সতীনের_সংসার পর্ব_৯
Writer: তানজিন সুইটি
#পর্ব_৯
রাজ একের পর এক প্রশ্ন করেই চলছে?তাই আর থাকতে না পেরে মিসেস সালেহা বেগম বলেই ফেলে।আনিকা এখন থেকে এ বাড়িতে মিসেস রায়হান চৌধুরী হয়।
।
।
রাজ এ কথাটা শুনার সাথে সাথে মাথায় বাধ ভেঙে পরে আকাশ থেকে বর্জ্য পাতের মতো করে।চিৎকার করে বলে উঠতেও পারছে না আনিকাকে, এটা তুমি কি করলে আমাকে ঠকিয়ে?মাথা নিচু করে থ হয়ে দাড়িয়ে রয়লো একই জায়গাতে।
মিসেস সালেহা বেগম রাজকে বসতে বলে চলে যায় উপরে।যেখান থেকে আশরাফ সাহেব বার বার ডাক দিচ্ছে মিসেস সালেহা বেগমকে।তাই আর দেরি না করে উপরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ানোর আগে,আনিকাকে বলে যায় রাজকে চা নাস্তা দিতে। আর রায়হানের সাথে কথাবার্তা বলিয়ে দিতে।আর কিছু বলার সুযোগ পেলো না সে,বার বার তার ডাক পরছে উপর তলা থেকে।তাই সে দূরুত্ব প্রস্থান করলো খনিকেই।
মিসেস সালেহা বেগম চলে গেলো ঠিকই কিন্তু রেখে গেলো একা বেচারি আনিকাকে?
আনিকা বুঝে গেছে রাজের মুখ দেখেই।আজ হয় তো ওর শেষ দিন হবে।কি বলবে বুঝি উঠতে পারছে না সে?
তবুও মুখ থেকে করুন সুরে বলতে গেলে রাজ থামিয়ে দেয় সঙ্গে সঙ্গে।
দাঁতে দাঁত চেপে মাটিতে চেয়ে থাকে।ওর ভিতরে যে ভেঙেচুরে যাচ্ছে আনিকাকে এমন অবস্থা দেখে।মনে হচ্ছে পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে।চোখ দুটো লাভার লাল বর্ণের মতো ধারণ হয়েছে।যে কোনো সময় জ্বালিয়ে ছারকার করে দিবে।
-কেনো করলে আমার সাথে এমন?
–???(ওর এমন অবস্থা দেখে ভয়ে কথা বলার সাহসও হারিয়ে ফেলেছে।শুধু কান্নার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে ফুপিয়ে ফুপিয়ে)
– কি আর বলবে?মুখ থাকলে তো বলবে?নাকি আমি রায়হানের মতো টাকাওয়ালা নয়।প্রভাবশালীও নয়।সুখে রাখতে পারবো না ইত্যাদি ইত্যাদি ঠিক না বলো আনিকা।তাই আমার ভালোবাসার মূল্য না দিয়েই ওর কাছে চলে গেলে।
-please ??একবার তো আমার কথা শোনো আগে।
–???কি কি যে বলবে সেটা তো আগেই বলে দিলাম তোমাকে?okkk একটা কথা বলার চান্স দিলাম বলো বলো তাড়াতাড়ি করে।
-বিশ্বাস করো এই বিয়েতে আমার মতে হয় নি।
-হা হা হা?? বাহ প্রশংসার কথা তুলে ধরলে।
কোনো মানুষের মতের বিরুদ্ধে কিছু করানো যায় সেটা তোমাকে না দেখলে বুঝতামি না যে।
দাড়াও একটু হেসে নেই।???
এমন কথা বলেই রাজ অট্টোলিকার হাসি দিতে লাগলো।আনিকারও বুঝতে বাকি রয়লো না।এটা যে ওর কষ্টে হাসি।ভিতরে যে ওর জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে সবই।দু বছর ধরে দেখে আসছে ওকে।
এটুকু তো চিনতে পেরেছে এ দু বছরে। কিন্তু পাগলটাকে কিভাবে বুঝাবে এখন যে,সে কোনো দোষ করে নি।ওকে ঠকায় নি।ঠকেছে তো নিজেই।
এসব কথা ভাবতে ভাবতে রাজকে ধরে বসে পরলো পায়ের কাছে।
-সব কিছু সহ্য করবো please অবিশ্বাস করো না।
-বিশ্বাসই ছিলো কবে আমাদের মাঝে।আর তো অবিশ্বাস। দেখো আনিকা,ওহো সিট..মিসেস রায়হান হবে তো..ভুলেই গেছি।
অবিশ্বাস তাকেই করা যায় যে বিশ্বাসের মর্যাদা রেখে যায়।কিন্তু আপনি তো কোনোটারই যোগ্য নন।
আমার সাথে এ কয়েক বছর ছিলেন কিন্তু একবারের জন্যেও রায়হানের কথা বললেন না বাহহহ ?প্রশংসার যোগ্য।?
আমি এতোটাই পর হয়ে গেছিলাম যে, আমার সাথে চললেন ফিরলেন তবুও বলার প্রয়োজন করলেন না রায়হানের সাথে এফেয়ারের কথা।
আনিকার কথা বলার সুযোগই দিচ্ছে না রাজ,এমন কি ওর কোনো কথাই বিশ্বাস করছে না? ফ্লোরে বসে বসে কেঁদেই চলছে অবিরত। ?
-দেখেন এমন ন্যাকা কান্না বন্ধ করবেন।আপনাকে দেখে যেকোনো মানুষই ধোকা খাবে আর তো রাজ।?
যাক ম্যাডাম দোয়া করি।সুখে থাকেন।কিন্তু একটা কথা বলার ছিলো?
আনিকার এবার চোখ মুছে হা করে তাকিয়ে রয় রাজের দিকে।ও ভাবে এই তো রাজ হয় তো বলবে আনিকা আমি তোমার অনেক ভালোবাসি। কিন্তু হলো উল্টো কিছু?
-দেখেন ম্যাডাম আমি গরীব হতে পারি কিন্তু অভিশাপের সময় বড়লোক গরীব দেখেনা আল্লাহ মালিক?তাই আপনাকে আজ একটা কথা বলে যাচ্ছি ।এই রাজের কষ্টে ফল ফেরত পাবেন কঠিনতর।তখন হয় তো বার বার আমার কথা মনে করেন।কিন্তু ততদিনে অনেক দেরি হয়ে যাবে?
পরে রাজ আর কিছু বললো না।অতিদ্রুত স্থান ত্যাগ করলো সেখান থেকে।না হলে যে আনিকাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেও ফেলতে পারে। এটা যে ভালো হবে না সমাজের চোখে।বাজে কথা শুনাবে পরকীয়া ভেবে।
আনিকা ফ্লোরে আবারও বসে পরলো। আল্লাহর কাছে বলতে লাগলো।
-কি দোষ করেছি?বার বার প্রিয় মানুষ হারানো আমার ভাগ্যেই লিখে রেখেছো বুঝি????
হারানোর ব্যথা আর সহ্য হচ্ছে না আমার।মরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে আল্লাহ।আমাকে নিয়ে যাও তোমার কাছে। না হলে যে সবার অভিশাপ ফলে যাবে আমার কপালে।
হঠাৎ খেয়াল করে,উপরের সিঁড়ি বেয়ে কেউ নেমে আসছে।তাই তাড়াতাড়ি করে চোখের পানি মুছে ফেলে।
ফ্লোর থেকে উঠে কিচেন রুমে দৌড়ে যায় চোখে মুখে পানি দিতে।
চোখে মুখে পানি দিয়ে যখনই ঘুরে দাড়ালো সামনে রায়হান।আনিকা কিছুটা আমতা আমতা করে বলতে লাগলো।
-আপনি এখানে?কিছু লাগবে।আমাকে বললেই হতো নিয়ে যেতাম উপরে।কষ্ট করে নিচে না নামলেই ভালো হতো আপনার শরীরের জন্যে।
-আরে নাহ..এখন আমি সুস্থ আছি।শুনলাম রাজ এসেছে তাই দেখা করতে আসলাম আর কি?কিন্তু তুমি এখানে কেনো?আর রাজ কোথায় দেখছি না তো ওকে?
আনিকা কি বলবে বুঝতে পারছে না?তাই একটা বানিয়ে কথা বলে ফেলে।
-উনার কি যেনো জরুরি ফোন আসলো আর চলে গেলো?বললো পরে আসবে।☺
-ওও….হয় তো আমাদের কোম্পানির কাজ ঠাজ হবে। অনেকটা কষ্ট করে আমার দোস্তোটা,আমার হয়ে। তাই চিন্তা করছি সুস্থ হলেই রেগুলার অফিসে যাবো। আর সব কাজ বুঝে নিয়ে এখন থেকে মন দিয়ে করবো।
তুমি কি বলো আনু?
আনিকা কোনো কথা বললো না,উপরে উপরে দেখালো মুচকি হেসে রায়হানকে, হ্যাঁ মন দেন কাজে।এটা বুঝিয়ে দিলো।
।
।
।
।
এভাবেই কেটে যাচ্ছে আনিকার দিনকাল মাস বছর।
রায়হানও অফিসে যায় নিয়মিত।আবার সময় মতো বাড়িও ফিরে আসে লক্ষী ছেলের মতো।রায়হানের মুখ থেকে শুনেছে রাজ যেনো চাকরি ছেরে দিয়েছে। অন্য জায়গায় চাকরিও নিয়েছে।এমন কি কিছু দিন আগে আদিরাকে বিয়েও করে নিয়েছে?
এমন কথা শুনে কষ্ট পাওয়ার থেকে খুশিই হয় অনেকটা।কারণ,রাজকে ভালো ভাবে বুঝে আনিকা আর আদিরা।মন থেকে দোয়া করে সব সময়।ওরা যেনো অনেক সুখি হতে পারে। আল্লাহ সেই ইচ্ছাটা পূরণ করেছিলো তাদের।যখন কয়েক মাস পার হয়ে গেছে শুনতে পায় রাজ বাবা হবে।সেটা শুনে যে আনিকা খুশি হয়েছিলো বলে বুঝাতে পারবে সে।
ও যতোটা খুশি হয়েছিলো,মনে হয় নিজেরই বেবি হবে।ঐ প্রথম রায়হানকে জড়িয়ে ধরে রাজের বাবা হওয়ার কথা শুনিয়েছিলো বলে।
এই কান্ড দেখে রায়হান অনেকটা অবাক হলেও
পরখনেই কি ভেবে আনিকার সাথে তাল মিলিয়ে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে?কিছুটা উঁচু করে নেয় বুকের ভিতরে।দুজনেরই এক অজানা ভালো লাগা কাজ করছে।আস্তে আস্তে রায়হান সুযোগের সৎব্যবহার করেই ফেললো এই দু বছরে।আনিকার কোমড়ে আলতো করে হাত রেখে ঠোঁটে ঠোঁট রেখে দিলো
হঠাৎ করে।
আনিকাও বুঝে উঠতে পারে নি এমন হবে।কি করবে?
বাঁধা দিবে নাকি যা হচ্ছে হতে দিবে? শত হলেও রায়হান তার স্বামী।এই দু বছরে এতো ভালোবাসা কেয়ার করেছে বলে শেষ করা যাবে না।কখনো
জোরও করে নি।শুধু বলেছিলো.. যেদিন স ইচ্ছায় কাছে আসবে, সেদিনই স্বামীর অধিকার ফলাবে।
এখন তো আর সে ঠেকাতে পারবে না।স্বামীর অধিকার আছে ওর সম্পূর্ণ।তাই আর বাঁধা না দিয়ে তালে তাল মিলিয়ে অতুল সমুদ্রে পারি জমায় দুজনে।যেখানে আছে দুটি প্রাণের ভালোবাসার মিলন।পূর্ণতা পেয়েই গেলো আনিকা রায়হানের বিবাহ জীবনের পথ চলার জন্য।
চলবে….
(ভুলত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ধন্যবাদ সবাইকে?)