#সতীনের_সংসার
Writer: তানজিন সুইটি
#পর্ব_১২
জীতুর দুলাভাইয়ের সাথে কথা বলা শেষ করতে না করতে রায়হান কল করে আনিকার কাছে।
সবার সামনেই রিসিভ করে কথা বলে আনিকা।রায়হানকে বলে জীতুর দুলাভাইয়ের কথা।ভয় যেনো না পায় সেই আচ্ছ্বাস দেয় আর বলে দুলাভাইয়ের কাছে সব বলেছে,তো সে বলেছে কোনো চিন্তা করো না শুধু ভালো করে ঠিকানা বলো কোথায় আছে।দুলাভাই কি করবে না করবে খুলে বলে সব রায়হানের কাছে?
অবাক কান্ড হলো___কারণ,এই সব কথা বলার পর পরই রায়হান ফোনের লাইন কেটে দিলো টুস করে অপাশ থেকে।
আনিকা চুপচাপ কিছুখন বসে থেকে।মাথা উঁচু করে সবার সাথে চোখ মিলাতে পারছে না যদি প্রশ্ন করে বসে।তাই আর দেরি না করে আরিয়ানকে কোলে নিয়ে বিদায় জানিয়ে চলে যায় সেখান থেকে মিসেস সালেহা বেগমকে সঙ্গে করে।
জীতু আর ওর পরিবার অনেক কথা আলোচনা করে রায়হান আর আনিকাকে নিয়ে।আনিকার কপাল পুরার কথায় বললো জীতু।কারণ রায়হানের হাবভাব যেনো ভালো দেখছে না অনেক দিন ধরে।
বেচারা আনিকা সারা রাস্তা শেষ করেছে ঠিকই কিন্তু রুমে ডুকার সঙ্গে সঙ্গে কেঁদে ফেলে দরজা বন্ধ করে?
আরিয়ানকে মিসেস সালেহা বেগমের কাছে দিয়ে এসেছে।না হলে ঐ ছোট্টো শিশুটি প্রশ্ন করে বসতো অনেক যে?
বিকাল গরিয়ে সন্ধ্যা,সন্ধ্যা থেকে রাত হয়ে গেলো।আনিকার বুকের ভিতরে কালবৈশাখীর মতো কালো হয়ে উঠতে শুরু করলো।তার জীবনে কি হতে চলেছে?আসলেই কি তার জীবন তছনছ হয়ে যাবে কোনো এক ঝড়ে?
খাটে থেকে নেমে,বেলকুনিতে গিয়ে,গ্রীল ধরে দাড়িয়ে দূর দূরান্তে দেখতে চেষ্টা করে যাচ্ছে নিজের কষ্ট বিলিন করার জন্যে।
চোখ থেকে ঝরনার মতো পরে চলছে পানি।শত চেষ্টা করেও পারছে না থামাতে।হঠাৎ করেই দরজায় নক পরে,কোনো রকম পানি মুছে,দরজার কাছে এগিয়ে যায়।দরজা খুলেই অবাক হয়ে যায়।কাকে দেখছে
আর কি অবস্থা করে ফেলেছে চেহারাতে?পুরো শরীরটা অবস হয়ে গেছে তাকে দেখে।মুখ দিয়ে যে কথা বলবে সেটাও হারিয়ে ফেলেছে।অনেকখন অতিক্রম হওয়ার পর চিৎকার দিয়ে উঠলে পাশের রুম থেকে সবাই দৌড়ে এসে দেখে রায়হান এসেছে।
পায়ে জুতা নেই।নেই কোনো মুখে হাসি।মুখটা শুকিয়ে গেছে।শরীরের এখানে সেখানে মারের দাগ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে শার্ট প্যান্টের ফাকে ফাকে।এমন অবস্থা দেখলে যে কোনো মানুষেরই বুকের ভিতরে হু হু করে উঠবে।
রায়হানকে বুকের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে দুহাত দিয়ে আনিকা।ওর কান্না দেখে মিসেস সালেহা বেগমও পাশ থেকে কান্না করে দেয়।আশরাফ সাহেব কান্না করছে ঠিকই কিন্তু চোখ থেকে পানি পরছে না?বুক ফেটে চুরমার হয়ে যাচ্ছে তাকে দেখে।
রায়হানকে রুমে এনে বসিয়ে সবার প্রশ্নের পাহাড় জুড়ে ফেলে?রায়হান হঠাৎ করে বলে উঠলো..
-তোমরা আমাকে না খাইয়ে মেরে ফেলো নানান প্রশ্ন করে?
এমন কথাতে কেউ আর কোনো প্রশ্ন করলো না?
রায়হানকে গোসল করিয়ে।খাইয়ে দাইয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে রাখে সবার সামনে।আশেপাশের অনেক মানুষও এই রাত বেরাতে দেখতে এসেছে রায়হানের আশার খবর শুনে। অনেকে হায় হুতাশ করে চলে যায়।
রাত পার হয়ে যায় আনিকার বুকের উপর ঘুমিয়ে। আনিকারও কষ্ট হয় একভাবে শুয়ে থাকতে। তবুও যাকে ভিশন ভালোবেসে ফেলেছে তাকে বালিশে রাখে কি ভাবে?
সকাল হয়ে যায়..
রায়হানকে এমনভাবে আদর যত্ন করে অনেক দিন
পার করিয়ে দেয়।
কিন্তু রায়হানের হাবভাব আগের মতো নেই?আনিকাকে ভালোবাসলেও কল আসলে আড়ালে চলে যায় ফোন নিয়ে।
আনিকার এসবের কোনো গুরুত্ব নেই?কারণ তার জীবন সশরীরে তো বাড়ি ফিরে এসেছে?কিন্তু এটাই তার বড় ভুল?কাউকে এতোটাও বিশ্বাস করাটা। হোক সে ভালোবাসার মানুষটা।
১সপ্তাহ পার হতে না হতেই আনিকাকে কল করে রায়হানের এক বন্ধু।তার কাছ থেকে এমন একটা কথা শুনতে পাবে জীবনেও ভাবে নি।
পুরো পৃথিবীটা ঘুরতে শুরু করে।মনে হয় এই বুঝি ভেঙে পরবে তার মাথায়।ফ্লোরে বসে পরে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে।এমন সময় আরিয়ান রুমে এসে দেখে তার এই অবস্থা।ছোট্টো শিশু তার মায়ের এমন অবস্থা দেখে প্রশ্ন করে বসে?
-ও মা তুমি কাঁদছো কেনো?কথা বলো না কেনো?
কি হয়েছে তোমার মা,বলো না বলো বলো.?
অনেকটা ঝাকি দিয়ে আনিকার শরীরটা।
ছোট্টো এই ছেলেকে কি করে বলবে আনিকা?তার কথার কোনো উত্তর নেই যে আজ।কিভাবে বলবে যে তার বাবা আরেকটা বিয়ে করেছে?তার কপাল যে পুরেছে।পুরো পৃথিবী যে তার কাছে এখন নিঃসঙ্গ লাগছে। কার কাছে বলবে তার কষ্টের কথা????
হয় তো বাবা-মার সাথে আমাকেও নিয়ে গেলে ভালো হতো,এসব ভাবছে আনিকা।কেঁদে কেঁদে তার ৬বছরের ছেলে আরিয়ানকে জড়িয়ে ধরে।???????
আনিকার কাছে মনে হচ্ছে।সবাই ঠিকই বলেছিলো সুখি হবো না কোনো দিনও।তাহলে কি এটাই তাদের অভিশাপ মূল ছিলো?
চলবে…………