সতীনের সংসার
পর্ব ৩
Writer: তানজিন সুইটি
রায়হানের বুকের একপাশে বিদ্যুৎ চমকানোর মতো করে উঠলো খনিকের মধ্যে।শ্বাসকষ্ট হচ্ছে ওর এমন অবস্থা দেখে চিৎকার করে কেঁদে উঠলো
আনিকাআআআআআআ???
কিছুখনের জন্য পুরো পৃথিবীটা থেমে গিয়েছিলো রায়হানের কাছে।তার জন্য আনিকার আজ এই পরিস্থিতি।কেনো তখন সে আটকালোনা তাকে?
বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। কথা বলার ভাষাও হারিয়ে ফেলেছে।পা দুটো অবাস হয়ে গেছে।হেটে যাওয়ার
শক্তিও নেই তার কাছে।তবুও মনের শক্তিকে প্রাধান্য দিয়ে আনিকার কাছে হাটুগেরে বসে পরে।পাজোর কোলে নিয়ে অতিদ্রুত রুমে দিকে পা বারিয়ে চলে।
রুমে এনেই আগে ভেজা জামা-কাপড় পরিধান করিয়ে দিয়ে ডাঃ ওয়াজেদ কে কল করে আসতে বলে।
আশরাফ সাহেবকেও ডাক দিতে ভয় পাচ্ছে।যদি ত্যাজ্যপুত্র করে বসে।রুমে পায়চারি করতে থাকে সিগারেটের পর সিগারেট ধরিয়ে।আনিকার কিছু হলে তার বাবা যে ত্যাজ্যপুত্র করবে।না না এটা কখনোই হবে না।না আনিকা চলে যাবে। না তার বাবা তাকে ত্যাজ্যপুত্র করবে।এসব কথা ভাবতে ভাবতে ডাঃ ওয়াজেদ সাহেব রুমে প্রবেশ করে।পারিবারিক ডাঃ বলে সব জায়গায় তার পরিচিত।তাই আর এগিয়ে আনতে হয় নি রায়হানের রুম পর্যন্ত।
-যাক ডাঃ আংকেল আপনি এসে গিয়েছেন। please আনিকাকে সুস্থ্য করে তুলুন।?
-আরে রায়হান চুপ করবি তো একটু।আগে দেখতে দে।
ওর এমন অবস্থা কি করে হলো বলতো একটু?
-ইয়ে মানে আংকেল..
-বুঝতে পেরেছি।থাক আর ইয়ে মানে বলতে হবে না।
বুঝি না,তোদের মধ্যে ঝগড়া হবে কি নিয়ে?ভালোবেসে বিয়ে করেছিস সংসার হবে সুখের। তবুও কেন যে ঝগড়া করিস এই বাপ-মা হারা মেয়েটার সাথে?
রায়হান কোনো কথা বলছে না?চুপচাপ কথা গুলো মিষ্টির সিরার মতো গিলে গিলে খাচ্ছে।
ডাঃ ওয়াজেদ আনিকাকে ভালোভাবে দেখে মেডিসিন
লেখে দিয়েছে যেনো নিয়মিত দেয়।আর ইনজেকশন দিয়েছে যেনো মস্তিষ্কে কোনো ক্ষতি না হয়।যে পরিমাণ ভিজেছে আর মানসিক চাপের মধ্যে গেছে সেই কারণে।
ডাঃ বিদায় নিলো যাওয়ার জন্য।তখনই রায়হান বলে উঠলো।
-আংকেল আব্বুকে এসব কিছু জানিয়েন না please.
ডাঃ ওয়াজেদও ওর মুখখানা দেখে বুঝতে পেরে শুধু মাথা নারিয়ে হ্যাঁ সূচক জানিয়ে প্রস্থান করলো।
রায়হান বেলকনিতে গিয়ে গিরিলে এক হাত দিয়ে দূর পানে চেয়ে রয় অনেকখন।তারপর কি ভেবে রুমে ফিরে এসে আনিকার মাথার পাশে বসে পরে।আলতো করে মাথা বুলাতে থাকে।কখন যে ঘুমের রাজ্যে পারি দিয়েছে ঐভাবেই বসে থেকে।
সকালবেলা,
আম্মু আম্মু উঠো না উঠোওও..
ঘুম ঘুম চোখে।তাকাতেও পারছে না তাকে কে ডাকছে।
মাথাটা যে তার অনেকটা ভারি হয়ে আছে।প্রচন্ড ব্যথাও আছে।তবুও আনিকা বুঝতে পেরেছে এটা তার এক মাত্র মানিক রতন আরিয়ান।
মাথায় হাত দিয়ে উঠতে উঠতে দেখে রায়হান তার মাথায় কোণায় বসে ঘুমাচ্ছে।গতকালকের কথা মনে করে দূরে সরে বসে তরিঘরি করে। টান দিয়ে বুকে জরিয়ে নেয় আরিয়ানকে।কাঁদতেও পারছে না এইটুকু ছেলের সামনে।নয় তো হাজারটা প্রশ্ন করে বসে বড়দের মতো করে?জড়িয়ে সঙ্গে সঙ্গে..
-আম্মু তুমি কোথায় ছিলে?জানো আমি ঘুমাতে পারি নি।যদি আমায় রেখে পালিয়ে যেতে ঐ দূর আকাশে নানু-নিনুর মতো করে। তখন আমায় কে ভালোবাসতো বুকে নিয়ে?
আরিয়ানের কথা শুনে আটকিয়ে রাখতে পারলো না
লুকানো কান্নাটাকে।গরিয়ে পরলো দুচোখ বেয়ে। খনিকের মধ্যে হু হু করে শব্দে বেগ হয়ে উঠলো রুমের চার দেওয়ালের মাঝে।
রায়হানের ঘুম ভেঙে গেলো কান্নার ধ্বনি শুনে।অযথা চেষ্টা করলো আনিকাকে মাথায় হাত রেখে বুঝাতে।
তার আগেই বললে উঠলো।
-এখানে আরিয়ান আছে। এমন কিছু বলার বাধ্য করো না, যাতে মুখতে হয় আমাকে।
রায়হান চুপ করে উঠে চলে গেলো ওয়াশরুমে।ফ্রেস হয়ে একেবারে রেডি হয়ে বেরিয়েছে অফিসের উদ্দেশ্য।
রুম থেকে বেরুনোর সময় পিছু ফিরে তাকিয়ে দেখলো আনিকাকে।তারপর চলে গেলো অফিসে।
আনিকা দেখেও না দেখার ভান করে। আরিয়ানকে বুকে নিয়ে বসে রয় একই স্থানে মাথা নিচু করে।
দরজায় নক..
-আসবো রে মা।
আনিকাকে কথা বলার সুযোগ না দিয়েই বলতে
থাকে মিসেস সালেহা বেগম।
-জানি না গতকাল কি হয়েছে তোদের মাঝে?তবুও একটা কথা বলবো মা তোকে রাখবি।যদি তুই আমাকে ভরসা দিস তাহলে নির্ভয়ে বলতে পারি তোকে।
-মা তোমার এমন কোনো কথা নাই যে রাখি নি আজ পর্যন্ত বলো তো একবার আমাকে।
-রাখছি..আজও আগে কথা দে আমাকে?
আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে আবার মিসেস সালেহা বেগমের দিকে তাকালো। পরে কি মনে করে হাতের পর হাত দিয়ে বলে ফেললো?
-হুমম কথা দিলাম প্রতিবারের মতো তোমাকে।
।
।
।
বিকাল পার হয়ে রাত অবদ্ধি গনিয়ে এলো
এখনও রায়হানের বাসায় আসার নাম গন্ধ না হলো।
সারাদিন বেডে ফুল রেস্ট নিয়ে এখন আনিকা আগের থেকে অনেকটা ভালো আছে।
রায়হানকে অনেকটা মিস করছে।ওকে যে এখন অনেক ভালোবাসে।বিয়ের আগে জোরপূর্বক হলেও
আরিয়ান পেটে আসার কিছুদিন আগ থেকে ভালোবেসে ফেলেছে রায়হানকে।
একটা মানুষ প্রতি কিভাবে পারে ভালোবাসা তৈরি করতে সেটা রায়হানের থেকে কে বা ভালো বুঝে।
আজ থেকে ১০বছর আগে যখন প্রথম গ্রাম থেকে শহরে পা রাখে আনিকা।তখন তার জীবনে প্রেম ভালোবাসা বলতে কিছুই ছিলো না।
কিভাবে বুঝবে সে?জন্মের আগে বাবা মারা যায়। জন্মের পর মাটাও চলে যায়। পরে থাকে একমাত্র বড় বোন।তাদের দুবোনকে বড় করেছে চাচা চাচিরা।তারা ভালোই ছিলো।তাই তো দুবোনকে পড়াশোনা করিয়ে বড় করে তুলেছে।বড় বোনকে বিয়ে দিয়েছে ভালো পরিবারেই।শহরে থাকে সে এখন।অনেক বার বলেছে ওর কাছে থাকতে কিন্তু পড়াশোনার জন্য যাওয়া হয়ে উঠেনি আনিকার?
আনিকা হঠাৎ একদিন ভাবে।আর পড়ে কি হবে?
তার থেকে নিজের পায়ে দাড়াতে হবে।তাই সে অনার্সে এডমিশন না নিয়েই পা বাড়ালো শহরের পানে চাকরির উদ্দেশ্য।
বড় বোন আনিয়ার বাসায় উঠলো।বেশ দিনগুলি কাটছিলো।চাকরির জন্য ট্রাইও করছে এখানে সেখানে।হয়েও গেলো একজায়গায় তার।আনিয়া অনেক খুশি বোনের ইচ্ছা পূরণ হয়েছে বলে।
আগামীকাল প্রথম অফিসে যেতে হবে। তাই বুঝাচ্ছে
-আনিকা তুই কিন্তু সেখানে গিয়ে বক বক করবি না।
কম কথা বলবি।আর পারলে তোর দুলাভাইয়ের প্রস্তাবটা ভেবে দেখতে পারিস।
চলবে….
(বিঃদ্রঃ please ভাই ও বোনেরা আপনাদের কাছে অনুগ্রহ করে বলছি,কেউ কপি করে,নিজের নাম দিয়ে পোস্ট করবেন না অন্য জায়গাতে।অনেক কষ্ট করে লেখা হয় কিন্তু পরে যদি দেখি নিজের ক্রেডিটটাই অন্যের নামে তখন মাথা এমনিতেই আগুন জ্বলে।
ভুলত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন্যবাদ সবাইকে)