সতীনের_সংসার পর্ব_১৬
Writer: তানজিন সুইটি
এটা ভাবতে ভাবতে চোখ লেগে আসলো আনিকার।
হঠাৎ কারো পায়ের ছোয়া পেলো।আস্তে করে চোখ মেলে,ডিম লাইটের আলোতে দেখার চেষ্টা করে চলেছে কি হচ্ছে……..?????????
ওপাশ থেকে রায়হানকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে রিয়া।
তার জন্য একটু ছোয়া লেগে গেছে আনিকার।সেটা দেখার পর সহ্য করতে না পেরে দৌড়ে গিয়ে সোফাতে মুখ গুজে শুয়ে পরে।কান্না যে করবে,সেটাও হ্রাস পেয়েছে।খাটের প্রাণে একবারের জন্যে দেখে দেখেওনি
জ্বলে পুরে ছারখার হয়ে যায় যদি ভিতরে।
রাতও বেঈমান হয়ে গেছে এখন তার কাছে।শেষ হওয়ার নামও নিচ্ছে না কোনো মতে।হয় তো সবাই ঠিকই বলে।দুঃখে কষ্টের রাত পার হয় না কারো জীবনেই।সেটাই হয়েছে আনিকারও আজ।
দূর পর্বতের আজানের ধ্বনি শুনতে পেয়ে।তাড়াতাড়ি করে উঠে পরে ফজরের নামাজ আদায় করবে বলে।
চলে যায় পাশের রুমে।যাওয়ার সময় একবারের জন্যে ঐদিকে ফিরে তাকিয়ে দেখেনি তারা এখন কোন পরিস্থিতিতে আছে?
অযু করে জায়নামাজ বিছিয়ে,নামাজের পর্ব শেষ করে দুহাত মোনাজাত তুলে আল্লাহর কাছে দুঃখ কষ্টের কথা তার কাছে শেয়ার করবে বলে। আসলে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া, কেউ নেই এই দুনিয়াতে,যে তাকে ভালোবাসার বাধনে আগলে রেখে বেধে রাখবে সারাটা জীবন ভরে।যাই হোক আল্লাহই পারে তার মনের সব কিছু বুঝতে তাই কেঁদে কেঁদে ভিজিয়ে ফেলছে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করার দু হাত আর জায়নামাজের কিছু অংশ।মোনাজাত শেষ করে। চলে গেলো ছাদে কিছুখন প্রকৃতির আবহাওয়া অনুভব করতে।
ভোরের সূর্যটা নতুন নয়।তবুও আনিকার কাছে আজ অন্যরকম মনে হয়।সুন্দর বললে ভুল হবে।কষ্টের ছাপটাই বেশি ফুটে উঠেছে চারিদিকে।হঠাৎই কাঁধে কারো হাতে স্পর্শে ভয়ে পাওয়ার মতো দাড়িয়ে বুঝতে চেষ্টা করছে।পরক্ষণেই বুঝতে পারলো..
এই ছোয়া তার অনেক দিনের চেনা।সে এখন যতই পর হোক না কেনো?তবুও কি এই ছোয়া ভুলা সম্ভব?
কিছু না বলে চুপ করে সামনের দিকেই চেয়ে আছে।
এমন চুপচাপ থাকতে দেখে।পাশ থেকে বলে উঠে।
-কি ব্যপার এতো ভোরে,তাও আবার ছাদে একা একা দাড়িয়ে?
আনিকা কোনো কথার উত্তর না দিয়ে পাশ ঘেষে চলে যেতে নিলে হ্যাচকা টান দিয়ে বুকের সাথে জাপটে ধরে
মুখো মুখি হয়ে…
-রাগ করেছো আমার উপরে।
এখনও কোনো উত্তর নেই?নিশ্চুপ…
-কি হলো?কথা বলবে না আমার সাথে।আমি কি খুবই খারাপ?নাকি গতকাল রাতের জন্য মন খারাপ।আমি জানতাম না রিয়া এখানে এভাবে চলে আসবে।আগে যদি জানতাম তাহলে….
এবার আর মুখ আটকে রাখতে পারলো না আনিকা।
-আমি কি তোমাকে সেই ব্যপারে কিছু বলেছি বা কোনো রাগ দেখিয়েছি।এখন তোমার ব্যপার।তোমার বউ কোথায় যাবে না যাবে,সেটা তোমার বউয়ের ব্যপার।
বলে চলে যেতে লাগে রায়হানের বাহু ডোরের থেকে।দু এক পা গিয়ে আবার ফিরে আসে।
-আরেকটা কথা,কোনো মেয়ে তার স্বামীর ভাগ দিতে চায় না।তবুও বলছি তোমাকে..রিয়াকে দিলাম স্বামীর ভাগ কিন্তু কয়েকটি কথা আছে?কখনো হিংসা করতে না করবে।আর পারলে নিজের সংসার জীবন সুন্দর করে সাজানোর চেষ্টা করতে বলবে।সেটাতে আমার কোনো আপত্তি নেই?কিন্তু আমার রুমে এক দিনের জন্য আর যেনো না দেখি ওরে।
বলে চলে গেলো দ্রুত গতিতে।মুখে বলতে সহজ হলেও
ভিতরে ভেঙে চুরে নিচ্ছিলো ওর।আসলে আনিকার মতো মেয়ে হয় তো পৃথিবীতে ২-১জন হাতে গুনা পাওয়া যাবে ভাগ্যক্রমে।তাও সন্দেহ আছে।এমন মেয়ে খুজে পেতে।
অবাক নয়নে তাকিয়ে থাকে আনিকার দিকে।
তারপর নিজের রুমে এসে রিয়াকে ঘুম থেকে উঠালো ফ্রেস হওয়ার জন্যে।
-কি হয়েছে তোমার?এভাবে উঠাচ্ছো কেনো আমাকে?
-ফ্রেস হয়ে নাও,বাসায় যাবো।
-কোন বাসায় যাবো?
-কোন বাসায় ছিলে?সেই বাসায় যাবো এখন নাস্তা করে।
-কেন???এটা কি বাসা না? আর এখানে থাকলে কি হবে আমার?
-তোমার কিছু হবে না।এখানে দুজন এক সাথে রাখবো না।তো তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও।
-দু জনে এক সাথে মানে…
কথা আর বলতে দিলো না রিয়াকে।তার আগেই থামিয়ে দিয়ে ওয়াশরুমে যেতে বললো রিয়াকে।
রিয়াও ওয়াশরুমে ডুকে দাঁতে দাঁত চেপে বলতে লাগলো দেখে নিবে।
ফ্রেস হয়ে নাস্তা খেয়ে শ্বাশুড়ীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যেতে লাগলে।বলে উঠে মিসেস সালেহা বেগম
-মা মাঝে মধ্যে এসো বেড়াতে।ভালোই লাগবে সবার, তোমার আসাতে।
এমন কথাতে রিয়া তো মাথার উপরে উঠে গেলো লাফ দিয়ে।মাথা নিচু করে ৩২টা দাঁত কেল্লিয়ে বলে
-আচ্ছা আম্মা আসবো চিন্তা করবে না। আর আপনার শরীরের প্রতি খেয়াল করবেন কেমন।
পাশ থেকে আনিকার চোখ টল টল করছে। তবুও কোনো মতে আটকিয়ে রাখতে চেষ্টা করে যাচ্ছে।
চলে গেলো ঠিকই তারা।সপ্তাহ পার হয়ে যায় কিন্তু
বাসার মুখে আসার নাম নেয় না রায়হান আর?
চিন্তা করতে থাকে,পরক্ষণেই মনে পরে যায়,এখন তো আর সে একা নয়,সে তো আরেকজনের সাথে।তাকে ডিস্টার্ব করাটা এখন কি আর ঠিক হবে?
প্রায় এক মাস অতিক্রম হতে চলেছে। তবুও রায়হানের কোনো খবরই পায় না কারো কাছে?সামনে ঈদ
বাসায় না আসলে ছেলেটার শপিং কে করবে?তাই বাধ্য হয়ে রায়হানকে ফোন করে…
অনেকবার কল করার পরেও রিসিভ করার নামই নিচ্ছি না ওপাশ থেকে।পরে আর দেয় না কল।
মন খারাপ করে রেখে দিয়ে চলে যায় ইফতার করতে।
ইফতার সেরে যখন রুমে প্রবেশ করে তখন শুনতে পায় ফোন বাজছে।সেটা হয় তো ওর কাছে অনেকটা ভালো লাগার মতো কাজ করে বুকের ভিতরে।তাই দৌড়িয়ে গিয়ে রিসিভ করে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে থাকে।
অপরপাশ থেকে…
-কি ব্যপার???এভাবে হাপাচ্ছো কেনো?আম্মুর কিছু হয়েছে কি?
রায়হানের কথায় অবাক হলেও,চুপ করে রয়।কারণ,এতোদিন পর নিজের থেকে কল করে খোঁজ নেওয়াও হয় তো ভুল হয়ে গেছে।তাই তো এতো কিছু জিঙ্গাসা করলো কিন্তু একটিবারের জন্য আমার কথা জিঙ্গাসা করলো না কেমন আছি?
আগের কথা আনিকার অনেক মনে পড়চ্ছে।যখন সেকেন্ডে সেকেন্ডে কল করে জ্বালাতন করতো।তখন শত বারন করার পরেও বলতো তোমার খোঁজ খবর না নিলে দম আটকে আসে।
আর এখন দিনের পর দিন কেটে যায় খোঁজ নেওয়া কি দূরে থাক?আগে তার মার কিছু হলো কিনা সেটা জিঙ্গাসা করে যায়?ফোনের অপরপ্রান্তে ভেসে আসে
-কি হলো কথা বলছো না যে?
কিছুটা নরেচরে উঠে কণ্ঠে পেয়ে..
-হুমম বলো শুনছি তো।
-শুনছো তো ভালো কথা।কিন্তু কথা বলছো না কেনো?
আর কিসের জন্য কল করেছো?
-ইয়ে মানে.. আজ কতো দিন হলো তোমার কোনো খোজ নেই।তার উপরে কিছু দিন পর ঈদ।আরিয়ানও অনেক খিজি করছে তোমার জন্য, কবে এসে শপিং করবে।
-এর জন্য কল করেছো।আরে আমি তো এমনিতেই দুদিন পর আসছি বাড়িতে।
-দুদিন পরে মানে??এখন তুমি কোথায়?
-আরে গ্রামের বাড়িতে আসছি রিয়ার সাথে।ওর আত্মীয় স্বজন আসতে দিতে চাচ্ছে না।তার উপরে রিয়ার ছোট বোন বলছে ঈদ এখানেই করে যেতে।
তবুও অনেক বুঝানোর পর আসতে পারবো দুদিন পর বাড়িতে।
এসব কথা শুনে আনিকার চোখ থেকে পানি টপ টপ পরতে থাকে গড়িয়ে গড়িয়ে।???নিজের পেটের সন্তান এখন তার কাছে পর হয়ে গেছে শালিকে আপন ভেবে।হায়রে দুনিয়া রে..
-আর চিন্তা করো না।আমার আসতে দেরি হলেও আম্মু শপিং করে দিবে,বলে দিয়েছে আম্মু আমাকে?
তার মানে মা ছেলের ঠিকই কথাবার্তা হয় আর মাঝখান থেকে আমাকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়।
বাহ বাহ?মনে মনে ভাবে আনিকা এসব কথা।
-আচ্ছা চিন্তা করো না।আমি ভালো আছি আর তাড়াতাড়ি চলে আসার ব্যবস্থা করছি।এখন রাখি আল্লাহ হাফেজ।
নিজের মতো নিজে কথা বলে রেখে দিলো। এপাশ থেকে কানের কাছে ফোন এখনও ধরে ঠাই দাড়িয়ে রয়লো।মানুষটা শুধু চেঞ্জ হয় নি।ভুলেও গেছে অনেক কিছু বুঝতে পেরে গেছে আনিকা।
কান থেকে ফোনটা সরিয়ে খাটে ধপ্পাস হয়ে শুয়ে পরে বালিশ নিয়ে।জীবনে বড় ভুল করে ফেলেছে, সেটা যে এখন সে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।
বাবা মার ভালোবাসা পেলো না জন্মের পরে। বোনের আদর সোহাগে বড় হয়েও কোনো লাভ হলো না,তার দাম না দিয়ে অন্য জনের মুখের হাসি ফুটাতে গিয়ে
মায়ের মতো বোনকে হারালো আনিকা।
আজ তার কাছে বড় শত্রু মনে হচ্ছে ভাগ্য। ভাগ্যের জন্যেই আজ তার কপালটা পুরা।?কেন যে সেই ভাগ্য হলো না তার বাবা মার কাছে চলে যাওয়ার।তাহলে হয় তো এতো কষ্ট পেতে হতো না আজ তার।????
চলবে……….
(বিঃদ্রঃ এই গল্পটা অনেক গ্রুপে যায় সেটা আমি দেখি।
আর যারা যার কমেন্ট করেন সেখানে, সেটাও দেখি।
এখন কথা হলো এটা বলছি কেনো???আসলে
প্রিয় পাঠক-পাঠকেরা আমার…আমি কোথাও হারিয়ে যায় নি গো আর আমার মেমোরিও লস হয় নি যে গল্প লেখা বন্ধ করে দিবো।আসলে কি জানেন…কখনো কোনো লেখককে বুঝার চেষ্টা করে দেখেন নি।তাই নানান কথা বলতে মুখে আটকে না আপনাদের।
আমার কি সমস্যা হয়েছিলো সেটা জানলে কি সমাধান করে দিবেন আপনারা।তাহলে বলি শুনুন…১ম সমস্যা আমার পড়াশোনার চাপ অনেক। ২য় সমস্যা আমার পারিবারিক নিয়ে।৩য় সমস্যা আমার আইডি সমস্যা হয়েছিলো সেটা অনেক কষ্টে ফিরে পেয়েছি।তবুও যদি আপনারা আনন্দ পান নানান ধরনের কথাবার্তা বলে তো ধন্যবাদ আপনাদেরকে।?ভুলত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ সবাইকে কষ্ট করে পড়ার জন্যে)