সতীনের_সংসার
Writer: তানজিন সুইটি
#পর্ব_১৪
সম্পূর্ণ কথা শেষ করে আনিকার দিকে বার বার দেখে অসহায়ের দৃষ্টিতে।আনিকাও বুঝতে পেরে আর অপেক্ষা না করে আশরাফ সাহেবকে নিয়ে চলে গেলো বাসার উদ্দেশ্যে।
সদর দরজা দিয়ে প্রবেশের সময়,মিসেস সালেহা বেগম এক গাদা কথা বলে উঠে…
-কি গো তোমরা এসেছো?ঐখানে গিয়ে তো মনে হয় কিছুই পেলে না।তবুও ছেলেটার পিছে লেগেছো দুজন।অযথা মিথ্যে অপবাদ দিয়েছো আমার ছেলেটার মাথায় উপর।মাঝে মাঝে মনে হয় সৎছেলে তোমার।একটা কথা শুনো।কখনো কারো কথায় কান দিয়ে নিজের ছেলের উপর রাগ করে থাকবে না।ছেলেটার উপর এমনিতেই কার কু নজর পরলো বুঝতে পেরেছি এখন।
আনিকার দিকে ব্রু কুচকিয়ে?
আনিকাও বুঝতে পারলো কাকে উদ্দেশ্য করে বলছে?
কষ্টে বুকটা ফেটে চুরমার হয়ে যাচ্ছে।ভিতরে এমনিতেই কষ্টের জোয়ার,তার উপরে দিলো আধখান বাঁশ।
পাশ থেকে আশরাফ সাহেব..
কে কেমন সেটা জানি?এখন চুপচাপ ঘরে যাও,না হলে….
এমন কথাতে মিসেস সালেহা বেগম আর একটা কথাও বললো না।চুপ করে চলে গেলো।পরে আশরাফ সাহেব
এডভোকেটকে কল করলো।কিছু খনের মধ্যে চলে আসলো এডভোকেট,এসে কি কি কাগজপত্র বের করে আশরাফ সাহেবের সামনে এগিয়ে দিলো?ধাপ ধাপ করে সিগনেচার করে দিলো।বাসস সে চলে গেলো।
পরে আনিকাকে বুঝিয়ে পাঠিয়ে দিলো নিজের রুমে। আর বললো যেনো কোনো চিন্তা না করে।
এটা বলে আশরাফ সাহেব চলে গেলো।আনিকাও নিজ রুমের উদ্দেশ্যে পা বারালো।দু মিনিটের পথ,তার কাছে মনে হচ্ছে রাত পাড় হয়ে যাবে।
রুমে প্রবেশ করার সাথে সাথেই চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরছে।এতো বছরের সংসারে,তার কাছে আজ মনে হচ্ছে নারী হয়ে জন্মিয়ে অনেক ভুল হওয়াতে।
রাত হয় তো শেষ হবে না তার কোনোভাবেই।পুরো রুমটাও ফাঁকা ফাঁকা লাগছে আজ।কার কাছে তার কষ্টের কথা শেয়ার করবে।যাকে একটু একটু করে জায়গা করে দিয়েছিলো মনে।সেই তো আজ দিলো ক্ষতবিক্ষত করে।
এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পরে ঘুমের রাজ্যে।
ভোরের আলো ছড়াতে শুরু করলো সমগ্রতে।
চোখ মেলে একটু একটু করে চেয়ে দেখে চারিদিকে।
আনিকা কি করবে ভাবতে থাকে?ছেরে চলে যাবে নাকি… এমন সময় কল আসলো আনিকার ফোনে।
রিসিভ করে কথা বলার পর পরই শ্বশুরের রুমে সামনে দৌড়িয়ে গিয়ে দরজার কাছে দাড়ায় একটু তারপর জোড়ে জোড়ে হাপাতে থাকে সেটা দেখে মিসেস সালেহা বেগম বলে,বাঘ তারা করেছে নাকি তার পিছে।
আসলেই মহিলাটা কেমন যেনো হয়ে গেছে।কষ্ট লাগছে তবুও সেটা চেপে রেখে বলে…
-আম্মু রায়হান এক্সিডেন্ট করেছে।
মিসেস সালেহা বেগম চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠে।
কোথায় আছে জিঙ্গাসা করে দ্রুত চলে যায় সেখানে?
আনিকাও পিছন পিছন দৌড়াতে থাকে।
যেমনই হোক না কেনো?স্বামী তো হয় ওর। স্বামীর এক্সিডেন্ট এর কথা শুনে কোনো স্ত্রী ঘরে বসে থাকতে পারে।ওর কাছে মনে হয় না। তাই তো ছুটে যায় হাসপাতালে।
হস্পিটালে পৌছে দেখে রায়হানের ক্ষতবিক্ষত দেহ পরে আছে।এটা দেখে তো আনিকা বসে পরে।আর মিসেস সালেহা কেমন ছেলের শোকে কান্নায় ভেঙে পরে।
একটুপর আশরাফ সাহেবও আসে হস্পিটালে।আরিয়ানকে কাজের মহিলার কাছে রেখে আসে।
তারও খারাপ লাগছে কিন্তু মূখ ফুটে বলতে পারেছে না? তবুও শক্ত করে রাখে নিজেকে।হঠাৎ করে পাশ থেকে মিসেস সালেহা বেগম বলতে থাকে…
-এই তোমার জন্য আজ আমার কলিজার টুকরারে হারাতে বসেছি।কি এমন দোষ করেছে সে,যে সব সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করলে?বিয়েই না হয় করেছে আরেকটা।তো কি হয়েছে,সেটা আমি শুনেছি অনেক আগেই?তবুও বলি নি,যদি এই কান্ডটা করে বসো ওর সাথে।যেমনই হোক না কেনো?কেনো বুঝো না ওও তোমার ছেলে,তাই বলে এমন করবে ওর সাথে।আমার মনে হয় সব আনিকার কার সাজি।তার জন্য আমার ছেলে এক্সিডেন্ট করেছে।ওর মতো মেয়েকে…..
-চুপ বজ্জাত মহিলা। তোর স্বভাবটাই পেয়েছে।
তবুও উঁচু গলায় কথা বলে যাস।
এমন কথায় আনিকা অবাক হয়ে যায়। এতো বছর ধরে সংসার করছে।কখনো আশরাফ সাহেবকে তুই করে বকা দিতে দেখেনি।এই প্রথম শুনলো এমন।আর কি স্বভাব?স্বভাবের কথায় উঠলো কেনো এখন?
-রায়হানের আব্বু বেশি বকে ফেলছো কিন্তু?তুমি কি?সেটা আগে ভাবো।তারপর অন্যের দিকে আঙুল তুলো,লজ্জা করে না বুঝি।
আনিকা আগা মাথা কিছুই পাচ্ছে না।শুধু হা হয়ে চেয়ে চেয়ে শুনে যাচ্ছে তাদের ঝগড়া।
-লজ্জা হা হা হা… সত্যিই আমার লজ্জা নেই।যদি একটুও লজ্জা থাকতোই,তাহলে তোর মতো নারীর সঙ্গে কিভাবে সংসার করেছি এতো বছর যাবত ভেবে দেখ। যে নারী অন্যের সংসার ভেঙে নিজে সুখী হবার জন্যে,সব ব্যবস্থা করে নিয়েছে অনেক বছর আগে।আবার লজ্জার কথা তুলে।এখন আমি ভাবি আসলেই আমি একটা অভাগা?না হলে এমন হতো আশরাফ চৌধুরীর সাথে বল একবার।মনে করেছিলাম আনিকার জীবন যেনো এমন না হয়,তবুও হয়ে গেলো মাত্র তোর কারণে সালেহা। এখন একটু ভাব তো,যদি তোর মেয়ের কপালেও এমন হয়। তখন কি করবি বল?
মিসেস সালেহা বেগম এখন চুপ হয়ে গেলো। কারণ, তার মেয়ের প্রসংগে তুললো বলে।
আশরাফ সাহেব হু হু করে কেঁদে উঠে।আল্লাহ আমার পাপের শাস্তি এমনভাবে দিবে বুঝি নি রে।তোর মতো নারীকে কেন সেদিন জুতা দিয়ে পিটালাম না রে।তাহলে আজ এমন দৃশ্য দেখতে হতো না চোখে সামনে।
পাশ থেকে আনিকা..
-আব্বু please যা ঝগড়া করার বাসায় গিয়ে করবে।
এটা পাবলিক প্লেস বুঝো না কেন?সংসারের খবর বাহিরের লোক জানবে কেনো?আগে রায়হান সুস্থ হোক তারপর ওকে বাসায় ফিরিয়ে নিয়ে যা ব্যবস্থা করবে।
এখন চুপচাপ আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে যাও।
একটা কথা মনে রাখবেন আব্বু,ভালো নিয়ে সবাই সংসার করে।খারাপ নিয়ে কয়জন সংসার করতে।
তো ভাবো তোমার লাইফেও তেমনটা হয়েছে।এখন হয় তো আমার কপালে এমনটা হবে।বলে কাঁদতে থাকে শ্বশুর বউমা মিলে।
অন্য দিকে রায়হানের চিকিৎসা সম্পূর্ণ হয়।১সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ্যও হয়ে যায়।পরে ওকে নিয়ে বাসায় ফিরে রায়হানের মা।আশরাফ সাহেব আর কোনো কথাও বলে না।আনিকাও আগের মতো কথা বলে না রায়হানের সাথে কিন্তু সেবাযত্নের কোনো ত্রুটি রাখে না?
রায়হানও অনেক বার আনিকার সাথে কথা বলতে চেষ্টা করেছে কিন্তু সে কাজের বাহানা দেখিয়ে দ্রুত প্রস্থান করে সেখান থেকে প্রতিবার?
রিয়ারও কোনো খবর নেই এ কয়েকদিনে?কেমন মেয়ে আল্লাহ মাহমুদ জানে।আল্লাহুর কালাম পড়ে বিয়ে করেছে রায়হানকে।তবুও একটু টান নেই তার প্রতি তিন পরিমাণ।হয় তো চিকিৎসার বহন নিতে হবে বলে।দূরে সরে আছে কোনো খোজ খবর নিচ্ছে না কারো কাছে।
সময় হলে বের হয়ে যাবে মনসার মতো করে।
(হয় তো আপনারা ভাবছেন এই মনসা আবার কেডা?
আরে চিনলেন না..সাপ গো সাপ ?।সময় হলে গর্তে থেকে বের হবে।দেখবেন পরেরবার)
চলবে…….
(ভুলত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ধন্যবাদ সবাইকে)