠিক তখুনি আমি পাশে তাকিয়ে দেখলাম রকি বাইকে হেলান দিয়ে খুব মনোযোগ দিয়ে দেখে যাচ্ছে সামান্তাকে৷ আমি আর দেড়ি না করে সামান্তাকে নিয়ে বাড়ি চলে আসলাম৷ সেদিন থেকেই রকির কু দৃষ্টি পরে সামান্তার উপর৷ সে সব সময় ফলো করতে থাকে সামান্তা কোথায় যায় না যায় কী করে না করে যখন জানতে পারলো আমি আর সামান্তা একে ওপরকে ভালোবাসি সেদিন থেকে ও আমাদের পিছনে লেগে পরে৷ শেষে একদিন আমাদের বাড়িতে আসে ম্যাকানিক সেজে,যেটা আমরা বুঝতেও পারিনি৷ ও ছাঁদ বাদে আর তোমাদের রুম বাদে সব জায়গায় ক্যামেরা লাগিয়ে দিয়ে চলে গেছে৷ সামান্তার বেড রুমেও লাগিয়েছে৷মা জানো রকি আমায় সেদিন মেসেঞ্জারে সামান্তার চেঞ্জ করা ভিডিও পাঠিয়েছে৷ যেটায় সামান্তার শরীরের অনেক অংশই দেখা যাচ্ছিলো৷ আমি যদি তার কথা না শুনি তাহলে নাকি সে সামান্তার এই ভিডিও ভাইরাল করে দিবে৷ মা তুমি জানো এই ভিডিও একবার ভাইরাল হলে সেটা সামান্তার জন্য কতটা কষ্টদায়ক হবে৷ এসব ভিডিওতে ভিউ আরো বেশি আসে৷ সবাই দেখবে ওর এই ভিডিও৷ সবাই হাসাহাসি করবে ওকে নিয়ে৷ তাই আমি রকির প্রস্তাবে রাজী হয়ে যাই যাতেও সামান্তার কোনো ক্ষতি না করে৷ আর এই জন্যেই আমি দেশও ছাড়ছি৷ এতে যদি আমার সামান্তার সম্মানটা রক্ষা হয়৷কথাটা বলে আবারো কেঁদে দিলো৷”
আরুহিও মুখে আঁচল চেপে ধরে কান্না করছে৷ ছেলের এমন কান্না,কষ্ট যে সে আর নিতে পারছেনা৷
“আদনান আমি বুঝতে পারছি সোনা তুমি কতটা কষ্ট নিয়ে বেঁচে আছো৷ তোমার বাবার আর আমার সম্পর্কেও অনেক কষ্ট ছিলো৷ তোমার বাবা ভেঙে পরলেও আমি ভেঙে পরিনি স্ট্রং থেকেছি আমি৷ আর তুমি তো আমারই ছেলে তোমাকে স্ট্রং থাকতে হবে এভাবে ভেঙে পরলে চলবেনা৷”
“মা তুমি তো আমার রাগ জেদ সম্পর্কে অবগত৷ আমি এতোটা চুপচাপ থাকতাম না যদি না রকির কাছে এমন ভিডিও থাকতো৷ আর সবাই তো শুধু শান্ত আদনানকেই দেখেছে হিংস্র আদনানকে কেউ দেখেনি৷ যারা দেখে তারা আর ঠিক থাকতে পারেনা কেঁপে উঠে৷
(চোখ মুখ শক্ত করে)
আরুহি আদনানের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে৷ হিংস্র আদনান মানে কী বুঝাতে চাচ্ছে আদনান৷
“আদনান তুমি এগুলো কী বলছো??
“না মা নাথিং৷
“আচ্ছা আদনান আমি তোমার বাবার সাথে এই নিয়ে কথা বলবো৷ সেদিন আমার ছেলের দোষ ছিলোনা ওকে বাধ্য করা হয়েছিলো এসব করতে৷ সবাইকে জানাতে হবে আমার ছেলে নির্দোষ৷”
“মা আমার কসম তোমায়৷ তুমি বাবাকে এই নিয়ে কিছু বলবেনা৷ সময় এলে আমিই সবাইকে সবটা জানাবো৷ তুমি আমার জননী মা তাই তোমায় বললাম৷ তুমি প্লিজ বাবাকে বলোনা নাহলে জানাজানি হয়ে যাবে৷ আর সামান্তাকেও কিছু বলবেনা৷ আমাকে অবিশ্বাস করার জন্য ওকে শাস্তি পেতে হবে৷ আর খুব তারাতাড়িই সব সমাধান হতে চলেছে৷”
“তুমি কোনদিন যাবে ইউএসএ”
সন্ধ্যায় ফ্লাইট৷৷তুমিতো জানো কোথাও যেতে গেলে অন্যদের মতো আমার ওতো টাইম লাগেনা৷ চিন্তা করো না তোমার ছেলে খুব তারাতাড়ি তোমার কাছে ফিরে আসবে৷ তোমার কোলে মাথা রাখবে তুমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিবে আর গল্প করবে৷ আমাকে নিজের হাতে খাইয়ে দিবে৷ কিছু বললে মুখ ফুলিয়ে রাখবে আর আমি তোমাকে জড়িয়ে ধরে তোমার কাছে ক্ষমা চাইবো৷ আর তুমিও আমায় ক্ষমা করে দিয়ে আমার মাথায় একটা চুমু খাবে৷ আর আরেকটা কথা মা আমার একমাত্র বোন আয়েশাকে কিন্তু ভালো রাখতে হবে৷”
আরুহি আর না দাড়িঁয়ে দৌড়ে ওর রুমে চলে আসলো৷ ছেলের চোখের পানি আর এমন করুন কথা বার্তা সে আর মেনে নিতে পারছেনা৷
আদনানও ফ্লোরে বসে বসে কাদঁতেছে৷
“কী দোষ করে ছিলাম আমি যার কারনে আমাকে আমার পরিবার ছাড়তে হচ্ছে৷ পরক্ষণেই চোখ মুছে নিলো আদনান৷,
“না আমি আর কাঁদবো না৷ সবাই আমাকে ভিতু ভাববে আমি একদমই ভিতু নই৷ আমি কাউকে ভয় পাইনা সবাই তো আমাকে ভয় পায় আড়ালে থাকা আদনানকে ভয় পায়৷ আরুহি আর আদিল খানের ছেলে আমি এতো সহজে ভেঙে পরবোনা৷ আমার ভালোবাসা সত্যি হলে আমি ইনশাআল্লাহ সামান্তাকে পাবো৷ আর রকির সাথে ওকেও আমার কথা না শুনার জন্য শাস্তি দিবো৷ তনে শারিরীক নয় মানসিক ভাবে৷রেডি হয়ে থাকো রকি তোমার পাপের ঘড়া পুর্ন হয়ে গেছে৷ ”
চলবে,,,,,,