স্বামীর ভালোবাসা part : 5
লেখিকা সুরিয়া মিম
!
বেটা এতক্ষণ বাঘ বনে ছিল এখন বেড়াল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে,
!
হা হা হা,
!
তারপর মিশকা ওর রুমে গিয়ে,
নিজের পেটের ওপরে হাত রেখে ওর অনাগত সন্তানের সাথে কথা বলতে শুরু করে,
!
উফফ,
আজকে আমার এতো ভালো লাগছে যে আমি কাও কে বলে বোঝাতে পারবোনা বাবাই,
!
তোর মাম্মা পেরেছ বাবাই,
এখন তাকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে,
তুই তাকে সাপোর্ট করবি তো বাবাই?
নিজের অনাগত সন্তানের সাথে কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলে মিশকা,
!
ওদিকে ইমানের ঘুম হারাম হয়ে গেছে,
মিশকার বলা কথা গুলো ওর কানে গিটারের মতো বাজছে,
না কিছু করতে পারছে না কিছু বলতে পারছে,
শুধু চুপচাপ বিছানা এক কনে পরে মিশকার কথা ভাবছে,
!
তখন রিয়া শাওয়ার নিয়ে ওর শরীরে টাওয়াল জড়িয়ে এসে ইমানের কপালে চুমু খেয়ে বলে,
!
আর ইউ রেডি বাবু?
!
ফর হোয়াট?
!
বিয়ের পরে এ বলে দিতে হবে হুমম?
আসলে মিশকার জন্যে তোমার মুড টা অফ হয়ে আছে তাই,
!
তখন ইমান ওকে ঝাড়ি মেরে বলে,
উইল ইউ থিংক আমি এখন এই মুহূর্তে তোমার সাথে সাথে শোয়ার মুডে আছি?
!
বাবু?
!
ইউ জাস্ট গেট লস্ট ফরম হেয়ার,
বলে নিজেই নিজের রুম থেকে গজগজ করতে করতে ছাদে চলে যায়,
আর সেখানে গিয়ে দেখে মিশকা একা একা ছাদে দাঁড়িয়ে চাঁদ দেখছে,
তখন ও ভাবে,
!
আমি জানি না কেন আমি না চাইলে ও আমার মন টা কেন বাড়বার ছুটেছুটে যায়,
আমি জানিনা কেন এই মুহূর্তে আমি তোমাকে ছুঁইয়ে দেখতে চাইছি,
!
কিন্তু সত্যি অনেক দিন হয়ে গেছে আমি তোমাকে ছুঁইয়ে দেখিনি,
তবে আজ এখন যখন তোমাকে একা পেয়েছি এখন একটু ছুঁইয়ে দেখবো তোমাকে,
!
তখন মিশকা ভাবে,
তোমার কোনো অধিকার নেই আমার পরে,
আমাকে ছুঁইয়ে দেখার,
আমি জানিনা আমার কি ভুল ছিল?
যে আপনি আমার সাথে এমন টা করলেন?
!
আমার কষ্ট কোথায় জানেন?
আমার কষ্ট আপনি আমাকে ভালোবেসে ছিলেন,
এতো এতো প্রমিছ করেছিলেন,
আমাকে স্বপ্ন দেখিয়ে ছিলেন,
আমার এই এতটুকু জীবনে আসার আলো হয় ছিলেন,
!
কিন্তু আজ এই দু মাস আপনি আমাকে ও আমার স্বপ্ন কে মিথ্যে প্রমাণ করে দিলেন, আমাকে ধোকা দিলেন,
কি দরকার ছিলো আপনার আমাকে মিথ্যে স্বপ্ন দেখানোর?
একটা বছর ধরে মিথ্যে ভালোবাসা দেখানোর?
!
তখন হয় তো বুঝতে পারিনি,
বাট নাও আই এম সিওর,
উনি আমাকে ভোগ করেছেন,
আর একটা বছর ধরে আদর্শবান স্বামী হয়ে নিজের আসল রূপ টা লুকিয়ে রেখেছেন,
!
ইউ আর গুড নাহহ না ইউ আর টু গুড,
!
আমি চাইছি আমার মাম্মা পাপার কাছে ফিরে যেতে চাইছি,
কিন্তু,
তারা তো জানেই না তাদের মেয়ে এখানে কত সুখে আছে,
তারা তার মেয়ের সুখের খবর শুনে কষ্টেই শেষ হয়ে যাবে,
একে তো আমি তাদের নিজের সন্তান নই তবু ও তাড়া আমার জন্যে পাগল হয়ে যাবে
!
যাই হোক পাস্ট ইজ পাস্ট তাই আমাকে স্ট্রং হতে হবে,
নিজের অনাগত সন্তান কে নিয়ে নতুন জীবনে ফিরে যেতে হবে,
!
মিশকা যখন ওর ভাবনা শেষে চোখেরজল মুছছিল তখনি ওর পিঠে কারো গভীর নিঃশ্বাস এসে পরে,
আর ও সেই নিঃশ্বাসের গভীরতা বুঝতে পেরে,
চোখ বুঝে ছুটতে শুরু করে,
আর ইমান ও মিশকার পেছনে ছুটতে শুরু করে,
মিশকা যখন ইমানের ধরাছোয়ার কাছাকাছি,
!
তখন ও ইমানের হাত থেকে নিজেকে বাচঁতে ওর গায়ে টেবিলের ওপরে রাখা মার্বেলে ভরা বাটি ছুড়ে মারে,
আর ইমান সেই মার্বেলে স্লাইড করে ইমান ফ্লোরে পরে যায়,
!
মিশকা তখনি ওর রুমে ঢুকে পরে ঠাসস করে দরজা লাগিয়ে চুপ করে নিজের বিছানায় গিয়ে গুটিসুটি মেরে শুয়ে পরে আল্লাহর শুকুরিয়া আদায় করতে থাকে,
!
আর ওদিকে ইমান ফ্লোরে পরে নিজের অজান্তেই কেঁদেই চলেছে কেঁদেই চলেছে,
!
কারন ও বুঝতে পেরেছে মিশকার আর ওর প্রয়োজন নেই,
তাই তো নিজ দায়িত্বে নিজেই নিজের সব সুখস্বচ্ছন্দের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে,
!
আচ্ছা ও এসব করছে তাতে আমার এতো কষ্ট হচ্ছে কেন?
আমি কেন ওর অবহেলা মেনে নিতে পারছিনা?
এসব ভাবতে ভাবতে ফ্লোরে ঘুমিয়ে যায় ইমান,
!
পরেরদিন সকালে ইমান ইশার সাথে কোনো বিষয় নিয়ে হাসাহাসি করতে করতে দোতালায় নজর যেতেই দেখে,
!
মিশকা মিষ্টি কালারের সাড়ি পরে চুলে খোপা করে হাল্কা সাজুগুজু করে এসেছে,
!
ওহহহ,
মিশকা ইউ আর লুকিং সো গ্লোয়িং অর গ্লামারাস অল সো,
!
থ্যাংকস ইশা,
!
ওয়েলকাম, বাট তুমি এভাবে সেজেগুজে কোথায় যাচ্ছে?
!
বয় ফ্রেন্ড তো নেই যে তাকে নিয়ে রুম ডেটে যাবো ইউনিভারসিটি তে প্রেজেন্টেশন আছে ওখানে যাচ্ছি,
!
ওহহহ,
তাহলে সাবধানে যেও কেউ আবার রাস্তা থেকে তুলে না নিয়ে যায়,
!
মানে?
!
তোমাকে কিউট লাগছে খুব,
!
ইশার কথা শুনে ইমান আড়চোখে মিশকার দিকে তাকিয়ে মৃদু মৃদু হাসি দেয়,
!
তখন ময়নার পাঁচ বছর বয়সের ছেলে মামুন এসে মিশকা কে একটা বেলি ফুলের মালা দিয়ে বলে,
!
মা তুমি এটা পরবে? তাহলে তোমাকে আরো সুন্দর লাগবে,
!
মিশকা তখন ওকে আদর করে ওর কপালে চুমু খেয়ে বলে,
!
হ্যা বাবা অবশ্যই পরবো,
!
ইকাকককক,
তুমি এই নোংরা বস্তির ছেলেটার আনা ফুলের মালা পরবে মিশকা?
!
হ্যা পরবো,কারন আমার ছেলে না কিছু কিছু মানুষের মন মানুষিকতাই নোংরা বস্তির মতো,
বাবা তুমি আমাকে মালা টা পরিয়ে দাও তো?
!
আমি তো পারিনা মা,
!
আমি পরিয়ে দিবো?
!
রুহান?
দে ভাই তাড়াতাড়ি দে,
!
ওক্কে,
!
তারপর রুহান বেলি ফুলের মালা টা মিশকার খোপায় পরিয়ে দেয়,
!
আর এদৃশ্য দেখে ইমানের চোখ রাগে লাল হয়ে যায়,
আর সেটা সবার চোখ এরিয়ে গেলে ও রুহানের চোখে লেগে যায়,
তাই ও মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে,
!
হয়ে গেছে চল,
!
হ্যা চল,
তবে বাইক নিয়ে এসেছিস?
!
হ্যা,
!
তাহলে চল তাড়াতাড়ি চল বাইকে চড়ব আমি,
!
তখন রুহান মিশকা কে নিয়ে চলে যায়,
বাইকে বসতেই রুহান ওকে ওকে হাসতে হাসতে বলে,
!
তোর স্বামীর না কি যেন প্রবলেম আছে,
ওনি বোধ হয় একশো বিয়ে করলে ও তোকে নিজের পারসোনাল প্রপার্টি মনে করবে,
আজকে আমার দিকে রক্তচক্ষু রাগে তাকিয়ে ছিল,
!
ছেমড়া তোর সমস্যা কি?
তুই সামনে চাহিয়া ড্রাইভ কর,
!
তুই রেগে গেলি কেন?
!
তুই ওই ব্যাটার কথা মনে করালি কেন?
!
সরি আর কমুনা,
!
তার মানে তুই একশোবার কবি,
!
হয় কমু হা হা হা,
পিছনে চাহিয়া দেখ,
!
ফাজিল টার কথা পেছনে শুনে পেছনে চাহিয়া দেখি,
!
উনি ঠিক আমাদের পিছনে আমাদের দিকে চাহিয়া ফুল স্পিডে কার ড্রাইভ করছে,
!
কি আশ্চর্য তাই না?
আগে তুমি আমার পেছনে বসতে আর আমি আমাকে বাইকে ঘেরাতাম,
আর এখন তুমি পরপুরুষের বাইকে বসে শহরতলি ঘুরে বেড়াচ্ছ,
অবশ্য আমার তো খুশি হওয়া উচিত যে তুমি নিজে থেকে আমার থেকে দূরে যেতে চাইছ,
কিন্তু আমি পারছিনা তোমার এই দূরত্ব টা মেনে নিতে,
!
আমি চাইছিনা তুমি আমাকে ভালোবাসো,
তবে আমার বন্ধু হয়ে তো থাকতে পারো,
দূরে থাকতে চাইছ তা বলে এতো দূরে?
!
হঠাৎ ইমানের ঘোর কাটতে দেখে ও সাভার ক্রস করে চলে এসেছে,
তাহলে মিশকা ওর ইউনিভারসিটি তে চলে গেছে?
!
সারাদিন কাজ করে বাসায় ফেরার পথে ইমান দেখে,
!
যে মিশকা পরম যত্নে গাড়িঘোড়া না পেয়ে সাভার থেকে খুব সাবধানে হেটে হেটে কাঠফাটা রোধে ঘেমে নেয়ে বাসায় যাচ্ছে,
!
মিশকা কে এমন অবস্থায় দেখে ইমানের বুকে চিনচিনে ব্যথা শুরু হয়ে যায়,
তখন ও না চাইতেও মনের কথা শুনে
তাড়াতাড়ি গাড়ি পার্ক করে মিশকার কাছে ছুটে গিয়ে ওর পথ আটকে দাড়ায়,
!
কি সমস্যা কি আপনার?
!
তুমি তো অসুস্থ,
এভাবে রোদেগরমে থাকলে আরো অসুস্থ হয়ে পরবে,
!
লিসেন আই এম ওকে উইথ ইট,
আর আপনার কানসার্নের কোনো প্রয়োজন নেই মিস্টার খান,
অনেস্টলি আই ওয়াক নো নিড ফর ইউওর কানসার্ন,
!
তখনি কিছু বয়স্ক লোক জড়ো হয়ে মিশকা কে বলে,
!
কি হয়েছে মা আমাদের বলো?
!
আঙ্কল উনি আমাকে বিরক্ত করছেন, আমি ওনাকে চিনি না,
!
এই ছেলে ঐই পাবলিক প্লেসে একটা মেয়ে কে বিরক্ত করছ পাবলিকের প্যাঁদানি খাওয়ার ভয় নেই তোমার?
!
আঙ্কল ও আমার ওয়াইফ ও মিথ্যে কথা বলছে,
!
আঙ্কল উনি মিথ্যে বলছেন,
আমি ওনাকে তো জীবনে কখনো দেখিনি,
!
মিশকার কথা শুনে এক আঙ্কল মিশকা কে পানি খাইয়ে সি.এন.জি তে বসিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দেয়,
আর ইমান কে অনেকে ধরে হালকা পাতলা উওম মাধ্যম লাগায়,
!
পাবলিক প্যাঁদানি খেয়ে ইমান বাসায় এসে রাগে গজগজ করতে করতে বলে,
!
সবকিছুর একটা লিমিট আছে,
আমার বিয়ে করা বৌ আমাকে নিজের স্বামী হিসেবে মানতে অস্বীকার করে?
পাবলিক প্লেসে বলে কিনা আমাকে চিনে না?
আমাকে জীবনে চোখে দেখনি?
তাহলে কি গত একবছরে ভুতের সাথে সংসার করেছে ও?
!
দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে ইমানের কথা শুনে ময়না পাখি ওদের মুখ চেপে হাসতে থাকে,
!
হা হা হা,
চলবে